— সুভা, একটু শুনবে কি?
— হ্যাঁ বলো?
— সুভা, আমি তোমাকে ভালোবাসি! কথাটা কানে যেতেই সিফাত সহ ক্লাসের সবাই অভ্রর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।
— অভ্র তুমি কি ঠিক আছো? সুভাও খানিকটা অবাক হয়েই বললো।
–হ্যাঁ আমি ঠিক আছি।
— ঠিক থাকলে এটা কেমনে বললে?
— আমি সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
— ফান করছো?
— এই বিষয় নিয়ে কেউ ফান করে?
— অভ্র! তুমি সহ এই ক্লাসের সবাই জানে আমি আর সিফাত একে অপরকে ভালোবাসি আর সেটা প্রায় দু’বছর হলো। আর তুমিও তো আমাদের বন্ধু। তো আজ হঠাৎ!
— সুভা? হ্যাঁ আমি জানি তুমি আর সিফাত একে অপরকে ভালোবাসো। আমি এটাও জানি তোমরা একে অপরকে খুব বেশিই ভালোবাসো।
— তাহলে এসবের মানে কি অভ্র?
— সুভা? আমি বলি নি যে তোমারও আমাকে ভালোবাসতেই হবে৷ আমি তো শুধু আমার মনের জমানো পুরোনো কথাটা তোমায় বললাম। এর মানে এই না যে তোমাকে ভালোবাসতেই হবে। শুভা, আমিও তোমাকে ঠিক দু’বছর ধরেই ভালোবাসি। তবে বলতে পারি নি। বলবো বলবো করতে করতেই তোমরা একে অপরকে ভালেবেসে ফেললে। আমি আর এগুতে পারি নি। তবে তোমাকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন, অনুভূতি এসব তো আর দমিয়ে রাখতে পারি না, পারি তবে আজ আর পারলাম না। অনেক দিনের জমানো কথা তো।
— অভ্র, তুমি মনে হয় পাগল হয়ে গেছো!
— আমি ঠিক আছি সুভা। আমি কিন্তু বলি নি যে আমাকে ভালোবাসো। তোমরা তোমাদের মতোই থাকবে আর আর আমি আমার মতো। আমার তোমাকে এই কথাটা না বলতে পারাতে কষ্ট হচ্ছিল বলেই বলে দিলাম। এখন আর কষ্ট হবে না। তুমি এখন যেতে পারো। সুভা খানিকটা অবাক হয়েই চলে গেছিল সেদিন। তবে অভ্রর এমন কাজে অনেজ বেশিই রেগে গেছিল সিফাত। তাইতো বন্ধুত্ব নষ্ট করে কয়েকটা চড় থাপ্পড় ও দিয়ে দেয় অভ্রকে। আর বলে, যেন সে আর সুভার সাথে কোনদিন কথা না বলে।
অভ্র সিফাতকে কথা দিয়েছিল। আর সেই কথা অভ্র রাখতেও চেষ্টা করেছে। হয়তো পেরেছেও। ওদের গল্প টা এতটুকুই ছিল৷ বাকিটা ছিল অভ্রর ডায়েরিতে। সেখানে টুকরো কিছু পৃষ্ঠায় সুভাকে নিয়ে কয়েক লাইন করে লেখা ছিল। পড়ে শুনাই কেমন? সামান্য কয়েকদিনের দেখায় তোমার নামটা জানা হলো। সুভা! সুভা তোমার নাম৷ সেদিন যখন বাসন্তি শাড়ি পড়ে এলো চুলে বেলি ফুলের মালা লাগিয়ে কাজল কালো চোখের টিপটিপ চাহনি নিয়ে ভার্সিটির অনুষ্ঠানে এসেছিলে সেদিনই তোমার মায়ায় জড়িয়ে গেছিলাম। সুভা? বিশ্বাস করো, তোমার চেয়ে অনেক সুন্দরী মেয়ে দেখেছি তবে তোমার চোখের যে মায়া সেই মায়ার মতো মায়া আর কারো চোখে কখনোই আমি দেখি নি। আমি সেদিনই তোমাতে নিজেকে সপে দিয়েছি।
সুভা, তুমি হয়তো জানো না সেদিন অনুষ্ঠানে কি কি হয়েছিল আমার তা একদম মনপ নেই। কখন শেষ হয়েছিল তাও বলতে পারবো না। তবে অনুষ্ঠান যতক্ষণ চলেছিল আমি সবটা সময় জুড়ে আড়চোখে তোমাকেই দেখছিলাম। তুমি কত উৎসুক চোখে অনুষ্ঠান দেখছিলে অথচ আমি ছিলাম বেতাল। মাঝে মাঝে তোমার চিকন ঠোঁটের হাসির মাঝে নিজেকে হারাচ্ছিলাম। এই তো গেল সেদিনের কথা। এরপর থেকে সবটা সময় জুড়ে তোমাকে পাশে ভাবতাম। শুনেছি প্রেমে পড়লে নাকি মানুষ কবি হয়ে যায়। কথাটা হয়তো সত্য। আমি রোজ পড়ার সময় খাতার পৃষ্ঠায় শুধু তোমাকে নিয়েই লিখতাম। এক পৃষ্ঠা শেষ হলে লজ্জায় লাল হয়ে সেটা কুচি কুচি করে ছিঁড়ে ফেলতাম। পরে আবার লিখতাম ওরচে ভাল করে। জানো সুভা, সব পৃষ্ঠা জমা করলে তোমার পড়তে কয়েক সপ্তাহ চলে যেত।
সুভা? তুমি কি জানো তোমার হাসি অনেক বেশি সুন্দর? বিশেষ করে ঠোঁটের নিচের তিলটার জন্য আরও বেশি ভাল লাগে। তুমি যখন লেখার সময় কলম কামড়াতে তখন আমি মনোযোগ দিয়ে দেখতাম। আমি ভাবতাম,আচ্ছা, এই মেয়েটার মাঝে কি আছে যা আমাকে এত করে টানে! একবার তোমার নুপূর হারিয়ে গেছিল না? তুমি স্যারকে বলেছিলে ওটা তোমার খুব শখের। জানো তো সুভা, আমি তার পরেরদিনই একজোড়া নুপূর কিনে এনেছিলাম। ভেবেছিলাম তোমাকে দেবো। সাহস হয় নি।সুভা? যেদিন শুনেছিলাম তুমি সিফাতকে ভালোবাসো সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম জানো তো।
কান্না করেছিলাম খুব। পরে আম্মুকে সব বলে দিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ভালোবাসার মানেই কি পাওয়া? ভালোবাসার মানে হলো তার ভাল চাওয়া। তার খুশিতেই নিজের সুখ খোঁজা। তার মাঝেই নিজেকে খোঁজা। জানো তো? এরপর থেকে কষ্ট টা অতটা হতো না। ভাবতাম, তুমি তো বেশ আছো। এটাই তো সুখ। তবুও, জানো তো, মাঝে মাঝে ভিষণ রাগ হতো সিফাতের উপর। হিংসে কি হওয়ার কথা না বলো? জানো সুভা, তোমাদের দু’জনকে বেশ মানাতো। আমি খুশি ছিলাম অনেক। তবুও, মাঝে মাঝেই ভিষণ কষ্ট হতো৷ তোমাকে নিয়ে অনেক ভাবতাম তো, তাই কথা গুলো একটা জায়গা চাইতো যেখানে তারা থাকতে পারবে। আমি কোন রকমে দমিয়ে রাখতাম। তবে আর কতোদিন বলো?
একবার যে তোমাকে ভালেবাসি বলতে বড্ড ইচ্ছে করে। বলে বিপরীতে ভালোবাসা চাইবো না। শুধু একবার বলবো। বলতে পারো আত্মার প্রশান্তির জন্য। শুনেছি সুভার সাথে বহুকাল আগেই সিফাতের সম্পর্ক শেষ হয়েছিল। এরপর সুভার বিয়েও হয়ে গেছে৷ শুনেছিলাম খুব সুখের সংসার ওদের। দুইটা ছেলেমেয়ে নিয়ে ভালোই চলছে দিন। কিন্তু আমি অভ্রকে আর পাই নি। কিন্তু বড্ড জানতে ইচ্ছে করে, সুভার ওই চিকন ঠোঁটের হাসিতে কি এখনও সে ভালোবাসা দেখে? এখনও কি সে সুভাকে বাসন্তি শাড়িতে কল্পনা করে? কাজল চোখ, সেই হাসি!