আমি তোকে ভালবাসি। (আরিয়ান)
— কিইইইই?? (মারিন)
— আমি তোকে ভালবাসি।
— আবার বল??
— আমি তোকে ভালবাসি আই লাভ ইউ।
— এদিকে আয়।
— কি??
— এদিকে আয় (ধমকের স্বরে)
— হুমম,আরিয়ানের দুগালে দুটা চড় বসালো মারিন।দুহাতে দুগালে ধরে বোকার মত দাড়িয়ে রইলো আরিয়ান। মারিন হাত ঠিক করছে আর তাকে আঁড় চোখে দেখছে।
— কিছু বলবি??(মারিন)
— হুমম,বলব।(আরিয়ান)
— বল,,
— আমি তোকে ভালবাসি।
— এদিকে আয় তো বাবু
— হুমম।
— কি হল,, হাত সরালি কেন??
— যাতে তুই মারতে পারিস।
— কিইইইই???
— মার।
— মারব।
— হুমম মার।
— এই নে বলে আরো ২ টা লাগিয়ে দিলো
তার গালে। এতে আরিয়ানের মুখে কোন বিরক্তির ছাপ নেই। বরং হেসে হেসে গাল দুটো হাতায় আর বুকে হাত দেয়। আরিয়ান আর মারিন অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। দুজনই বেশ মেধাবী ছাএ ছাত্রী। সেজন্য শিক্ষকদেরমুখে তাদের নাম প্রতিনিয়ত আসে। মারিন একটু চঞ্চল টাইপের মেয়ে। সারাদিন হৈ-হুল্লোড়,,মাস্তি- ঝগড়া,ক্যাম্পাসে আড্ডা-গান-ফুর্তি তার রুটিন হয়ে গেছে। আর তার সাথে যোগ দিয়েছে আরিয়ান। আরিয়ান হলো তাদের ব্যাচেরসবচেয়ে কিউট বয়। সবাই তাকে চকলেট বয় বলে ডাকে শুধু মারিন বাদে।
সে তাকে পাগল বলে ডাকে।তাদের যখন প্রথম দেখা হয়েছিল সেদিনই মারিনের হাতে দুটো চড় খেয়েছে। আর খাবেই বা না কেন,,,,প্রথম দিনই মারিনকে সবার সামনে প্রপোজ করে ফেলে। অথচ সে জানেই না যে ওর নাম কি,, কোথায় থাকে, কিসে পড়ে। ব্যাস,দেখল আর প্রপোজ করল। পরে মারিনকে ফলো করতে করতে বুঝল যে সে তার সাথে একি ডিপার্টমেন্টে পড়ে।আরিয়ান ওকে বন্ধুত্বের আহবান দিল কিন্তু মারিন গ্রহন করেনি। ২-৩ দিন পর কি জানি ভেবে রিকুয়েস্টটা এক্সেপ্ট করল মারিন। তারপর থেকে শুরু হয় তাদের মারা- মারি,, কথা কাটা-কাটি আড্ডা-মাস্তি সবকিছু। এতে তাদের বন্ধুরাও উৎসাহ দিত। এমন একদিনও নেই যে আরিয়ান মারিনের হাতে চড় খায়নি। সবদিন তাকে “আমি তোকে ভালবাসি আই লাভ ইউ” বলত আর মারিন চড় মারত। এটা তাদের রুটিনমাফিক হয়ে গেছে।
কয়েকদিন ধরে আরিয়ান কলেজ আসছে না। কারো সাথে যোগাযোগ করছে না,,ফোন দিলে ফোন অফ দেখায়। কিন্তু কেন?? মারিনের একটু একটু চিন্তা শুরু হল। আরিয়ানের কিছু হয়নি তো?? আবার পরক্ষনেই বলে উঠে আমি ওকে নিয়ে চিন্তা করব কেন?? ও আমার কি হয়?? এভাবে বার বার আরিয়ানের কথা চিন্তা না করার প্রতিজ্ঞা করার পরও ওর চিন্তা চলে আসে। তার মানে আমি কি ওই পাগলটাকে ভালবাসি?? ভাবতে ভাবতে বাসায় ফিরে মারিন। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে ঘুমোতে গেল। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না। বার বার পাগলটার মুখ সামনে ভাসছে। ওর কথাগুলো কানে বাজছে। ওর সাথে কাটানো প্রত্যেকটা মুহুর্তের কথা তাকে পাগল করে দিচ্ছে। এই প্রথম সে আরিয়ানকে খুব মিস করছে। দেরি না করে মারিন রওনা দিল আরিয়ানের বাসায়। কিন্তু আরিয়ানকে পায়নি। দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল মারিন। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। আরিয়ানের মায়ের ডাকে বাস্তবে ফিরল।
— কাকে চাও?? (মা)
— আসসালামু আলাইকুম আন্টি,, আরিয়ান কোথায়??
— ওয়ালাইকুমুস সালাম।ও তো বাসায় নেই।
— কোথায় গেছে??
— তা তো জানি না।
— ওহহ আচ্ছা ওকে। আমি যাই তাহলে।
— হুমম।
হতাশ হয়ে রাস্তায় হাঁটছে মারিন, আরিয়ানকে খুব বেশি মনে পড়ছে। তার কথা। ভাবতে ভাবতে দিহানা পার্কে গেল। মারিনের যখন মন খারাপ থাকে তখন সে এই পার্কে আসে। মন খারাপ করে আরিয়ানের কথা ভাবছে তখন পার্কের গেইটে আরিয়ানকে দেখতে পেল। কিন্তু একা না। সাথে একটি মেয়ে। মারিন দৌড় দিয়ে তার সামনে গেল কিন্তু আরিয়ান তার সাথে কোন কথা বলেনি। পাশ কাটিয়ে চলে গেল আরিয়ানের এমন কান্ড দেখে মারিন হতবাক হয়ে দাড়িয়ে রইল। পা সামনের দিকে বা পিছনের দিকে যাচ্ছে না। সারা শরীর টান্ডা হয়ে গেল। গায়ের লোম দাড়িয়ে গেল। চোখ থেকে ১ ফোটা ২ ফোটা করে জল পড়ল। হাঁটার শক্তি নেই তবুও আরিয়ানের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছে। অত:পর,,,,,
— কি হল,, তুই এখানে কি করিস,,, (আরিয়ান)
— ….. (মারিন শুধু কাদঁছে, কিছুই বলতে পারছে না)
— কি হল,, কাদঁছিস কেন?? তোর জন্য একটা সুখবর আছে। বলি???
— কি সুখবর?? (কাঁদো কাঁদো কন্ঠে তার সাথে রাগ মিশিয়ে)
— এই দেখ আমার গার্লফ্রেন্ড। নাম জুহি। আমি ওকে ভালবাসি।
— কিইইইইই??(কান্নার গতি ২জি থেকে ৪জি তে রুপান্তরিত হল)
— এই এই,,, কাঁদিস কেন?? তোর তো খুশি হবার কথা।
— (কেঁদেই চলেছে,,,মনে হচ্ছে ঝর্নার সব পানি আজ এখানেই শেষ করবে)
— আজ থেকে আর তোকে কোনদিন ডিস্টার্ব করব না।কখনও সবার সামনে প্রপোজ করব না। তোকে জ্বালাবো না। শান্তিতে ক্লাস করতে পারবি। ভালো করে বার্গার-পিজ্জা খেতে পারবি। আমি কেড়ে নেব না।
— (কি করে বলবে মারিন,,, আরিয়ানের এই পাগলামো গুলো তো তার দরকার)
— কি হল,, খুশি তো??
— আমাকে মাফ করে দে প্লিজ?? (কেঁদে কেঁদে)
— তুই আমার কাছে মাফ চাইছিস কেন??মাফ তো চাইব আমি।আমি তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি। প্লিজ দোস্ত,, মাফ করে দে।
— আমি তোকে ভালবাসি আই লাভ ইউ। (এক নিশ্বাসে বলে গেল)
— কিইইইইই???
— আমি তোকে ভালবাসি রে। খুব খুব ভালবাসি। যতদিন আমার সাথে ছিলি আমি তোর ভালবাসা বুঝতে পারিনি। তোর মনের কথাকে পাগলামো বলে হেঁসে উড়িয়ে দিয়েছি,, আমার প্রতি তোর অঢেল ভালবাসা নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছি। কিন্তু এখন আমি সব বুঝতে পারছি। তোকে ফিরিয়ে দিয়ে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছি। প্লিজ ফিরে আয় আমার কাছে। প্রমিস করছি আর কোনদিন ফিরিয়ে দেব না। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
— এখন আর বলে কি হবে?? আমি তো এখন অন্য আরেকজনের। (হেসে হেসে)
— এভাবে বলিস না প্লিজ। তুই যা বলবি আমি তাই করব। মরতে বললে মরে যাব কিন্তু আমাকে এভাবে ফিরিয়ে দিস না।
— চুপ চুপ। একদম চুপ। কি বলছিস এইসব?? তুই মরে গেলে আমি কাকে নিয়ে বাঁচব?? তোকে নিয়ে আমার স্বপ্নগুলা কিভাবে বাস্তব করব?? প্লিজ এইকথা বলিস না।
— ওকে। আমাকে (আরিয়ান মারিনের মুখে হাত ধরে কথা কেড়ে নিল,,, বলল, যা বলার আমি-ই বলব।
— হুমম।
— আমি শুধু একটি মুহুর্তের জন্য তোর মায়াভরা মুখ থেকে ভালবাসি শব্দটা শুনতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুই বলিস নি।মজা করে উড়িয়ে দিতি। আমাকে মারতি তবুও তোর পিছু ছাড়তাম না। কেন জানিস?? কারন, আমার এই বেহায়া মনটা শুধু তোকে চায়। তোকে সারাজীবন ভালবাসতে চায়। ২ টা মন এক করে একসাথে বাচতে চায়। আর,,,,
— আর কি?? (খুশিতে আত্বহারা হয়ে)
— তুই চলে গেলে আমার দুগালে চড় কে মারবে রে পাগলি?? এক লাফে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরল।
— আই লাভ ইউ এত্তোগুলা এত্তোগুলা।
— আই লাভ ইউ টু থ্রি ফোর ফাইভ এত্তোগুলা এত্তোগুলা।
— দাঁড়া দাঁড়া,,, আগে বল এই মেয়েটা কে??
— ওহহ। ভূলে গেছি। ওর নাম জুহি। আমার মামাতো বোন। আমাদের বাসায় ৪-৫ দিন ধরে আছে কিন্তু আজ চলে যাবে।
— কেন?? আজ চলে যাবে কেন?? জুহি ব্রেঞ্চ থেকে উঠে পড়ল আর বলল,,,
— আরিয়ান আমাকে এখানে আসতে বলেছিল। তার নাকি কি একটা সমস্যা আছে সেটা সলভ করতে। আর সেটা আজকে করলাম। তাই আজ চলে যেতে হবে।
— আজকে সলভ করলে মানে?? (মারিন)
— কিছু না কিছু না। চল চল। আমার ক্ষিদা লাগছে। (আরিয়ান)
— চুপ। একদম চুপ। (কড়া ধমক দিয়ে বলল মারিন)
— আরিয়ান তোমাকে ভালবাসে কিন্তু তুমি থাকে ভালবাস না। সেজন্য আমি তাকে শিখিয়ে দিয়েছিলাম কয়েকদিন যেন তোমার সামনে না যায়।
— কিইইইই?? তার মানে তোমাদের এসব নাটক ছিল???
— হুমম। তুমি যখন তার বাসায় যাও তখন আমরা বাসার ছাদে ছিলাম। আরিয়ান জানত যে তাকে না পেয়ে তুমি কষ্ট পাবে সেজন্য তোমার পিছু পিছু নিয়ে পার্কে আসল। এর পরের ঘটনা তো তুমি জানোই।
— এই জুহি,, তুই এত কথা বলিস কেন?? (আরিয়ান)
— তোর না অনেক ক্ষিদা পাইছে?? হুমম,, (মারিন)
— হুমম পাইছে,,,না না পায় নি পায় নি। সত্যি বলছি। (দুগালে হাত দিয়ে)
— এদিকে আয়।
— না না।
— আয় বলছি (ধমক দিয়ে)
— কি?? (এখনও দুগালে দুহাত দিয়ে রাখছে)
— মুখ থেকে হাত সরা।
— না।
— সরা বলছি (ধমক দিয়ে)
— হুম। (চোখ বন্ধ করে হাত সরাচ্ছে আর মারিন মিটি-মিটি হাসছে)
— উম্মাহহহহহহ। (আরিয়ানের এক গালে চুমু দিল)
— (স্টাচু হয়ে দাড়িয়ে রইল)
— ওকে আমার পাগলটা। দিচ্ছি। এই বলে অন্য গালে আরেকটা চুমু দিল।
— হাহাহাহা। মেঘ না চাইতে জল।
— কিইইই??
— কিছু না কিছু না। উম্মাহহহহহ।হাতে হাত রেখে পাগল আর পাগলিটা হাঁটছে ঠিকানাহীন গন্তব্যে।