আচ্ছা আপনি কি সবসময় এরকম টুপি পান্জাবি পরে থাকেন আর দাড়ি ও কি কাটেন না কখোনো? প্রশ্নটা শুনে বসের মেয়ে নওরিনের দিকে ভ্রু কুচকে তাকালাম আমি। এমনিতেও মেয়েটির পোশাক আশাক আর চালচলন দেখে প্রথম থেকেই ভালো লাগেনি আমার কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে এখনো বসে আছি। আমার তাকানোয় পাত্তা না দিয়ে মেয়েটা আবার বলল,দেখুন আপনার মতো কোনো ক্ষ্যাত কে বিয়ে করে আমি আমার লাইফ স্পয়েল করতে পারবোনা আর একান্তই যদি আমাকে বিয়ে করতে চান তাহলে নিজেকে চেইন্জ করে দেন আসুন। এবার আর বসে থাকতে পারলাম না যায় গেলে যাবে চাকরি। রিজিকের মালিক আল্লাহ তিনিই অন্য ব্যাবস্থা করে দিবেন। ভেবে উঠে এলাম ওখান থেকে। কেন যে বসের কথায় ওনার মেয়েকে দেখতে এলাম।
ও আমি জুনায়েদ। লেখা পড়া শেষে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত আছি। কিন্তু চাকরিটা বোধহয় আর থাকবেনা। কারণ নওরীন। আসলে সবসময় নবীর দেখানো পথে চলার চেস্টা করি। তাই কর্মক্ষেত্রেই হোক আর যেখানেই হোক সবাই আমাকে পছন্দ করে। সততা আর কাজে দায়িত্বশীলতা দেখে খুব অল্পদিনেই বসের সুনজরে এসেছি আমি। তো একদিন বস ডেকে বললেন ওনার মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিতে চান। তাই যদি একবার দেখে আসি ওনার মেয়েকে। আমার দুনিয়ায় আপন বলতে কেউ নাই বস যথেষ্ট স্নেহ করেন আমাকে। তাই ওনার এই অনুরোধ ফেলতে পারি নি। তাছাড়া বিয়ের বয়স ওহয়ে গেছে তাই আর মানা না করে নওরীন কে দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু কল্পনা ও করিনি এমন মেয়েকে দেখতে যাচ্ছি।
পরেরদিন অফিসে বস ডেকে পাঠালেন আমাকে। বুঝে গেলাম চাকরিটা যাবে। একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া আর কাউকেই ভয় পাইনা আমি তাই নির্ভয়েই বসের সামনে গেলাম। আমকে দেখে বস ছোট্ট একটা দির্ঘনিশ্বাস ফেলে বসতে বলল। চেয়ার টেনে ওনার সামনে বসতেই উনি বললেন, জানি মনে মনে হয়তো অনেক রাগ করেছো আমার উপর এমন মেয়েকে দেখতে কেন পাঠালাম। আসলে বাবা, মা মরা মেয়েতো কোনোদিনও একটা কঠিন কথা শোনাইনি তাই অতি আদরে মেয়েটার এমন অধঃপতন। আমি ছাড়া আমার মেয়েকে দেখার কেউ নেই। আল্লাহ কতদিন আর বাচিঁয়ে রাখবেন আমাকে।
মেয়েটাকে একটা ভালো ছেলের হাতে তুলে না দিতে পারলে শান্তি হবেনা আমার। কিন্তু বেশিরভাগই আমার টাকার জন্য আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চায়। দেখ বাবা আমি জানি নওরীন তোমার যোগ্য নয় কিন্তু একমাত্র তুমিই পারবে ওকে নিজের যোগ্য বানাতে। তাই বিয়েতে দয়া করে অমত করোনা। আমার মেয়েটা একটু উচ্ছৃঙ্খল কিন্তু আজ পর্যন্ত খারাপ কোনো কাজ করেনি। ও কোনোদিন প্রেম ও করেনি। তবে অতিরিক্ত অহংকারি আর বদমেজাজি। ওকে বিয়ে করে তুমি ওকে নিজের মতো করে গড়ে নাও বাবা। এখন আমার অনুরোধ রাখা না রাখা তোমার ব্যাপার। কি বলব ঠিক বুঝতে পারছিনা। খুব মায়া হচ্ছে বসের উপর। আর যদি আল্লাহ আমার সাথে নওরীনের ভাগ্য জুড়ে দিয়ে থাকে তাহলে আমি কে বিয়েটা আটকানোর। দেখি বসের মেয়েটাকে পথে আনতে পারি কিনা। তাই সবদিক বিবেচনা করে বসকে হ্যা বলে দিলাম। বস খুশি হয়ে পুরো অফিসে মিষ্টি বিতরণ করলেন।
আল্লাহ আমার ভাগ্যে বউ হিসেবে যে নওরীনকে রেখেছে তা আমি সিওর। কারণ আজ নওরীনের সাথে আমার শুভ বিবাহ সম্পন্ন হলো। এখন বাসর ঘরের দিকেই যাচ্ছি। বাসর ঘরে ঢুকে নওরীন কে সালাম দিলাম। সালামের উত্তর না দিয়ে ও অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বসে রইল। আমি ওকে দুরাকাত নফল নামাজ পড়ার জন্য ডাকলাম কিন্তু ঘুম এসেছে বলে ওভাবেই শুয়ে পড়ল। আমি দু রাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর নিকট নতুন জীবনের জন্য দুয়া এবং নওরীনকে ইমান দেওয়ার ফরিয়াদ জানিয়ে নওরীনের পাশে শুয়ে পড়লাম।
ফজরের আজানে ঘুম ভাঙল আমার। উঠে ফ্রেস হয়ে নওরীনকে ডাকলাম কিন্তু ও উঠল না। আমি ওকে টেনে তুলে বললাম ফজরের নামাজটা পড়ে নিতে ও পারবনা বলে মুখের উপর কাথা চাপিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। নামাজে দেরি হয়ে যাচ্ছে দেখে একটা দির্ঘনিশ্বাস ফেলে মসজিদের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লাম। মসজিদ থেকে ফিরে নওরীনকে আগের অবস্থায়ই আবিষ্কার করলাম। এই মেয়েকে কি করে পথে আনব তাই ভেবেই কোনো কুলকিনারা করতে পারলাম না। মনে হয়না এই মেয়ে উঠে আমায় রান্না করে খাওয়াবে। তাই আর কিছু না ভেবে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালাম।
আজ একমাস হলো নওরীনের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ও এখনো আগের মতই আছে। এই একমাসে ওকে নামাজ পড়ার জন্য প্রত্যেক ওয়াক্তেই বলেছি কিন্তু ও আমার কথাকানে ও নেইনি। ওর পোশাক আশাকেও কোনোবপরিবর্তন আনতে পারোনি। তবে এসব পোশাকে ঘরের বাইরে না গেলেই হয়। এসব ভাবতে ভাবতেই বাসায় আসলাম। আমি বাসায় আসলে নওরীন কখোনো দরজা খুলে দেয় না। তাই ডোর বেল না বাজিয়ে চাবি দিয়ে দরজা খুলি। ভিতরে গিয়ে দেখি নওরীন বেশ সেজেছে। মনে হচ্ছে কোথাও যাবে কাধে একটা ব্যাগ ঝোলানো। পড়নে একটা টপস্ আর টাইট জিন্স। মেকআপ করেছে হালকা। গায়ে কোনো ওড়না নেই। এই অবস্থায় বের হবে নাকি তাও আবার এত রাতে। ওর কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম কই যাবে ও। ও আমার কথার কোনো উত্তর দিল না। এবার গলার স্বর একটু কঠিন করে বললাম, কই যাচ্ছ জানতে চেয়েছি না? ও এবার বিরক্ত হয়েই উত্তর দিল, বান্ধবীর বার্থ ডে পার্টি আছে সেখানেই যাচ্ছি। ওর কথা শুনে মাথায় রক্ত উঠে গেল কোনোমতে সামলে নিয়ে বললাম, এভাবে যেতে পারবেনা। তাহলে কিভাবে যাব? আমার দেওয়া বোরকাটা পড় আমি গিয়ে দিয়ে আসব আর উইশ করে গিফ্ট দিয়ে তুমি আবার ব্যাক করবে আমার সাথে। আমার কথা শুনে নওরীন রাগ দেখিয়ে বলল, শুনবনা আপনার কথা আপনিকে হ্যা আমার বাবার জোরাজুরিতে বিয়েটা করেছি বলে কিভেবেছেন আপনি আমার উপর কতৃত্ব পেয়ে গেছেন মোটেও না। দেখি সরুন দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার।
ওর কোনো কথা না শুনে টানতে টানতে অন্য রুমে আটকে দিলাম ওকে। ও দরজা ধাক্কাচ্ছে অনবরত আর অকথ্য ভাষায় গালাগাল করছে আমাকে। সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রুমে চলে এলাম। অনেক হয়েছে এবার অন্য রাস্তা অবলম্বন করে পথে আনতে হবে ওকে। রুমে ঢুকে প্রথমেই ওর ফোনের দিকে নজর গেল। ড্রেসিং টেবিলেই পরে আছে ওটা সাত পাচঁ না ভেবেই হাতে নিলাম ওটা। ফোনে কোনো লক নাই। সহজেই ফোন ঘাটতে পারলাম। প্রথমেই ওর ফেইসবুক থেকে সমস্ত ছবি ডিলিট করে একাউন্ট ডিএকটিভেট করে দিলাম। এরপর ফোন অফ করে ড্রয়ার বন্ধ করলাম। আলমারি খুলে ওর সমস্ত জামা কাপড় বের করে জ্বালিয়ে দিলাম। আজ থেকে ওকে ঘরে বন্দি করেই রাখব যতদিন না পথে আসে ও।
সকালে ফজরের নামাজ পড়ে নাস্তা বানালাম। এরপর মার্কেটে গিয়ে ওর জন্য কয়েকটা লং কামিজ আর শাড়ি কিনে আলমারিতে রাখলাম। এরপর ওর রুমে গেলাম। রুমে গিয়ে দেখি সব এলোমেলো আমার রাগ জিনিসপত্রের ওপর দিয়ে গেছে। কাদতে কাদতে মেঝেতেই ঘুমিয়ে পরেছে ও ঘুমোলে কি নিষ্পাপ লাগে ওকে। খুব মায়া হচ্ছে আমার। কিন্তু না মায়া করলে ওকে ঠিক করতে পারবনা। ওকে মেঝে থেকে কোলে তুলে নিলাম। রুমে এনে বিছানায় শুইয়ে দিতেই ঘুম ভেঙে গেল ওর। আমার দিকে বেশ রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ও। সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করে বললাম ফ্রেস হয়ে আসতে। ওকোনো উত্তর দিল না দেখে বেশ রাগ নিয়েই বললাম, তুমি কি চাও আমি আবার জোর করি তোমাকে। আমার কথায় বোধহয় একটু ভয় পেল ও। উঠে এসে নিজের জামা কাপড় খুজতে লাগল ও। না পেয়ে আমার দিকে তাকালো ও। আমি বললাম, আজ থেকে ওসব পরা যাবেনা। আমি যা যা এনেছি সেগুলোই পরবে তুমি। আমার কথায় রাগ দেখিয়ে বিছানায় এসে বসল ও। আমি এবার গলাটা বেশ উচু করেই রাগি কন্ঠে বললাম, কথা কানে যাচ্ছে না তুমি কি চাও তোমাকে নিয়ে গিয়ে পানিতে চুবাই।
এবার বেশ ভয় পেল ও। আমার হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেল ও। আমি টেবিলে খাবার সাজিয়ে রুমে এসে শুয়ে পরলাম। কিছুক্ষন পর ও গোছল করে বের হলো। ওকে দেখে প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে। শাড়িটাকে পেচিয়ে পরেছে এখন হাটতেও কষ্ট হচ্ছে ওর। আমি ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম, শাড়ি পরতে পারোনা আগে বললেই পারতে আমি পরিয়ে দিতাম। ও একথা শুনে আমার দিকে রাগি চোখে তাকালো। আমি ওদিকে পাত্তা না দিয়ে ওর হাত ধরে আমার সামনে এনে শাড়ির আচল ধরে টান দিলাম। ও রাগে ফেটে পরে বলল, অসভ্য ইতর তুই বের হ এখুনি কোন সাহসে আমার শাড়ির আচলে হাত দিস। বদমাইশ কোথাকার। আমি ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে দ্বিগুন তেজে বললাম, চুপচাপ দাড়িয়ে থাক। আমাকে শাড়িটা পরাতে দাও। কিভাবে পরাই দেখে শিখে রাখো। এভাবে শাড়ি পরে হাটলে পরে গিয়ে হাত পা ভাঙবে পরে যত জ্বালা হবে আমার।
ও আর নড়াচড়া না করে রাগিবদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল। শাড়ি পরানো শেষে আমি ডাইনিংয়ে গিয়ে খাবার নিয়ে আসলাম। প্লেটটা ওর হাতে দিয়ে বললাম খায়িয়ে দিতে। ও আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে রেগে যেতে দেখে চুপচাপ আমার কথা মেনে নিল। বুঝলাম আঙুল বাকালেই ঘি উঠে এর আগে নয়। আজ বিয়ের পর প্রথমবার বউ আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। খাবার অর্ধেক শেষ হলে ওর হাত থেকে প্লেট নিয়ে ওর মুখের সামনে খাবার ধরলাম। ও মুখ ফিরিয়ে নিলো। আমি রাগি কন্ঠে হা করতে বললাম। দেখলাম কাজ হয়েছে। খাওয়া শেষে হাত মুখ ধুয়ে নওরীনকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পড়লাম ও ছাড়ানোর চেষ্টা করতে নিলে আরো জোড়ে চেপে ধরলাম ওকে। ও বুঝে গেল ছাড়ানোর চেষ্টা করে কোনো লাভ হবেনা। জোহরের আজান দিলে ঘুম থেকে উঠে পরলাম। ওকে উঠিয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে বললাম ওজু করতে আজ একসাথে নামাজ পড়ব। ও চুপচাপ ওজু করল। বুঝে গেছে মানা করলে কাজ হবেনা।
এভাবেই বিয়ের ছয়টা মাস কেটে গেল। কিন্তু এখোনো ও নিজ থেকে কিছুই করেনা। একদিন বাসায় এসে দেখি ও ফোন নিয়ে কি যেন করছে। আমাকে দেখেই ফোন লুকালো। আমি ওর থেকে ফোন নিয়ে দেখলাম ও নতুন আইডি খুলে পিক আপলোড করেছে। দেখে মেজাজ গরম হয়ে গেল। ফোনটা সজোড়ে মেঝেতে আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেললাম। নওরীনের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে দিলাম। কিন্তু নওরীন উল্টো রেগে গিয়ে বলল সে আর আমার সাথে থাকতে চায় না। আমি যদি তাকে ডিভোর্স না দেই তাহলে সে পালিয়ে চলে যাবে। এই বলে নওরীন অন্য রুমে চলে গেল।
আমি মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে থাকলাম কিছুক্ষন। হয়তো ও জীবনেও ঠিক হবেনা। কিন্তু একটা শেষ চেষ্টা করে দেখি। ওর কাছে গিয়ে ওকে বললাম, ঠিক আছে দেব তোমাকে ডিভোর্স। সত্যি? হুম তবে আমার একটা শর্ত আছে। কি শর্ত? দেখ আমাদের বিয়ের ছয়মাস হয়েছে। আর ছয়মাস পর আমাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকি। এই ছয়মাস যদি তুমি আমার কথামতো চলতে পার তাহলে প্রথম বিবাহবার্ষিকির গিফ্ট হিসেবে তোমাকে ডিভোর্স পেপার দিয়ে দেব। আর নাহলে এভাবেই জোর খাটিয়ে সব করাবো তোমাকে দিয়ে। এখন ভেবে দেখ ছয়মাস কষ্ট করবে নাকি সারা জীবন। নওরীন কিছুক্ষন ভেবে বলল,ঠিক আছে আমি রাজি।
প্রথম প্রথম নওরীনের বেশ কষ্ট হতো কিন্তু ধীরে ধীরে সে অভস্ত হতে লাগল। রোজ পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ পড়া। ফজরে কোরআন তেলাওয়াত করা। সন্ধায় বিভিন্ন হাদিস পড়া। রান্নাবান্না করা। সবই করছে নওরীন। প্রতি সপ্তাহে বোরকা পরিয়ে ঘুরতেও নিয়ে যাই ওকে। এভাবেই আমাদের দিন গুলো কাটছিল। তবে এটুকু বুঝতে পারছিলাম এর সবই নওরীন ডিভোর্সের জন্য করছে। দেখতে দেখতে ছয়মাস কেটে গেল আজ আমাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকি। বাসায় এসে নওরীনকে কোথাও পেলাম না।বেডসাইড টেবিলে একটা চিঠি রাখা। চিঠিতে নওরীন লিখেছে ছয়মাস শেষ তাই ও বাবার বাসায় চলে গেছে ডিভোর্স পেপার যেনো ওখানেই পাঠাই। আমার সব চেষ্টা বিফল করে দিয়ে নওরীন প্রমান করল ও কোনোদিন বদলাবে না। নিজের বাসায় এসে খুব ভালো লাগছে নওরীনের। মেয়েকে এতদিন পর আসতে দেখে খুব খুশি হলেন আমজাদ চৌধুরি তাও আবার বোরকা পরে। তিনি মেয়েকে বললেন, একা কেন জামাই কই। সে আসবেনা।
এটুকু বলেই নওরীন নিজের রুমে চলে গেল। আমজাদ চৌধুরি ভাবলেন হয়তো রাগ করে এসেছে পরে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আজতো ওদের বিবাহ বার্ষিকি। উনি তাড়াতাড়ি জুনায়েদকে ফোন দিলেন। জুনায়েদ সব খুলে বলল ওনাকে। সাথে এও বলল হয়তো আল্লাহর মর্জি এটাই তাই উনি যেনো নওরীনকে কিছু না বলে। নওরীন নিজের রুমে এসে সবার আগে ফ্রেস হয়ে আগের একটা ড্রেস পড়ল। কিন্তু ওড়না ছাড়া কেমন অসস্তি লাগতে লাগল। তাই বেশিক্ষন ওই পোশাক পড়ে থাকতে পারলনা। মন ঘুরানোর জন্যা টিভি অন করল কিন্তু কেন যেন টিভির দিকেও মন গেল না। কিছুক্ষন পর বিছানায় শুয়ে পড়ল ও কিন্তু পাশের বালিশ টা ফাকা ফাকা লাগল ওর ওকি মানুষটাকে মিস করছে হয়তো এতদিন একসাথে থাকার কারণে এমনটা মনে হচ্ছে এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ল ও। ফজরের আজান শুনে ঘুমটা ভেঙে গেল নওরীনের। উঠে ফ্রেস হয়ে নামাজ পড়ল ও। তারপর কিছুক্ষন কোরআন তেলওয়াত করল ও।
একসপ্তাহ কেটে গেছে নওরীন জুনায়েদকে ছেড়ে এসেছে। এই একসপ্তাহে ও নিজ থেকে নামাজ ও কোরআন পড়েছে। আর এগুলো করতে ওর মোটেও কষ্ট হয়নি বরং ভালোই লাগে। আর এই সময়ে দাড়ি ছাড়া কাউকে দেখলেই ওর ছোলা মুরগির মতো লাগে। এই একসপ্তাহ নওরীন ভালোভাবেই টের পেল কি পরিমান মিস করছেও মানুষটাকে। ও পড়েছে নেক স্বামী ও স্ত্রী একসাথে জান্নাতে যাবে। কিন্তু ও তো জুনায়েদের যোগ্য না ও কি পারবে জুনায়েদের সাথে জান্নাতে যেতে? আজ অফিস থেকে ফিরতে বেশ রাত হয়ে গেছে। বাবার সাথে চাকরিটা ছাড়ার ব্যপারে আলোচনা করেছি উনি আমাকে ছাড়তে চাচ্ছেনা কিন্তু আমি বলেছি এখানে থাকলে নওরীনের সাথে প্রায়ই দেখা হতে পারে তাই আমি এখানে থাকতে পারবোনা। পরে অনেক তর্ক করে সিদ্ধান্ত হয়েছে আমাকে সিলেটের শাখায় বদলি করে দেবে। রুমে ঢুকে লাইট অন করেই ভুত দেখার মত চমকে উঠলাম।
বিছানার মাঝে লালশাড়ি গায়ে পেচিয়ে বসে আছে নওরীন। আমাকে দেখেই উঠে এসে বলল, তোমার এখান থেকে যাওয়ার পর শাড়ি পরতে ভুলে গেছি আরেকবার শিখায় দিবা? আমি কি কোনো ঘোরে আছি? না আমি সত্যিই এসেছি। বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরল নওরীন। বুঝলাম আমার দোয়া আল্লাহ কবুল করেছেন। এখন আমার চেষ্টা সফল। এবার নওরীন আমাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের শাড়ি আচল আমার হাতে দিয়ে বলল নাও এবার পরিয়ে দাও তারপর একসাথে খাব। আমি মুচকি হেসে শাড়িটা ওকে পরিয়ে দিয়ে ফ্রেস হতে গেলাম। রাতে আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে নওরীন জানতে চাইলাম, বাসাতো তালা দেওয়া ছিল আসলে কেমন করে? তুমি হয়তো ভুলে গেছো আমার কাছে এক্সট্রা চাবি আছে। ও হ্যা ভুলেই গিয়েছিলাম।
আচ্ছা জুনায়েদ আমি কি তোমার সাথে জান্নাতে যেতে পারব? সেটা তো আল্লাহই ভালো জানেন। আমরা শুধু চেষ্টা করতে পারি। তুমি আর আমি মিলে যদি আল্লাহকে খুশি করতে পারি তাহলে তিনি নিশ্চই আমাদের দোয়া কবুল করবেন। এখন ঘুমিয়ে পড়। নওরীন ঘুমাতে গিয়েও কিছু মনে পড়ায় মাথা তুলে জুনায়েদের দিকে তাকিয়ে বলল তুমি ছেলে চাও নাকি মেয়ে? জুনায়েদ না বুঝেই বলল, আল্লাহ যা দিবেন তাতেই আমি খুশি কেন বলত? উফ কিছুই বুঝোনা তুমি। বলেই জুনায়েদের বুকে মুখ লুকালো নওরীন। এবার জুনায়েদ বুঝতে পেরে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ওকে। আজ ওর সব চেষ্টা সফল।