‘আচ্ছা তুমি এমন কিপটা ক্যান?’
‘কিপ্টার কি হইল?’
‘দুই দুইজন মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছ,জানো না ছেলেরা সব খরচ বহন করে?”
‘শোন এমনিতে মাসের শেষ…হঠাৎ করে ঘুরতে যেতে বললেই তো আর যাওয়া যায় না।
তারপরে ও গিয়েছি তোমাদের সাথে।আর তুমি তো আগে থেকেই শেয়ার কর!
হঠাৎ কি প্রব্লেম?’
‘আচ্ছা তোমার আব্বু কিপটা ক্যান?’
‘আমার আব্বু কিপটা হবে ক্যান?’
জোভান মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ সে বাসা থেকে নেয় না।আবার নিজে ও টাকা আয় করে না,যে নিজের সখ আহ্লাদের পাশাপাশি তার বান্ধবীর সখ আহ্লাদ পুরণ করবে।
কয়েক ঘন্টা পর রাত ৯ টার দিকে যখন জোভান প্রেমাকে ফোন দেয়..।
প্রথম বারে ফোন গেলে ও ফোন রিসিভ করে না প্রেমা,জোভান আবার যখন ডায়াল করে তখন কল ওয়েটিং,এর ঠিক আধা ঘন্টা পর আবার ডায়াল করলে ও সেই ওয়েটিং!
জোভান আর ফোন করে না।এমন কি প্রেমার ও কোন ফোন ব্যাক আসে না।
পরের দিন,
‘কাল রাতে কত গুলা ফোন দিলাম ফোন রিসিভ করলা না ক্যান?’
আপুর সাথে কথা বলছিলাম!’
‘এক ঘন্টা ধরে আপুর সাথে কথা বলছিলা?’
‘হ্যা! কাল ঘুরতে গেলাম না,তাই আর কি! কার কার সাথে গেলাম…কি কি করলাম!
পরে আম্মুর সাথে ও কথা বলেছি অনেকক্ষন’
অবিশ্বাস্য কথা গুলোকে তবু ও বিশ্বাস করতে হয় জোভানের!
‘পরে তো ব্যাক করতে পারতা?
উহহ,ফোন ব্যাক করতেই তো চাইছিলাম,কিন্তু ফোনে তো ব্যালান্স ছিল না।’
যে মেয়ের ফোনে এক মিনিট কথা বলার মত টাকা থাকে না, সে একটা ছেলেকে এমনকি তার বাবাকে কিপটা বলে কিভাবে এর উত্তর খুজে পেল না জোভান। সে চুপ থাকল এবং নাটকের পরবর্তী অংশ দেখার জন্য প্রস্তুতি নিল।
প্রেমা হঠাৎ করেই অন্য প্রসংগে চলে গেল,
‘এই শোন ২৯ ফেব্রুয়ারি আসছে না?? ওইদিন তুমি আমাকে ২৯ টা গোলাপ দিবা’
জোভান বলল,’২৯ টা? এত গোলাপ কই পাব?’
‘কই পাবা মানে?? কিনবা’
জোভান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,চেষ্টা করব!’
‘শোন ২৯ তারিখ ভোর বেলা যেন গোলাপ গুলা পায়!’
কিন্তু আদৌ জোভানের পক্ষে ২৯ টা গোলাপ দেওয়া সম্ভব? ২৯ টা গোলাপ সে পাবে কই?
আর এর বাজার মুল্যই বা কত হতে পারে?
কমপক্ষে শ পাঁচেক তো হবেই!
গোলাপ কেনার মত সামর্থ্য তার নেই। যে টাকা ছিল তা কয়েক দিন আগে প্রেমা আর তার বান্ধবীর সাথে ঘুরতে গিয়ে শেষ হয়ে গেছে। এখন সে বাকি,ধার,কজ্জের উপর দিন চালাচ্ছে। তার গোলাপ কেনার টাকা না থাকতে পারে, একটা জিনিস কিন্তু ঠিকই আছে আর তা হল ভালবাসা পুর্ন এক কোমল হৃদয়।যে হৃদয়ের খোজে হাজার হাজার তরুনী তাদের জীবন শেষ করে দেয়।
কিন্তু প্রেমার মত অবুঝ মেয়েরা সময় থাকতে এই হৃদয়ের মুল্য দেয় না,যখন বুঝতে পারে তখন আর করার কিছু থাকে না।
জোভান তবু ও সাধ্য মত গোলাপ সংগ্রহ করে,কিনে হোক বা গার্ডেন থেকে মধ্য রাতে চুরি করেই হোক!
ফেব্রুয়ারি মাসের ২৯ তারিখ সকাল বেলা জোভানের পক্ষে সম্ভব হয় না গোলাপ গুলো প্রেমাকে দেবার।
সেদিন প্রেমার সাথে তার দেখায় হয়নি।এমনকি কথা হয় নি ফোনে ও !
০১ মার্চ সকাল বেলা তাদের দেখা হয়! অগ্নিমুর্তি মুখ গোমড়া করে বসে থাকে প্রেমা।
জোভান তার কাছে যায়, কথা বলার চেষ্টা করে কিন্তু প্রেমা কোন কথা বলে না।
যদি ও সাদা কাগজে মোড়া গোলাপ গুলা সে নেয় এবং একটা থ্যাংক্স ও দেয়। সেই কাগজে ২৯ টা গোলাপ ছিল না, তবে ২৯ টা গোলাপের পাঁপড়ি ঠিকই ছিল!
প্রেমার রাগ কমার বদলে আরো বেড়ে যায়, যে রাগ কোন ভাবেই ভাংগাতে পারে না জোভান,পরিশেষে পরদিন থেকে জোভান ও কথা বলা ছেড়ে দেয়। দুজন চলে যায় দুরকে দূর বহুদুর,হয়ে যায় যেন দুজন দুজনের আগন্তুক,অচেনা,অজানা ভিন্ন জগৎ এর মানুষ!
কেউ কারো নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করা বন্ধ করে দেয়।
প্রেমা ভেবেছিল,জোভানকে সে যত কষ্ট দেবে,জোভান তত তার আনুগত্য স্বীকার করে নেবে।
কিন্তু প্রেমার ধারনা ভুল ছিল। প্রেমার আচরণে প্রেমার প্রতি আনুগত্যের বদলে জোভানের ভেতর রাগ,ক্ষোভ এবং ঘৃণার সৃষ্টি হল।আর তার ফলাফল হল এমন, এত দিন দুজন যা এড়িয়ে চলত,এখন থেকে তা করতে লাগল।যেমন, প্রেমা পছন্দ করত না জোভান অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলুক!ঠিক জোভান ও চাইত না প্রেমা ও একই ভাবে অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলুক বা ছবি তুলুক।
দ্বিতীয়ত,প্রেমা চাইত জোভান যেন অন্য কারো সাথে ফোনে কথা না বলে! ঠিক জোভান একই ভাবে চাইত।
কিন্তু যখন দুজন দুজনের আগন্তুকে রুপান্তরিত হল তখন, কোথায় কি?
প্রেমা চ্যাট করতে শুরু করল ক্লাসের সবচেয়ে খারাপ এবং বাজে ছেলেগুলোর সাথে,যাদের নাম সে মুখেই আনত না কখনো।এমনকি প্রেমা নতুন একটা রিলেশন ও শুরু করল দুদিনের মধ্যে!
যে মেয়ে জীবনে কোন দিন রিলেশন করে নি, যার পিছনে জোভান এক বছর গাধার মত ঘোরার পর অর্ধেক এর ও কম(২৫%) সাড়া দিয়েছে।সে দুদিনে রিলেশন করা শুরু করল সিনিয়র এক বড় ভাইয়ের সাথে।এমনকি ডেটিং এ ও যাওয়া শুরু করল তারা বিভিন্ন প্লেসে বা পার্কে।
ক্লাসে জোভানকে এভোয়েড করে অন্য ছেলেদের কথা বলতে শুরু করল!
এমন এমন আচরন করত, যা দেখলে যে কোন প্রেমিক হৃদয় ভেংগে চুরমার হয়ে যেতে বাধ্য।
কিন্তু এসবে কিছুই হয় নি জোভানের!কারন তত দিনে তার মধ্যে শুধু ঘৃণায় সৃষ্ট হয়েছে।
আর তাই জোভান ও এর প্রতিশোধ নিতে জুনিয়র একটা মেয়ের সাথে কথা বলা শুরু করল এবং বন্ধু সমাজে ছড়িয়ে দিল সে ও নতুন রিলেশন শুরু করছে! প্রেমা বাদে বাকি সব মেয়ে যাদের সাথে জোভান কথা বলত না তাদের সাথে ও কথা বলতে শুরু করল প্রেমা কে শুনিয়ে শুনিয়ে।
দ্যাট মিনস প্রেমাকে কষ্ট দিতে যা কিছু করা যায়,তার সব জোভান ও করতে লাগল।
কেউ কারো সামনে কোন কথা পর্যন্ত বলে নি, কিন্তু অগোচরে তারা করে চলছিল বিরাট এক স্নায়ু যুদ্ধ! কেউ কিছু জানবে না,বুঝবে না কিন্তু তিলে তিলে ধ্বংস হয়ে যাবে দুটো মানব হৃদয়!
দুইমাস পর,
প্রেমা এই স্নায়ু যুদ্ধের কোন সমাধান খুজে পেল না।সে বুঝতে পারল আসলে জোভানের সাথে সে যা করেছে তা ছিল বেঠিক।
ইতি মধ্যে তার নতুন রিলেশীপে ও ভাংগন শুরু হয়ে গেছে ,তখন প্রেমার মনে হল জোভানই তার জন্য পারফেক্ট ছিল।কিন্তু তত দিনে দেরি হয়ে গেছে অনেক।জোভান প্রেমাকে ভালবাসতে ভুলে ঘৃণা করতে শিখে ফেলেছে। এই ঘৃণা দূর হবার নয়,ভালবাসায় পরিণত হওয়া ও সম্ভব নয়!