অনিচ্ছাকৃত শেষ চেষ্টা

অনিচ্ছাকৃত শেষ চেষ্টা

একদম সকাল সকাল ফাহিম ফোন করে বললো; রবিন ফ্রী আছিস? একজন প্র্যাগন্যান্ট রোগীকে ব্লাড দিতে হবে। ও আবার একটা ব্লাড ডোনেশন সংগঠনের কর্মী। ঘুমে ছিলাম, আমি বললাম; কোথায় আসতে হবে বল। সে বললো; খ্রিস্টান এসোসিয়েশন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। অনেকদিন পর বুকে একটা মোচড় দিলো হসপিটালটার নামটা শুনে। এই হসপিটালটা আমাদের অফিসের ম্যানেজমেন্টের সাথে সামহাউ রিলেটেড। আমাদের অফিসের যত কর্মচারীরা আছে, অসুস্থ হলে তাদের এখানে ট্রিটমেন্ট করানো হয়। আমিও ভর্তি ছিলাম দুই বছর আগে, প্রায় মাস খানেক যাবত। এখানের সবাইকে মোটামুটি চিনি। একসময় এখানে না আসলে দম বন্ধ হয়ে যেতো। দিনের অগ্রভাগ, অফিসের কাজ না থাকলেই ছোটে আসতাম আমি। যাইহোক ঘুম থেকে উঠে হালকা চোখে মুখে পানি দিয়ে একটা শার্ট পরে গেলাম হসপিটালে। ফাহিমকে ফোন দিলাম, তৃতীয় তলায় যেতে বললো। ওখানে গিয়ে একটা রুমে নার্স আমাকে তাড়াহুড়ো করে টেনে নিয়ে গেলো।

এখানে অনেক নতুন কর্মী দেখা যাচ্ছে। দু’বছর আগে তারা ছিলো না। যে রুমটাতে এখন ব্লাড দিচ্ছি এখানে এসে এক মিনিটের জন্য প্রতিদিন প্রিয়াকে কাছে পেতাম। সারাদিন ব্যাস্ত থাকতো। আমি এখানে প্রিয়াকে ছাড়া আর কোন নার্সকে এতো ব্যস্ত দেখিনি তখন। ব্লাড দেয়া শেষ। নার্সও কোন রকম দৌড়ে ব্লাড নিয়ে চলে গেলো। মে’বি প্যাসেন্টের কন্ডিশন সিরিয়াস। হাতে ওয়ানটাইম ব্যান্ডেজ লাগিয়ে ফাহিমকে উপরে রেখেই নিচে নামলাম। নিচে একটা ক্যান্টিন আছে, এখানে আমি বসে কতো অপেক্ষা আর কতো সিগেরেট ফুঁকেছি তার ইয়ত্তা নেই। ঢুকলাম ক্যান্টিনে। একটা সিগারেট ধরিয়ে বসলাম, যেখানটায় সব সময় বসে থাকতাম প্রিয়ার জন্য।

ক্যান্টিনে একটা মামা ছিলো, উনার নাম ছিলো জ্যাকসন। আমি উনাকে জ্যাক মামা বলে ডাকতাম। এই হসপিটালের ম্যাক্সিমাম কর্মী খ্রিস্টান ধর্মের। এখন উনিও নাই। সবাই নতুন। দু’বছরে এতো পরিবর্তন কীভাবে বুঝিনা। হতেই পারে।

আমি দু’বছর আগে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে এখানে এডমিশন হইছিলাম। আমার সার্বক্ষণীক সেবায় নিয়োজিত ছিলো ‘প্রিয়া রোজারিও’। এই হসপিটালের নার্স। এতো মিষ্টি একটা মেয়ে আমি আর কখনো দেখিনি। খুব ফরসা ছিলো না, শ্যাম বর্ণের। চুল অনেক লম্বা আর ঘন। চোখ দুটো গোল গোল। অসম্ভব মায়ায় ভরপুর ছিলো। আমি ইচ্ছে করেই ওকে জ্বালাতাম অনেক। মেয়েটা ঔষধ হাতের কাছে রেখে যেতো। আমি খেতাম না। ও এসে আমাকে খাওয়ালেই খেতাম।

প্রিয়া আমাকে যখন স্যুপ খাওয়াতো, ফুঁ দিয়ে গরম স্যুপ ঠান্ডা করে দিতো, তাও আমি বলতাম; আহ্ আপনার এতো ব্যস্ততা ক্যান? বাড়ি চলে যাবেন নাকি? গরম স্যুপ মুখে ঠেলে দিচ্ছেন যে? তখন ও ভয় পেয়ে ভালো করে স্যুপে ফুঁ দিতো আর তখন আমি ওকে মন ভরে দেখতাম। কত সুন্দর চোখ, নাক, গাল, কপালের ভাঁজ। সব কিছুই ভালো লাগতো। আমি প্রেমে পরে গিয়েছিলাম। পুরুষ মানুষ নাকি মরার খাটি থেকে বেঁচে উঠার সুযোগ পেলেও আগে পাশে মেয়ে আছে কিনা এটা দেখে। এখানে আমার এই আচরণ গুলো বোধকরি ওই দৃষ্টিকোণ থেকে স্বাভাবিক। আর ‘সুন্দর’ যদি চোখের সামনে থাকে, ঘোরাফেরা করে, সেবাযত্ন করে তাহলে চোখ বুঁজে থাকা সম্ভব নাকি বলেন?
অসুস্থ হলে আমি বড্ড খিটখিটে মেজাজী হয়ে যাই। খাবার তিতা লাগলে আম্মাকে বকতাম। যখন যা চাইতাম তা সাথেসাথ না পেলেই ক্ষেপে যেতাম। আম্মা মাঝে মাঝে বলতো অসুস্থ হলে তুই নিজেকে কি মনে করিস বলতো? এতো হাত পা ছেড়ে দিলে তাড়াতাড়ি সুস্থ জীবনেও হবিনা। মানুষকে একদম চাকর বানিয়ে ফেলিস। আমার যখন জ্বর উঠতো হাত পা কাঁপতে শুরু করতো, প্রিয়া ভয়ে আস্তে আস্তে আমার হাত ধরতো। মাথায় হাত দিয়ে জ্বর দেখতো। গলায় হাত রাখতো, একদম ব্যাস্ত হয়ে যেতো। আমি ফিল করতাম ওকে। প্রিয়া যখন আমাকে ইনজেকশন দিতো, আমি ওকে বারবার থামিয়ে বলতাম; আচ্ছা দাঁড়ান, আগে বলেন ব্যাথা পাবো নাতো? প্রিয়া বলতো একটু পাবেন। আমি বলতাম একটু কতটুকু? ও হেসে হাতের আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলতো এই যে এতটুকু। আমাকে বলতো আপনি ওইদিকে তাকান। আমি বলতাম; না আমি আপনাকে দেখবো। প্রিয়া কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যেতো, ঝটপট ইনজেকশন দিয়ে চলে যেতো।

কিছুদিন পর আমি একটু সুস্থ হই। কিন্তু হসপিটাল থেকে নামার উপায় নেই। একটা সিগারেট না খেতে পারলে যেনো আর টিকতে পারছিলাম না। কি করা যায় বুঝতে পারছি না। প্রিয়া ক্যাবিনে ঢুকলো। বাধ্য হয়ে আমি তাকে বললাম; আমার সিগারেট খেতে হবে। একটা সিগারেট আনতে পারবেন? ও বলছিলো; আপনার কি মাথা ঠিক আছে? নাকি জ্বরে মাথা খারাপ হয়ে গেছে? আপনার সিগারেট খাওয়া টোটালি নিষেধ। আর এখানে খাবেন মানে? এই প্রথম, প্রিয়া খুব রাগে কথা বলতেছিলো। আমি বললাম; অনেকদিন ধরে খাই না, কেমন যেন লাগছিলো। একটু খেতে পারলে ফ্রেশ লাগতো আমার। আচ্ছা সরি, ডিস্টার্ব করলাম। এ কথা বলে বেডে শুয়ে পরলাম। প্রিয়া বলতেছে খাবারটা খাবেন উঠেন। আমি বলছিলাম; রেখে যান পরে খাবো। ও বলছিলো, না এখন খাওয়া লাগবে আর ঔষধ খেতে হবে। আমি বারবার আসতে পারবো না। সেদিন আমার খুব মেজাজ খারাপ হয়েছিলো এটা শুনে, প্রিয়াকে একটা ধমক দিয়ে বলেছিলাম; এই আপনার সমস্যা কী? এতো কথা বলছেন ক্যান? বলছিনা খাবোনা? কথা কান দিয়ে যায়না? আর আপনাকে বারবার আসতে হবে না, আইসেন না আর। যান এখান থেকে। প্রিয়ার চোখ টলমল করছিলো সেদিন খুব।

পরেরদিন প্রিয়া রোজারিও সকালে আবার এসেছিলো। আমি ওয়াশরুমে ছিলাম। বের হয়ে দেখি, বেডের কাছে একটা কাগজে মোড়ানো এক প্যাকেট ব্যানসন সিগারেট আর একটা ম্যাচ রাখা। আরেকটা চিরকুটে লিখা ছিলো;
আমি দুঃখিত রবিন। আপনার ভালোর জন্যই চেষ্টা করতাম সবসময়। আমি ছাড়া অন্য কাউকে এখানে ডিউটিতে আসতে দিতাম না। আমি আপনার জন্য ডিউটি দুই জায়গায় একসাথে করতাম। তাই একটু ব্যস্ততা থাকতো মাঝেমাঝে। মাফ করবেন, আজকের পর আর আসবো না। উইশ, আর্লি সুস্থ হয়ে যান। আর সিগারেট কম খাবেন, এটা জঘন্য। আমি একটা সিগারেট ঝটপট খেয়ে নিলাম। প্রিয়া আর আসবেনা ব্যাপারটা আমার কেমন যেন লাগছিলো। তাও সিগারেট তো পেলাম। ভুলেই গিয়েছিলাম প্রিয়ার মনে গতকাল দেয়া আঘাতটার কথা। পরে সত্যিই আর আসে নি। দু’দিন পর আমি রিলিজ নিয়ে সিলেটে বাড়ি চলে যাই। বাড়িতে যাওয়ার পর খুব বেশি মিস করছিলাম প্রিয়াকে। ওর চেহারা, ওর হাসি, ওর রাগ, আর ওর লিখা কথাগুলো। আমার ওকে একবার হলেও সরি বলা উচিত, ওকে দেখা উচিত। তারপর আবার শহরে ব্যাক করেছিলাম। হসপিটালে এসে অনেক কষ্ট করে ওকে খুঁজে পাই। এতো ব্যস্ততা দেখাচ্ছিলো যে আমাকে চিনতেই পারছে না। পেছন পেছন যাচ্ছিলাম আর বলতেছিলাম; প্রিয়া একটু কথা ছিলো। ও শুনে নি ঝটপট চলে গিয়েছিল। আমি আবার সন্ধ্যায় এসেছিলাম, পাইনি। পরেরদিন আবার আসি এবং শেষে কথা বলেছিলো। খুব রাগ করেছিলো আমার ওপর, সেটা বুঝে ছিলাম। আমি ওকে সরি বললাম। দ্যান রাস্তায়, হসপিটালে সব সময় ওর পিছু পিছু। ডেইলি ওকে দেখা লাগবেই, ওর মিষ্টি হাসিটা একবার হলেও দেখতাম। এই হসপিটাল এরিয়াটাই আমার একটা ঠিকানা হয়ে গিয়েছিলো।

একদিন প্রিয়া বলেছিলো; আপনি কি এই হসপিটালে জব নিয়েছেন নাকি? আমি বলছিলাম; হ্যাঁ প্রতিদিন একজনকে এখানে এসে দেখাশোনা করার একটা চাকরী পেয়েছি। তার সুন্দর হাসিটা আমার সেলারি। প্রিয়া একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গিয়েছিল। একবার এই হসপিটালে একটা নবীনবরণ প্রোগ্রামে প্রিয়া নীল রঙের শাড়ি পরে এসেছিল। আর সেদিন নীল রঙের শাড়িতে ওকে পরীর মতো লেগেছিলো, খুব বেশি মায়াবী লাগছিল। আমি আর ধৈর্য ধরতে পারিনি। ওদিন প্রিয়াকে প্রপোজ করেছিলাম। প্রিয়া অনেক্ষণ চুপ থাকার পর আমাকে বলেছিলো; রবিন আমি জানি আপনি আমাকে পছন্দ করেন এবং এটাও সত্য যে আমিও আপনাকে পছন্দ করি। কিন্তু আমার নামটা জানেন তো? আমি বলছিলাম অবশ্যই জানি। আপনি প্রিয়া রোজারিও, আমার প্রিয়া। প্রিয়া বলেছিলো; আমি ক্রিশ্চান ইউ নো? এবং আপনি মুসলিম। আমি হেসে বলেছিলাম; আমি যে অনেক ভালোবাসি এটার ধর্ম কি প্রিয়া? তারপর আর বিশেষ আনুষ্ঠানিকতা দরকার পড়েনি। প্রিয়া আমার হয়ে গিয়েছিলো।

আমি সারা শহর আমার প্রিয়াকে নিয়ে ঘুরতাম। কেশবতী নদীর পারে ছুটির দিনে বিকেলে বসে আমার প্রিয়ার কেশের ঘ্রাণ শুকতাম। এই নদীটির নাম আরেকটি, কিন্তু দেখতে লম্বা কেশের মতো। তাই নাম দিয়েছিলাম কেশবতী নদী। প্রিয়া আমায় কবিতা শুনাতো। আমি আগা মাথা কিছুই বুঝতাম না। আমি আমার প্রিয়াকেই দেখতাম। প্রিয়া স্বপ্ন দেখতো তার একটা মেয়ে হবে, আর আমি যেন নাম রেখে দেই। আমি বলেছিলাম; স্পর্শ, আমাদের মেয়ের নাম হবে স্পর্শ। প্রিয়া আমাকে স্পর্শের বাবা বলে ডাকতো। আমাকে বলতো; জানো রবিন, হসপিটালে মানুষের এতো এতো আর্তনাদ, এতো কষ্ট এসব দেখতে দেখতে নিজেকে খুব সঙ্কুচিত করে ফেলেছিলাম। একটা গন্ডিতে এনে বেঁধে ফেলছিলাম। ভাবতাম জীবন খুব জরাজীর্ণ। বুঝতাম না এর বাইরে সুন্দর একটা জগত আছে, সংসার আছে ভালোবাসা আছে। ভাবিনি আর দশটা মানুষের মতো আমিও ভালোবাসবো। আর এতটাই বেসেছি যে…এতটুকু বলে প্রিয়া থেমে যেতো। আমিও এতোটাই দূর্বল হয়ে গিয়েছিলাম যে প্রিয়া ছাড়া কিছুই আর বুঝতাম না। এক সময় ঠিক করেছিলাম আমরা বিয়ে করে ফেলবো। আমি সবকিছুই অ্যারেঞ্জ করে ফেলছিলাম।

আমার সব স্বপ্ন প্রিয়াকে নিয়েই ছিলো। প্রিয়া হসপিটালের কাছেই একটা বাসায় থাকতো। যেদিন আমরা বিয়ে করবো সেদিন সকালে আমার ওকে বাসা থেকে রিসিভ করার কথা ছিল। আমি এসেছিলাম ভোরে, অনেক ঠান্ডা পড়েছিলো সেদিন। কাঁপতে ছিলাম বাসার নিচে দাঁড়িয়ে। অনেক কল দিচ্ছিলাম প্রিয়াকে। কিন্তু আর পাইনি। প্রিয়া হসপিটাল থেকে চাকরী ছেড়ে দিয়েছিলো, আমি ভেবেছিলাম আমাদের বিয়ের জন্যই হয়তো। কিন্তু না কিছুই সত্য হলোনা। প্রিয়া আমাকে একটা চিঠি লিখে চলে গিয়েছিল। চিঠিটা দুপুরে কেয়ারটেকার আমাকে দিয়েছিলো। চিঠিতে শুধু এটা বলেছিলো; ক্ষমা করে দিও রবিন, আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু তার আগে আমার বাবা মা আর তারও আগে আমার গড। আমি দুটো শ্রেষ্ঠ ভালোবাসাকে তুচ্ছ করে তোমাকে পাওয়াটা সম্ভব হবে না, ভেবে দেখলাম অনেক। গুরুতর পাপ হবে এটা। তাই এই শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছি। তোমায় ছেড়ে চলে যাচ্ছি। পারছিলাম না আর কিছু ভাবতে। তুমি ভালো থেকো। নিজের অযত্ন করো না।

আমি সেদিন উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলাম। আমাকে এভাবে ছেড়ে যাবে প্রিয়া সেটা ভাবিনি। আমি জানতাম এই ভালোবাসার জন্য সমাজে কোন স্পেস নেই তাও প্রিয়া ছিলো আমার একান্তই ভরসা। আমার পৃথিবী। পারিনি ফেরাতে, আমি ওর শহরে ঘুরেছি অনেক। ভেবেছিলাম সহস্র সমাধান। ভালোবাসার মাপকাঠি অন্যরকম, চেয়েছিলাম বুঝাতে প্রিয়াকে। একটিবারের জন্য ওকে আমার প্রয়োজন ছিলো। আর দেখতে পারিনি। পাইনি তাকে। আমি কবিতা লিখতে পারি না তাও রাত জেগে এলোমেলো কবিতায় ওকে সাজাতাম, গল্পে আমার প্রিয়াকে আমি নিজের করে নিতাম। কখনো কবিতার ভাষায় বিদ্রোহী হতাম, ওকে দোষারোপ করতাম। আর কবিতায় লিখতাম;-
আকাশচুম্বী আবেগ দিয়ে,
গল্পটা আজ প্রিয়াকে নিয়ে।

অল্প করে এগুতে যাচ্ছি কোন এক শহুরে মানব হবার তরে,
জনস্রোত যেন ক্রমেই বেড়ে চলছে যাত্রীর ভীরে।

কৌতুহল দিয়ে যাচ্ছে রঙ্গমঞ্চগুলো মনকোনে,
সেকাল থেকেই চলছিলাম শহুরে হবার স্বপ্ন গুনে।

প্রিয়া যে সেথায় বসত করে কোন এক কোনে,
আজ যুদ্ধ হবে পুরোটা নগর জেগে উঠবে
– যুদ্ধের ন্যায়।

আমি এসছি বলে জানালায় দাঁড়িয়ে দেখবে সেই কেশবতী, আমিও থেমে যাব।
– আচমকা মোহের দায়,
হারিয়ে ফেলি কেশবতীকে তার ব্যস্ততায়।

মাথা গুঁজার যুদ্ধে পুরো নগর আমায় নিচ্ছে কেড়ে প্রিয়া থেকে দুরে,
পরাজিত সৈনিক হয়ে প্রিয়ার সামনে হাঁটুগেড়ে।

শহুরে আমি অবাক তাকিয়ে রই,
এখানে আছে তার দেহ, রুপে সে এখনও টইটুম্বর শুধু আমি তার নই।

– ব্যর্থ ছিলাম না প্রিয়া, ব্যর্থতা কবু আমার নয়,
তোমার শহরনামা বিশালতায় ছিলো আমার পরাজয়।

দুই বছরে সব ভুলেই গিয়েছিলাম। প্রিয়া বলেছিলো ভালো থেকো। ভালো থাকছি, চেষ্টা করছি থাকতে। এই এরিয়া দিয়ে আর কখনো আসিনি। আসতে চাই’ও নি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি দেড় ঘন্টা সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। ক্যান্টিন থেকে ওঠে বের হলাম। একদম মধ্য দুপুর। হঠাৎ ফাহিম আসলো, বললো দোস্ত আজকে যাকে ব্লাড দিলি প্যাসেন্টটি মারা গেছে, প্রচুর ব্লিডিং হয়েছিলো। ও’ নেগেটিভ রক্ত পাওয়াটা মুশকিল হয়ে পড়েছিলো জানিস? প্যাসেন্ট নাকি এই হসপিটালের কর্মী ছিলো। তার নাম প্রিয়া রোজারিও। একটা মেয়ে হয়েছে খুব ফুটফুটে। তার মা’ তার নাম’ও রেখে গেছে ‘স্পর্শ’। সুন্দর না নামটা? বাচ্চাটা মাকে হারিয়ে ফেললো, খুব আফসোস হচ্ছে রে!
কিছুক্ষণ পর একটা অ্যাম্ভুল্যান্স আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। স্টেচারে করে আমার প্রিয়ার লাশ এনে ঢুকানো হচ্ছে অ্যাম্ভুল্যান্স’এ। মুখটা খোলা’ই ছিলো। খুব মায়াবী দেখাচ্ছে কেশবতীকে, আমার প্রিয়া। আজ কোন কষ্টই হচ্ছে না, কাঁদতে’ও ইচ্ছে করছে না আমার। কতো নির্বাক আমি। প্রিয়া চিরদিনের জন্য আজ চলে গেলো। একটু কাছে এগিয়ে গিয়ে বিড়বিড় করে বললাম; চলে যাচ্ছো? যাও, এটাই তো চাইছিলা। অনিচ্ছাকৃত শেষ চেষ্টাটাতে’ও তোমাকে ফেরাতে পারিনি। আজ, কে জিতেছে প্রিয়া?

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত