এক মুঠো সুখ

এক মুঠো সুখ

রাশিদা ও রাশিদা ঘরে আছো নাকি? জ্বি করিমন বুজি ভেতরে আসো। ওমা এই ভর দুপুরে এইভাবে শুইয়া আছো ক্যান? শরীল ডা কদ্দিন ধইরা ভালা লাগতেছে না খালি মাথা চক্কর দিয়া উডে। আইজ তো বমি ও হইছে। কও কি তাইলে তো মনে হয় খবর ভালাই। তা বসির কই? সে তো রিশকা লইয়া কহন বাইর হইয়া গেছে। কিন্তু তুমি খবর ভালা কইতাছো ক্যান? আরে মুখপুরি তর লক্ষন শুইনা ঠেকয়াছে তুই পোয়াতি। কি কয় তুমি সত্যি নাকি? আমার বয়স তো কম হইলো না। এসব সময় আমিও পার করছি। তয় তুই বসির রে কইস ডাক্তার দেখাইতে। আমার তো সরম করতাছে বুজি সে আইলে তুমিই নাহয় কইয়ো। শোন মাইয়ার কথা। আইচ্ছা তা আমিই কমুনে। তুমি কিসের লাইগা আইছিলা বুজি? ও তোর কাছে একটু কেরোসিন তেল লইতে আইছি। আমার শেষ হইয়া গেছে কাইল বাজার থেইকা আইনা তরে দিমুনে।  খাড়াও দিতাছি। না তো উঠন লাগবোনা আমিই নিতাছি কই আছে? চৌকির তলে আছে দেহো।

তেল নিয়ে বেরিয়ে গেলো করিমন। রাশিদা চৌকির ওপর শুয়ে আছে। রান্না শেষ অনেক আগেই। বসিরের আসতেও দেরি আছে। আজ রাশিদার চোখে মুখে অন্যরকম এক উজ্জলতা। শুয়ে শুয়ে পুরোনো স্মৃতি চারণায় ব্যাস্ত সে। আজ থেকে প্রায় বছর দুয়েক আগে বসিরের আগমন ঘটে ওর জীবনে। গ্রামের পথে কত প্রেম করে বেরিয়েছে ওরা। মা মরা মেয়ে রাশিদা। বাবা আর সৎমায়ের সংসারে মনুষ। বসিরের ও তিন কুলে কেউ নেই। ওরাই একে অপরের আপনজন। কিন্তু বসির গ্রামের অশিক্ষিত বেকার যুবক। কোনো বাবাই ওর কাছে মেয়ে বিয়ে দেবেনা। তাই রাশিদার বাবাও মেনে নেয়নি ওদের এই অবাধ মেলামেশা।

রাশিদা বরাবরই গ্রামের সেরা সুন্দরী। তাই গ্রামের পন্ঞ্চাশ বছরের বৃদ্ধ মোড়লের মন অনেক আগেই জয় করে ফেলেছিন নিজের অজান্তে রাশিদা। বাবা আর সৎমা ও টাকার লোভে পড়ে বৃদ্ধ মোড়লের সাথেই বেধে দিতে চেয়েছিলো রাশিদার ভবিষ্যৎ। কিন্তু বসির তা হতে দেয়নি। সেদিন রাশিদাকে নিয়ে রাতের আধাঁরে পাড়ি জমিয়েছিল এই শহরে। বিয়ে করে এখানের বস্তিতেই ঠাই নিয়ে ছিল তারা। বস্তির মানুষজনও বেশ ভালো দুঃখ কষ্টে একে অপরের পাশে সবসময় থাকে তারা। বস্তিরই এক বড় ভাইয়ের সহয়তায় একটা রিকশা ভাড়া করে চালাতো বসির। কিছুদিন আগে রিকশাটা নিজের করতে পেরেছে বসির। যদিও অভাবের সংসার তাদের কিন্তু ভালোবাসার এতটুকু কমতি কোনোদিনও ছিলোনা। হয়তো দামি শাড়ি বা দামি উপহার বসির রাশিদাকে দিতে পারেনা। কিন্তু মাঝেমাঝে ফুটপাত থেকে কেনা চুড়ি নইলে টিপ আর নইলেএক ছড়া পুতির মালা নিয়ে আসে বসির।

হয়তো দামি রেস্টুরেন্ট এ কখোনো খাওয়াতে নিতে পারবেনা বসির রাশিদাকে। কিন্তু দিনশেষে বাড়ি ফিরে ঠিকই হাতে তুলে খাইয়ে দেয় ও রাশিদাকে। হয়তো কোনোদিন দুরে কোথাও বেরাতে যেতে পারবেনা ওরা। কিন্তু বস্তির এই ছোট্ট ঘরের জানলা দিয়ে আসা চাঁদের আলোয় রাশিদার কোলে মাথা রেখে জ্যোসনা বিলাস ঠিকই করতে পারবে ওরা। কে বলেছে গরীবের ভালোবাসা নেই। ওরা তো দিব্যি ভালো আছে। আজ নতুন অথিতি আসতে চলেছে ওদের মাঝে তাকে নিয়ে আবার নতুন করে সব সাজাবে ওরা। এসব ভাবতে ভাবতেই কখন যে রাশিদা ঘুমিয়ে পরেছিল। তার ঘুম ভাঙলো বসিরের ডাকে। ও বউ এই ভর সন্ধা বেলা ঘুম কিসের শরীল ঠিক আছে তো তর? আমি ঠিক আছি তুমি আইজ এত জলদি ফিরলা যে? হয় তর কথা বারবার মনে হইতাছিলো তাই তাড়াতাড়ি ফিরলাম দেখ কি আনছি তর লাইগা।

বলেই হাতে থাকা কলার পাতায় মোড়ানো জিনিসটি দেখালো বসির। রাশিদা খুলে দেখলো বেলী ফুলের মালা। খুশিতে চোখ দুটি উজ্জল হয়ে গেল রাশিদার। রাশিদার দিকে তাকিয়ে বসির বলল, বউ‌ যা তর লাল শাড়িখানা পইরা একটা খোপা কইরা আয়। আর সুন্দর কইরা একটু সাইজা আয় দেহি। রাশিদা বসিরে কথা অনুযায়ি সেজে বসিরের সামনে দাড়ালো। বসির মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। বসিরের এই দৃষ্টি রাশিদার সব থেকে বেশি ভালো লাগে। রাশিদাকে পেছন ঘুরিয়ে দাড় করিয়ে বেলী ফুলের মালাটা খোপায় পরিয়ে দিল বসির। তারপর হাত ধরে চৌকিতে বসালো ওকে। চৌকিতে পাচঁ টাকা দামের একটা কেক। এক প্যাকেট বিরিয়ানি আর একটা গোলাপ রাখা। এসব দেখে রাশিদা বসিরকে বলল, এইসব কি? তুই কি ভুইলা গেছোস আইজ কিসের দিন? কিসের দিন?

আইজকের দিনে আমরা বিয়া করছিলাম।আইজ আমাগো বিবাহবার্ষিকি। বড়লোক গো মতো তো আর ভালো ভালো খাওন দাওন আর দামি উপহার দিতে পারুমনা তরে তাই এইগুলা আনছি। খুশিতে রাশিদার চোখে পানি চলে এলো। জরিয়ে ধরলো ও বসিরকে। বসির ও ওকে জরিয়ে ধরল। কিছুক্ষন পর বসির রাশিদাকে ছেড়ে দিয়ে কেকটা মুখের সামনে ধরল।রাশিদা কেকের অর্ধেক খেয়ে বসিরকে বাকি অর্ধেক খাওয়ালো। বসির এবার বিরিয়ানির প্যাকেট থেকে বিরিয়ানি থালায় বেড়ে রাশিদাকে খাইয়ে দিলো রাশিদাও বসিরকে খাওয়ালো। খাওয়া দাওয়া শেষে রাশিদার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো বসির। জানালা দিয়ে চাঁদের মৃদু আলো এসে পড়ছে রাশিদার মুখে। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে বসির। বেশ কিছুক্ষন পর রাশিদা বসিরকে বলল, কাইল আমারে একটু ডাক্তার দেখাইতে নিয়া যাবা।

বউ কি হইছে তর ডাক্তার ক্যান? করিমন বুজি কইলো আমি নাকি পোয়াতি তাই কইতাছিলাম কি কস সত্য নাকি আল্লাহ কি খবর শুনাইলি বউ জানিস কত খুশি লাগতাছে। এত তড়াতাড়ি খুশি হইয়ো না আগে ডাক্তার দেখাইয়া সত্যতা যাচাই কইরা নাও তারপর খুশি হইয়ো। ঠিক কইছোস কাইল ই তরে আমি ডাক্তারের কাছে লইয়া যাইবো। আল্লাহ যেনো আমাগো উপরে এইভাবে রহমত করে সারাজীবন। কে বলে সুখি থাকতে টাকা পয়সা লাগে। গরীবরা ভালোবাসতে জানেনা। একটু খুজে দেখুন আপনাদের চারপাশে হজারো বসির রাশিদা ঘুরে বেরাচ্ছে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত