-আমি হিমু
রাত ১২টা বেজে ৩৫ মিনিট
চারিদিকে হালকা কুয়াশা।এখনো শীতের প্রকোপ ততটা পড়েনি।হালকা ঠান্ডা তার সাথে চাঁদের আলো।সব মিলিয়ে অন্যরকম অনুভুতি।পাশের রাস্তা দিয়ে মাঝে মধ্যে দুএকটা গাড়ি ছুটে চলেছে।শহরের প্রায় অধিকাংশ মানুষ ঘুমিয়ে পড়েছে। আমার মত যে মানুষগুলোর মনে হাজারো কষ্ট জমে আছে তারা বালিশের কাছে চোখের পানি বিনিময়ের মাধ্যমে কষ্টগুলো শেয়ার করছে।একটা মানুষ খুব বেশি কষ্ট না পেলে রাতের আঁধারে কাঁদেনা।আমিও অনেক কেঁদেছি তবে এখন আর কাঁদিনা।চোখের পানি শুকিয়ে গেছে।আমি হুসাইন।অনার্স ২য় বর্ষের ছাএ।আমি জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে চলে এসেছি।বেশি হলেও আর ১ সপ্তাহ বাঁচবো।আমার মধ্যে ভর করেছে মরণব্যাধী রোগ ক্যানসার।আজ থেকে ৮ মাস আগে এরোগ ধরা পড়ে।এতদিন শুধুমাএ টাকার জোরে বেঁচে আছি।বাবা আমার জন্য অনেক টাকা খরচ করছে।প্রতিমাসে রক্ত চেন্জ করতে হয়।প্রতিবার রক্ত চেন্জ করতে ৬ লক্ষ্য টাকা লাগে।এবার যখন রক্ত চেন্জ করতে গিয়েছিলাম তখন ডাক্তার বলে দিয়েছে আর রক্ত চেন্জ করে লাভ হবেনা।এই আট মাসে জীবনের অনেক কিছু হারিয়েছি।হারিয়েছি বললে ভুল হবে আমি নিজে থেকেই সবকিছু দুরে সরিয়ে দিয়েছি।আজ থেকে আট মাস আগে
–
টিং টিং টিং
ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
:-হ্যালো(আমি)
:-এখনো ওঠোনি?(নীলা(ছন্দনাম))
:-না।মাথা ব্যথা করছে তাই উঠিনি।কী করো?
:-ভার্সিটি যাওয়ার জন্য বের হবো।
:-তাহলে যাও।সাবধানে যেও।
:-আচ্ছা।তুমি ওঠে খাওয়া দাওয়া করে নাও।
:-আচ্ছা।
ফোন রেখে দিলাম।প্রতিদিন এই মেয়েটির ফোন কলে আমার ঘুম ভাঙ্গে।মেয়েটির নাম নীলা।আমরা দুজন সেম ইয়ার।নীলা আর আমার রিলেশন ফেসবুকের নীল সাদার দুনিয়া থেকে।নীলা ভার্সিটিতে পড়লেও আমার সুযোগ হয়নি ভার্সিটিতে পা রাখার।নীলা ভার্সিটিতে পড়লেও ওর মধ্যে বিন্দুমাএ অহংকার নেই।আমাকে প্রচন্ড রকমের ভালোবাসে।বলতে গেলে নিজের জীবনের থেকেও বেশি।একটা মেয়ে একটা ছেলেকে কতটা ভালোবাসতে পারে সেটা নীলাকে ভালো না বাসলে কোনদিনই বুঝতাম না।বিছানা ছেড়ে ওঠে পড়লাম। দরজা খুলে বাইরে পা বাড়াতেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম।এরপর আমার কী হয়েছে মনে নেই।যখন জ্ঞান ফিরলো তখন নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম।আমার মাথার কাছে আম্মু বসে আছে। আম্মু অনেক কেঁদেছে সেটা তার দিকে তাকিয়েই বুঝলাম। আম্মুর চোখে এখনো পানি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।আব্বুকে আশেপাশে কোথাও দেখছিনা।হয়তো বাইরে কোথাও আছে
:-আম্মু আমার কী হয়েছিলো?(আমি)
:-আমি তোর রুমের সামনে গিয়ে দেখি তুই ফ্লোরে পড়ে আছিস।তখন তোর আব্বুকে ডাক দিলাম।তারপর সবাইমিলে তোকে হাসপাতালে নিয়ে আসলাম।(আম্মু)
আমি আর কিছু না বলে চুপ হয়ে গেলাম।আমার এরকম হওয়ার কারণ খুজে পেলাম না কারণ এর আগে এমন কখনো হয়নি।
বিকেলে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলাম।নীলা সম্ভবত এখন ভার্সিটি থেকে ফেরেনি তাই এখনো ফোন দেয়নি।নীলা জানতে পারলে অনেক টেনশন করবে তাই ওকে বলবো না।আমার কিছু হলে ওর মাথা ঠিক থাকেনা।নীলার সাথে রিলেশনের তিন বছর পার হয়ে গেছে।এই তিন বছরে বুঝেছি একটা মেয়ে একটা ছেলেকে কতটা ভালোবাসতে পারে।নীলার সাথে পরিচয় হয়েছিলো ফেসবুকে।অনেকেই বলে ফেসবুক প্রেম কখনো সত্যি হয়না কিন্তু আমাদের ক্ষেএে সেটা ভিন্ন।আমাদের মাঝে অনেক ঝগড়া হয়েছে কিন্তু কেউ কারো হাত ছারিনি।
ফোনের শব্দে চমকে ওঠলাম।মানুষ যখন কোন বিষয় নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করে তখন ছোট্র শব্দেও চমকে ওঠে।আমার ক্ষেএেও তাই হলো।ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখি নীলার ফোন
:-ফোন ধরতে এত সময় লাগে?(নীলা)
:-তাড়াতাড়িইতো ধরলাম।(আমি)
:-একদম মিথ্যা বলবেনা।তুমি দেরী করে ধরেছো।
:-আচ্ছা সরি।এই বিষয়টা বাদ দাও।কখন এসেছো বাসায়?
:-বাদ দিবো কেনো?তুমি দেরী করে ফোন ধরলে কেনো তোমাকে শাস্তি পেতে হবে।
:-ঠিক আছে বলুন কী শাস্তি দিবেন?
:-আমাকে একটা গান শুনাতে হবে।
নীলার কথা শুনে আমি হেঁসে ফেললাম।দেরী করে ফোন রিচিভ করেছি তার জন্য শাস্তি পেতে হবে।শাস্তির বিষয়টাও অদ্ভুদ।ভালোবাসায় আবদারগুলো খুব ছোট থাকে কিন্তু আমরা অনেকেই সেগুলো মিটাতে পারিনা ফলে কিছুটা ফারাক দুজনের মাঝে সৃষ্টি হয়।
:-ওই একদম হাঁসবেনা।হাঁসলে তোমার নাক ফাটিয়ে দিবো।
:-আমার নাক ফেটে গেলে তোমাকে মানুষ নাক বোচার বউ বলবে।হি হি হি হি
:-বললে বলবে।
:-অনেক হয়েছে এবার রাখো ব্যাপারটা।
:-হুম
:-লান্স করেছো?
:-না,মাএ আসলাম।তুমি?
:-করেছি।
:-তাহলে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে তারপর ফোন দিও।
:-আচ্ছা।
ফোন রেখে দিলাম।
পানি পিপাসা পেয়েছে। পানি খাওয়াও জন্য ড্রয়িংরুমে এ আসলাম।
পানি খেয়ে আসার পথে খেয়াল করলাম কে যেনো মিনমিন করে কাঁদছে।
ব্যাপারটা ভালো করে খেয়াল করলাম।কান্নার আওয়াজ আম্মুদের রুম থেকে আসছে।
আম্মুদের রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।এবার দুজনের কান্নার আওয়াজ শুনছি।
আব্বু আম্মু দুজনেই কাঁদছে তার মানে!আমার মধ্যে অনেক কৌতুহল জেগে ওঠলো রুমের দরজায় ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো।
মনে হয় দরজা ভিতর থেকে আটকানো ছিলোনা।আব্বু আম্মু দুজনের চোখেই পানি।
আব্বুকে শেষ কবে কাঁদতে দেখেছিলাম ঠিক মনে পড়ছেনা।আব্বু আম্মু দুইজনকে এক সাথে কাঁদতে দেখে অবাক হলাম।
আব্বুর হাতে কিসের যেনো কাগজ আমাকে দেখে লুকাতে চাইলো কিন্তু পারলো না তাড়াহুরা করতে গিয়ে একটা কাগজ ফ্লোরে পড়ে গেলো।
আমি গিয়ে কাগজটা তুলে তাতে চোখ বুলালাম।শুরুতে বড় বড় করে আমার নাম লেখা রয়েছে।
মাঝ বরাবর চোখ পড়তেই দেখলাম তাতে লেখা ব্রেন ক্যানসার।আম্মু ওঠে এসে আমার হাত থেকে কাগজটা কেড়ে নিলো।
আমার যা বুঝার বুঝে গেছি।আমার ব্রেন ক্যানসার হয়েছে।আব্বু আম্মু দুজনেই এসে আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে দিলো।
আমি নির্বাক দর্শকের মত শুধু সবকিছু দেখে যাচ্ছি।আমার কাছে সবকিছু স্বপ্নের মত লাগছে।
মনে হচ্ছে খারাপ কোন স্বপ্ন দেখছি এখনি ঘুম থেকে জেগে ওঠবো কিন্তু না সবকিছু বাস্তবেই ঘটছে।
আমার চোখে কেনো জানি একটুও পানি আসছেনা।হয়তো এতবড় একটা আঘাতের কারণে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে।
আমি এখানে যত সময় থাকবো আব্বু আম্মু ততবেশি কান্না করবে তাই আব্বু আম্মুর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।
রুমে আসতেই নীলার ফোন আসলো। এখন ফোন রিচিভ করার কোন ইচ্ছা নেই।ফোনটা সুইচ অফ করে দিলাম।
যত সময় ফোন না ধরবো ততসময় একের পর এক ফোন দিতেই থাকবে।
মসজিদ থেকে আযানের ধন্নি ভেষে আসছে।আমি রুম থেকে বেড়িয়ে ছাদে ওঠলাম।
সূর্য পশ্চিম আকাশে ডুবে গিয়েছে কিন্তু লাল আভা এখনো রয়ে গিয়েছে।আকাশের পানে কিছুক্ষন একদৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম।
আজ কেনো জানি পৃথিবীটাকে অনেক সুন্দর মনে হচ্ছে।হয়তো তাড়াতাড়ি এই পৃথিবী থেকে চলে যাবো এই জন্য।
আমরা সেই জিনিসটার মূল্য তখনি বুঝি যখন সেটাকে হারিয়ে ফেলি।আমার ক্ষেএেও তাই হচ্ছে।কেনো জানি আজ বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা প্রবল হয়ে ওঠছে।
হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শ পেলাম।পিছন ফিরে দেখি আমার মেঝো ভাই।আমরা তিন ভাই।আমি সবার বড়।
:-ভাইয়া আম্মু জ্ঞান হারিয়েছে।তোকে সেই কখন থেকে ডাকছি শুনছিস না।(ইনামুল)
আমি তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এলাম।আম্মুর রুমে গিয়ে দেখি আম্মু বিছানায় শুয়ে আছে।ডাক্তার আঙ্কেলও এসেছে।
আব্বু আম্মুর মাথার কাছে বসে আছে।আমাদের আত্মীয়স্বজন সবাই আছে।আমার নানা বাড়ি বেশি দুরে নয়।
একই গ্রামে।নানা নানিও এসেছে।আমি গিয়ে আম্মুর পাশে বসলাম।আম্মু কেনো জ্ঞান হারিয়েছে সেটা আমার বুঝতে বাকি নেই।
ডাক্তার আঙ্কেল অনেক চেষ্টার পর আম্মুর জ্ঞান ফেরালেন।আব্বুরও কথা বলার মত শক্তি নেই।
এই মুহুর্তে যদি আমি শক্ত না হই তাহলে হয়তো আব্বুও অসুস্থ হয়ে পড়বে।আমার হৃদয়ের মধ্যে
একের পর এক ক্ষত হয়ে চলেছে তারপরেও নিজেকে শক্ত করলাম।ডাক্তার আঙ্কেল ওষুধ দিয়ে চলে গেলেন আর বললেন
কোন ক্রমেই যেনো আম্মুকে আর কোন টেনশন করতে না দিই।ছোট ভাই দুইটা এখনো জানেনা আমার ক্যানসার হয়েছে।জানলে ওরা অনেক কান্না করবে।
রাত ৮টা।
ফোনটা অন করলাম।ফোন করা মাএই নীলার ফোন।ফোন রিচিভ করলাম
:-তোমার ফোন অফ ছিলো কেনো?(কান্নাজরিত কন্ঠে)
আমি কী বলবো ভেবে পাচ্ছিনা।কী বলা উচিত তাও জানিনা।
:-ফোন হাত থেকে পড়ে গিয়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।(আমি)
:-জানো আমি কতবার তোমার ফোনে ট্রাই করেছি! কম করে হলেও হাজার বার।
:-সরি।
:-এখন ফোন ঠিক হয়েছে?
:-হ্যা।
:-খাওয়া দাওয়া করেছো?
:-করেছি।তুমি?
না খেয়েও মিথ্যা বললাম।
:-এখনো খাইনি।তোমার জন্য অনেক টেনশন হচ্ছিলো।
:-এখনতো টেনশন দুর হলো।এখন গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে নাও।
:-এখন খেতে ইচ্ছে করছেনা।তুমি কী করবে এখন?
:-না ইচ্ছা হলেও খেতে হবে।
:-আচ্ছা যাচ্ছি।তুমি ১০ মিনিট পরে ফেবুতে আসো।
:-আচ্ছা যাও।আর আমি ১১ টায় ফেবুতে আসবো।
:-সত্যিতো?
:-সত্যি।
:-বাই।লাভ ইউ
:-লাভ ইউ টু।
বিকেল থেকে ফোন অফ করে রাখার পরেও আমাকে তেমন কিছু বললো না।মেয়েটা এমনি আমার সাথে একটু কথা বললেই সব অভিমান ভুলে যায়।
ফোন রেখে দিলাম।নীলাকে দুরে সরিয়ে দিতে হবে।আমার এই অনিশ্চিত জীবনের সাথে নীলাকে আর জরাতে চাইনা।
কিন্তু কীভাবে বলবো!যদি সরাসরি দুরে সরে যেতে বলি তাহলে নিশ্চিত কিছু একটা করে বসবে।আচ্ছা যদি ওর মনে আমার প্রতি ঘৃনা
সৃষ্টি করে দিই তাহলে কেমন হবে?এটাই সবথেকে বেটার হবে।আমার প্রতি ওর মনে এতটা ঘৃনা জন্নাতে হবে যাতে আমার মুখটা কোনদিন দেখতে না চায়।
যায় আগে আম্মুকে ওষুধ খাওয়ায়ে দিয়ে আসি।
আম্মুর রুমে গিয়ে দেখি আমার দাদি আর নানি মিলে আম্মুকে ওষুধ খাওয়াচ্ছে।আমি যেতেই আম্মু আমাকে কাছে ডাকলেন।
:-খেয়েছিস কিছু?(আম্মু)
আম্মুর সামনে মুখ গোমরা করে থাকা যাবেনা।এমন একটা ভাব নিলাম যেনো আমার কিছু হয়নি।
:-খেয়েছি।(আমি)
:-ওষুধ খেয়েছিস?
:-হ্যা।
:-তাহলে এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
:-আচ্ছা
আম্মুর রুম থেকে চলে আসলাম।
এখন নীলাকে কীভাবে দুরে সরিয়ে দেওয়া যায় সেই পরিকল্পনা করতে হবে।নতুন একটা ফেসবুক আইডি খুললাম।
সেই আইডি দিয়ে নীলাকে রিকোয়েস্ট দিলাম।এবার আমি নীলার আইডিতে গিয়ে এপছেট করে নিলাম।
১০টার দিকে নীলা ফেসবুকে আসলো।মেসেঞ্জার দিয়ে আমার আইডি একটিভ রাখলাম আর অপেরা মেনি দিয়ে ফ্যাক আইডি।
আমি জানি এই ফ্যাক নীলা ঠিকই ধরে ফেলবে।আর যদিন ওর কাছে ধরা খাবো সেদিন ঠিকই নীলা আমার সাথে ব্রেকআপ করে চলে যাবে।
নিজের ভালোবাসাকে নিজেই দুরে সরিয়ে দিচ্ছি। আমার মত কেউ তার নিজের ভালোবাসাকে এভাবে দুরে সরিয়ে দিয়েছে কীনা আমার জানা নেই।
যতটা সহজ ভাবে কথাগুলো বলছি ততটা সহজ নয়।আমার মনের মধ্যে কী হচ্ছে সেটা আমি আর আল্লাই জানি।
মানুষ নিজের ভালোবাসাকে পাবার জন্য কতকিছু করে আর আমি আমার ভালোবাসাটাকে দুরে সরিয়ে দিচ্ছি।
অনেক কান্না পাচ্ছে।ইচ্ছে করছে এখনি বিষ খেয়ে মরে যায়। আত্মহত্যা যদি মহাপাপ না হতো তাহলে আমি আজই আত্মহত্যা করতাম।
আমার আইডির পাশাপাশি ফ্যাক আইডি দিয়ে নীলার সাথে চ্যাট শুরু করলাম।ফ্যাক আইডি দিয়ে নীলার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করতাম।
অনেক বাজে বাজে কথা বলতাম নীলাকে।আবার মাঝে মাঝে ব্লাকমেলও করতাম।নীলার আর আমার ছবি ওই ফ্যাক আইডি দিয়ে নীলাকে পাঠিয়ে বলতাম-“””আমাকে ব্লক করলে এইসব পিক ফেসবুকে ছেড়ে দিবো””
নীলা তখন বাধ্য হয়ে আমার সাথে চ্যাট করতো।আমার কাছে অনেকবার বলতো একটা ছেলে ওকে অনেক বাজে বাজে কথা বলে কিন্তু আমি দেখছি বলে এড়িয়ে যেতাম।
১৫দিনের মাথায় নীলার কাছে ধরা খেয়ে গেলাম।জানিনা নীলা কীভাবে বের করছে এটা আমার আইডি।যেভাবেই হোক করেছে।ফেসবুকে অনেক গালাগালি করে ফোন দিলো আমাকে
:-এই কুওার বাচ্ছা তুই এতটা খারাপ সেটা আগে জানা ছিলোনা।তোকে নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবেসেছিলাম আর তুই অন্য আইডি দিয়ে আমার—ছিঃ আমার ভাবতেও ঘৃনা হচ্ছে তোর মত একটা নোংরা মনের মানুষের সাথে আমি রিলেশন করেছি।ছিঃ।(নীলা)
আমি কিছুই বলছিনা শুধু চুপচাপ শুনছি।আমার কিছু বলার নেই কারণ আমিতো এটাই চেয়েছিলাম।নীলার প্রতিটা কথা আমাকে হৃদয়ে হারজটা ক্ষত বানিয়ে দিয়েছে।আমার বলতে ইচ্ছা করছে””” নীলা আমি খারাপ ছেলে নয়,আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি””কিন্তু বলা হলোনা।অনেক কান্না পাচ্ছে এখন।নীলা আবার বলতে শুরু করলো
:-আজ থেকে তুই আমাকে আর কোনদিন ফোন দিবিনা।যদি আমাকে কখনো একবিন্দু পরিমাণ ভালোবেসে থাকিস তাহলে সেই ভালোবাসার কসম দিলাম আমাকে কখনো ফোন দিবিনা।আর আমার যেগুলো পিক তোর কাছে আছে সেগুলো ডিলেট করে দিবি।গুড বাই
ওপাশ থেকে ফোন কেটে গেলো।কান থেকে ফোন সরানোর ক্ষমতটুকু আমার নেই এখন।মনে হচ্ছে আমার সব শক্তি হারিয়ে গেছে।চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে””হে আল্লাহ কেনো এত তাড়াতাড়ি আমাকে তুলে নিচ্ছো?কী অপরাধ করেছি আমি,?কিন্তু গলার নিচে কথাগুলো আটকে গেলো।নীলাকে আমি আমার জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি।
নিজের কাধে কারো হাতের স্পর্শে বাস্তবে ফিরলাম।পিছন ফিরে দেখি আব্বু।
:-তুমি এখনো ঘুমাও নি?(আমি)
:-ঘুস আসছেনা।আমাকে ক্ষমা করে দিস আমি তোর জন্য কিছুই করতে পারলাম।(আব্বু)
আমি আব্বুর দিকে খেয়াল করে দেখলাম তার চোখে জল।আমি আব্বুকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে দিলাম।আব্বুও আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদছে।
:-কালকে সকাল সকাল বের হতে হবে।চল ঘুমাবি।(আব্বু)
:-চলো।
আব্বুর সাথে নিচে নেমে এলাম।আব্বু আমাকে আমার রুমে শুয়ায়ে দিয়ে চলে গেলেন।
আজ ৮ মাস হলো নীলার সাথে আমার যোগাযোগ নেই।নীলাকে আজ বড্ডবেশি মিস করছি।এতদিন মিস করিনি তা নয়।এতদিনও মিস করেছি। রাতের আঁধারে চোখের জল ফেলেছি।তবে পরিবারের কাউকে বুঝতে দিইনি আমি অসুস্থ।সবাইকে সব সময় হাঁসিখুশি রেখেছি।আজ নীলাকে একটা ফোন দিই দেখি ও কী করছে।
ফোনটা হাত নিয়ে ফোন দিলাম।দুবার রিং হওয়ার পর রিচিভ হলো।ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো
:-কে আপনি?এতরাতে ফোন দিয়েছেন কী জন্য?(নীলা)
সেই চেনা কন্ঠ।আমার বুকের মধ্যে হার্টবিট দ্রুত ওঠানামা করছে।
:-কেমন আছো?(আমি)
ওপাশ থেকে কোন উওর এলোনা।শুধু ফোন কেটে যাওয়ার একটা শব্দ হলো।আমি আবার ফোন দিলাম।এবার নম্বরটা অফ দেখাচ্ছে।আরো কয়েকবার ফোন দিলাম কিন্তু প্রতিবারই ফোন অফ।
আর চেষ্টা করলাম।পৃথিবী থেকে যাওয়ার আগে আরেকবার নীলার কন্ঠটা শুনলাম এটাই অনেক বড় পাওয়া।নীলা অনেক ভালো আছে সেটা আমি জানি।ওর সব খোজখবর আমি রাখি।ও কোথায় যায় কী করে।আমাকে ভুলে এখন নতুন করে বাঁচতে শিখেছে।