ভাইবোনের মিষ্টি হাসি

ভাইবোনের মিষ্টি হাসি

সকাল সকাল তিন্নির চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে গেলো সাগরের। মেয়েটা এতো জোরে কথা বলতে পারে। সাগরের ছোট বোন তিন্নি। এইবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে, কিন্তু কথাবার্তা শুনলে মনে হয় কোন ভার্সিটিতে পড়ে। এইজন্য সাগর সব সময় ওকে পাকনা বুড়ি বলে ডাকে। সাগর অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ে, অথচ তিন্নি ওকে সব সময় জ্ঞান দিয়ে বেড়ায়। বয়সের ডিফারেন্সটা অনেক হলেও দুইজনের খুনসুটি দেখে মনে হয় যেন জমজ ভাইবোন। নাহ চেঁচামেচি শুনে সাগর আর ঘুমাতে পারল না।

ব্যাপারটা কি দেখার জন্য উঠে দেখে তিন্নি রান্নাঘরে চেঁচামেচি করছে।তিন্নি বলছে,”কাল আমি নিজে রান্নাঘরে কফির প্যাকটা রেখে গেছি” এটুকু শুনেই সাগর পিছু হটতে শুরু করল। চেঁচামেচির কারণটা যে ও নিজেই সেটা আর বুঝতে বাকি রইল না। কালরাতে সাগর চা খাওয়ার জন্য রান্নাঘরে গেছিল,অনেক রাত হওয়ায় কাউকে না ডেকে সাগর নিজেই চা করতে গেছিল,কিন্তু কফি দেখে আর লোভ সামলাতে পারেনি। ও অবশ্য জানত ওটা তিন্নি এনেছে,তারপরেও পানি গরম করে চা না করে কফিটাই খেয়ে নিয়েছে। আর সকাল সকাল তিন্নি ওইটা নিয়েই চিল্লাচ্ছে। সাগরকে দেখেই তিন্নি বলে উঠল,” এই যে আমার মায়ের আদরের গুণধর ছেলে আপনাকে বলছি,আমার জিনিস না হলেতো আপনার সকালটাও শুরু হয়না,আর রাতটাও শুরু হয়না।

আমার বাবা থাকলে দেখতে মা- বেটার ভালবাসায় ভাটা পরত” কথাগুলো বলেই তিন্নি সাগরের দিকে এগিয়ে গেলো।সাগরও কম না। ও বলতে লাগল, ” এই যে মায়ের মহারাণী এসেছেন, সবকিছুই যেন ওনার!!! আমার বুঝি কিছুই না” সাগরের কথা শুনে তিন্নি রাগে ফোঁসফোঁস করছে। “ওকে মাই ডিয়ার ব্রাদার, আপনি যে চাকরি করলে আমার কথা কত মনে রাখবেন তা আমার ভালো করেই জানা আছে। সমস্যা নেই, আমার বাবা যা রেখে গেছেন তাতে আমার চলে যাবে,আপনার চাকরি পাওয়ার পর আমাকে কিছু না দিলেও চলবে” সাগর এইবার মুখ বাকিয়ে বলতে লাগল,” ওরে আমার ফকিন্নিরে!!! বাবা যেন ওর একার ছিলো, আর আমি বুঝি মঙ্গল গ্রহের বাসিন্দা”।তিন্নির মা এতক্ষণ দুই ভাইবোনের ঝগড়া শুনছিল।এইবার আর থাকতে না পেরে ওদের দুইজনকেই চুপ করতে বলল। দুপুরে খাওয়ার সময় তিন্নি সাগরের প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছিল। ব্যাপারটা বুঝতে বাকি রইল না সাগরের যে, তিন্নি ওকে কিছু কাজ করে দিতে বলবে। নইলে সকালের ঝগড়ার পর এতো ভালো ব্যবহার করার কথা না।

তাই সাগর একটু ভাব নিয়েই বলল,” কিরে পেত্নী!!! কিছু বলবি নাকি??? অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ ” অন্য সময় হলে তিন্নিকে পেত্নী বলায় ও সাগরকে অনেক কথা শুনিয়ে দিত, কিন্তু আজ মনটা আরো নরম করে বলল,” ভাইয়া! শোননা! আজ বিকেলে আমাদের কলেজে একটা প্রোগ্রাম আছে,শেষ হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। আজতো ছুটির দিন, তুই আমাকে নিয়ে যাবি আর নিয়ে আসবি।প্লিজ!!! ” এইবার তিন্নির ভাইয়া ডাকার আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পারল সাগর। কিন্তু সাগর এইবার একটু চিন্তায় পড়ে গেলো, কারণ আজ বিকেলেই ওর মেঘলার সাথে দেখা করার কথা। মেঘলা ওর একমাত্র জি এফ। সকাল থেকে ফোন করে বলে যাচ্ছে যেন বিকেলে তাড়াতাড়ি বের হয়। সাগর আবার প্রচুর অলস কিনা। মেঘলা এমনিতেই প্রচুর রেগে আছে সাগরের উপর, তারপর যদি আজ না যায় তাহলে ওর ব্রেকাপটা নিশ্চিত হয়ে যাবে। সাগর তিন্নিকে কি বলবে বুঝতে পারছে না।

তিন্নিকেও না করা যাবেনা। একমাত্র আদরের বোন,ছোটবেলাতেই বাবাহারা, মায়ের কাছে দুজন মানুষ হয়েছে,তিন্নির কোনো চাওয়াই অপুর্ণ রাখতে চায়না সাগর। যদিও তিন্নি এমন কিছু চায়না কখনো যা ওদের সাধ্যের বাইরে। সাগর এইবার বলল যে,” ধুর কি যে করিস না!!! এইসব কাজের জন্য আমাকে লাগবে কেনো!!! একটা বি এফ ও নাই নাকি!!! আর তোর মতো ছাগলের সাথে প্রেমই বা করবে কে!!!” কথাটা শুনেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল তিন্নি, ” কিহ! আমার বি এফ নাই বলে আমি ছাগল! না!!! দাড়া মেঘলা আপুকে আমি এক্ষুণি ফোন করছি”। কথাটা শুনেই সাগর বলতে লাগল যে,” ওয়েট আপু! তোমার মেঘলা আপুর জন্যই বলছি! শোননা বিকেলে তুই একাই চলে যা? আমি সন্ধ্যার দিকে গিয়ে তোকে নিয়ে আসব। আজ মেঘলার সাথে দেখা না করলে ও আমার বারোটা বাজাবে” তিন্নি এইবার হাসতে হাসতে বলল, ” ওকে।

তোর জন্য না, বেচারী মেঘলা আপুর জন্য ছাড় দিলাম, যে কিনা আমার এই গাধা ভাইটাকে ভালবাসে। তবে সন্ধ্যার আগেই আপুকে বিদায় করে আমার ওখানে চলে যাবি, নইলে আমি তোকে ১২ টা বেজে ১ মিনিটের খবর দেখাবো। মনে থাকে যেন ” সাগর এইবার খুশি হয়ে বলল, ” এই না হলে আমার বোন” তিন্নি একটু ধমকের সুরে বলল,” হুম। উল্টাটা না বলাই ভালো যে,তুই আমার ভাই” কথাগুলো বলে দুইজনেই হোহো করে হেসে উঠল আর পুরো ঘর জুড়ে ছড়িয়ে পরল ভাইবোনের মিষ্টি হাসি….

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত