–তা বাবা,সারাদিন ঘরে মেয়েদের মতো এমন শুয়ে বসে না থেকে একটা কাজে লেগে যাও না!! কানে এয়ারফোন লাগিয়ে সদ্য রিলিজ পাওয়া ভারুন তেজ এর ‘ফিদা’ মুভিটা দেখছিলাম। ইদানীং তামিল মুভিগুলা দারুণ সুপারহিট হয়। বলতে গেলে বলিউডকেও হার মানিয়ে দেয়।
–তা জনাব,আমি যে আপনাকে কিছু বলছি সেটা কী কানে যাচ্ছে??
–কী হয়েছে বলো!!
কান থেকে এয়ারফোনটা খুলে বিরক্তিকর দৃষ্টি নিয়ে বাবার দিকে তাকালাম।
–বলছি,এইবার একটা কাজে লেগে যাও।
–তোমার কী টাকার অভাব পড়েছে??
–না তো।
–তাহলে আমাকে কেন কাজে লেগে যেতে বলছ??
–তো সারাদিন কী শুয়ে বসেই কাটাবা!!
–আর কী করব!! তোমার এত টাকা থাকতে আমাকে আবার কাজ করতে হয় নাকি!!
–তাহলে তোমাকে এত টাকা খরচা করিয়ে পড়াশোনা করিয়েছি কী জন্য??
–কেউ যাতে বলতে না পারে তোমার ছেলে অশিক্ষিত,সেজন্য।
–তোমার সাথে কথায় পারব না আমি।
–এমন কথা বললে পারবা কিভাবে??
–আচ্ছা একটা কথা বলোতো।
–কী?
–টাকাগুলা ইনকাম করেছে কে?? আমি নাকি তুমি??
–অবশ্যই তুমি।
–তাহলে এই টাকাগুলার মালিক কে??
–অবশ্যই আমি।
–কষ্ট করে ইনকাম করলাম আমি আর শেষে কিনা টাকার মালিক হয়ে গেলে তুমি!!
–আচ্ছা বাবা,তোমার বাচ্চাকাচ্চা ক’জন??
–একজন।
–সেইটা কে??
–তুমি।
–তাহলে ভবিষ্যতে এই বাড়ি,গাড়ি,টাকা-পয়সার মালিক কে হবে??
–তুমি।
–এই সিম্পল কথাটা যদি না বুঝো তাহলে আমি আর কী করতে পারি!!
–এত কথা জানি না। কাজে লেগে যাও।
–আমি কাজ করতে পারব না। সারাজীবন পায়ের উপর পা তুলে খেলেও তোমার টাকার বিন্দুমাত্রও শেষ হবে না।
–বসে বসে খেলে একসময় রাজার ভান্ডারও ফুরিয়ে যায়।
–ওসব পুরোনো কথায় আমি বিশ্বাসী না।
–দরকার হলে এই টাকা আমি দান করে যাব,তবুও তোমাকে দিবো না।
আস্ত একটা নিষ্কর্মা। কথাটা বলেই বাবা রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন। আমার বাবা-মার একমাত্র সন্তান আমি। আমার সুখের জন্যই তো বাবা টাকা ইনকাম করেছেন। আর এখন কিনা আমাকেই টাকা দিবেন না!! এইটা কোনো কথা!! বাবার এত টাকা থাকতে আমাকে কোনো কাজ করতে হয় নাকি!!
–দেখ বাপ,তোর আব্বুর একটাই কথা। চাকরি কর একটা।
–আম্মু তুমিও কিনা শেষে এই একই কথা বলছ??
–না বলে উপায় নাই রে বাপ। হঠাৎই আব্বু কোত্থেকে জানি এসে আম্মুকে বলে উঠল
–যদি চাকরি না করে তাহলে আজ থেকে তোমার ছেলের খাওয়া বন্ধ। আব্বুর কথাটা শুনে খুব রাগ হলো। সামান্য একটা চাকরির জন্য কিনা আমার খাওয়া বন্ধ!! এমন অপমান কিছুতেই সহ্য করা যায়না। কিছুতেই না। অতঃপর সাতদিন অনবরত চেষ্টা করার পর একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরি মিলেছে। সার্টিফিকেটের মান ভালো ছিল বিধায় চাকরিটা পেতে অতটা কাঠখড় পুড়াতে হয়নি।
–চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বাবা শুনছ!!
–তো কী এমন জয় করে ফেলেছ শুনি!!
–মানুষ তো বর্তমানে চাকরি পায়’ই না। আমার রেজাল্ট ভালো ছিল তাই চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি।
–এমন কোনো বিশ্বও আবার জয় করে ফেলোনি।
–তোমার সাথে কথা বলাটাই বেকার!! ধ্যাত!!
জীবনে এই প্রথম কোনো একটা চাকরিতে জয়েন্ট করেছি,কই একটু আনন্দ করবে,মোটিভেশন দিবে তা না উল্টো অপমান করছে!! পরেরদিন চলে গেলাম অফিসে। জীবনে এই প্রথম।
–আপনার ভাগ্যটা খুবই ভালো।
–কেন স্যার??
–আজ থেকেই নতুন একটা প্রজেক্টের কাজ হাতে নিয়েছি। আর সেইটার সম্পূর্ণ দায়িত্বটা দিতে চাই আপনাকে।
–কিন্তু স্যার,আমার একার পক্ষে কী এত বড় একটা কাজ করা সম্ভব??
–একা কেন করতে যাবেন!! আপনার সাথে একজন থাকবে তো।
–কে থাকবে স্যার??
–নীলিমা এইদিকে আসুন তো।
এম.ডি স্যারের পিছন থেকে একটা শাড়ি পড়া সুন্দরী ললনা আমার সামনে এলো। নীল রংয়ের শাড়িতে মেয়েটাকে যা মানিয়েছে না!! চোখে হাল্কা কাজল,ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক। আমি তো পুরাই ফিদা!!
–ইনি হচ্ছেন নীলিমা।আজ থেকে এই প্রজেক্টের ব্যপারে ইনিই আপনাকে সাহায্য করবেন।
–জ্বী ধন্যবাদ স্যার।
–আচ্ছা আপনারা কথা বলুন। আমি আসছি।
–জ্বী স্যার।
এম.ডি স্যার আমার রুম থেকে চলে গেলেন। রুমে পড়ে রইলাম আমি আর মেয়েটা।
–আপনার নাম নীলিমা??
–জ্বী। আপনি নিশ্চয়ই আসিফ??
–নামও জানেন দেখছি!!
–স্যার বলেছে।
–তা কী করছেন আপনি??
–কেন আপনার সামনেই তো দাঁড়িয়ে আছি।
–ওহহ হ্যাঁ তাই তো!!
মেয়েটার কথাবার্তার মধ্যে কেমন যেন একটা মায়া মায়া ভাব কাজ করছে। আমার তো মাথাই চক্কর দিতে শুরু করেছে।
–পড়াশোনা কতদূর??
–আমি এম.বি.এ শেষ করেছি।
–কোন ডিপার্টমেন্ট থেকে??
–ম্যানেজমেন্ট।
–সেইম সাবজেক্ট।
–ভালো তো।
–আপনি দেখতে খুব সুন্দর।
–প্রথমদিন এসেই লাইন মারা শুরু করে দিয়েছেন দেখছি!!
ইশ!! প্রথমদিনেই মেয়েটা বোল্ড আউট করে দিলো। এখন ইজ্জত খেতে না চাইলে চুপ করে থাকাটাই শ্রেয়।
–না না এমনি বললাম।
–আমি মজা করছিলাম। হাহাহা।
মেয়েটা হাসছে। কী অদ্ভুত সেই হাসি!! কোটি কোটি ছেলের হৃদয় ভেঙে দিতে এই হাসিটাই বুঝি যথেষ্ট!!
–আচ্ছা আজ থেকে এই প্রজেক্টের ব্যপারে আমিই আপনাকে সাহায্য করব।
–জ্বী ম্যাম বুঝেছি।
–উহু,ম্যাম নয়। বলুন নীলিমা।
বাহ বাহ!! কেয়া বাদ হ্যায়!! অফিসে প্রথমদিন এসেই এতবড় একটা প্রজেক্ট নিয়ে নিলাম,প্রজেক্টের কাজে সাহায্য করার জন্য সুন্দরী একটা ললনাও পেয়ে গেলাম। তারপর আবার তাকে ম্যাম বলে নয়,তার নাম ধরে ডাকার অনুমতিটাও পেয়ে গেলাম।বাহ বাহ!! এ তো দেখছি খিচুড়ি চাইতে এসে বিরিয়ানি মিলে গেলো!!
–আপনি তো দেখছি কাজে বেশ দক্ষ!!
–কী যে বলেন না ম্যাম!!
–ম্যাম বলতে না মানা করেছি??
–স্যরি স্যরি। নীলিমা।
–আপনার কাজের হাত খুবই ভালো।
–আসলে চাকরিটা আমি করতে চাইনি।কিন্তু বাবা ভাত খাওয়া…….!!
বলতেই গিয়েই থেমে গেলাম। নাহ এইটা বলা মোটেই ঠিক হবেনা। পরে সবসময় এইটা নিয়ে খোঁচা দিবে আমাকে। তার থেকে ভালো কথাটা এড়িয়ে যাই।
–ভাত খাওয়া মানে??
–না কিছু না কিছু না।
–উহু,অর্ধেক কথা বলা আমি একদম পছন্দ করি না।
–আরে আসলে হয়েছে কী,বাবা ভাত….!!
–বাবা ভাত মানে?? কী সব উল্টো পাল্টা বলছেন??
–মানে আমার বাবা আমাকে এখনও নিজ হাতে খায়িয়ে দেয়।
–আপনার হাত নেই??
–থাকবে না কেন??
–তাহলে বাবার হাতে কেন??
–সেইটা একদিন বাবার হাতে খেলেই বুঝবেন।
–আচ্ছা ট্রাই করে দেখব তাহলে।
–বাবা-মার হাতে ভাত খাওয়ার মজাই আলাদা।
–বাসায় গিয়ে আজকেই তাহলে বাবার হাতে ভাত খাব।
এ যাত্রার মতো বেঁচে গেছি। যদি জানতে পারে চাকরি করব না দেখে বাবা আমার খাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিলেন তাহলে এইটা নিয়ে সেই হাসাহাসি করবে। আমি আবার কারো হাসাহাসির পাত্র হতে চাই না হুহ। প্রজেক্টের কাজটা শেষ হতে টোটাল তিন মাস লাগবে। অলরেডি এক মাস চলে গিয়েছে। এই একমাসে নীলিমার সাথে বেশ পরিচিত হয়ে গিয়েছি। অনেকটা ফ্রেন্ডলি। আর এইটা হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। একসাথে একই জায়গায় কাজ করলে বন্ধু না হওয়া ছাড়া কোনো উপায় আছে নাকি!!
–নীলিমা??
–হু বলো।
–চলো আজকে কাজ শেষ করে তোমাকে আমাদের
বাসায় নিয়ে যাই।
–তোমাদের বাসায় কেন??
–এমনি ঘুরতে।
–উহু,যাব না।
–কেন যাবে না??
–তোমার বাবা-মা কী না কী ভাবে!!
–ধুর ওইটা নিয়ে তুমি একদম চিন্তা করো না। ওইটা
আমিই ম্যানেজ করে নিবো।
–তবুও!!
–বললাম তো আমিই ম্যানেজ করে নিবো।
–ওরা কী ভাববে বলো তো!!
–ভাববে,ছেলে তার হবু বউকে নিয়ে বাসায় এসেছে।
–কিহহহহ!! কে হবু বউ??
–কেন তুমি!!
–একদম মাইর দিবো কিন্তু।
–মাইর দিবা কেন??
–আমি তোমার হবু বউ??
–হ্যাঁ,হবু বউ’ই তো।
–মাইর দিলে এসব হবু বউয়ের ভূত মাথা থেকে সরে যাবে।
–কচু। চলো আজকে।
–উহু,যাব না।
–আবার কেন??
–যদি বন্ধুর পরিচয় দাও তাহলে যাব।
–হবু বউয়ের পরিচয় দিলে??
–একদম খুন করে ফেলব।
–কিন্তু কেন??
–জানিনা।
–আমাকে বিয়ে করবা??
–বয়েই গেছে আমার!!
–আচ্ছা ঠিক আছে। আগে চলো। পরেরটা পরে দেখা যাবে।
–হবু বউ টউ এর পরিচয় দিলে না একদম খুন করে ফেলবো তোমাকে। এই বলে দিলাম।
–ঘোড়ার ডিম করবা তুমি!!
মেয়েটাকে নিয়ে এই একমাসে কত্ত রঙিন স্বপ্ন দেখে ফেললাম। আর শেষে এসে কিনা এসব বলছে!! মানা যায় এইগুলা!!
–আম্মু দেখ কাকে নিয়ে এসেছি। আম্মু দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল
–কাকে নিয়া আসছিস??
আমার পিছন থেকে নীলিমা সামনে এলো। তারপর আম্মুকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করে নিলো।
–কে এইটা??
–আগে ভিতরে তো ঢুকতে দাও।
–আচ্ছা আয় আয়।
নীলিমা আমার পিছুপিছু ঘরের ভিতরে ঢুকল।
–এইবার বল কে এইটা??
–আইডিয়া করো কে হতে পারে।
–তোর বন্ধু??
–আরে নাহ।
–তাহলে কে??
–বলবো??
–তো কী করবি!!
–তোমার হবু বউ।
কথাটা বলতেই আম্মু এবং নীলিমা দু’জনই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। আমার কথা শুনে তারা দু’জনই অবাক হয়ে গেল। আম্মু অবাক হয়েছে কারণ আমার থেকে এমন কথা শোনার জন্য আম্মু মোটেও প্রস্তুত ছিল না,আর নীলিমা অবাক হয়েছে এজন্য,আমাকে অফিসে এত করে বলার পরেও আমি সেই বারণ করা কাজটাই করেছি।
–কী আম্মু হা করে তাকিয়ে থাকবে নাকি হবু বউয়ের জন্য কিছু আনবে??
–আনছি আনছি।
–নীলিমা আসো তোমাকে আমার রুমটা দেখাই।
নীলিমা আমার রুমে ঢুকতেই দরজাটা লাগিয়ে দিলো।
–কী ব্যপার দরজা আটকালে কেন??
–দাঁড়াও।
–কী করবা?? আর তুমি কী খুঁজছ এখানে??
–বললাম তো বলছি।
নীলিমা শাড়ির আঁচলটা কোমড়ে গুজে হাতে একটা লাঠি নিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসল। এসেই ধুপধাপ করে আমার পিঠে ৪/৫ টা বাড়ি বসিয়ে দিলো।
–এই নীলিমা আমাকে মারছ কেন??
–অফিস থেকে কী বলে নিয়ে এসেছি আর এখানে এসে কী বলেছ হ্যাঁ??
–কী এমন বলেছি??
–আমি তোমার হবু বউ তাই না??
–হ্যাঁ তাই তো।
–দাঁড়া হারামী তোরে আরও দুইটা বাড়ি বেশি দিয়ে নিই।
বলেই আরও ৩/৪ টা বাড়ি বসিয়ে দিলো আমার পায়ে। কী ডাকাতনী স্বভাবের মেয়েরে বাবা!! বিয়ের পর তো দেখছি এর মাইরের জ্বালায় থাকতেই পারব না!! এভাবেই চলে যেতে লাগল তিনমাস। প্রজেক্টের কাজটাও প্রায় শেষ প্রান্তে। প্রজেক্ট শেষ হবার পর নীলিমা আমার সাথে থাকবে নাকি অন্য জায়গায় চলে যাবে সেইটাও আমার অজানা।
–নীলিমা শোনো।
–হু বলো।
–এই প্রজেক্টের পর তুমি কী চলে যাবে??
–সেইটা স্যার বলতে পারবে।
–তুমি চলে গেলে তোমাকে খুব মিস করব নীলিমা।
–আমিও করব। অনেকদিন তো একসাথে কাজ করলাম।
–আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই নীলিমা।
হঠাৎই আমার থেকে এমন কথা শুনে নীলিমা অবাক হয়ে গেলো। হয়তো আমার থেকে এরকম কোনো কথা আশাইকরেনি।
–কী হলো চুপ করে আছো কেন??
–ভাবছি।
–কী??
–কী বলবো!!
–যেইটা তোমার ইচ্ছা।
–আমাকে বিয়ে করতে চাও??
–হ্যাঁ চাই তো। খুব চাই।
–কেন চাও??
–তা জানিনা।
–আমার বাবা-মা ছাড়া আমি কিছুই বলতে পারব না।
–তারমানে তুমিও একমত??
–একমত কখন বললাম আবার!!
–বুঝে নিয়েছি।
–কচু বুঝেছ তুমি!!
–তোমার বাসার ঠিকানাটা দাও।
–কী করবা??
–আগে দাও।
–আরে কী করবা সেইটা তো বলবা!!
–আমার আব্বু আম্মুকে পাঠাবো।
–কেন কেন??
–কুতকুত খেলতে। বেশি কথা না বলে দাও তো।
অতঃপর নীলিমা একটা পৃষ্ঠায় তার বাসার পুরো ঠিকানাটা আমাকে লিখে দিলো। আমি তো মহা খুশি। আজকেই বাসায় গিয়ে আব্বু,আম্মুকে বলবো। তাদেরকে নীলিমার বাসায় পাঠাবো।
–আব্বু একটা কথা ছিল।
–কী কথা??
–আমি বিয়ে করতে চাই।
–কী করতে চাও??
–বিয়ে করতে চাই বিয়ে।
–আমি ঠিকমতো শুনতে পাচ্ছি না। আসিফের মা তুমি কিছু শুনতে পাচ্ছো??
আম্মু বসে বসে টিভি দেখছিল। আব্বুর কথা শুনে আম্মু আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার টিভি দেখতে শুরু করে দিলো।
–আব্বু আমি কিন্তু সিরিয়াস মুডে আছি।
–তা কোন মেয়ের বাপ তোমার কাছে তার মেয়েকে বিয়ে দিবে শুনি??
–একটা মেয়েকে আমার খুব ভালো লেগেছে।
–তাতে আমার কী??
–তুমি আর আম্মু মেয়ের বাসায় যাও।
–গিয়ে কী করব??
–কুতকুত খেলবা ওকে??
–চুপ ফাজিল। এক চড়ে বত্রিশটা দাঁত ফেলে দিবো তোর।
–তো মেয়ের বাসায় যাও। গিয়ে বিয়ের কথাবার্তা বলে এসো।
–নতুন চাকরি পেতেই বিয়ের শখ জেগে উঠেছে মনে,তাই না??
–উঠবেই বা না কেন শুনি!!
বিয়ের কথা শুনে আমার কথায় তেমন একটা সায় দিলো না আব্বু। রুম থেকে উঠে চলে গেলো। কিন্তু এখন যদি বিয়ের কথাবার্তা না বলি তাহলে যে নীলিমাকে হারাতে হবে।
–আম্মু প্লিজ তুমি একটু আব্বুকে বুঝাও।
–আমি আর কী বলবো বল!!
–আমি অতকিছু জানি না। তুমি আব্বুকে রাজি করাও।
কথাটা বলেই আমি রুম থেকে বেড়িয়ে গেলাম। নীলিমা মেয়েটা খুব ভালো। দেখতে শুনতেও অতটা খারাপ না। বলতে গেলে একদম আমার মনমতো। এই মেয়েকে আমি কীভাবে হারাতে দিই??
অতঃপর অনেক কষ্ট করে আব্বু-আম্মুকে রাজি করালাম নীলিমার বাসায় যাওয়ার জন্য। বাসায় যাওয়ার পর নীলিমাকে আব্বু-আম্মু দু’জনই খুব পছন্দ করেছে। আর পছন্দ করবেই বা না কেন!! মেয়ে কী দেখতে খারাপ নাকি!! রূপে গুণে একদম রূপবতী। শত হলেও আমার পছন্দ বলে কথা!! পারফেক্ট হতেই যে হবে। আমার বাবা আবার কোনো কিছুতেই দেরি করা পছন্দ করেন না তাই মেয়ে দেখার এক সপ্তাহের মধ্যেই বিয়ের দিন তারিখ ধার্য করে ফেললেন। এসব শুনে আমার আনন্দ আর দেখে কে!! আমি তো মহাখুশি। চাকরি পেয়েও এতটা খুশি হইনি যতটা খুশি হয়েছি বিয়ের দিন তারিখ শুনে।
–তুই রেডি??
–হ্যাঁ আম্মু।
–তাহলে চল জলদি। সবাই অপেক্ষা করছে।
–আচ্ছা তুমি যাও,আমি আসছি।
বরযাত্রী সবাই অপেক্ষা করছে আমার জন্য। আজকে নীলিমার বাসায় যাব তারপর নীলিমাকে নিয়ে আসব আমার বাসায়। কারণ আজকে যে আমার বিয়ে। মেয়ের বাসায় যাওয়ার পর তো আমি একদম বোকা হয়ে গেছি। নীলিমার বাসায় গিয়ে আমি থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর সবকিছু দেখে কিছু একটা বুঝার চেষ্টা করছি। কিন্তু আসলে কাহিনীটা কী সেইটা একটুও মাথায় ঢুকছে না আমার। সবকিছুই কেমন যেন রহস্যময় মনে হচ্ছে।
হঠাৎ করে আম্মু আমার কানেকানে ফিসফিস করে বলে উঠল ‘আসিফ,এইটা তোর আব্বুর বন্ধু। আর নীলিমা হচ্ছে তোর আব্বুর বন্ধুর মেয়ে। এতদিন যা কিছু হয়েছে সবকিছুই একটা সাজানো নাটক ছিল। তোর আব্বু আমাকে আগে থেকেই সবকিছু বলে রেখেছিল। কিন্তু আমি বলিনি। কারণ তোর আব্বু এসব বলতে নিষেধ করেছিল আমাকে।’ আম্মুর কথা শুনে আমি আরও বোকা হয়ে গেলাম। মাথার মধ্যে কিছুই ঢুকছে না। কেমন যেন হ্যাং হয়ে আছে পুরো মাথাটা। তারমানে কী আমার এম.ডি স্যার আমার আব্বুর বন্ধু?? আর নীলিমা আমার এম.ডি স্যারের মেয়ে?? এতদিন যা কিছু হয়েছে সবটাই একটা সাজানো নাটক ছিল?? কীভাবে সম্ভব এতকিছু?? কীভাবে??
পরে জানতে পারলাম,আমার কোম্পানীর এম.ডি স্যার আমার আব্বুর ন্যাংটা কালের বন্ধু ছিল। ছোটবেলায় নাকি তারা একে অন্যকে কথা দিয়েছিল তারা বেয়াই হবে। যেই কথা সেই কাজ। ফার্স্ট স্টেপেই আমার চাকরিটা হয়ে গিয়েছিল কারণ আব্বু রিকুয়েষ্ট করেছিল বলে। এম.ডি স্যার ইচ্ছে করেই তার মেয়েকে আমার সহযোগী বানিয়েছিল যাতে করে নীলিমাকে আমার ভালো লাগে। আর বেকার থাকলে কেউই তার মেয়েকে দিবে না। আর এজন্যই আমার আব্বুর এমন বিকল্প রাস্তায় অগ্রসর হওয়া।
এসব শুনে আমি আরও বেশি অবাক হয়ে গেলাম। কথাগুলো যেন কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না আমার। আর এমন মুহূর্তে এসে কারই বা বিশ্বাস হবে এমন কথা!! সবকিছু কেমন যেন ঘোলাটে লাগছে। মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীটা ঘুরপাক খাচ্ছে আমার চারিদিকে। আমি আব্বুর দিকে একবার ভালো করে তাকালাম। আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। কী অদ্ভুত সেই হাসি!! আব্বুর এমন হাসি দেখে আমি মনেমনে বলতে লাগলাম ‘পাক্কা খিলাড়ী হ্যায় ভো। কী খেলাটাই না খেলে দিলো আমার সাথে!’