ভালোবাসা আমার বুকের মাঝে

ভালোবাসা আমার বুকের মাঝে

আপনি কী সৌরভ? হঠাৎ এরকম একটি প্রশ্ন শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখি বোরকা পড়া একটি মেয়ে

-> আমার নাম কি করে জানলো। কোন কারণে সেলিব্রেটি হয়ে গেলাম নাকি!(মনে মনে এগুলো বলছি)
— কি হলো?(মেয়েটি)
-> কে আপনি?
— আমার উওরটা এখনো পাইনি
-> ডেনজারাস মেয়ে মনে হচ্ছে (আবারও মনে মনে কথা গুলো বললাম)
— এভাবে হা করে তাকিয়ে কি দেখেন? কথা বলছেন না কেনো?
-> হ্যাঁ।
— কী হ্যাঁ?
-> হ্যাঁ সৌরভ।

কথাটা বলা শেষ না হতেই যেন আমার উপর বোমা বর্ষণ শুরু হয়ে গেল। পিঠের উপর একের পর এক কিল ঘুসি পড়তেই আছে। চিনি না জানি না কোথাকার কোন মেয়ে আমার সাথে এরকম করছে আমিতো পুরাই আহাম্মক হয়ে গেছি। সবাই আমাদের দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন চিড়িয়াখানা থেকে কোন জন্তু জানোয়ার এসে বাসে উঠেছে। অনেকপর কিল ঘুসি সামলে মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম,

-> কে আপনি? আর আমার সাথে এরকম করছেন কেন?
— আমাকে চিনস না? ও! তা চিনবি কেনো! এতো দিনে মনে হয় অনেক গার্লফ্রেন্ড ঝুটায় ফেলছিস তাই হয়ত আমাকে চিনতে পারছিস না। কষ্ট হচ্ছে (কাদো কাদো কণ্ঠে কথা গুলো বললো)

-> আজব ত!! কে আপনি আর এসব কি বলছেন? তুই তুই করে কথা বলছেন কেনো? আর কেনইবা আমি আপনাকে মনে রাখতে যাব?

— (কিছু বললো না। শুধু কেমন যেন একটা ফোপানোর আওয়াজ পাওয়া গেল) একটু পর মেয়েটি বোরকার মুখটা খুলতে শুরু করল। আরে এতো মিম..। কলেজে পড়ার সময় যে মেয়েকে সবচাইতে বেশি পছন্দ করেছিলাম। কিন্তু কখনো কথা বলার সাহস হয়নি। কারণ, সাধারণ ঘরের ছেলে হয়ে এতো বড় লোকের রাগী মেয়ের সাথে বললে যদি কোন সমস্যাহয়। তবে বিভিন্ন ভাবে বুঝাতে চেষ্টা করতাম যে আমি তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি। মিম সেটা বুঝত কিনা জানি না। এভাবে অনেক দিন চলার পর বন্ধুদের অনেক চাপাচাপিতে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার শেষের দিন গেলাম মিমকে প্রপোজ করার জন্য। কিন্তু মিমের সামনে দাড়ানোর পর মনে হলো শরীরে ১০৮ ডিগ্রি জ্বর ওঠে পরছে আর হাঠু তবিরতিহীন ভাবে কাপছেই। তবুও বহু কষ্টে মুখ দিয়ে বের করলাম,

-> মিইইইমম….
— কী?
-> মিইইম আই বু…
— এই শোন। দাড়া।

মিম পেছন থেকে ডাকছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। ওই কথাটা বলার পরই এতো জোরে দৌড় দিলাম মনে হলো এখন জেট বিমান নিয়ে আসলেও আমাকে ধরতে পারবে না। আজরাইল বোধ হয় জানটা হাতে নিয়ে আবার ছেড়ে দিল। হাপাতে হাপাতে একটি দোকানের সামনে এসে বসলাম। কিছুক্ষণ পর আকাশ, ইমন আর রাশেদ দাত বের করতে করতে কোথেকে যেন এসে আমার সাথে বসলো।

>> শালা, আই লাভ ইউ টাও ঠিক করে বলতে পারলি না! ( ইমন)
-> আমার জানটা যে এখনো আছে সেটাইতো অনেক কিছু।
>> ফুলটা দিছিস? (রাশেদ)
-> কিসের ফুল?
>> মোফাজ্জল চাচার দোকান থেকে যে তোকে দুইটা গোলাপ ফুল কিনে দিলাম সেটাকই? (রাশেদ)
-> সরি দোস্ত। দিতে ভুলে গেছি। এইযে একটা নে। আর একটা মনে হয় দৌড় দেওয়ার সময় রাস্তায় পড়ে গেছে।

>> জানতাম তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। তোর প্রপোজ করতে হবে না। ফুল দে আমিই প্রপোজ করব।(আকাশ) ব্লা… ব্লা…. ব্লা…এরপর এই কাহিনী এখানেই শেষ। মিমের সাথেও কোন যোগাযোগ হয়নি। সবাই যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলাম। রেজাল্টের পর আমি এক পাবলিক ভার্সিটিতে এবং এক সময় জানতে পারি মিমের ঢাকা মেডিকেলে চান্স হয়েছে। জীবন চাকা ঘুরতে ঘুরতে মোড় বদলে যাওয়াটা স্বাভাবিক। আজ দু বছর পর মিমের সাথে এভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবতেই পারিনি। মিম আগের চেয়ে আরও অনেক সুন্দর হয়ে গেছে। রাগী ভাবটা আর নেই। সারা মুখই যেন মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে।

— কিরে এখনো হা করে আছিস? আমাকে চিনতে পারলি না? আমি মিম।
-> হ্যাঁ চিনেছিত। কেমন আছিস?
— বাহ! অনেক খোজ খবর রাখিস আমার। এতো দিন পর যানতে চাইলি কেমন আছি।
-> (কোন উওর দিতে পারলাম না)
— এই,,, (মিম হালকা করে একটু ধাক্কা দিল)
-> হুমম। বিয়ে করছিস? ঠাস… ঠাস…সবার সামনে এভাবে চর মারলো?!! মান ইজ্জত যতটুকু ছিল সেটুকুও মনে হয় একেবারে শেষ করে দিল। তখনতো না জেনে আহাম্মক হয়েছিলাম আর এখন জেনে শুনে বেকুব হয়ে গেলাম। তবে কেনো চর দিল বুঝলাম না।

-> আল্লাহ! কেন তুমি এই মেয়ের সাথে আমাকে দেখা করাইলা!! (অস্পষ্ট স্বরেই মুখ দিয়ে কথা গুলো বের হয়ে আসলো)
— কী বললি?
-> কই কিছু নাতো।
— চল
-> কোথায়?
— আয় আমার সাথে বাসের পেছনের দিকে একটা সিটে বসে ছিলাম। মিম আমাকে এক প্রকার টানতে টানতেই সামনে নিয়ে চললো।

— থামেন। থামেন বলছি (ধমক দিয়ে বাস ড্রাইভাররকে বললো) সাথে সাথে হায়ড্রোলিক ব্রেক মিম আমাকে নিয়ে বাস থেকে নেমে পরলো। তারপর বাস আবার চলতে শুরু করলো তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে।

-> বাস থেকে এভাবে নেমে পড়লি কেন? জানিস, ঈদের সময় বাসে সিট পাওয়া মানে চাঁদ হাতে পাওয়ার সমান?
— একদম চুপ। কোন কথা বলবি না।
-> (আবার চুপ হয়ে গেলাম)

সন্ধ্যা হয়ে গেছে। একটু পরই হয়ত মাগরিবের আজান দিবে। আমরা এক হোটেলে এসে বসলাম। মিম মনে হয় রোজা। আমিও রোজা রেখেছি কিন্তু মিমের অকল্পনীয় অত্যাচারে কোন কিছু প্রকাশ করতে পারিনি। যাই হোক মেয়েটার দায়িত্ববোধ আছে বলতে হবে তা না হলে এতো অত্যাচারের পরও কোন কিছু জিজ্ঞেস না করেই আমাকে নিয়ে ইফতার করতে বসতো না। ইফতার করা শেষ… মিমই ইফতারের বিলটা দিয়ে দিল। আমি আর কোন জোরাজোরি করলাম না। কারণ, বড়লোকের মেয়ে টাকাতো একটু খরচ করবেই।

-> তুই এখানেই থাকিস। আমি নামাজ পরে আসি।
— আচ্ছা যা।

নামাজ থেকে এসে দেখি হোটলের এক কোণায় বসে মিম কি যেন ভাবছে। আবারও ভেসে ওঠলো মায়া ভরা সেই মুখ। ভাবনার নির্বিতে থাকা চোখের সেই অপূর্ব চাহনি। অনেকক্ষণ যাবত এভাবে তাকিয়ে থাকার পর হোটেলে কর্মরত এক ছেলের কথায় ঘোর কাটলো।

>> স্যার, এইহানে দাড়ায় আছেন কেন? ভিতরে যাইয়া বহেন। জায়গা আছেতো।
-> হুম যাচ্ছি। মিমকে যেয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
-> এখানে থাকবি না বাসায় চলে যাবি?
— আমারতো মাথা খারাপ হইছে তোর মতো বান্দরের সাথে আমি থাকতে যাবো।
-> এই বান্দরের সাথেই একদিন হয়ত সারা জীবনের জন্য থাকতে হবে।
— (কিছু বললো না)
-> তোর জন্যতো বাসটা ছেড়ে দিলাম এখন যাবো কি দিয়ে?
— রিকশাতে।
-> কিহ??!!
— হুম রিকশা দিয়ে যাবো।
-> অনেক সময় লাগবে।
— লাগুক তাতে কি..!!

অতঃপর রিকশায় ওঠলাম। এতো কাছাকাছি  মেয়েদের সাথে কখনো বসিনি। তাই কেমন যেন অসস্থি বোধ হতে লাগলো। একটু সরে বসলাম। কিন্তু এই মেয়ের হাত থেকে যেন রক্ষা নেই। একটু পর মিম আরও কাছাকাছি এসে আমার হাত ধরে বসলো।

চারদিকে ঘন কালো অন্ধকার। এক সময় কিভাবে যেন যানতে পেরেছিলাম মিম অন্ধকার খুব ভয় পায়। কিন্তু সেগুলো ছাপিয়ে ভাবতে লাগলাম, একটা মেয়ে একটা ছেলের হাত ধরে যেভাবে রিকশায় বসে আছে, জ্যোৎসার আলো থাকলে তাতে এক অসম্ভব রোমান্টিক দৃশ্যের সৃষ্টি হতো। ক্ষাণিকপর হঠাৎ বুকে কিছু একটা অনুভব করলাম। হ্যাঁ,,মিম আমার বুকে মাথা রাখলো। তবে ভয়ে নাকি ভালোবাসায় আমার বুকের মাঝে মিমের মাথাটা জায়গা করে নিলো সেটা এখনো বুঝে ওঠতে পারলাম না!!!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত