-কিরে এখনো ঘুমাসনি? (জান্নাত)
–ঘুমিয়ে কি হবে?
-রাততো অনেক হলো এবার ঘুমা। (জান্নাত)
–তুইয়োতো ঘুমাসনি।
-ইচ্ছে করছেনা, তুই ঘুমাতো যা।
–হঠাৎ অধিকার খাটাচ্ছিস?
-এখনও আমার উপর অভিমান করে আছিস? (জান্নাত)
–কিসের অভিমান?
-সেদিন ইচ্ছে করে তোকে থাপ্পড় মারিনি, আমি সরি।
–পুরোনো কথা বলতে নিষেধ করছিলাম আমি।
-আচ্ছা বলবনা, কিন্তু প্লিজ রুবেল তুই রাত জাগিসনা। (জান্নাত)
–তুই ঘুমা।
-আমার ঘুম আসবেনা, আগে তুই ঘুমা।
–পাগলামি করছিস?
-তুই বুঝিসনা কিছু? এটা পাগলামি নাকি অন্যকিছু?(জান্নাত)
–কি হতে পারে এটা?
-অনুভব কর।
–আমার অনুভূতি নেই।
-অভিমান দিয়েই নাহয় বোঝ।(জান্নাত)
–দার্শনিক হলি কবে?
-আমি জান্নাত, দার্শনিক হলাম কিভাবে? (জান্নাত)
–কথার ভঙ্গিমায় বোঝা যায়।
-কথার ভঙ্গিমায় কি শুধু দার্শনিকতাই প্রকাশ পায়, আরো অন্য কিছু পায়না?
–হয়তো পায়, আমি অতকিছি বুঝিনা।
-এমন করছিস কেনো? একটু বোঝেক না।
–বুঝলে কি হবে?
-আগে বুঝেই দ্যাখ…..(জান্নাত)
–আচ্ছা বুঝলাম।
-চোখ বন্ধ কর..?
–হুমমম করলাম।
-এবার অনুভব করে দেখতো বুকটা ধুকধুক করছে কিনা?(জান্নাত)
–আমার যে অনুভূতি নেই….
-তীরে এসে তরী ডুবানোর অভ্যাসটা তোর গেলনা।
–সেটা কি নতুন করে বলতে হবে?
-একটু অনুভব করলে কি হয়?(জান্নাত)
–কি জানি।
-খুব বেশি কি ক্ষতি হবে?
–বড্ড ঘুম পাচ্ছেরে, তুই ঘুমা?
রুবেলের এমন আচরণে কান্না পাচ্ছে জান্নাতের। কি করে বোঝাবে সে, সে কি চায়। জান্নাতের বুকটা মোচর দিয়ে উঠলো। বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। কিছু একটা হারানোর ব্যথা। জান্নাত ভাবছে…আচ্ছাকোনকিছু হারিয়ে গেলেই কি এরকম অনুভূতি হয়? নাকি প্রিয় মানুষটার অদ্ভুত আচরণেই এমন অনুভূতি হয়?
–কথা বলছিস না কেনো? (রুবেল)
-এখন না ঘুমালে হয়না?(জান্নাত)
–তুইতো বললি বেশি রাত না জাগতে।
-আমার কথা কি সবসময় শোনস?
–হুমমম শুনিই তো….
-কচু শুনস হারামি।(জান্নাত)
–রাগ কিন্তু আমারো আছে।
-দেখা রাগ, শুধু পারিস আমার সাথেই রাগ দেখাতে। অন্য মেয়েরা রাগ করলেতো সরি টরি, জানু, মনু বলে রাগ ভাঙ্গাস। আর আমি ভুল করে সামান্য একটা থাপ্পড় দিয়েছিলাম বলে আমাকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছিস। আরে বাবা আর কত্ত সরি বলব? আমিও তো মানুষ নাকি? রোবট তো আর না। আচ্ছা গুড নাইট….(জান্নাত)
–ঘুমা এখন, কেমন?
-আমাকে নিয়ে কারো ভাবতে হবেনা।
–আমি ভাবলে সমস্যা আছে তর?
-কয়দিন ভাববি…?
–যতদিন মন চায়….
-কেনো তারপর কি ডাস্টবিনে ছুরে ফেলে দিবি?
–রাত অনেক হয়েছে, এত রাতে রেগে যাওয়া ভালো দেখায় না।
-আমি রেগে যাচ্ছি না।(জান্নাত)
–রাগলে তোর গাল লাল হয়…
-হ্রামি….
–অনেক কিউট লাগে তোকে।
-বদমাইশ, চামচিকা…
–ইচ্ছে করে তোর লাল গালটা টেনে দেই।
-ইতর, ছাতু, লুচু….
–একটু টানতে দিবিরে?
-এহহহ আইছে….(জান্নাত)
–আজ থেকে তোকে গালটুস বলে ডাকবো।
-তরে টুটটুট….
–এটার মানে কি?
-তুই ভালো জানিস হি হি হি….
–তোর হাসিটা সুন্দর।
-আজাইরা ঢপ।
–সিরিয়াসলি….
-তো কয়টা মেয়ে পটালি?(জান্নাত)
–একজন হাফ পটছে….
-পুরোপুরিভাবেই পটেছেরে…
–তুই সিউর?
-হান্ড্রেড পারসেন্ট….(জান্নাত)
–তাহলে বলে দিব….?
-আচ্ছা ঘুমাবোরে…
–কালকে লেকের পারে আসিস।
-পারবনা….
–আর নীল শাড়ীটা পরবি কিন্তু….
-আবল তাবল কি কস?
–হাতে চুড়ি পরতে একদম ভুলবিনা।
-হইছে এবার ঘুমা….(জান্নাত)
–কাজল ভালো করে দিবি যাতে লেপ্টে না যায়।
-আমার কাজল নেই।
–ঝুমকো কানের দুল পরে আসবি।
-ওরে আল্লাহ….
–আর হ্যা শোন…খোঁপায় বেলি ফুলের মালা দিবি, তখন তোকে অপ্সরীর মতো লাগবে। (রুবেল)
-আহারে সোনা কি বলে….
–আমি কিন্তু নূপুর পরিয়ে দিব?
-শুভ রাত্রি ভাইয়া…
মেসেজটা দিয়েই হেসে উঠলো জান্নাত। ও ইচ্ছে করেই ভাইয়া বলেছে যাতে রুবেল রেগে যায়। আর রাগলে রুবেলকে অনেক কিউট লাগে। রুবেলের সেই রাগি চেহারাটা কল্পনায় ভেবেই প্রচুর হাসি পাচ্ছে জান্নাতের। অথচ একটু আগেই তার মন খারাপ ছিলো। অদ্ভুত না? অপরপাশে রুবেলের গা জ্বলে যাচ্ছে।
সুন্দর একটা মুহূর্তে জান্নাতেরর মুখ থেকে ভাইয়া ডাক শুনবে সে কল্পনাও করতে পারেনি। এখন রুবেলের মনে হচ্ছে জান্নাতকে কাছে পেলে সে কামড় কাচার মতন আছড়াবে। রুবেল একেরপর এক মেসেজ দিচ্ছে আর জান্নাত সেগুলো সিন করে রেখে দিচ্ছে। বিষয়টা জান্নাতের কাছে বেশ মজার লাগছে। জান্নাত মুচকি মুচকি হাসছে আর রুবেলের দেওয়া মেসেজ গুলো দেখছে। মোবাইলের স্ক্রিনের উপর এক ফোটা চোখের পানি পরলো। জান্নাতের বুকে শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। মোবাইলের মেসেজ দেখছে জান্নাত, স্ক্রিনেরর উপর থাকা পানি মোবাইলের আলোতে চকচক করছে। পৃথিবীর সমস্ত সুখ বোধহয় এই একফোঁটা পানির মধ্যে নিহিত আছে। জান্নাতের পরনে নীল শাড়ী। খোপায় বেলিফুলের মালা। হাতে রং বেরঙ্গের লাল, নীলচুড়ি। কানে সুন্দর দুল। লেকের পারে বসে আছে সে। কিন্তু রুবেলের আসার কোন নাম গন্ধ নাই।অপেক্ষা করতেই ভালোই লাগছে। হঠাৎ রুবেল জান্নাতের পাশে বসে পরলো। কোন আগ্রহ না দেখিয়ে বলল…..
–উফফফ কি গরম, ভাল্লাগেনা। আসতেই চাইনি,
ধ্যাত জান্নাত ভেবেছিলো রুবেল এসেই ওকে দেখে অবাক হয়ে যাবে। ওর দিকে তাকিয়ে থাকবে। কিন্তু সেটা হলোনা। জান্নাতের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। রুবেল বলল….
–জান্নাত?
-হুমমম বল….(মুখটা ঘুরিয়ে)
রুবেল বুঝতে পারছে জান্নাতেরর মন খারাপ। রুবেল আর কিছু বললনা। সরাসরি জান্নাতের সামনে গেলো। তারপর জান্নাতের পা নিজেহাত দিয়ে টেনে আনলো। পকেট থেকে নূপুর টা বের করে জান্নাতেরর পায়ের উপর রাখতেই জান্নাত কেঁপে উঠলো। চোখটা ভিজে গেলো। রুবেল জান্নাতের পায়ে নূপুর পরিয়ে দিলো। জান্নাতের চোখে পানি ছলছল করছে। যেকোনো মুহূর্তে বর্ষন হতে পারে। রুবেল ঘাসের উপর পা মেলে বসলো, বলল….
–কাঁদছিস কেনো?
-খুশির ঠেলায়…(কাঁদছে)
–হা হা হা, ডায়লগ পালটালি না…
-(চোখে পানি)
–আজব, বাচ্চাদের মতন এভাবে ছিঁচকাঁদুনে কাঁদছিস কেনরে পাগলি….
-আমার ইচ্ছে তাই….
–ওলে ওলে গালটুস, আচ্ছা শোন একটা কথা ব রুবেল আর কিছু বলতে পারলনা। জান্নাত হু হু করে কেঁদে দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রুবেলকে। জান্নাতের কান্নার গতি কোন মতেই থামছেনা। ও রুবেলকে সমানে বকা দিচ্ছে। এদিকে কান্না তো আছেই। রুবেলও জান্নাতকে শক্ত করে নিজের বাহুডরে জড়িয়ে নিল। রুবেল ভাবছে… আচ্ছা জান্নাত কি আমায় খুশির ঠেলায় জড়িয়ে ধরলো নাতো? ধরলে ধরুক আমারতো ভালোই লাগছে।