প্রতিদিন আম্মুর একই বকা। “তুই কি প্রতিদিন লেট করে যাবি কলেজে?”,”সকালে কিছু খেয়ে তো যা, খিদা লাগবে তোহ্”।
আর আমার একই উত্তর। “আরে লেট হচ্ছে তোহ্, কালকে আগে আগে খেয়ে যাব, টা টা মাম্মি”।
কলেজে গিয়ে হাপুস-হুপুস ক্লাস করি। তারপর চলে যাই পাশের পার্কে, ফটো তুলতে, আমার ডিএসএলআর-টা নিয়ে। কখনো পাখির ছবি, কখনো বন্ধু নামক বান্দরগুলার ছবি তুলতে।
প্রতিদিনের মতো ২০১৫ সালের ২৬ জুলাইয়েও গিয়েছিলাম ছবি তুলতে। সাথে বাঁধন, ফয়সাল, আরিফ। যাওয়ার পরই শুরু হয়ে গেল আরিফের লুইচ্চামি! কোন মেয়েটা কিউট, ওড়না কতো এঙ্গেলে পড়েছে, এসব। অতপর তাদের দৃষ্টি আটকে গেল একটি সুদর্শন মেয়ের দিকে।
ফয়সাল: “মারহাবা মারহাবা! মাশাল্লাহ!”
বাঁধন: “জঙ্গি ডিটেক্টেড!”
ফয়সাল: “ধ্যার ব্যাটা। হিন্দু বইলা মুসলমান মেয়ের টান বুঝতেছস না।”
আরিফ: “দোস্ত!”
আমি: “কারে কস?”
আরিফ: “তোর দাদারে কইতেছি।”
আমি: “অহ! বল”
আরিফ: “মেয়েটার একটা ফটো তুলে দে না পিলিজ”
আমি: “কোন মেয়ে? কার কথা কস?”
আরিফ: “চশমা আরও ২ডা লাগা! ওই গোলাপি
কালারের ড্রেস পড়া মেয়েটার ছবি তুলতো
একটা। তাইলে ১০০০টাকা খাওয়াবো নগদে।”
আমি: “অহ! এই ব্যাপার”
বাঁধন: “সৌমর চাপা এই ব্যাঁকা হইব মনে হয়”
আরিফ: “দেখিস দোস্ত মেয়ে টের পেলে
কিন্তু…”
আমি: “ধ্যার! আমারে করতে দে”
অতঃপর আমি বালিকার সামনে গেলাম।
আমি: “ইয়ে এইযে…”
মেয়ে: “জ্বি! আমি?”
আমি: “হ মানে হ্যাঁ আপনি!”
মেয়ে: “বলুন”
আমি: “না মানে আপনার একটা ছবি তুলতাম”
মেয়ে: “জ্বি?!”
আমি: “একটা তুলি?”
মেয়ে: “আচ্ছা তুলুন। দাঁড়ান ঠিক হয়ে বসি।”
—ক্লিক ক্লিক—
আমি: “হুম তুলেছি।”
মেয়ে: “বাহ বেশ ভাল হয়েছে।”
আমি: “অনেক ধন্যবাদ।”
মেয়ে: “দাঁড়ান, আমার আইডিটা নিয়ে যান। ট্যাগ করে দিবেন কষ্ট করে”
আমি: “অহ! থ্যাংকস (হেতেরে কিতা কয়)”
অতপর আমি আর বাকি ২টা আবুল মিলে আরিফের ট্রীট খেলাম। কিন্তু আমার কেমন যেন একটা
অনুভূতি হচ্ছিল। মেয়েটার আইডির নাম ছিল: ‘নীল ফড়িং’।
বাসায় ঢুকেই ল্যাপটপে ছবিগুলো কপি করে ফেসবুকে ঢুকলাম। মেয়েটার ছবি দেওয়া একটা প্রোফাইল পিকচার, আর সেখানে মেয়েটাকে আসলেই অনেক রূপবতী লাগছিলো। তাহাকে ট্যাগাইয়া ফটোখানা আপ্লোড করিলাম। ৫ মিনিট পরে তাহার কমেন্ট, “থ্যাংকইউ, আপনার ছবিটা তো জোশ হয়েছে”। এরপর ছবিটা শেয়ার হল ৫১বার! আমি বুঝিলাম প্রকৃতি থেকে মেয়েদের ছবি দোস্তরা বেশি পছন্দ করে!
সবাই শেয়ার করছে আর লিখছে, “এটেন্শান! আমাগো ভাবি! সৌম লাইফে ফার্স্ট একটা মেয়ের ছবি তুলছে। তার মানে এটা আমাগো
ভাবি!” মেয়েটার চশমার নিচে কিউট ২টা চোখ, মুখের টোল, গোলাপী-সাদা জামা – সবমিলিয়ে আমি আসলেই তাকে ভালবেসে ফেলেছি!
মেয়েটা আমাকে ইনবক্স করলো।
মেয়ে: কি করছেন?
আমি: এইত্তো…বসে আছি।
: ওহ! ছবিটা কিন্তু সুন্দর হয়েছে!
: হুম দেখতে হবে না কার ছবি!
: হা হা হা!
: তো আপনি কি করছেন?
: এইতো শুয়ে শুয়ে গান শুনি।
: কোন গান?
: একবার বল নেই তোর কেউ নেই।
: জ্বি ম্যাডাম!!!
: আরে গানের লাইন।
: ওহ হ্যাঁ হে হে!
: কালকে একটু দেখা করতে পারবেন?
: হ্যাঁ? হুম চেস্টা করে দেখি।
: চেস্টা করে মানে? আপনি মহিলা নাকি?
আপনার জন্য আমি পার্কে থাকবো আর আপনি আসতে পারবেন না?
: আমার জন্য! আচ্ছা আসবো! বলুন কয়টায়?
: ৫টায় আসেন। আর নামায পড়ে তারপর আসবেন।
: ঠিকাছে। তো আপনার নাম কি?
: স্যার, ফল পাড়ার পর এখন জিজ্ঞেস করছেন কি নাম! হা হা! আমি কনা।
: ওহ ভালা নাম!
: যান ঘুমান, আমাকেও ঘুমাতে দেন।
: যাচ্ছি। ভালো থাকবেন।
: হুম আপনিও।
পরদিন বিকাল ৪টায় পার্কে গিয়ে হাজির হলাম। সাথে আরিফ আর রনি। পার্কে গিয়ে আরিফের সাথে কোলাকুলি করলাম। ওর জন্যই আজ আমি দিওয়ানা।
তারপর শুরু হল আমার রিহার্সেল। লাইফে ফার্স্ট কাউকে ভালোবেসেছি। প্রাকটিস করে নিচ্ছি কিভাবে মেয়েটার বুক থেকে হৃদয় কেড়ে নিতে পারি।
আরিফ: ব্যাটা বলদ! হৃদয় কাইড়া নিলে মাইয়ার বডিতে রক্ত পাম্প করবে কেডায়?!
আমি: অহ বলদ নাম্বার ২! আমি জাস্ট একটা ঊপমা দিছি।
আরিফ: শুন, মেয়েরে আগে বলিস না তুই ওরে উলা উলা করস। মাইয়ার ফিলিংস আছে কি না হেইডা আগে দেখ।
আমি: হুম ঠিক।
রনি: দেখ প্রথমে ওর পাশে গিয়ে বসবি। তারপর সি শেল রেস্টুরেন্টে এ নিয়ে আয়, কিছু খাওয়া, মাইয়া পটে যাবে।
হঠাৎ আযান দিল। মনে পড়লো আমাকে নামাজে যেতে হবে। আমি দৌঁড়ে মসজিদে গেলাম। আরিফ আর রনিও এল। নামাজ শেষে পার্কে এসে দেখি কনা বসে আছে। সাথে একজন মহিলা বডিগার্ড নিয়া আসছে। হায়রে মাইয়া! আমি কাছে গিয়ে কনার দিকে তাকিয়ে “হাই” বললাম।
কনা: ইনি আমার আম্মু।
আমি: (ইয়া আল্লা! আমারে মাফ কইরা দিও) ওহ আস্সালামুআলাইকুম আন্টি!
আন্টি: ওয়ালাইকুমুস্সালাম ওয়া রাহমাতিকা!
কনা: আম্মু এইটা…
আন্টি: হুম বুঝেছি ইনিই সৌম।
আমি: জ্বি আন্টি!
আন্টি: তো বাবা দাঁড়ায়ে কেন? বসো।
আমি ভদ্রতাবসত আন্টির পাশে বসতে যাচ্ছিলাম।
আন্টি জোরে বলে উঠলেন: “এই বোকা, যাও কনার পাশে বস।”
আমি: (ওরে বাপরে! মা আইছে মাইয়ার ওকালতি করতে) জ্বি বসছি।
আমি লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছি আর মা- মেয়ে হাসতে হাসতে শেষ। আমি খেয়াল করলাম
আন্টি কনাকে বললেন, “তোরা তাহলে কথা বল আমি গেলাম।”
আমি: আন্টি চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।
আন্টি: বোকা, তুমি ওর সাথে থাকো। এজন্যই আমি যাচ্ছি।
আমি: চলুন আজকে এটুকুই থাকুক।
কনা: ঠিক আছে।
***১৪’ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৬***
কনা ডেকেছে। আজ আমিই ডাকতাম ওকে। তবে মেয়েটা রাত ১২:০৩ মিনিটেই ফোন দিয়ে বলে ব্রিজ এর উপর থাকতে। আল্লাহ! পাগলী কত প্রকারের যে হয়!
ব্রিজের উপর গেলাম। সাথে অনেকগুলা নীলগোলাপ (ভালবাসার মানুষকে কোনকিছু মেপে/গুনে দিতে নেই)। গিয়ে দেখি কনা দাঁড়িয়ে আছে। তাকে এতোই সুন্দর লাগছিলো যে আমি কে, কোথায় আছে সব ভূলে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমি ওর কাছে গেলাম। বললো, “কয়টা বাজে?” আমি বললাম, “উপস্! সরি ম্যাডাম লেট হয়ে গেল”।
কনা গোলাপগুলা দেখে একেবারে পিচ্চিদের মত করে বলল, “ওয়াও! এত্তসুন্দর! এইগুলা কি আমার জন্য?”,
“জ্বি ম্যাডাম আপনার জন্য”।
আমি ওর গাল ২টা একটু টিপে দিয়ে ফুলগুলা ধরিয়ে দিলাম। এই ৭ মাস রিলেশনে ‘আপনি’ থেকে ‘তুমি’তে নেমে এসেছি। এর বেশি কিছু-ই হয়নি। তবে আজ কিছু একটা হবেই। কনার নেক্সট টার্গেট যমুনা ফিউচার পার্ক।
নেক্সট টার্গেট কিন্তু জঙ্গি হামলা না ভাই!
অতঃপর গেলাম ওর সাথে জেএফপি তে। ওর চোখ দেখি বাইরের রাইডের দিকে। আমাকে বললো, “চল না রাইডে উঠি।” আমিতো ভয়ে শেষ! রোলার কোস্টারের মানুষগুলার চিৎকার শুনে আমার জীবন অর্ধেক শেষ হয়ে গেছে! উঠলে জীবন বইলা কিছু থাকবে না! তাও কনাকে খুশি করতে ২টা টিকিট নিলাম।
কনার এক্সাইটমেন্টের ঠেলায় উঠলাম রোলারকোস্টারে। রোলারকোস্টার চালু হওয়ার পর আমি বুঝতে পারলাম কনা কেন এতো রাইড থাকতে এটাতে উঠতে চেয়েছিল। ও আসলে আমার ডানদিকে বসে আমার ডানহাতটা ধরে ছিল। আর এতো শক্ত করে ধরে চিৎকার করছিল যে আমি ভয় পাওয়াই ভূলে গেলাম!
রাইড শেষ হল।
কনা বললো, “তো, হ্যাপি ভালেন্টাইন্স ডে। আর কি কিছু করবা?”
আমি: “নাহ…আর কি করবো…।”
কনা: “তো আমি গেলাম, টা টা।”
আমি: “কনা, শুনো…” কনা দাঁড়িয়ে গেল, মুখ ঘুরিয়ে তাকালো। বললো,
“বলো।”
আমি: “কনা আমি আসলে তোমাকে…” কনার চোখে মুখে এক্সাইটমেন্ট। কনা একেবারে আমার মুখের কাছে মুখে এনে বললো, “বলো বলো…”।
আমার হার্ট ১২০ বীটে পাম্প করছিল! আমি ওকে আস্তে করে বলেই দিলাম, “ভালবাসি”!
ও আমার বুকে একটা হালকা ঘুশি দিয়ে বললো,
“একটা শব্দ বলতে এতোদিন লাগে বুঝি! আমি তো প্রথমদিনেই তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি”।
আর কি! কাহীনি শেষ! (কষ্ট পাচ্ছেন আপনার গার্লফ্রেন্ড নাই বলে? কষ্ট পাবেন না।