সিগারেট ধরিয়ে দোকানের বেঞ্চিতে বসে গেলাম। সময় কাটানোর জন্য বুদ্ধিটা খারাপ না। কেউ কেউ চা খেয়ে সময় কাটায়। আমার চায়ের নেশা না থাকায় এটা দিয়েই কাজ চালাই। হঠাৎ সিগারেট পায়ের নিচে পিষে দিয়েই উঠে দাঁড়ালাম। সামনে ইশা দাঁড়িয়ে আছে। ইশা আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকে। ইশা আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল
-আরেহ। তুমি এখানে কি করছ?
-এমনিই ঘুরতে এসেছি।
-তাহলে দোকানে বসে সিগারেট টানছিলে কেন!!
-এমনিই বসলাম। তুই এখানে কেন?
-আমাদের কলেজের সামনের দোকান। তো আমি আসব না!!
-সেটা তো বুঝলাম। কিন্তু দোকানে কেন এসেছিস?
-চুইংগাম কিনতে এসেছি।
-ও। আচ্ছা।
ইশা চুইংগাম কিনে দোকান থেকে বেড়িয়ে আসল। আমি পিছন থেকে ডাক দিয়ে ক্যাটবেরি হাতে দিলাম। ইশা চোখ বড় বড় করে বলল
-ক্যাটবেরি আফরিনের জন্য নয়ত?
-আফরিন!! আফরিন কে!!
-লুকানোর কিছু নেই। আমি সব জানি। আফরিন কিন্তু আমার সাথেই পড়ে।
-জেনে ভাল করেছিস। এখন যা।
ইশা ক্যাটবেরি আর চুইংগাম নিয়ে কলেজের ভেতরে চলে গেল। ইশা তাহলে আফরিনের ব্যাপার জানে!! দুইমাস হল আমাদের রিলেশন শুরুহয়েছে। আজ এলাম দেখা করতে। কলেজ থেকে বের হলেই দেখা করতে পারব। এছাড়া তো আফরিনের তেমন সময় হয়না। কলেজ ছুটি হতে আর অল্প সময় বাকি। তাই দোকানে দাঁড়িয়ে আছি। কলেজ ছুটি হওয়ার পরে গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছি। এখনো আফরিন বের হয়নি। ইশাকে বের হতে দেখেই একটু সরে দাঁড়ালাম। কিন্তু তার আগেই আমাকে দেখে ফেলেছে। ইশা আমাকে ডাক দিয়ে বলল
-এখনো আফরিনের জন্য অপেক্ষা করছ!!
-হুম।
-ও তো কলেজে আসেনি।
-আসেনি!! আমাকে তো বলল কলেজে এসেছে।
-এসেছিল। কিন্তু দুই ক্লাস করেই ওর বয়ফ্রেন্ড এর সাথে বেড়িয়ে পরেছে।
-বয়ফ্রেন্ড!!
-অবাক হওয়ার কিছু নেই। তুমি ছাড়াও তার বয়ফ্রেন্ড আছে। ইশার কথায় আমি রেগে গেলাম। রেগে বললাম
-কি আবোলতাবোল বলছিস!!
-ঠিক বলছি। একটা রিক্সা ডাক। যেতে যেতে সব বলছি।
-আচ্ছা। তুই এখানে দাঁড়া। একটা রিক্সা ডাক দিলাম। আফরিন না থাকলে এখানে দাঁড়িয়ে থাকার কিছু নেই। তারচেয়ে বাসায় যাওয়াই ভাল। ইশা রিক্সায় উঠে বলল
-উঠে বস। আমি রিক্সায় না উঠে দাঁড়িয়েই আছি। আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেসে বলল
-উঠ। আফরিন দেখবে না। দেখলেও সমস্যা নেই। ইশার কথা শুনে রিক্সায় উঠে বসলাম। রিক্সা চলতে শুরু করতেই ইশা বলল
-আফরিনকে অনেক ভালবাস। তাইনা!!
-তাত ভালবাসিই।
-তোমাদের রিলেশন কতদিন?
-দুমাস হল।
-একটা মেয়ের সম্পর্কে সবকিছু না জেনে এভাবে রিলেশনে জড়ানো উচিত!! তার বয়ফ্রেন্ড আছে জানোনা!!
-তার আর কোন বয়ফ্রেন্ড নেই।
-আচ্ছা। তুমি এখন তাকে ফোন দিয়ে দেখ। ফোন ধরে নাকি দেখ। ইশার কথা শুনে আফরিনের নাম্বারে ফোন দিতে থাকলাম। কিন্তু ফোন ধরছে না। আফরিনের ফোন না ধরায় রাগ হচ্ছে। তারপরে আবার ইশা আফরিনের সম্পর্কে গুণের কৃত্তন গেয়ে চলেছে। মেজাজটা বেশিই খারাপ হচ্ছে। রিক্সা বাসার সামনে এসে থামতেই নেমে ভাড়া দিয়ে দিলাম। ইশা আমার সাথে হাটতে হাটতে বলল
-মেজাজ খারাপ না করে বাসায় গিয়ে রেস্ট নাও। পরে ফোন ধরবে হয়ত। আমি আর কথা না বাড়িয়ে সোজা রুমে চলে এলাম। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে আবার আফরিনকে ফোন দিতে ফোন হাতে নিলাম। দুপুরে রুমে এসে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছি বুঝতেই পারিনি। আফরিনের কাছে ফোন দিলাম। আফরিন ফোন রিসিভ করে কিছু বলার আগেই আমি বললাম
-কি হয়েছে তোমার?
-কিছু হয়নি তো।
-তাহলে দুপুরে ফোন রিসিভ করোনি কেন!!
-ও। তখন তো আমি কলেজে ছিলাম।
-কলেজ ছুটি হওয়ার পরে কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন ফোন দিয়েছিলাম।
-ও। তখন তো আমি কলেজ থেকে বেড়িয়ে কোচিং এ গিয়েছিলাম।
-কখন বের হলে!! আমিত গেটে ছিলাম।
-আমি ছুটির এক ক্লাস থাকতেই বেড়িয়ে পরেছিলাম।
-আচ্ছা পরে কথা বলব।
ফোন কেটে দিয়ে আমার সব এলোমেলো লাগছে। আফরিনের কথার ধরন অন্যরকম। একেকবার একেকরকম লাগছে। আফরিনের ব্যাপারটা ভেবে আমার কেমন কেমন যেন লাগছে। তবে কি ইশার কথাই সত্যি!! আমি আর ভাবতে পারছিনা। বিকেলে রুমে শুয়ে ছিলাম। ইশার ফোন পেয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে আসলাম। সে নাকি কি দেখাবে। আমাকে পার্কে আসতে বলেছে। পার্কে পৌছেই ইশাকে ফোন দিলাম। ইশা ফোন ধরে বলল
-তুমি বাঁদিক ঘুরে আমার এদিকে আসো।
-আচ্ছা। ইশার কাছে আসতেই বলল
-ওই দেখ।
-কি দেখব?
-ওদিকে তাকাও।
ইশার দেখানো জায়গায় তাকিয়ে আমি যেন ধাক্কা খেলাম। আফরিন একটা ছেলের কাধে মাথা রেখে বসে আছে। কিন্তু আফরিন এখানে এই ছেলের সাথে কেন!! ঝটপট ফোন বের করেই আফরিনকে ফোন দিলাম। কিন্তু আফরিন রিসিভ করছে না। কয়েকবার চেষ্টা করেও যখন রিসিভ করল না। তখন ইশা বলল
-দাড়াও। আমি ফোন দিচ্ছি। তোমার ফোন রিসিভ করবে না।
-আচ্ছা। তুই ফোন দে। ইশা ফোন দিতেই ফোন রিসিভ করল। ইশা কথা বলার আগেই ওর হাত থেকে ফোন নিয়ে বললাম
-আফরিন তুমি কোথায়?
-বাসায়।
-তাহলে ফোন রিসিভ করছিলে না কেন?
-একটু কাজে ব্যাস্ত ছিলাম।
-ও। আচ্ছা। ফোন কেটে ইশার ফোন ওকে দিয়ে বললাম
-আমার সাথে আয়।
-কোথায় যাবে?
-আফরিনের কাছে যাব।
ইশা চুপচাপ আমার সাথে আফরিনের সামনে এসে দাঁড়াল। আফরিন আমার দিকে একবার দেখে আবার চোখ নামিয়ে নিল। আমি ডাক দিয়ে বললাম
-তুমি নাকি বাসায়!! তাহলে এখানে এলে কিভাবে আসলে? এই ছেলে কে
-না মানে….
-কোন মানে বুঝাতে হবেনা। আমিই চলেযাচ্ছি।
আমি আর কিছু না বলেই চলে আসলাম। ইশা মনেহয় ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে অথবা বাসায় চলে গিয়েছে। আমি রাস্তা দিয়ে হাটছি। নিজেকে বড় নিঃস্ব মনেহচ্ছে। যাকে এত ভালবাসলাম সে আমার সাথে এমন করল!! ঈদে নিজের জন্য কিছু না কিনে তার জন্য শপিং করে দিয়েছি। আমার চাওয়ার চেয়ে তার চাওয়ার মুল্য দিয়েছি বেশি। আর সে!! ভাবতে ভাবতে কখন রাস্তার মাঝখানে চলে এসেছি, বুঝতেই পারিনি। চোখ বুঝতে পারলাম, আমি হাসপাতালে শুয়ে আছি। রাস্তার মাঝাখানে গাড়ির ধাক্কা লেগেছিল। মাথায় আঘাত ভালই মনেহচ্ছে। পাশে তাকিয়ে দেখলাম মা বসে আছে। মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কিরে বাপ এখন কেমন লাগছে?
-ভাল আছি এখন। তুমি কাঁদছ কেন!! আমি ঠিক আছিত।
-তোর ওষুধ আনতে হবে। তোর পাশে তো একজন থাকতে হবে। আচ্ছা ইশা তোর পাশে থাক।
-ইশা এল কোথা থেকে!!
-তোর এক্সিডেন্ট এর কথা শুনে আমার সাথে এসেছে। আমি ডেকে দিচ্ছি। মা ইশাকে ডাক দিয়ে আমার পাশে বসতে বলল। মা ওষুধ আনতে চলে গেল। ইশা আমার পাশে বসে বলল
-রাস্তায় ঠিকমত চলতে পারনা!! এভাবে কেউ রাস্তায় হাটে! যদি বড় কিছু হয়ে যেত!!
-কিছু হলেই বা কি!! আফরিনকে এত ভালবাসলাম। আর সে!! ওর কথা ভাবতে ভাবতে রাস্তার মাঝে চলে গিয়েছিলাম।
-শুধু ওর কথাই ভাবলে!! নিজের কথা ভাবলে না? আমি কিছুক্ষন চুপ থেকে বললাম
-নিজেকে ভেবে আর কি হবে!! কিছু হলেই কি!!
-তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার কি হবে!!
ইশার কথা শুনে যেন থমকে গেলাম। ইশার চোখ থেকে পানি ঝরছে। তবে কি ইশা আমাকে ভালবাসে!! বুঝে ওঠার আগেই ইশা আমার বুকে মাথা রেখে আরো কান্না শুরু করে দিল। আমি বললাম
-পাগলি কেঁদে বুক ভাসাবি নাকি!! দুইদিন গোসল করিনি। গায়ে ঘামের গন্ধ কিন্তু।
-আমার কাছে এই ঘামের গন্ধ পারফিউমের চেয়েও বেশি ভাল।
-মা এসে যাবে কিন্তু।
-আসুক। ভয় পাইনা।
-এত সাহস!!
-হুম।
ইশা আমার বুকে মাথা রেখেই শুয়ে থাকল। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।