এই যে শুনছ?
– (ঘুমে ব্যস্ত)
> কি হল?
– (কোনো সাড়া নেই)
> তুমি কি এখনো ঘুমাচ্ছ? (রেগে) সাব্বির লাফ দিয়ে বিছানা থেকেউঠে বলল
– আরে না। আমি তো সেই ভোরেই উঠেছি। একটু ব্যায়াম করছিলাম। ইরা মনে মনে হাসি দিয়ে বলল
> মিরাকে তুল। ওর স্কুল আছে তো।
– আরে বাহ! তুলার পর যে কান্নাকাটি শুরু করবে তা সহ্য করবে কে?
> একটু কান্নাকাটি করলে কিছু হবে না।
– এসব কান্নাকাটি আমি সহ্য করতে পারি না। ইরা সামনের রুম থেকে এসে বলল
> কি বললে? এখন আর এসব সহ্য হয় না? বিয়ের পর তো বারবার বলতে ঘর খালি খালি লাগে। আর এখন? (চোখ গরম করে) সাব্বির দেখল ইরার চোখে আগুন জ্বলছে। সেই আগুনে রুটিও ভাজা যাবে। সাব্বির কিছু না বলে পাশে ঘুমন্ত মিরাকে তুলতে লাগল
– মা মিরা উঠ মা। দেখ তোমার রাগি মামনি কিভাবে তাকিয়ে আছে। আমার খুব ভয় লাগছে।
> এসব ঢং না করে তাড়াতাড়ি তুলে রেডি করো। স্কুলের বাস চলে আসবে। ইরা চলে গেল। খাবার টেবিলে বসে আছে সাব্বির ও মিরা। মিরা সাব্বিরের মোবাইলে গেমস খেলছে।
– কি হল এত দেরি কেন? ইরা নাস্তা এনে বলল
> আমার হাত দুটাই। সুতরাং একটু দেরি হতেই পারে।
– চাইলেই চারটা বানাতে পারি।
> তা তো আল্লাহ দিয়েছেই। বড় হলে ঠিকই সাহায্য করবে, তাই মা মামনি?
~ উফ! দেখছ না আমি এখন ব্যস্ত। (গেমস)
– আমি বলছিলাম যে, তোমার কষ্ট কমানোর জব্য যদি একটা বুয়া আনি। (ভয়ে ভয়ে) বুয়ার কথা শুনলেই ইরার মাথা গরম হয়ে যায়।
> বুয়া কেন? আমার রান্না ভাল লাগে না? (রেগে)
– লাগে লাগে। u r the best cooker in the world.
> সব ঢং হুহ। (ভেংচি)
– আমি তোমার কষ্ট কমানোর জন্য বলছিলাম।
> সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না। আমার মামনি বড় হলে আমার সব কষ্ট কমিয়ে দিবে।
– আপনি যা বলেন।
> তাড়াতাড়ি নাস্তা কর। বাস চলে আসবে। (মিরার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে নিল) ইরা বারান্দায় যেয়ে কাপড় গুছাতে লাগল। নাস্তা শেষে মিরা আবার গেমস খেলতে লাগল। এই সুযোগে সাব্বির পাকঘরে এসে ইরাকে জড়িয়ে ধরে বলল
– রাগি বউ শুধু রাগ করতেই থাকে।
> এই কি হচ্ছে এসব? ছাড় বলছি। মিরা এসে যেতে পারে।
– আহা এমন কর কেন? আমাতে বউটাকে কি একটু আদরও করতে পারি না?
> তোমার এসব রোমান্টিকতার পেছনে কাহিনী থাকে। বলতো কি চাও?
– আসলে তরকারিতে খুব ঝাল হয়েছে।
> মিরার তো ঝাল লাগেনি। তোমার লাগল কিভাবে? (সন্দেহজনক ভাবে তাকিয়ে বলল)
– মিরা তো ছোট। ও কিছু বুঝে না। সত্যিই খুব ঝাল হয়েছে।
> পানি খাও কমে যাবে। আর আমাকে ছাড় কাপড় শুকাতে দিব তো।
– উহু ছাড়ব না। আগে ঝাল কমিয়ে দাও।
> উফ! কি অসহ্য! আমি কি করব? (বিরক্তিকর ভাবে বলল)
– তোমার থেকে কিছু মিষ্টি দাও না।
> আমি কি মিষ্টির দোকান খুলেছি নাকি?
– হুম। তুমিই তো আমার মিষ্টির দোকান। তোমার ওই ঠোঁট দুটোতে অনেক মিষ্টি আছে।
> ইতর, বান্দর, বদমাইশ, ছাড় আমাকে। মিরা এসে গেলে কিন্তু খবর আছে তোমার।
– না। আজ মিষ্টি না নিয়ে ছাড়ছি না। (আরেকটু জোরে জড়িয়ে ধরল) সাব্বির ধীরে ধীরে ইরার দিকে বাড়াচ্ছে। ইরার হৃদয়পিন্ড বেড়েই চলছে। ইরার ঠোঁট দুটো কাপছে। ইরা দেখল সাব্বির আরো কাছে চলে এসেছে। ইরা চোখ বন্ধ করে ফেলল। পিপ পিপ পি-পিপ পি-পিপ। বিকট শব্দে ইরা চোখ খুলল। সাব্বিরও কিছুটা থমকে গেল। ইরা সেই সুযোগে সাব্বিরের বাহু থেকে ছুটেই দিল দৌড়।
– ওহ শেট। হারামজাদা বাস ৫মিনিট পরে আসলে কি হতো?
> কি গো, তাড়াতাড়ি আস। বাস ছেড়ে দিবে তো। (সামনের রুম থেকে ইরা বলল) সাব্বির বারান্দায় থেকে মলিন মুখ নিয়ে সামনের রুমে এল। সাব্বিরের এই অবস্থা দেখে ইরা হাসি দিয়ে বলল
> বাস ঠিক সময়েই এসেছে তাই না?
– কচু। আর ৫ মিনিট পরে আসলে ভাল হত। ঝালে মুখটা পুড়ে যাচ্ছে। একটু মিষ্টি পেলে ভাল হত।
> খুব ঝাল হয়েছে বুঝি? সাব্বির গোমরামুখে বলল, হুম। খুব ঝাল হয়েছে।
> আচ্ছা অফিস শেষ করে আস। তারপর ভাল করে দুটা মিষ্টি দিব। ঠিক আছে?
– এখন দেয়া যায় না?
> যাও বলছি। বাস ছেড়ে দিবে।
– আচ্ছা।
মামনি আমাকেও কিন্তু মিষ্টি দিতে হবে। (মিরা) ইরা মিরাকে কোলে নিয়ে দু গালে দুটি চুমো দিয়ে বলল
> আমার মামনিকে তো সবসময়ই দিব। এটা তো আমার মামনির প্রাপ্য।
– মামনির বাবার প্রাপ্য না?
> যাও বলছি।
সাব্বির মিরাকে নিয়ে বাসে উঠে পড়ল। মিরা তার মামনিকে টা টা দিচ্ছে। ইরাও তার কলিজার টুকরাকে টা টা দিচ্ছে। সাব্বির লোক চক্ষু আড়াল করে ইরাকে একটা চোখ টিপ মারল। ইরা চোখ রাঙ্গিয়ে তাকিয়ে ইশারায় জবাব দিল।
> আজ এসো তারপর তোমার খবর আছে।
সাব্বির অন্যদিকে তাকিয়ে না দেখার ভান করল। বাস ছেড়ে দিল। যতক্ষণ বাসে দেখা গেল ইরা তাকিয়ে রইল। বাস দৃষ্টির অগোচরে চলে গেল। ইরা ঘরে চলে গেল। আর অপেক্ষা করতে লাগল কখন আবার আসবে। হয়তো এভাবেই অপেক্ষা করে প্রতিটি স্ত্রী তার স্বামীর জন্য, প্রতিটি মা তার আদুরে সন্তানের জন্য।