-এত ছোট ছোট কাপড় পরতে লজ্জা লাগে না?
-লজ্জা লাগবে কেন?
-এই যে বেঞ্চে বসে উবু হয়ে লেখার সময় তোর বুকের বিশেষ অংশ দেখা যায়!
-তাকিয়ে না থাকলেই তো হয়।
-দেখ,মানুষ জেনিটিক্যালি মেকাপ না।বিপরীত লিঙ্গের প্রতি একটা আকর্ষণ তো থাকবেই।
-তোমাদেরও তো বুক আছে ওখানে থাকিয়ে থাক না কেন?
-দেখ আমি তোমার সাথে বিতর্ক করতে আসি নি!ভালটা বললাম পারলে মান না হলে না মান!
-আমি যাই পরি তুমি নাক না গলালেই তো হয়।তাই না?
-হুম।ভাল থেকো।
জান্নাতের সাথে পরিচয়টা আমার কলেজ লাইফে।আমাদের কলেজে যে মেয়েগুলো পড়তো তাদের মাঝে জান্নাত সব সময় সবচেয়ে বেশি খোলা মেলা ড্রেস পরতো।এ নিয়ে কত সমালোচনা যে হয়েছে তার হিসাব কেউ রাখে নি।কেঊ কিছু বললেই তাকে শুনিয়েছে সমান অধিকারের কথা।অনেকেই এই বিষয়টাকে এঞ্জয় করতো আবার কেউ তাকে ভালোর দিকে ডাকত।আমিও তাকে ভালোর দিকেই ডাকতার,তার পিছনে একটা বিশেষ কারণ ছিল।কারণটা হলো তাকে আমার ভাল লাগত।তাকে আজীবন পাওয়ার জন্য মনের মধ্যে একটা বাসনা জাগত।কিন্তু সাধের জিনিস যে এত সহজে পাওয়া যায় না! কলেজ লাইফ শেষ করে ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম।প্রথম বর্ষ,দ্বিতীয় বর্ষ,তৃতীয় বর্ষ শেষ করে চতুর্থ বর্ষে পর্দাপন করলাম।মনের মাঝে এখনো সে জান্নাতই বসবাস করে।একদিন বিকালে হঠাৎ একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে। ওপাশ থেকে দীর্ঘ সালাম শেষ করে বলল ‘এটা কি তিহামের নাম্বার না?’
-জ্বী।
-তিহাম,আজকে বিকালে একটু দেখা করতে পারবে?
-কিন্তু কে তুমি?
-সেই পরিচয় বিকালেই দেই?
-জ্বী
-বিকালে ঠিক ৪ টায় কিন্তু এই কলেজ মোড়ে থাকবে।
-জ্বী।
বিকাল ৪ টায় গিয়ে দেখি কোথাও কেউ নেই।আমিও একা একা বসে আছি।একটু পরে দেখি কালো বোরকা পরা একটা মেয়ে আমার দিকে আসছে।আমি পকেট থেকে ফোন বের করে আবার রেখে দিলাম।বোরকা পরা মেয়েটা আমার কাছে এসে বলল ‘সরি তিহাম একটু দেরী হয়ে গেল’
-কে তুমি?
জান্নাত তার নেকাবটা খুলল।সেই পরিচিত মুখটা দেখায়,কিন্তু সেখানে আর উগ্রতার ছাপ নেই,সেখানে এক প্রশান্তির ছাপ। চোখেও গাঢ করে কাজল দেওয়া কিন্তু সেটা বুঝা যায় না।এই মেয়ে’ই যে কলেজে ছোট ছোট কাপড় পরে যেত কেউ বিশ্বাসই করবে না।
-কি ব্যাপার তাকিয়ে আছো কেন?
-তোমার এত পরির্বতন?
-হুম।
-এই পরির্বতন দেখাতে ডাকলে?
-না।অন্য একটা কারণে।
-কি?
-আমার বিয়ে ঠিক হইছে।আমি জানতাম তুমি আমাকে কলেজ লাইফ থেকেই পছন্দ করো।কিন্তু আমাকে এভয়েড করতে শুধু আমার পোশাকের কারণে।দেখ আল্লাহর রহমতে আমি বদলে গেছি।
-ছেলেটা নিশ্চয় ক্যাডার অথবা ভাল চাকরি করে?
-না।একটা মসজিদের ইমাম। আমি একটু থ মেরে গেলাম।এই মেয়েই কিনা বলত যে ‘জামাই এর সেলারী ৫০ হাজারের কম হলে বিয়ে করবো না!’
-তুমি বিয়েতে আসবে কিন্তু?
-হুম।
-ঠিক আছে আসি আমি।
জান্নাত চলে যাচ্ছিল।আমি বললাম ‘জান্নাত আমাদের ব্যাপারটা একটু ভাবা যায় না?’ জান্নাত পিছনে ফিরে বলল ‘তুমি শুধু আমাকে বদলাতে চেয়েছ নিজে বদলাতে চাও নি!নিঃসন্দেহে তোমার থেকে আমার ওনি উত্তম’ সেই চির চেনা হাসি দিয়ে জান্নাত নিজের নেকাবটা লাগিয়ে নিল!আমার সামনে দিয়ে জান্নাত নামের মেয়েটা নিয়ে চলে গেল……!