পাপড়ি গুলো ঝরে পড়া

পাপড়ি গুলো ঝরে পড়া

একেবারে গোসল করে বের হয়েছে সিহাব। এই ঠাণ্ডার মধ্যেও গোসল। আজ প্রথম দেখা হবে সূচির সাথে, ভালবাসার পর।একটু ভালভাবে না গেলে কি হয়?সাদা গোলাপি চেকের শার্টটা পরে যেতে বলল সূচি। উঠেই ইস্রি করে গায়ে পরে নিল। উপরে নিজের সবচেয়ে দামী জ্যাকেটটা। মোটামুটি দৌড়ে বের হল সিহাব। তবে রাস্তায়ই থেমে গেল। প্রতিদিন এই মেয়েটার সাথে, বাসা থেকে বের হবার পরই দেখা হয়।মেয়েটা মুনা। যেই বাড়িটায় সিহাব থাকে, সেই বাড়িওয়ালার মেয়ে। সিহাবরা থাকে দোতলায়। আর বাড়িওয়ালারা নিচ তলায়। মুনাকে দেখেই সালাম দেয় সিহাব।মুনা সিহাবের ছোট, তুমি করে বলে। তবুও সালাম দেয়।
– ভালো আছেন ভাইয়া?
– হ্যাঁ ভালো। তুমি?
– জ্বি ভালো। আজকেও সালাম দিলেন? আমি আপনার ছোট কিন্তু।
– সালাম সবাইকেই দেয়া যায়।
– তাই ?
– হ্যাঁ।
– কোথাও যাচ্ছেন বুঝি?
– হ্যাঁ, এক বন্ধুর সাথে দেখা করব।
– হুম দেখেই বোঝা যাচ্ছে।অনেক সাজগোজ করে বের হয়েছেন আজ। প্রতিদিন তো একটা হাফ প্যান্ট পরা অবস্থায়, আপনাকে দিনের শুরুতে দেখি।
সিহাব একটু লজ্জা পেল।প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই, একটু হাওয়া বাতাস খেতে বের হয় সিহাব। আসলে হাওয়া বাতাস না, মুনার লাগানো ফুল গাছের, ফুলের ঘ্রাণ নিতে আসে।ফুলের ঘ্রাণ নিয়ে দিন শুরু করলে, দিনটা অনেক ভালো যায়।মনটা অনেক পবিত্র লাগে।আর এই কাজটা ঘুমানোর সময় পরে থাকা থ্রি কোয়ার্টার পরেই করে। ঠাণ্ডার মধ্যেও তাই পরেই আসে।আর ঘ্রাণ নেবার পরে, পিছন ফিরে মুনার সাথে দেখা হয়। একটা সালাম দিয়ে সিহাব চলে যায়।কোনদিন টুকটাক কথা হয়।
– না আসলে, ওভাবেই চলে আসি তো। আচ্ছা কাল থেকে ফুল প্যান্ট পরে বের হব সকালে।

– হিহি, ওটা আপনার ইচ্ছা। ভাইয়া, আজ কিন্তু ফুলের ঘ্রাণ নিতে আসেন নি।
– আজ একটু ব্যাস্ত ছিলাম, সকালে উঠে। আর প্রতিদিন চুরি করে তোমার গাছের ফুলের ঘ্রাণ নেই, এটাও ঠিক না।
– আমার কিন্তু ভালোই লাগে ভাইয়া।
– আজও আসতাম, তবে তাড়াহুড়ায় আসতে পারিনি। আজ প্রথম দেখা ওর সাথে, বুঝই তো। কত কাজ।
– কার সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন, প্রেমিকা?
– না মানে।
– হিহি, বুঝতে পারছি তো।

হাসলেও হঠাৎ মুনার মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছে। মুখ ভার।সিহাব এখানে মন খারাপের কিছু পায় নি।বুঝতেও চায় নি। মেয়েদের মনে ব্যাপারগুলো অনেক জটিল। এতো সহজে বুঝে নেয়া যায় না।সিহাব একটু তাড়া দেখিয়ে বলল, মুনা, আমি আসি। দেরী হয়ে যাচ্ছে।
– ওও হ্যাঁ ভাইয়া। আপনার দেরী হয়ে যাচ্ছে।যান তাহলে।
– আচ্ছা।
– ভাইয়া, একটা কথা বলব?
– হ্যাঁ বল।
– আপনাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। আপু অনেক পছন্দ করবে।
– ধন্যবাদ।
– আর একটা কথা বলি?
– বল।
– আপনি প্রতিদিন আমার বাগানের, ফুলের ঘ্রাণ নিতে আসবেন কিন্তু।
– আচ্ছা আসব।

মুনা মেয়েটার চোখে জল চলে এসেছে। কোনমতে কান্না আঁটকে রেখেছে।সিহাব এই চোখের জলের মানে জানে না। জানতেও চায় না। দেরী হয়ে যাচ্ছে।সূচি এসে অপেক্ষা করবে। সিহাব চলে গেল অনেক দ্রুত। আজ মনটা অনেক ভালো। সূচির সাথে প্রথম দেখা, ভালবাসার পর। সিহাব চলে যাচ্ছে। আর মুনা পিছন থেকে দেখছে। হয়ত হারিয়ে যাচ্ছে কিছু। বুকের ভিতর কষ্ট হচ্ছে মুনার। চোখের ভিতর ব্যথা করছে।আসলেই হারিয়ে ফেলছে কিছু মুনা। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে, ফুল গাছ গুলোর যত্ন করে মুনা অপেক্ষা করে। কখন সিহাব আসবে। সিহাব ঘুম ঘুম চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে, লুকিয়ে লুকিয়ে ফুলের ঘ্রাণ নেয়। মুনাও লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে। কেন যেন দেখতে অনেক ভালো লাগে, এভাবে ছেলেটাকে। ঘ্রাণ নেয়া শেষ হলেই,মুনা বের হয়ে আসে। সিহাব মুনাকে দেখে বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে ,একটা সালাম দেয়। সিহাবের এই বোকা বোকা চেহারা দেখে বড্ড হাসি পায়।হাসে না মুনা।হাসি লুকিয়ে, একটু আধটু কথা বলে। প্রতিদিন কথা বলে। কখন যেন এই জিনিসটার প্রেমেই পড়ে গিয়েছে মুনা। বুঝতে পারেনি। কখন যেন সিহাবকে ভালবেসে ফেলেছে, টের পায় নি। অনেক দিন বলতে গিয়েই বলতে পারেনি। একটা ছেলে হাফ প্যান্ট পরে, বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে আছে। তাকে ভালবাসি বলা যায় নাকি? তার চেয়ে কয়েকদিন পর,মুনার জন্মদিন। মুনা চেয়েছিল, সেদিন সিহাবের সাথে সারাদিন ঘুরবে। সিহাব একটা পাঞ্জাবী পরবে,যে কোন রঙের। আর মুনা আকাশী রঙের শাড়ি। সেদিন চুপ করে হাত ধরে বলে দিবে, সিহাব ভাইয়া, আপনাকে আমি ভালবাসি। সারাজীবন এভাবে হাত ধরে থাকতে চাই? রাখবেন তো?কেন রাখবেন না? রাখতে হবে।আমি কি দেখতে দেখতে অসুন্দর? কত মিষ্টি একটা মেয়ে।

মুনার আর এই কথাগুলো বলা হল না। বুকের ভিতরের ভালবাসা ,বুকের ভিতর রয়ে গেল। ফুল গাছ গুলোর উপর খুব রাগ হচ্ছে। কেন হচ্ছে মুনা জানেনা।সবগুলো গাছ গিয়ে নষ্ট করে ফেলল।নষ্ট করে কাঁদছে মুনা।অনেক যত্নে রেখেছিল ফুল গাছ গুলোকে মুনা। নষ্ট করে কাঁদছে। অনেক যত্নে বুকের মাঝে জমিয়ে রাখা, ভালবাসা হারিয়ে যাওয়াতে কাঁদছে। সিহাবের আসতে হবে না ফুলের ঘ্রাণ নিতে। মুনা এটা চায় না আর।

ভালবাসতে সবাই পারে। ভালবাসার কথা বলতে সবাই পারে না।কেউ বলে দেয় মনের কথা।কেউ বুঝিয়ে দেয় না বলেও।কেউ বুকের মাঝে জমিয়ে রাখে। জমিয়ে রাখতে রাখতে একদিন হারিয়ে যায় ভালবাসা। চোখের জলে সেই ভালবাসা ফিরে আসে না। ভালবাসতে সাহস লাগে, সেই সাহস সবার থাকে না। কিছু ভালবাসার কথা কেউ জানে না। চুপিসারে ঝরে পড়ে, ঐ বাগানের ফুলের পাপড়ি গুলোর মত।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত