কয়েক মাস হলো এই বাসাটাতে উঠেছে হিমিরা। আসলে হিমির বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা।
তাই কিছুদিন পর পর বদলি হন। হিমি হোস্টেলে থেকে পোড়াশোনা করে। ১৫ দিন আগে ছুটিতে এই বাসায় এসেছে।
প্রথম যেদিন এই বাসায় এসেছিলো সেদিন বিকালে সে রনিকে দেখেছিলো। হিমি তার বাবাকে জিজ্ঞেস করায় তার বাবা তাকে বলেছিলো ছেলেটার নাম রনি।
খুবই অহঙকারী অভদ্র একটা ছেলে। সালাম তো দেয়া দুরের কথা, একদিন কথা বলতে গিয়েছিলাম।
কিন্তু কথাই বলেনি। তুই কিন্তু সাবধানে থাকবি। এসব ছেলেদের কথা বলা যায় না।
সব শুনে হিমির মনে ছেলেটার প্রতি রাগ জন্মালো। যে হিমির জন্য পুরো কলেজ পাগল বিকেলে সেই হিমির দিকে সে ফিরেও তাকাই না।
ছেলেটাকে একটা শিক্ষা দেয়ার দরকার। রনি। ধনী পরিবারের ছেলে হয়েও সে গরীব। কারন তার মা নেই।
তবে সৎমা আছে, যে কিনা তাকে দুচোখে দেখতে পারেনা।
আর সৎমা কে বিয়ে করার পর বাবাও হয়েছে সেরকম।
তবে তার সৎমার একটা মেয়ে আছে। যে কিনা রনি বলতে পাগল । ভীষন ভালোবাসে এই মেয়েটা অকে।
তাই অনিচ্ছা সত্যেও ছুটি পেলেই এই মেয়েটার টানে হোস্টেল থেকে ছুঠে আসে রনি।
অনেক চিন্তা করে হিমি একটা বুদ্ধি বের করলো । তবে তার আগে ম্রুনি কে বোস করতে হবে । মেয়েটার বয়স ১০ বছরের মতো হবে।
হ্যা! এই ম্রুনি, রনির বোন।
খুব বেশি সময় লাগেনি ম্রুনি কে হাত করতে।
—> ম্রুনি আপু! আমাকে একটা হেল্প করবে? (হিমি)
—> হ্যাঁ! আপু বলো?(ম্রুনি)
—> তোমার ভাইয়ার কাছ থেকে আমাকে একটা প্রেম পত্র লিখে এনে দেবে? আমি না লিখতে পারিনা।
—> অকে আপু!
—> আর শোন! কারো নাম লিখতে নিষেধ কর।
—> আচ্ছা ।
বলেই চলে গেলো ম্রুনি। হিমি মনে মনে খুব খুশি হলো। যাক! প্লান টা কাজ করছে।
—> ভাইয়া তোমার সাথে কিছু কথা আছে।
—> হ্যাঁ আপু। বলো?
—> একটা প্রেম পত্র লিখে দাও তো। রনি এই কথা শুনে রিতিমত আকাশ থেকে পড়লো।
—> আরে না না । আমার জন্য নয় । আমার এক বন্ধুর জন্য।
—> তা তোমার সেই বন্ধুটা কে শুনি?
—> তোমার এতকিছু জানা লাগবে না। অত:পর ম্রুনির অনেক জরাজুরিতে হার মেনে সে চিঠিটা লিখে দিলো।
ম্রুনি চিঠিটা নিয়েই দৌড় দিলো হিমিদের ফ্লাটে। তারপর চিঠিটা হিমিকে দিলো ।
—> আচ্ছা ম্রুনি! আমাকে তোমার কেমন লাগে? (হিমি)
—> খুব ভালো লাগে।(ম্রুনি)
—> আচ্ছা আমি যদি তোমার ভাবি হই?
—> তাহলে তো খুব মজা হবে।
—> তাহলে শোন। সন্ধায় যখন তোমাকে বলা হবে যে চিঠিটা কে দিয়েছে, তখন তুমি বলো
যে ভাইয়া দিয়েছে। তাহলে আমি তোমার ভাবি হয়ে যাবো।
বিকেলে রনি একটু হাটতে বের হয়েছিলো । সন্ধায় বাসায় ফিরেই দেখলো হিমি তার বাবা তাদের ফ্লাটে।
সে আরো দেখলো তার বাবা অনেক রেগে আছে। ভয় পেয়ে গেলো রনি। কারন এত বড় হওয়ার পরও তার বাবা তাকে মারধর করে ।
ধীরে ধীরে ভীতরে ঢুকলো রনি।
তার বাবা জিজ্ঞেস করল ?
—> কিরে ? কি শুনছি এসব?
—> কি শুনছো?
—> তুই নাকি হিমিকে চিঠি দিয়েছিস?
—> আমি ? নাতো।
—> কি মা হিমি ! ও নাকি দেয় নি।
—> ভাইয়াই দিয়েছে। ভাইয়া আমাকে চিঠি টা দিয়ে বলল আপুকে দিয়ে আসতে। (ম্রুনি)
এই কথা শুনে রনি চুপ হয়ে গেলো । আর কিছু বলতে পারলো না।
বাবাকে আরো অনেক কিছু বলে চলে গেলো হিমি আর হিমির বাবা।
এর পর রনির ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেলো। দরজা বন্ধ করে বেত দিয়ে মারতে লাগলো।
এরপর সিগারেটের আগুন পিঠে দিতে লাগলো। খুব কষ্ট হচ্ছিলো রনির।
চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছিলো। কিন্তু রনির এইসময় মায়ের কথা খুব মনে পড়ছিলো।
মা থাকলে হয়তো এতো মার খেতো না। সারারাত আর ঘুমাতে পারলো না। সকালের দিকে ঘুম পেলো।
উঠলো সেই বিকেলের দিকে। একেবারে শক্তিহীন লাগছে। কাল রাত থেকে কিছু খাওয়া হয়নি ।
তারওপর শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা। সে আস্তে আস্তে ছাদে গেলো । ছাদের এক কোনে দাড়াতেই দেখলো হিমি দাড়িয়ে আছে।
—> কি মি. রনি ? দেখলেন তো অহংকারীর পতন। এর পর যেন আর আমার সামনে না দেখি।
রনি কিছু না বলেই নেমে আসতে যাচ্ছিলো। এমন সময় হিমির বাবা ছাদে ঢুকলো। রনি কে দেখেই তিনি রেগে গেলেন।
—> এই ছেলে তোমার লজ্জা করে না। কালকে এতোকিছু হওয়ার পরও তুমি আবার আসছো ছাদে।
তোমার মতো ছেলেরা পৃথিবীর বোঝা । তোমাদের পৃথিবীতে না থাকাই ভালো। আসলে দোষটা তোমার না। তোমার বাবা মার ।
কারন তারা তোমাকে সাঠিক শিক্ষা দেয় নি।
—> দিয়েছে স্যার। এই দেখুন। বলেই তার সার্ট খুলে ফেললো।
—> আমার পিঠের প্রত্যেক টা দাগ বলে দেবে আমি কি পরিমান গ্রজুয়েট।
পিঠের দিকে তাকাতেই আৎকে উঠলেন হিমি এবং তার বাবা। পিঠে অনেক দাগ। রক্ত জমাট বেধে কালো বর্ণ ধারণ করেছে।
এরপর রনি সার্ট উঠিয়ে চলে গেলো। সন্ধায় বাসায় ফিরেই দরজা বন্ধ করে শুয়ে রইলো রনি।
এর মধ্যে অনেক সময় ম্রুনি দরজা ধাক্কিয়ে সরি বলে কান্না কাটি করেছে। কিন্তু রনি দরজা খোলেনি । এটা তার রাগ নয়, অভিমান।
রাত প্রায় ১২.০০ টা । রনি আস্তে করে বিছানা থেকে উঠে ড্রয়ার খুললো । ব্লেড টা বের করে মেঝেতে বসে ভাবতে লাগলো ।
সত্যিই তো , আমার মতো অনাথ রা পৃখিবীর বোঝা।
তাই আমাদের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। কোন অধিকার নেই। সজোরে ব্লেডটা চালিয়ে দিলো নিজের হাতে। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটতে লাগলো।
আজ কেন জানি তার কষ্ট হচ্ছেনা। তবে কার কথা যেন বার বার মনে পড়ছে। হ্যা! ম্রুনির কথা।
ও তো অনেক কান্না করছিলো। অকে কেন জানি খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। রনি উঠতে চাইতেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলো।
শরীর টা অবশ হয়ে আসছে। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। মাথাটা শুধু তলিয়ে যাচ্ছে পাতাল পুরির দিকে।
পরবিষ্ট:-
হিমি এখন পাগলা গারদে। এখন মাঝে মাঝে অনেক রাতে একটা কবরের পাশে কারো আর্তনাদ পাওয়া যায়।
—> ভাইয়া ! কেন এইভাবে চলে গেলে? কেন সরি বলার সুযোগও দিলেনা? কেন একবার ভাবলেনা
তোমার এই ছোট্ট বোন টা তোমায় ছাড়া কিভাবে থাকবে?
পাশে দাড়িয়ে চোখ মুছলেন এক অসহায় বাবা।
আজ তিনি নিজে শিক্ষা পাচ্ছেন ।