– তোর লজ্জা করেনা আমায় প্রোপোজ করতে? কি আছে তোর? আমাদের বাড়ির চাকররাও তোর থেকে দামি ড্রেস পড়ে, তোর সাথে আমি নিজে সেধে কথা বলেছি সেটাই তোর সৌভাগ্য।যত্তসব ছোটোলোক।আঙ্গুল দিলে পুরো হাতটাই ধরে বসে।ভীষণ অহংকার ছিল তোর তাই না? কারো সাথে কথা বলতিস না।কেউ কথা বললেও গুরুত্ব দিতিস না তাই না?
দেখ এখন কেমন লাগে।তোর অহংকার ভাঙার জন্যই এইসব করেছি।আশা করি ভালই শিক্ষা পেয়েছিস।নাও গেট লস্ট। তোকে এখানে রেখে নিজের স্ট্যাটাস ডাউন করতে চাই না।
আশেপাশের সবাই আমার অপমান দেখে যেন একধরনের পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছিল যা তাদের হাসিতেই ফুটে উঠছিল।আর পাবেনাই বা কেনো এখানের সবাই যে নিলাঞ্জনার বন্ধু আর সবাই তারই স্ট্যাটাসের।
“নিলাঞ্জনা” এই নামটি ভাবলেই গত কয়েক ঘন্টা আগেও যেন আলাদা একধরনের অনুভূতি অনুভব করতাম নিজের মধ্যেই।গত কয়েকঘন্টা আগেও যেন হৃদয়ের বামপাশটিতে ভালোবাসার আবেশে খন্ডিত করা ছিল এই নামটি,নামটি এখনও খন্ডিত করা আছে কিন্তু সেটি ঘৃণার আবেশে।
আমি বরাবরই একটু চুপচাপ স্বভাবের।সবার সাথে কথা বলিনা আর কথা বলতেও তেমন ভালোলাগেনা।একলা থাকতেই বেশি পছন্দ করি।কিন্তু নিলাঞ্জনা এটাকেই আমার অহংকার ভেবে নিয়েছে।
নিলাঞ্জনার সাথে আমার প্রথম পরিচয় কলেজে।আমরা দুজনে একই ডিপার্টমেন্টে পড়ি। নিলাঞ্জনাই প্রথমে আমার সাথে পরিচিত হতে এসেছিলো এবং কথা বলেছিল।এরপর মাঝেমধ্যে সে আমার সাথে কথা বলত একটু আধটু। সুন্দরী ও বড়লোক ঘরের মেয়ে হওয়ার সুবাদে কলেজে নিলাঞ্জনার ফ্রেন্ড সার্কেল ভালোই ছিল।
প্রতিদিনই সে তাদের সাথে ক্যাম্পাসে আড্ডা দিত।মাঝেমধ্যে আমায় ও ডাকতো সে।কিন্তু ব্যাস্ততা দেখিয়ে চলে আসতাম আমি।কারণ তাদের মাঝে নিজেকে কল্পনা করতেই কেমন যেন বেমানান লাগে।
যেখানে তারা সবাই প্রতিদিন গাড়ি করে কলেজে আসত সেখানে আমি আসতাম পায়ে হেটে।যেখানে তারা প্রতিদিন নতুন ড্রেস পড়ে আসতো সেখানে আমি দু’জোরা ড্রেস বদল করে পড়তাম সারা মাস।যেখানে প্রতিদিনের কলেজ শেষে তাদের গন্তব্যস্থল ছিল কফিশপ সেখানে আমার গন্তব্যস্থল ছিল ছাত্রের বাড়ি।তাই তাদের মাঝে নিজেকে বেমানান লাগাটাই স্বাভাবিক।
এরপর কিছুদিন পরে একদিন অফ প্রিয়ডে ক্যাম্পাসের এককোনায় একটি গাছের তলায় বসেছিলাম।হঠাৎ নিলাঞ্জনা সেখানে এসে বলল
-তোমার ফোন নাম্বারটা দাও তো।(নিলাঞ্জনা)
-কেন?
-একটা সাবজেক্টে অসুবিধা লাগছিল তাই তোমার কাছ থেকে একটু বুঝে নিতাম তাই।
-তা এখন বুঝে নাও।
– এখন একটু বন্ধুদের সাথে বেরাবো।রাতে ওই সাবজেক্টটা নিয়ে বসবো তাই তখন বুঝে নেব।
এরপর ফোন নাম্বার নিয়ে নিলাঞ্জনা চলে গিয়েছিল এবং সেইদিন রাতে আটটার দিকে ফোন করেছিল।
-হ্যালো। (আমি)
– হ্যালো।আমি নিলাঞ্জনা।
-হ্যা।বলো তোমার কোন সাবজেক্টে অসুবিধা?
-আসলে সেটা না।আমি তোমায় অন্য কিছু বলার জন্যে ফোন করেছি।
-হ্যাঁ।বলো।
-আসলে আমার মনে হয় আমি তোমায় লাইক করি।বেশ কিছুদিন ধরেই আমি তোমার প্রতি আলাদা কিছু ফিল করছি।
-এটা কখনো সম্ভব না নিলাঞ্জনা।আর তাছাড়া আমি সবসময় একা থাকি এমনকি জরুরি কারণ ছাড়া তেমন কথাও বলিনি তোমার সাথে কখনও।তাহলে কি করে এমন ফিল করলে তুমি?
-আমি সেইসব জানিনা।আমি শুধু চাই তোমার পাশে থেকে তোমার দুঃখগুলিকে ভাগ করে নিতে।
-তা কখনো সম্ভব নয়।তোমার আর আমার মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য।
-আমি তোমায় ভালোবাসি।আর এই ভালোবাসা দিয়েই সব সম্ভব করে নেবো।
এরপর থেকে প্রতিদিনই নিলাঞ্জনা আমায় কল করে খোঁজখবর নিত এবং কলেজেও বেশিরভাগ সময় আমার সাথেই কথা বলত।প্রথম প্রথম তেমন গুরুত্ব না দিলেও কিছুদিন পর থেকে এই জিনিসটা আমার কাছে ভালো লাগতে শুরু করেছিল।এটা ভেবে ভালো লাগত যে আমার খোঁজখবর নেওয়ার জন্যও কেউ আছে মা বাবা ছাড়া।নিলাঞ্জনাও বুঝতে পেরেছিল যে আমারও তাকে ভালো লাগতে শুরু করেছিল।
আজ নিলাঞ্জনার জন্মদিন ছিল।কিছুদিন আগেই সে বলেছিল আমি যেন জন্মদিনে তাকে প্রোপোজ করি এবং এটাই নাকি তার কাছে শ্রেষ্ঠ উপহার হিসেবে গণ্য হবে।তার কথামতোই আমি আজ তাকে প্রোপোজ করেছিলাম আর উওরে নিলাঞ্জনা উপরের কথাগুলিই আমাকে বলল।অভিনয়টা আমি বুঝতে পারিনি।অবশ্য বোঝার ও ক্ষমতা নেই।এমন নিখুঁত অভিনয় খুব কম লোকেই করতে পারে।এমনকি আজ তুই করে বলতেও দ্বিধাবোধ করেনি।সত্যিই আজ বড়লোকেদের ভিড়ে এই পৃথিবীতে নিজেকে খুব নগন্য বলে মনে হচ্ছে।
এইসব ভাবতে ভাবতে অনেকটা পথ চলে এসেছি।হঠাৎ সামনে কিছু মানুষের ভিড় লক্ষ্য করলাম।সামনে এগিয়ে যেতেই দেখলাম একটা বারো-তেরো বছরের ছেলেকে ল্যাম্পপোস্টের সাথে বেধে একজন লোক মারছে।ছেলেটির ঠোটের পাশে হালকা কেটে গেছে, দুইগালে হাতের আঙুলের ছাপ আর শরীরের অন্যান্য জায়গায় মারের দাগ ফুটে উঠেছে।আমি পাশে দাড়িয়ে থাকা একজন লোককে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম।সে যা বলল তা হল বাচ্চাটি সামনের দোকান থেকে পাউরুটি আর দুটি কলা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল তাই তার এখন এই অবস্থা।