-এই আরিফ চলে যাচ্ছ কেনো? এখানে আমাদের সাথে বসো। হার্টবিট টা যেন আবার বেড়ে গেল। রিমঝিম এর সাথে যখনই দেখা হয় বা হটাৎ সামনে পড়ে যাই কেমন যেন আমি অপ্রস্তুত হয়ে যাই আর আমার হার্টবিট বেড়ে যায়।এই বিষয়টা আমি প্রায়ই লক্ষ করি। আর ও যে আমাকে তুমি করে বলবে ভাবতেই পারিনি। এমন না যে ওর সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক বা খুব একটা কথা হয়। খালাতো বোনের বিয়েতে এসেছি।আমি বুধবারই চলে এসেছি।আম্মু আর আমার ছোট বোন কাল আসবে। বিকালে বাহিরে বসে বসে পুকুর এ মাছ ধরা দেখছিলাম আর তখনই রিমঝিমকে দেখতে পেলাম বাড়িতে ঢুকতে। ওর সাথে একজন মহিলাকে দেখলাম। নিশ্চয় ওর আম্মু হবে। আমি যেমন ওকে দেখে অবাক হয়েছি রিমঝিম ও আমাকে দেখে অবাক হয়েছে তা ওর চেহারা দেখে বুঝতে পারলাম….. কিন্তু ও এখানে কেন?
খালাকে জিজ্ঞেস করতেই বলল খালুর নাকি কি যেন এক আত্তীয় এর মেয়ে। মাস ছয়েক আগে আমাদের জেলায় এসেছে।আগে নাকি ঢাকাতে থাকত। আমি হুম বলে ওখান থেকে চলে আসলাম আপাতত। আপুর রুম এ গিয়ে দেখি রিমঝিম ও ওখানে বসে আছে সব কাজিনদের সাথে। আর ওরা কি নিয়ে যেনো হাসাহাসি করছে। আমি দ্বিধায় পড়ে গেলাম কি করব, যখনি রুম থেকে বের হয়ে চলে যাচ্ছিলাম…. তখনই রিমঝিম উপরের কথাটা বলল। আর রিমঝিম একটু সরে বসে আমার জন্য জায়গা করে দিলো।একটু সংকোচবোধ হচ্ছিল তবুও ওর পাশে গিয়ে বসলাম।
রিমঝিম মেয়েটাকে আমার ভালো লাগে বলতে গেলে প্রচন্ড রকম ভালো লাগে। আমি আর ও একসাথেই পড়াশোনা করি। আমি খুবই লাজুক টাইপের ছেলে। আমার যে কখনো কোনো মেয়ে কে মনে ধরবে ভাবতেই পারিনি। এইতো মাস পাচেক আগের কথাই ক্লাসরুমে বসে ছিলাম ফ্রেন্ডস দের সাথে আড্ডা দিচ্ছি ঠিক তখনই রিমঝিম ক্লাসে প্রবেশ করল। ওকে দেখে কেমন যেন একটা ভালো লাগার অনুভূতি হলো। ওকে খুব ভালোভাবেই মনে ধরলো। আমি এটা বলব না যে ওর থেকে সুন্দর মেয়ে আমি কখনো দেখিনি কিন্তু কেন যেন ওকে আমার প্রচন্ড রকম ভালোলাগতে লাগলো। মনে হলো ওর প্রেমে টুপ করে পড়ে যাওয়া যায়। আর রিমঝিম ও দেখতে যে অসুন্দর তা নয় স্নিগ্ধা ও বেশ সুন্দরি।
ক্লাসের প্রায় সবাই ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো দেখলাম। ও হেটে আমার ডান পাশের সিট এ বসলো। তখনই ক্লাসে স্যার চলে আসলো। আমি অবশ্য তখনো তার নাম জানতাম না স্যারই বলল যে ও হচ্ছে রিমঝিম… আমাদের কলেজে ট্রান্সফার হয়ে এসেছে। ক্লাস শেষে অনেকেই ওর সাথে কথা বলল যে আগে কোথায় থাকতো, কোন কলেজে পড়তো এইসব। কিন্তু আমি যে ওর পাশে বসেছিলাম আমিই কিছু জিজ্ঞাসা করিনি। একবার ভাবলাম কিছু কথা বলি কিন্তু কেনো যেনো মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছিল না। আমি উঠে ক্লাসের বাহিরে চলে গেলাম। তারপর থেকেই মাঝে-মাঝেই সুযোগ পেলে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম ওকে। সরাসরি ওর দিকে আমি বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারি না। খুব অসস্তি লাগে তখন।
রিমঝিম এর সাথে কখনো কথা বলতে যাই নি। ও কি না কি আবার মনে করে। তাই ওকে ভালোলাগা সত্তে ও এই ইতস্তত বোধ এর কারনে কথা বলে হয়ে উঠেনি আমাদের। একদিন ক্লাসে বসে আছি…. ক্লাসে তেমন কেউ নেই তখন। আমি, রিমঝিম আর ২-৩ জন। হটাৎই স্নিগ্ধা আমার সামনে এসে বলল হাই…কেমন আছেন? বসব এখানে? আমার হার্টবিট প্রচন্ড বেড়ে গেলো। কোনোরকমে বললাম হুম ভাল…বসুন না এখানে আপত্তির কি আছে! কন্ঠ টা যেন একটু কেপে উঠল। ও বসে বলল আসলে আমি তিনদিন আসিনি তো… যদি আপনি একটু নোট গুলো দিতেন গত ক্লাসগুলোর ….. আমি কাল-পরশুর মাঝেই দিয়ে দিব আপনাকে। (আমার খুব ইচ্ছে করছিলো বলতে… এই মেয়ে এই… আসলে না কেনো এতদিন।তুমি জানো না আমার চোখজোড়া তোমায় খুজে। তোমাকে দেখে কত ক্লাস পার করে দিয়েছি।)
-আমি কিছু না বলে একটু হাসলাম কেবল। নোটগুলো ব্যাগ থেকে বের করে দিয়ে দিলাম। দুইদিন পরে ক্যান্টিনে বসে আছি তখনই আবার রিমঝিম আসলো।এসে সামনে বসতে বসতে বলল কেমন আছেন?
-এইতো ভাল। আপনার কি খবর?
হুম ভাল। এই যে নিন আপনার নোট। আচ্ছা আপনি এত কম কথা বলেন কেনো?ক..কই! কম কথা বলব কেনো! সবার সাথেই তো কথা বলি। কখনো তো আমার সাথে বলেন নি? কেনো? না মানে.. আসলে..বেপারটা…আসলে (কিভাবে বলি মেয়ে তোমার সামনে যে আমার সব কথা গুলিয়ে যায়।) তারপর কি বলব ভেবে পেলাম না….কিছু বলছিনা দেখে রিমঝিম বলল আচ্ছা আসি তাহলে পরে কথা হবে।এইটা বলে চলে গেল।বাস ওইটুকুই রিমঝিম এর সাথে আমার কথা। এই পাচ মাসে। তিন, যখনি ওর পাশে গিয়ে বসলাম আপু জিজ্ঞাসা করল কিরে তোরা এক-অপরকে চিনিস নাকি? আমার কিছু বলতে হলো না.. রিমঝিমই বলল।
-হ্যা। চিনি।খুব ভালো করেই চিনি। (ওর চোখে কেমন জানি দুষ্টামির হাসি।এই মেয়ে সিউর আমাকে মারবে।)
-কিভাবে চিনিস?
– না! মানে! আমি আর ও ক্লাসমেট। একই সাথে পড়ি।
-ও..ক্লাসমেটই নাকি অন্যকিছু!
-অন্যকিছু হতেও পারে। শুধু একজন বুঝলেই হয়।
এই কথা টা রিমঝিম কেমন করে যেন আমার দিকে তাকিয়ে বলল। অন্যকিছু হতেও পারে বলে কি আমাকে ইংগিত করলো! আচ্ছা রিমঝিম ও কি আমাকে পছন্দ করে! ওর কথায় পসিবিলিটি তো আছে তবু ও মন থেকে এই ধারণা বাদ দিলাম। আচ্ছা ওকে কি সরাসরি জিজ্ঞাসা করব! ধুর কি সব ভাবছি।ও আবার কিছু মনে করলে। আপুর কথায় ভাবনার জগৎ ভাঙলো।
-কিরে কোথায় হারালি?একদম চুপ মেরে বসে আসিছ যে। আরেক কাজিন বলল রোমিও তার জুলিয়েটের পাশে বসে আছে।এখন কি আর আমাদের সাথে কথা বলার টাইম পাবে। সবাই হাসছে। সাথে রিমঝিম ও যেনো এই কথায় মজা পেয়েছে। (এই মেয়ে এত হাসো কেনো হ্যা?আমি আছি অসস্তিতে আর উনি হাসছে।)
-আর জুলিয়েট ও কম কিসে! দেখলি না কি সুন্দর ওর পাসে জায়গা করে দিলো রোমিও কে বসার জন্য। (আমার কাজিন দের এইটা একটা দোষ। কাউকে খেপাতে এরা ওস্তাদ।)
-তো আর কাকে বসতে দিবো! হ্যা? জুলিয়েট এর পাশে তো রোমিও ই বসবে। রিমঝিম এর কথা শুনে আমি থ হয়ে গেলাম। রিমঝিম ও ওদের সাথে তাল মিলাচ্ছে। আমি সাথে সাথে ওখান থেকে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। চার,
-আচ্ছা তুমি তো আমাকে ভালবাসো তাইনা! তো প্রোপজ করবে না আমাকে?
-মানে?
-ইস!আবার মানে জিজ্ঞাসা করে। যেনো কিছু বুঝে না।
কেনো তুমি কি আমায় ভালবাসো না? আমি কি বলব ভেবে পেলাম না। রিমঝিম যে আমাকে ডিরেক্টলি এরকম কিছু আস্ক করবে ভাবতেই পারিনি। এখান থেকে যে উঠে চলে যাবো! তাও পারছিনা। গায়ে হলুদ এর দিন সবাই বসে মেহেদি দিচ্ছে আর আমি শুধু দেখছি বসে বসে।আমার আবার এসব মেহেদি দেওয়া ভালো লাগেনা।
তখনই রিমঝিম বলল কি বেপার জনাব আপনি কি মেহেদি পরবেন না!হুম? আমি যখনই না বলতে যাব তখনই আপু বলল উনি আবার মেহেদি দেয় না। মেহেদি দিতে নাকি উনার ভালোলাগে না। রিমঝিম বলল দিবে না মানে! এইটা বলেই আমার হাত ধরে ওর সামনে বসিয়ে দিলো! কেন যেনো উঠে যেতে মন চাইল না! রিমঝিম যে আমার হাত ধরে আছে আর মেহেদি দিয়ে দিচ্ছে। আপু বলল হুম!এখন তো দিবিই আর আমরা বললে নাই। বুঝি বুঝি সবই বুঝি। আমি কিছু বললাম না। কে যেন বলেছিলেন যে“ মানুষ সবচেয়ে বেশি অসহায় তার ভালবাসার মানুষের কাছে।” আমার অবস্থা ও এখন তাই। তখনই রিমঝিম আমাকে উপরের কথা গুলো ফিসফিসিয়ে বলল।
-আচ্ছা থাক বলতে হবে না! এই তোরা কি ফিসফিস করছিস রে তখন থেকে!হ্যা?
-না এমনি। তেমন কিছু না।
রাতে ফাংশন শেষে সবাই যার যার মত চলে গেলো ঘুমাতে। আমিও চলে গেলাম ঘুমাতে কিন্তু ঘুম আসছিলনা।তাই বের হয়ে পুকুর পাড়ে গিয়ে বসলাম।পুকুরের পানিতে চাঁদের আলো এক অন্যরকম সৌন্দর্য তৈরি করেছে।
কিছুক্ষন পর দেখলাম রিমঝিম এসে আমার পাশে বসলো। আমার কিছু বলা উচিৎ কিন্তু কেনো যেনো কিছু বললাম না চুপ করে থাকলাম।
-আমার কিন্তু এতোটাও চুপচাপ আর লাজুক ছেলে পছন্দ না।
-কি করব বলো।আমি যে এরকমই।
-এরকম থাকলে চলবে না, একটু চেঞ্জ হতে হবে। আমার সাথে কথা বলতে এত সংকোচ করো কেনো, হ্যা!কিসের এতো জড়তা?
-জানিনা। ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।
-ধীরে ধীরে হলে চলবে না। আজ থেকেই জড়তা কাটাতে হবে।
-যো হুকুম ম্যডাম! আচ্ছা তুমি বুঝলে কি করে যে আমি তোমায় ভালবাসি!
– তোমার চোখেই তা প্রকাশ পায়।
-বাই দি ওয়ে।তুমি কিন্তু এখনো আমায় প্রোপজ করনি!
-তুমি জানই তো আবার প্রোপজ কেনো?
-না জানি না। এখন করো।
-করতেই হবে?
-জি জনাব।
কিছুক্ষন ভাবলাম, অনেক ভাবলাম যে কিভাবে প্রোপজ করবো! কিন্তু ভেবে কিছুই পেলাম না।তাই সোজা “আমি তোমায় ভালবাসি “এইটা বলার সিদ্ধান্ত নিলাম।
-আ..আমি তোমায় ভালবাসি রিমঝিম। বলতে মনে হয় ২ সেকেন্ড ও লাগেনি।ও বুঝেছে কিনা কে জানে। দেখলাম ও হেসে ফেলল আমার কথা শুনে
-এত সাদাসিধে প্রোপজ তাও আবার এত জলদি। আচ্ছা বেপার না। চলবে।
-চাইলে হাত ধরতে পারো। আমার মনের কথাটাই যেনো ও বলল।
-অনেক সাহস করে ওর হাত ধরলাম। হাত ধরায় ও যেনো একটু খুশিই হলো। সামনে ওর সাথে দিনগুলো বেশ সুন্দর কাটতে যাচ্ছে। সত্যিই সুন্দর কাটতে যাচ্ছে। জীবন টা নেহাতই মন্দ নয়!