“অথচ সে দিব্যি বেঁচে আছে। সময়ের সাথে হারিয়ে গেছে তাঁর দেওয়া কথা। অপরদিকে ছেলেটা প্রতিনিয়ত শূন্যতা অনুভব করে।রাত এবং দিনের খেলা পাড় করে নিকোটিনের স্পর্শে। ছেলেটার কাছে আজও একটা প্রশ্ন উত্তরহীন। তাহলে কি,ভালো শুধু ছেলেরা বাসতে জানে?” লেখাটুকু ফেসবুকে পোস্ট করে হতাশা যুক্ত নিশ্বাস ছাড়লো অভ্র। ঠিক তার পাঁচ মিনিট বাদে মেসেঞ্জারে টুং করে আওয়াজ,’ওই শালা কয়টা সেকা খাইছস জীবনে?’ উত্তর এক-এক জনের কাছে এক-এক রকম।তবে বেশিরভাগ মানুষ প্রশ্নটা এরিয়ে যায়। কিন্তু অভ্র এড়িয়ে গেলে কপালে বড্ড কষ্ট আছে।সেটা ভেবে রিপ্লে দিলো,’তুমি দিলে একটা হবে।’
– না,তোর ভাবসাব দেখে তা মনে হচ্ছে না।
– তাহলে কি মনে হচ্ছে?
– আমার আগে তোর আরও রিলেশন ছিলো।
– ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে একসাথে পড়ছি।নবম শ্রেণীতে উঠে তোমার সাথে রিলেশন।অন্য রিলেশন করার সময় পেলাম কখন?
– ওহ্ হো,তারমানে প্রাইমারীতে থাকতে গার্লফ্রেন্ড ছিলো।
– ধুর বাবা।তখন এগুলো কিছু বুঝলে তো!
– হুম সেটাও ঠিক।আচ্ছা যা ব্রেকআপ।
– মানে?ব্রেকআপ কেন?আমি কি করছি?
– তুই ফালতু পোস্ট করলি কেন?
– হায়রে!ডিলিট দিয়ে দিচ্ছি।
– হিহিহি,ওকে।আর হ্যা,এগুলো নেক্সটে কখনো লিখবা না।
– আচ্ছা লিখবো না।
– এই শুনো।
– হুম।
– দেখা করবা?
– কাল?
– এখন!
– কয়টা বাজে খেয়াল আছে?
– না,আমি দেখা করবো ব্যস।
– সবসময় এইরকম পাগলামি করলে চলে?
– জানিনা।
– কাল ভার্সিটিতে গিয়ে দেখা করি?সারাদিন ঘুরবো।ফুচকা,চকলেট,আইস্ক্রিম সব খাবো।ওকে?
– হুম।
– রাত তো অনেক হইছে।ঘুমাবা না?
– জানিনা।
– মন খারাপ?
– না।
– রাগ করছো?
– না।
– সরি।
– হুম।
– আচ্ছা আসতেছি।
– হুম।
– খাওয়ার কিছু নিয়ে আসবো?
– জানিনা।
অভ্র আর কোনো রিপ্লে দিলো না। বুঝতে পারছে ভুল একটা করে ফেলেছে। না জানি,ভুলের মাশুল কিভাবে গুনতে হয়! ফাঁকা পথ। অন্ধকারাচ্ছন্ন চারিপাশ। অর্ধ বাঁকা চাঁদ যা একটু আলো দিচ্ছে। এমন পরিবেশের মধ্য দিয়ে হেঁটে চলেছে অভ্র। দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়।কিন্তু সময়টা দেখার বিষয়। এর মাঝে আবার কয়েকটা কুকুর ঘেউঘেউ করে উঠলো। এবার হেঁটে চলা কার বাপের সাধ্য? স্যান্ডেল হাতে নিয়ে অভ্র দিলো ভৌ দৌড়। ৫ মিনিট ৪৩ সেকেন্ড টানা দৌড়ানোর পর সে এসে থামলো নেহাদের বাড়ির সামনে। নেহা গেট ধরে দাঁড়িয়ে।মুখে এক হ্রাস হাসি,সাথে হালকা চাপা অভিমান।অবশ্য ছেলেটার অবস্থা দেখে কিছুটা মায়াও অনুভব করছে।
– তুমি এখানে দাঁড়িয়ে।
– তোমার অপেক্ষাতে ছিলাম।
– আমি কখন বললাম,আসবো।
– বলতে হয় না।এমনিতে জানি।যাইহোক,হাঁপাচ্ছো কেন?
– কুকুর ধাওয়া করছিলো।
– হিহিহি,কামড় দিলে ভালো হতো।
– হুম,অকালে বিধোবা হওয়ার ধান্দা।
– হুহ্,আমার জন্য কি আনছো?
– কিছুই না।
– উঁহু,জানি কিছু আনছো।
– আনিনি।
– সত্যি?
– হুম।
নেহা কিছু বললো না। মুখে কালো ছায়া গ্রাস করে গেছে। পরক্ষণে অভ্র পেছন থেকে দুটি স্প্রিড ক্যান বের করে দিলো। ক্যান দুটো দেখে নেহা কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকেছে।তারপর লাফালাফি শুরু। লাফালাফির অবস্থা দেখে অভ্র ভাবছে,কিছু মেয়ে বয়সের সাথে বাচ্চামো স্বভাব ছেড়ে উঠতে পারে না।এমন মেয়ে জীবন সাথী করতে পারলে আর যাই হোক কষ্ট পেতে হয় না।
– এই কি ভাবছো?
– বিয়ে করবো।
– আমাকে?
– যদি বলি,হ্যা?
– মজা করছো?
– উঁহু।
– তুমি যে বললা জব না পাওয়া পর্যন্ত বিয়ে করবা না।
– হুম।
– তো এখন সত্যি বিয়ে করবা?
অভ্র নেহার দিকে তাকালো।মেয়েটা গভীর চিন্তায় ডুবে গেছে। ‘নাহ্ তাকে আর কনফিউজড করলে চলবে না’ ব্যাপারটা ভেবে,অভ্র মানিব্যাগ থেকে রিং বের করে এক হাঁটু ভাজ করে রিং সামনে তুলে ধরে বললো “will you marry me?” নেহা বিষ্মিত। চোখ দিয়ে অঝোর ঝর্ণা বইছে। শরীর হাত পা কাঁপছে। এতকিছুর মাঝে সে ছোট্ট করে বললো “yes.” ভালবাসার হাজার রঙ, কিছু দৃশ্যমান কিছু অদৃশ্যমান।