আমার সোনার বউ

আমার সোনার বউ

পকেট থেকে মোবাইলটা বেড় করে দেখি বউ ফোন করেছে। রিসিভ করতেই জিজ্ঞেস করল…

-কোথায় তুমি?
– আমি তো একটু শপিং মলে আসছি।
– শপিং মলে কেন! কার সাথে?
-আরে ঐ যে তোমাকে বলেছিলাম না,আমার এক কলিগের কথা, নাম “সেফালি” মনেআছে তোমার?
– হ্যা মনে আছে।
– আজ ওর জন্মদিন।

তাই ওর জন্য একটা গিফট কিনতে এসেছি। জানো, মেয়েটা এমন পাগল, আমাকে ছাড়া কিচ্ছু বোঝেনা। একদিন আমার ইয়ে ধরে খুব অনুরোধ করে বলল, ভাইয়া আপনি না আসলে আমি জন্মদিন পালন করব না। আমাকে একদম নিজের ভাইয়ের মত দেখে।

– কি ধরে অনুরোধ করল?
– কেন হাত ধরে !
– আচ্ছা ঠিকাছে তুমি কেনাকাটা করো।

এই বলে ঠাস করে লাইন কেটে দিল বউ। বিশাল ধরনের বিপদ না আসলে আমি কখনোশপিং মলে আসিনা। শপিং মলে আসলে আমার মাথা ঘুরায়। ব্রেইনে প্রচুর গ্লুকোজ থাকতেও মনে হয় এই বুঝি মাথা ঘুরে পরে যাবো। শপিং মলের ৩য় তলা মেয়েদের জন্য। সেখানে মেয়েদের যাবতীয় পন্য পাওয়া যায়। সেখানেই চলে গেলাম। ৩য় তলায় পা রাখতেই বউ আবার ফোন করল। রিসিভ করতেই বউ ওপাশ থেকে বলল..

– সোনা আমার না হঠাৎ করে শুরু হয়ে গেছে।
– কি বলো? এই পাচ দিন আগেই তো পিরিয়ড শেষ হল।
– হ্যা ইরেগুলার হয়ে গেছে। ডাক্তার দেখাতে হবে। আচ্ছা যদি কিছু মনে না করো তাহলে একটা কথা বলতে পারি?
– হ্যা বলো।
– সোনা আমার না সবগুলো প্যাড শেষ হয়ে গেছে। খুব বিব্রতভাব হচ্ছে।
– ঠিকাছে আমি এক্ষুনি বাসায় আসছি? প্যাড কোনটা আনবো?
– সেনোরা। সেনোরা প্যাড নিয়ে শপিং মল থেকে বেড় হব এমন সময় আবার কল…

-আচ্ছা শোনো শোনো, তুমি তো শপিং মলেই আছো মনে করে একটা নেইল পলিশ এনো।

– ঠিকাছে তুমি লাইনে থাকো আমি

কসমেটিক্সের দোকানে যাই। কসমেটিক্সের দোকানে গিয়ে দেখলাম অনেক গুলো মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দোকানে ঢুকে আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করলাম ভাই নেইল পলিশ আছে?

দোকানদার : কি কালারের নেইল পলিশ নিবেন?

আমি: (বউকে প্রশ্ন করলাম) কোন কালার?

বউ: দোকানদারকে বলো, পুইশাক রান্না করার পর যে কালার হয় সেই কালার আছে কিনা । জিজ্ঞেস করতেই দোকানদার গাড়ো সবুজ রঙের নেইল পলিশ বেড় করে দিল।

– হ্যা পেয়েছি? আর কিছু?
– হ্যা। আরেককটা লিপ্সটিক লাগবে ।

দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলাম ভাই লিপ্সটিক আছে? দোকানদার একটা শোকেচের দিকে ইশারা করল। দেখলাম ১০০০ রকমের লিপ্সটিক সেখানে।

– কোন কালার লাগবে স্যার?
– এই কোন কালার লাগবে তোমার?
– দেখতো, খয়েরী রঙের আছে কিনা?

দোকানদার খয়েরী কালারের ৩৭ টা লিপ্সটিক সামনে রাখল। আমার মাথা ঘুরতে শুরু করল। দোকানদার বলল স্যার এগুলো সব খয়েরী। দেখেন কোনটা পছন্দ হয়। বউকে প্রশ্ন করলাম যেকোনো একটা খয়েরী নিলেই হবে? বউ বলল না! দেখো খয়েরী যখন বেশি গাড়ো হয়ে যায় তখন চকলেট কালারের মত লাগে। কিন্তু চকলেট কালার আমি নিব না। চকলেট এর থেকে হালকা খয়েরী। আবার খয়েরীর থেকে সামান্য গারো খয়েরী।

দোকানদার : ৫ টা লিপ্সটিক বেড় করল। গাড়ো খয়েরী ।

বউ: শোনো! বেশি গাড় খয়েরী এনো না। ইট যখন সামান্য বেশি পুড়ে যায় তখন কি কালার হয়? সেই কালার নিয়ে আসবা। দোকানদার কে বললাম, ভাই ইট যখন সামান্য বেশি পুড়ে যায় তখন কি কালার হয় সেই কালারের লিপ্সটিপ কি আছে? সবগুলো মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল । দোকানদার: দাড়ান স্যার দেখি। দোকানদার কিছক্ষন খোজাখুজি করে বলল স্যার একপিস আছে কিন্তু দাম একটু বেশি পরবে। মনে মনে বললাম দে ভাই দে একটু বাচা আমারে। লিপ্সটিক নিয়ে দোকান থেকে তাড়াহুড়ো বেড় হয়ে যাচ্ছি এমন সময় বউ বলল,

– একি! তুমি কি চলে যাচ্ছো?
– হ্যা। কেন আরো কিছু লাগবে?
– হ্যা একটা ঐ গুলো লাগতো। সবগুলো পুরাতন হয়ে গেছে।
– আমি কিভাবে কিনব? আমি কি তোমার সাইজ জানি? আর আমি পুরুষ মানুষ হয়ে এসব কিনবই বা কিভাবে? না কিনলে হয় না?
– না হয় না। ( রেগে গিয়ে)
– আচ্ছা ঠিকাছে। রাগ কোরো না।

একটা দোকান খুজে বেড় করলাম যেখানে কোন মেয়ে মানুষ নেই। দোকানকারকে জিজ্ঞেস করলাম ভাই কাঁচুলি আছে? দোকানদার: সরি স্যার!! কি বললেন বুঝিনি ?

– কাঁচুলি। ইশারা করে দুই হাত বুকের কাছে আনতেই দোকানদার বুঝে গেল। দোকানদার অট্টহেসে বলল কি সাইজ স্যার? আপনার স্ত্রীর জন্য? আমি রেগে গিয়ে বললাম না না, আমারস্ত্রীর জন্য কেন নিব? দোকানদার চোখ বড় করে তাকিয়ে রইল আমার দিকে। আমি দোকান থেকে বেড় হয়ে বউকে বললাম, আমি কিভাবে একটা পরপুরুষকে তোমার সাইজ বলতে পারি? আমি পারবনা।

– না পারলে তোকে ঘরে ঢুকতে দিব না।
– আচ্ছা আচ্ছা ঠিকাছে তুই তুকারি কোরো না আমি দেখছি।

কোন ভাবেই আমি কোন পুরুষকে আমার বউয়ের সাইজ বলতে পারব না। এটা অসম্ভব। এমন দোকানে যেতে হবে যেখানে মহিলা দোকানদার আছে। অনেক কষ্টে এরকম একটা দোকান খুজে বেড় করলাম। দোকানে ঢুকে দেখি অসংখ্য মহিলা কাস্টমার ভিড় করে রেখেছে। কিছুক্ষন বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলাম, ভিড় কমল না। সরমের মাথা খেয়ে ভিড় ঠেলে দোকানে ঢুকে পড়লাম। এরই মধ্যে একজন মহিলা বলল মানুষ জনের লজ্জা সরম বলতে কিছু দেয় নাই আল্লায়। মহিলা মাইনষের মধ্যে ঢুইক্কা পরছে। আমি বললাম সরি খালা আম্মা প্রচুর বিপদে পরছি আমাকে বাচান। বউকে ফোন করে বললাম আচ্ছা তোমার কি রঙের কি লাগবে এইযে দোকানদারকে বলো। মহিলা দোকানদার সমস্যা নাই। উনি অল্পতেই সব বুঝে যাবে। কথা বলো। দোকানদার মহিলা কানে মোবাইল ধরে কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। তারপর মোবাইলের লাইন কেটে গেল।

আমি : আচ্ছা সব বুঝে গেছেন না?

দোকানদার : কিছুই তো বুঝলাম না। আপনার বউ কি বলল? আপনি জিজ্ঞেস করেন। আমি বললাম আসলে ওর ইয়ে লাগবে।

– কিয়ে লাগবে?
– ওইযে দেখেন কাচের মধ্যে দেখা যায়।
– ওহ আচ্ছা। ব্রা লাগবে? সেটা বললেই তো হয়।

কি সাইজ? বউকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম কি সাইজ তোমার? পাশের দাঁড়িয়ে থাকা মহিলা বলল, এই পুলা? সরম বরম করেনা তুমার? এত গুলা মাইয়া মাইষের সামনে বউয়ের সাইজ জিগাও? দেও ফোনডা আমার কাছে দাও আমি সব শুইনা দোকানদাররে কইতাসি। বউকে বললাম আচ্ছা তুমি এই আন্টিকে পরিস্কার করে বলো কি কি লাগবে।আমার সরম বরম করতেছে। এই বলে আন্টির হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে আমি বাইড়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। আন্টি ৩০ সেকেন্ড পর আমাকে ডাক দিয়ে বলল, এই পুলা তুমার বউয়ের কথার তো কোন মাথাই বুঝা যায় না। কি জানি হাবিজাবি কয়। তুমার বউ কি বুবা নাকি?

– কি বলেন খালাম্মা বউ কেন বোবা হবে?

দাড়ান আবার ফোন দিচ্ছি। ফোনে লাউড স্পিকার দিয়ে আন্টির হাতে ফোন ধরিয়ে দিলাম। আন্টি জিজ্ঞেস করল এই বউমা তোমার সাইজ কত?

বউ: ব্লি ওম্ফন সু চু ছুস ফ্লা ফ্লা ফ্লা । খালাম্মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল হুনছো কতা? তোমার বউ কি কয় হুনছো এইবার? ফোন নিয়ে বাইরে চলে গেলাম। বউকে জিজ্ঞেস করলাম

– আচ্ছা তুমি কি শুরু করেছো ?( রেগে গিয়ে)
– কি শুরু করছি মানে? এই হাড়ামজাদার বাচ্চা তুই লাউডস্পিকার দিলি ক্যান? তোর বউ এর সাইজ তুই বলতে পারিস না? ওহ তোর খুব সরম বরম হয়ে গেছে তাই না রে? তোর অফিসের বোনদের হাত ধরে ঘুরতে পারিস তখন তোর সরম বরম কই যায়? এই হাড়ামির বাচ্চা কথা বল! তখন কই যায় সরম? এবার আমার মাথায় বিষয়টা ক্লিয়ার হল।

– আচ্ছা বউ আচ্ছা ঠিকাছে সরি সরি। তোমার পায়ে ধরি মাফ করে দাও।
– তোর সরির গুষ্টি কিলাই।

তোর পায়েও ধরা লাগবে না হাতেও ধরা লাগবে না তুই আগে শপিং কর। তোকে যেভাবে বলব যা বলল হুবুহু তাই কিনে আনতে হবে নইলে আজকে ঘরের দড়জা খুলব না। আর যদি জিনিস কিনে আনার পর একটু উনিশ বিশ দেখছি তাহলে তোর একদিন কি আমার একদিন।

– আচ্ছা ঠিকাছে তুমি যেরকম বলবে আমি হুবুহু তাই কিনে আনব। কিন্তু আল্লার দোহাই লাগে আর তুই তুকারি কর না।
– ঠিকাছে যাও দোকানে ঢোকো।
– আচ্ছা ঠিকাছে তার আগে সাইজ বলো।
– ৩৪ সাইজ।
– কোন কালার নেবে?
– উম্মমম… কালারটা হবে, যদি একবাটি তরল

চকলেটের মধ্যে এক মুঠ গুড়া হলুদ ছেড়ে দেই, তারপর ৫ মিনিট ঘেটে নিলে যে কালারটা আসবে সেই কালারটাই নিয়ে আসবা। দোকানদারকে হুবুহু তাই বললাম, আর আশে পাশের মহিলারা হো হো হাসতে শুরু করল। তাদের হাসি দেখে যারা আমার কথা শোনেনি তারাও হাসতে লাগল। দোকানদার মহিলা সারা দোকান খুজে দুই তিনটা খুজে পেল ওই ধরনের কালার। আমি বললাম তারাতারি যেকোনো একটা প্যাক করেন প্লিজ। অমনি বউ বলল যেকোনো একটা প্যাক করেন মানে? যেকোনো একটা প্যাক করলে হবে না। এর মধ্যেও দেখার বিষয় আছে।

– সব তো একইরকম?
– সব একই রকম না।
– তাহলে কি করব?
– টিপ দাও।
– কি দিব?
– বাংলা কথা বোঝো না? বলছি টিপ দাও।

মানে হাত দিয়ে চাপ দাও। দোকানদারকে বললাম ম্যাডাম ওগুলো একটু বেড় করেন চাপ দিয়ে দেখতে বলেছে। পাশের মহিলারা সবাই মুখে হাত দিয়ে আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। দোকানদার: মানে?

– মানে ইয়ে ওই জামা তিনটা একটু আমার সামনে রাখেন।
– ওহ আচ্ছা। ঠিকাছে রাখছি। আমি একটাতে টিপ দিয়ে বউকে বললাম, টিপ দিলাম এখন কি করব?
– কেমন বুঝলা টিপ টিয়ে?
– কেমন বুঝব?
– আরে ছাগল নরম না শক্ত?
– মনে হয় একটু শক্ত। দেখতো মেটাল জাতীয় কিছু আছে কিনা?
– আমি মনে মনে কাদতে শুরু করে দিলাম।

আল্লাহ এ তুমি আমাকে কোন বিপদে ফেলছ? রক্ষা করো মাবুদ। আমি জীবনেও আর জন্মগ্রহন করবো না। না মানে, জন্মদিনে যাবো না। পকেট থেকে হেডফোন বেড় করে কাঁচুলির উপর ধরতেই হেডফোনের চুম্বকের সাথে কাচুলির মেটাল আটকে গেল। মহিলাগুলো তাকিয়ে আছে অবিরাম। আমার প্রত্যেকটি শ্বাস প্রশ্বাস খেয়াল করছে তারা। নিজেকে আজ লেংটা বাবা মনে হচ্ছে, যার কোনো সরম বরম নেই। বউকে বললাম বউ এর মধ্যে তাজা লোহা দেওয়া আছে।

– ওহ। তাহলে ওটা নেওয়া যাবেনা।

ফোনের ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেল। আমি নরম দেখে চকলেট আর হলুদের সংমিশ্রিত একটা কাঁচুলি একটি লিপ্সটিক একটি নেইল পলিশ আর একটি স্যানিটারি প্যাড নিয়ে হাসি হাসি মুখ করে বাসায় ঢুকলাম। বউ আমার নিজেও একটা নকল হাসি দিয়ে দরজা খুলে দিল। শপিং মল থেকে এসেছি মাথাটা ঘুরছে বিছানায় পিঠ লাগার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পরলাম। বিকাল বেলা ঘুম ভাঙল। চোখ মেলে দেখি খাটের সাথে আমার চার হাত পা বাধা। বউ ঝারু নিয়ে যমদূতের মত আমার সামনে দাড়িয়ে আছে। বউ কিছু মধুর কথা বলল: এই হাড়ামির বাচ্চা। তোর ঘরে বউ নাই? তোর বউ এর হাত নাই? এই দেখ তোর বউ এর হাত। এই যে ঝারু ধরে আছে।

আর যদি জীবনে শুনছি কোন মেয়ের তোর হাত ধরেছে তাহলে এই বলেই মারল এক ঝারুর বারি। বল আর কোন শালির জন্মদিনে যাবি? এই বলে আরেক বারি। বল আর কোন শালির জন্য গিফট কিনতে যাবি? আবার ঝারুর বারি। আমার সোনার বউ এর মধুর কিছু কথা আর আদরের কিছু স্পর্শ পেয়ে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। কে জানে ঘুমিয়ে পড়লাম নাকি অজ্ঞান হয়ে গেলাম….

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত