-ওই মেয়েটার সাথে কি এতো গল্প করছিলে? (তিথি)
> তেমন কিছু না,ও প্রাইভেট পড়বে, সেইজন্য একটা শিক্ষক খুজতেছিলো। (রাহুল)
-দুনিয়াতে কি আর ছেলে খুজে পেলো না,তোমাকেই পেলো।
> আমাকে সামনে পেলো, সেইজন্য বলল। আমাকে তো অনেকেই চিনে সেইজন্য হয়তো আমাকেই বলেছে।
– এতে করে তোমারও একটু কথা বলো হলো।
> তিথি!তুমি এমন করছো কেনো? মেয়েটা সাহায্য চাইলো,সেইজন্য ওকে একটু হেল্প করলাম।তোমাদের প্রতিটা মেয়ের কি কমবেশি এই সমস্যা আছে,যাকে ভালোবাসো,সে যদি অন্য কোনো মেয়ের সাথে একটু হেঁসে হেঁসে কথা বলে তাহলেই শুরু করে দাও ভূমিকম্প।মনে হয় জেনো,আমি তোমাকে ভুলে গিয়ে ওকে ভালোবাসা শুরু করছি।
– এখনকার মেয়েদের বিশ্বাস নেই।
> তাই বলে আমার ওপর কি তোমার বিশ্বাস নেই।
– তোমার উপর বিশ্বাস না থাকলেতো তোমাকে আর ভালোবাসতাম না।
> আমার তো সেটাই মনে হয়,আমাকে বিশ্বাস করলে এতো সন্দেহ করতে না।
– ওকে,এরপর থেকে আর সন্দেহ করবো না,এখন আমার সাথে চলো।
> কোথাই যাবো।
-আগে চলো,তারপরেই বুঝতে পারবে।
তিথির সাথে যেতে থাকলাম আমি।মেয়েটা একদম অদ্ভুদ, কখন কি করে আমি নিজেই বুঝতে পারি না, তবে আমাকে বেশি ভালোবাসে, অনেক বেশিই,যার কারনে আমাকে সবসময় চোখেচোখে রাখে। রিক্সাতে চড়ে তেমন কোন কথা হয় নি তিথির সাথে। রিক্সা তার আপন গতিতে ছুটে চলেছে গন্তব্যের দিকে। রিক্সা একটি বাড়ির সামনে এসে থামলো। বাড়িটা দেখে বুঝাই যায় মধ্যবিত্তের বাড়ি।
-এটা কার বাড়িতে নিয়ে আসলে আমাকে (রাহুল)
> ভেতরে চলো,তারপর বলছি। (তিথি)
তিথির পেছনে পেছনে বাড়ির ভিতরে গেলাম। বাড়ির ভিতরে ঢুকার পরে আমি একদম নিস্তধ্য হয়ে গেছি, মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। নিজেকে বিস্বাস করতে পারছি না ।
বাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখি,আমার মা চেয়ারে বসে আছে। যার সাথে আমার দীর্ঘ দশ বছর দেখা হয়নি।বাবার সাথে ঝগড়া করে দশ বছর আগে বাড়ি ত্যাগ করেছিলাম। তারপর থেকে আর সেই বাড়িতে যায় নি কোনদিন। এই দশটা বছর কিভাবে যে পার হয়ে গেছে আমিসেটা কখনোই বুঝতে পারিনি। অনেক কষ্ট করে নিজকে তৈরি করেছি আমি। মাকে দেখার পরে আমি আর নিজেকে ধরেরাখতে পারলাম না। চোখের কোনে পানি পড়তে লাগল অবিরাম।মনে হচ্ছে অনেকদিন পরে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কবে শেষ কেঁদেছিলাম, মনে নেই,আজকে মাকে দেখার পরে আবার কাঁদলাম। মা চেয়ার থেকে উঠে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দাড়াল, দশ বছর আগের জমানো অভিমান গুলো,একনিমিষেই শেষহয়ে গেলো। দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলাম। চোখ দিয়ে তখনো পানির অবিরাম শ্রোত বয়ে চলেছে। নিজেকে এই দশটা বছর একা মনে হতো,বড় অসহায় ছিলাম এই দশ বছর। তিথি আমাকে এমন একটা সারপ্রাইজ দিবে আমি ভাবতে পারিনি।
-তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও মা। (রাহুল)
> আরে পাগল, এতোদিন পরে তোকে আমি কাছে পেয়েছি,আমি তো আমার জীবন ফিরে পেলামরে। দোষতো সেদিন আমাদের ছিলো,তুই কেনো ক্ষমা চাইছিস (মা)
– আমি তোমাদেরকে অনেক কষ্ট দিয়েছি,তোমাদের না বলে চলে এসেছি, অজানা এই শহরে।
> এখন বল,আর কোনদিন এমন করিবা তুই,কোনদিন না। তোকে ছাড়া এই দশটা বছর আমি কেঁদে কেঁদে পার করেছি। তোর কথা সবসময় ভেবেছি,তোকে অনেক খুজেছি,কিন্তু কোথাও পাইনি।
– আমি আর তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না মা,এখন থেকে তোমার কাছেই থাকবো।
> তুই তো আগের থেকে অনেক চিকন হয়ে গেছিস। ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করিস না মনে হয়। চল এখন বসে থেকে আমার সাথে খাবি, তোর বাবাও চলে আসবে কিছুক্ষন পরে।
প্রতিটা মায়ের একি কথা, তুই আগের থেকে চিকন হয়ে গেছিস,দেখতে আগের থেকে অনেক খারাপ হয়ে গেছিস, মোটা হলেও এই কথাই বলবে। বাবা মা সত্নানকে কতটা ভালোবাসে,সেটা হাজার ভাবলেও বুঝতে পারবে না কেউ। কিন্তু সেই বাবা মাকে অনেক ছেলে বউয়ের কারনে কষ্ট দিচ্ছে। তিথি আমাদের মা ছেলের কাজ দেখে নিজের চোখে দিয়ে দুফোঁটা অশ্রু ঝড়িয়ে দিয়েছে। কিছুক্ষন পরেই বাবা চলে আসছে। বাবা এসে আমাকে দেখার পরেই,আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেছে। অনেকদিন পরে ছেলেকে দেখলে যে কোন বাবা মা কাঁদবেই। বাবাকে সাথে নিয়ে, বাবা মা,তিথি সবাই মিলে একসাথে খেয়ে নিলাম। অনেকদিন পরে নিজেকে সুখি মনে হলো। সন্ধ্যার দিকে বাড়ির ছাদে উঠে ভাবছি,তিথি আমাকে অনেক ভালোবাসে,যার জন্য আমার হারিয়ে ফেলা পরিবারকে সে আমার কাছে ফিরিয়ে দিলো। হটাৎ করে তিথির আগমন,
-এতো গভীর ভাবে কি ভাবছো (তিথি)
> তোমার কথাই ভাবছিলাম,তুমি আমার জন্য কতকিছু করলে,অথচ আমি কিছুই করতে পারলাম না।(রাহুল)
> আমার জন্য তোমাকে কিছুই করতে হবে না,আমিশুধুতোমাকে চাই। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তুমি আমার পাশে থাকলেই হবে।
– তিথি তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো তাইনা।
> নিজের জীবনের চেয়েও বেশি।
– একটু দাড়াও, আমি আসতেছি।
তিথিকে ছাদে রেখে নিচে নেমে এলাম। তিথির জন্য কিনে রাখা লাল চুড়ি গুলো তিথিকে দেবার আজকেই উত্তম সময়।অনেকদিন আগে কিনেছিলাম চুড়ি গুলো। কিন্তু লজ্জা আর কমদামি বলে তিথিকে দিতে সাহস পাইনি চুড়িগুলো। চুড়ি গুলো নিয়ে ছাদে চলে গেলাম।তিথি ছাদের একপাশে বসে আছে। সূর্যটা ডুবে গেছে অল্প সময় আগেই। চারেদিকে অন্ধ্যকার নেমে এসেছে,কিন্তু চাঁদমামা ঠিকি আকাশে উঠে নিজের আলো ছড়াচ্ছে। তিথির কাছে চলে গেলাম।
-তোমার হাত টা দেবে তিথি(রাহুল)
> আমার কথা শুনে তিথি পেছনে ফিরে হাতটা বাড়িয়েদিলো।
-তিথির হাতে চুড়ি গুলো পড়িয়ে দিলাম। তিথি চুড়ি গুলো পেয়ে খুশি হয়েছে কিনা বলতে পারবো না, কিন্তু আমাকে জড়িয়ে ধরে বলছে,সারাজীবন এভাবেই আমাকে ভালোবাসবে। তোমার থেকে দামি কোন গিফ্ট আমার লাগবে না তুমিই তো আমার সবথেকে দামি গিফ্ট। তবে মাঝে মাঝে আমার জন্য লাল জবা ফুল নিয়ে আসবে,আর নতুন ভাবে প্রপোজ করবে।
– তিথির কথাই মুচকি হাসলাম, সে বুঝতে পেরে গেছে কিছুদিন পরেই আমাদের বিয়ে। তিথির বাবা মা আমার পরিবারের সাথে আমার আর তিথির বিয়ে করে ঠিক করে গেছে,মা আমাকে বলেছে কথা গুলো। ছাদে তিথির কোলে মাথা রেখে শুয়ে থেকে আকাশের চাঁদমামাকে দেখছি,আর তিথি আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে,এই সময় মনে হচ্ছে পৃথিবীর সুখি ব্যাক্তি এখন আমি।তবে একটি কথা একদম সত্য, (সুখের সময় হয় ক্ষণিকের জন্য ,আর দুঃখের সময় হয় দীর্ঘ।)