আজ ভ্যালেনটাইন

আজ ভ্যালেনটাইন

-জানু চলো না আজকে একটু ঘুরতে যায় ।(দোলা)

দোলার এমন কথাতে বেশ অবাক না হয়ে পারলাম না ।

-আমরা তো ঘুরতেই এসেছি ।(আমি)
-হ্যাঁ আমি জানি ।কিন্তু আমি যে আজকে একটা প্ল্যান করে এসেছি ।
-কিসের প্ল্যান ?
-আমার লজ্জা করছে ।
-আরে বলো ।লজ্জা কিসের ?

অতঃপর দোলা আমার কানে কানে যা বলল তাতে শরীরের রক্ত গরম হয়ে গেল ।বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম । হুট করে এভাবে দাঁড়ানোতে দোলা অবাক চোখে প্রশ্ন করলো ,

-কি হলো ? উঠে পড়লে যে ?
– কি বলছো তুমি এসব ? তুমি কি এসব ভেবে চিন্তে বলছো ?
-হুম ।সবাই তো আজকের দিনটাকে এভাবেই সেলিব্রেট করে ।
-তুমি একজন মেয়ে হয়ে আমাকে একথা বলতেপারলে ? তোমার বিবেকে বাঁধলো না ?
-বিবেকে বাঁধবে কেনো ?
-বিয়ের আগে এসব করা পাপ ।
-পাপ কেনো হবে ? ভালবেসে এসব করলে পাপ হয় না ।
-তোমার সাথে বিয়ের আগে আমি কিছুই করতে পারবো না ।যদি তোমার সাথে আমার বিয়ে হয় তবেই এসব হবে । আমার এমন জবাবে দোলা বেশ রাগান্বিত হয়ে বললো ,

-কেনো তোমার কি পুরুষ্যত্ব নেই ?
-হঠাত্ আমার পুরুষ্যত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুললে যে ?
-আমার বান্ধবীরা আগেই বলেছিল তোমার হয়তো কোনে সমস্যা আছে ।আজ তার প্রমানপেয়ে গেলাম ।
-কি বলতে চাও তুমি ?
-কি বলতে চাচ্ছি সেটা তুমি নিশ্চয় বুঝতেপারছো ।
-তুমি যা খুশি বলতে পারো তবুও আমি বিয়ের আগে এসব করতে পারবো না । তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি ।
-শালা হিজড়া তোর ভালোবাসা তোর কাছেই রাখ ।তোর সাথে আমার ব্রেক-আপ । দোলা আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হনহনিয়ে চলে গেলো । আমিও মেসে ফিরে এলাম । মেসে ফিরেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম ।তারপরে সাকিবের ডাকে যখন ঘুম ভাঙলো তখন প্রায় সন্ধ্যা ।

-কি মামা ক্লান্ত নাকি ।ওয়ান ডে ইনিংস মনে হয় খেলছো ?(সাকিব)
-আরে মজা নিস না । তেমন কিছুই না ।
-কিছু তো একটা হয়েছেই ।তা না হলে দিনের বেলায় ঘুমানো লোক তো তুই না । কয় রাউন্ড ।
-বললাম তো তেমন কিছুই না । দোলা আমার সাথে ব্রেক-আপ করেছে ।
-বলিস কি ! ভ্যালেনটাইনে সবার রিলেশন শুরু হয় আর তোর ব্রেক-আপ ! তা ব্রেক-আপের কারন কি ? ফিজিক্যাল রিলেশনের জন্য চাপ দিয়েছিলি নাকি ?

-আরে না ।ঐ আমাকে ফিজিক্যাল রিলেশনের জন্য চাপ দিয়েছিল ।আমি রাজি না হওয়াতেই ব্রেক-আপ ।
-সুযোগটা মিস করলি কেন ?
-আমি ওকে ভালোবাসি । ওকে ধোকা দিতে চাই না । অপরদিকে,
-দোস্ত তোর দিনটা কেমন গেল ?(দোলার ফ্রেন্ড)
-আর বলিস না ।একটা হিজড়ার সাথে প্রেম করেছি ।(দোলা)
-কি বলিস ! আবিরকে দেখে তো মনে হয় না ওর সমস্যা আছে ।
-আরে বাদ দে ।তোর কেমন কাটলো দিনটা ।
-অনেক ভালো ।ইমনের বাসায় গিয়ে আজকে খুব মজা করেছি ।
-যদি তোর মতো কপাল আমার থাকতো ।

কি দেখে যে প্রেম করলাম । এরপরে অনেক দিন কেটে গেছে ।দোলার সাথে প্রায় ১ বছর দেখা হয়নি ।হবার কথাও নয় । চাকরিসূত্রে শহর ছেড়ে চলে এসেছি । হঠাত্ বন্ধুর বিয়েতে আবারো এসেছি এই শহরে ।বন্ধুর বিয়েটা ভালোভাবেই শেষ হয়ে গেলো । এবার আমার ফেরার পালা ।দুর্ভাগ্যক্রমে যে বাসে চড়ে ফিরছিলাম সেটা এক্সিডেন্ট করে আর আমার বর্তমান ঠিকানা হাসপাতাল । হাসপাতালে যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমার বেডের পাশে দোলাকে দেখে বেশ অবাক হলাম । উঠে বসার চেষ্টা করলাম ,

-উঠতে হবে না ।স্যালাইন চলছে ।শুয়েই থাকো ।
-যাক তোমার সেই কেয়ারটা দেখছি এখনোও
আছে ।কিন্তু তুমি এখানে ?
-আমি এখানকার ডাক্তার ।
-ও আচ্ছা ।খুব ভালো ।
– আমি সর্রি আবির ।
-সর্রি বলছো কেনো ।
-সেদিনের জন্য ।আসলে সেদিন তোমাকে ওভাবে কথাগুলো বলা ঠিক হয়নি ।
-তুমি তো ঠিকই বলেছিলে ।সমস্যা তো আমারই।আমারই তো পুরুষ্যত্ব নেই ।
-আবির আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে ।
-কোনো ব্যাপার না ।তা তোমার বান্ধবীর খবর কি ? তোমার সাথে ব্রেক-আপের পর তোমার বান্ধবী আমাকে প্রোপজ করেছিল ।

-ও তো আর নেই । ও আত্মহত্যা করেছে ।
-আত্মহত্যা করেছে !
-হ্যাঁ ।আসলে ওর বয়ফ্রেন্ড ওর সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন করে ওকে ধোকা দেয় । যেটা ও মেনে নিতে পারেনি ।
-সেদিন যদি আমিও একই বিষয় তোমার সাথে করতাম তাহলে তোমার কি হতো ?
-সত্যি আবির তোমার মতো ছেলে হয় না ।
– আচ্ছা আমার কথা কি তোমার এই এক বছরে একবারও মনে পড়েনি ?
-তুমি জানো তোমাকে কত খুঁজেছি ?কত ফোন দিয়েছি ।
– আমার নাম্বার তো চেঞ্জ করে ফেলেছি । আচ্ছা আমি এখানে থেকে ছাড়া পাব কবে ?
-এই জীবনে তো ছাড়া পাবে না ।
-মানে ?
-মানে তুমি এভাবেই আমার চোখের সামনে থাকবে সারা জীবন ।
-তাই বলে এত শক্ত বেডে থাকা যায় ?
-বিয়ের পরে একটা নরম বেডে থাকতে দিব তোমায় । থাকবে তো ?

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত