আমার ভালোবাসা

আমার ভালোবাসা

সকালে ঘুম ভাঙলো আম্মুর ডাকে। উঠে দেখি সাড়ে আটটা বাজে।নয়টার মধ্যে ভার্সিটি যেতে হবে নয়তো ক্লাস মিস করব।তাই ফ্রেস হয়ে একটু নাস্তা করেই বেরিয়ে পড়লাম।বাসা থেকে ভার্সিটি কাছেই তাই যেতে বেশি দেরি হয় না।হেটেই যাওয়া যায়।তবুও লেট হওয়ায় রিকশা নিলাম। আমি রিশাদ। একটি বেসরকারি ভার্সিটিতে বিবিএ করছি।

যাহোক নয়টার ক্লাস পেয়েছিলাম কিন্তু ক্লাসে একজনের অনুপস্থিতি লক্ষ করলাম ।যে ছিলো না সে আর কেউ না, আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু নীলা। আমার দিক দিয়ে কাছের বন্ধু বললে ভুল হবে কারণ আমি ওকে ভালোবাসি।অবশ্য নীলাকে কিছু বলিনি এই বিষয়ে বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার ভয়ে।একমাত্র নীলাই হচ্ছে আমার ভার্সিটি তে রেগুলার আসার কারণ।

যাহোক ক্লাস থেকে বেরিয়ে নীলাকে খুঁজতে শুরু করলাম ।নীলাকে দেখি ক্যাম্পাসের এক কোনে দাঁড়িয়ে আমাদের দুই সেমিস্টার উপরের এক বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলছে। খুব হেসে হেসেই কথা বলছিল নীলা।দেখে আমি খুব হিংসা হচ্ছিলো অবশ্য আমি কিছু বলিনি দূর থেকে দেখেই চলে এসেছি।ক্যান্টিনে এসে বসেছি কিছু খাওয়ার জন্য তখনই নীলা এসে বসল আমার পাশে।বসেই তার কথার ঝুড়ি খুলল।

:-কিরে কখন এলি?
:-অনেক আগেই এসেছি।
:-আমাকে ডাকলি না কেন তখন??
:-কখন
:-ঐ যে তখন যখন আমি ওই সাদিক ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলাম।
:-তুই তো খুব হেসে হেসে কথা বলেছিলি তাই আমি আর ডাকলাম না তোর যদি ডিস্টার্ব হয় তাই।
:-আচ্ছা তাই নাকি!! এত বড় হলি কবে থেকে আগে তো আমার সাথে থাকলে কোন ছেলেকে আমার আশেপাশে ভিড়তে দিতি না ।এখন আবার কি হল তোর??

:-কিছু না,বাদ দে ওসব। সাদিক ভাইয়ক কি বলল সেটা বল।
:-সাদিক ভাইয়া আমার ভার্সিটি লাইফের প্রথম ক্রাশ! আমি ভাবতাম কবে যে ওনার সাথে কথা বলতে পারবো ।আজ উনি তো নিজেই এসে আমার সাথে কথা বললেন। ভাবসাব এমন ছিলো যে পারলে তিনি আজই আমাকে প্রপোজ করবেন!

:-প্রপোজ করলে তুই হ্যা বলে দিবি??
:-অবশ্যই হ্যা বলব।ক্রাশ বলে কথা।

নীলার এই কথা শুনে আমার মাথায় বাজ পরা শুরু হয়ে গেল।আমি কোনরকমে কথা ঘুরিয়ে বাসায় চলে আসলাম। কিন্তু চিন্তাটা যেন মাথা থেকে সরছিলোই না।ওই হারামজাদা সাদিক যদি এখন নীলাকে প্রপোজ করে বসে আর নীলা যদি রাজি হয়ে যায় তাহলে তো আমার ডুবে মরা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।যাহোক রাতেই সিদ্ধান্ত নিলাম যে কাল নীলাকে আমার মনের সব কথা খুলে বলব। পরদিন ভার্সিটি তে এসেই দেখি নীলা ওই সাদিক ভাইয়ার সাথে কথা বলছে। আমি আমার কথা বলার জন্য নীলাকে ডেকে একটু সাইডে নিয়ে গেলাম।

নীলা:-কিরে তোর আবার কি হল যে হুট করেই ডাক দিলি?

আমি:- কিছু কথা ছিলো।

নীলা:-ওখানে বললেই পারতি।আচ্ছা বল কি বলবি।

আমি:- সাদিক ভাইয়া কি তোকে প্রপোজ করেছে।

নীলা:- না করেনি। কি হয়েছে?

আমি:- (বুকে অসীম সাহস সঞ্চয় করে) নীলা আমি তোকে ভালোবাসি।তোকে হারানোর ভয়ে কখনো বলিনি।

বলিনি কারণ যাতে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়।তবে এখন তোকে হারানোর ভয় বেশি বলেই তোকে বলে দিলাম।
কথা গুলো বলেই আমি নীলার দিকে তাকাতেই নীলা আমাকে ওর শক্তিশালী বাম হাত দিয়ে প্রচন্ড জোরে একটা থাপ্পড় দিয়ে বসল।নীলার হাতের থাপ্পড় খেয়ে আমার প্রায় মাথা ঘুরে গিয়েছে।

:- তুই একটা ফালতু ছেলে।তোকে আমি আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু ভেবেছিলাম আর তুই কিনা আমাকে ভালোবাসিস।একটা কথা জেনে রাখিস রিশাদ তোকে শুধু আমি বন্ধুই ভেবেছি অন্য কিছু না। কিন্তু তুই এতদূর নিয়ে যাবি বিষয়টা আমি ভাবতেই পারিনি।এই ভাবে নিলজ্জর মত তুই কথাটা বলতে পারলি!! তোদের মত ছেলে দের বন্ধু বানানোই ভুল।তোর একটুতেই মাথায় উঠে বসিস। আর কখনো আমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করবি না।যতসব ফালতু ছেলে।

কথা গুলো বলেই নীলা চলে গেল।আমি তখনো আসে পাশে দেখছি কেউ আমাকে থাপ্পড় মারা দেখেছে নাকি। নীলার কথা গুলো গিলতে একটু সময় লাগলেও নীলা যা বলেছিলো সেগুলো যে একটু বেশিই ছিলো তা ঠিকি বুঝেছি। সেদিন আর ভার্সিটি তে থাকিনি ।বাসায় যাওয়ার সময় দেখি নীলা ওই হারামী সাদিকের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। রাগে দুঃখে অপমানে আমি তখনই বাসায় চলে আসি।

প্রায় তিন মাস হয়ে গিয়েছে নীলার সাথে আর আমি কথা বলিনা।মাঝে মধ্যে ভার্সিটি যেতাম তবে নীলার থেকে একটু দূরত্ব বজায়ে রাখি।আজ প্রায় এক মাস পরে ভার্সিটি এসেছি।এসে বন্ধুদের কাউকে না পেয়ে ক্যাম্পাসের এক কোনে গিয়ে বসলাম।এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছি তখন নীলা এসে বসলো আমার পাশে।আমি উঠে দাঁড়ানোর জন্য চলে যেতেই নীলা আমাকে হাত ধরে বসিয়ে দিল।

নীলা:-চলে যাচ্ছিস কেন?

আমি:-তুই ই তো দূরে থাকতে বলেছিস।

নীলা আবার আমাকে সাথে সাথেই প্রচন্ড জোরে থাপ্পড় মারলো।আগের বার কেউ না দেখলেও এইবার পুরো ক্যাম্পাস দেখেছে আমাকে। নীলা বিষয়টি বুঝতে পেরে আমাকে টেনে সাইডে নিয়ে গিয়ে বলল তোকে কথা গুলো ইচ্ছা করে বলেছিলাম।তোর ভালোবাসার পরীক্ষা নিয়েছিলাম।ভেবেছিলাম তুই তাও আমার কাছে আসবি কিন্তু তিন মাসে তুই একবাররও আসিস নি আমার কাছে।একটুও বুঝলি না আমার ভালোবাসা। কথা গুলো বলেই নীলা আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। আমিও আর কিছু বললাম না।শক্ত করে নীলাকে জড়িয়ে ধরলাম।কারণ নীলার এই সুখের কান্না দিয়েই শুরু হল আমাদের নতুন পথ চলা।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত