ভালবাসা

ভালবাসা

ফোন বেজে চলছে একের পর এক কল আসতেছে, কিন্তু রিসিভ করার সামর্থ্যটুকু নাই। গায়ে প্রচন্ড জ্বর। অনেক কষ্টে ফোনটা রিসিভ করলাম।

আমি : হ্যালো [ কাঁপা কাঁপা গলায় ]

পরি: কি ব্যাপার, কই ছিলা, কখন থেকে ফোন দিচ্ছি , জানো আমার খুব চিন্তা হচ্ছিল।

আমি : না কিছু হয় নাই..!

পরি: এই তুমি এভাবে কথা বলতেছো কেন…?

আমি : কই, কিভাবে কথা বললাম। ঘুম দিয়া উঠছি মাত্র, তাই এমন মনে হচ্ছে।

পরি: না। তুমি মিথ্যা বলছো। আচ্ছা তুমি কি অসুস্থ…?

আমি : না! রাত জেগেছি , তেমন ভাল ঘুম হয় নাই । তাই হয়তো এমন শুনাচ্ছে।

পরি: কি…! তুমি আবার রাত জেগেছো , তোমাকে না কতবার বলছি রাত জাগবে না। কি  অবস্থা তোমার। তুমি আমার কথা শুনো না কেন।

আমি : SORRY

পরি: রাত জেগে কি করছো? নিশ্চই গল্প লিখছো, তোমার আর কি কাজ,কাজী নজরুল হওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি?

আমি : আস্যাইনমেন্ট ছিল। তাই দেরি হইছে।

পরি: অনেক বেলা হইছে, খেয়ে নাও।

আমি: হ্যা। তুমি খেয়েছো…?

পরি : তুমি না খেলে আমি কিভাবে খাই বলো।

আমি : সরি জান। তুমি খেয়ে নেও।

পরি: আচ্ছা

আমি: BYE

পরি: বাই…!

[ আসসালামুআলাইকুম। আমি অনি।যে মেয়টার সাথে কথা বললাম, মেয়টার নাম তাবাস্সুম।আমি পরি বলে ডাকি,মানে আমার পরি আমার gf। ২ বছরের রিলেশনশিপ। কথা একটু বেশিই বলে। রাগ, অভিমান, কেয়ারিং, ভালবাসাকোনটাই কম নাই তার। প্রশ্ন করতে পারেন আমার জ্বর থাকা অবস্থায় মিথ্যা কেন বললাম। মিথ্যা না বললে মেয়েটা অস্থির হয়ে যেত, আমাকে নিয়ে টেনশনে থাকতো। তাছাড়া সামনে পরীক্ষা পরির। বললে আমাকে নিয়ে চিন্তা করতো। তাছাড়া সামান্য জ্বর মাত্র। আম্মু খালার বাসায় গেছে অথৈ এর পরিক্ষা ছিলো তাই স্কুল গেছে আব্বু ব্যবসার কাছে ঢাকা গেছে। তাই বাসায় আমি একা, বলতে বলতে ১ ঘন্টা কেটে গেল। ] এমন সময় পরির ফোন। নিশ্চয় জানতে চাইবে খেয়েছি কি ‘ না..

আমি: হ্যালো…

পরি: নিচে আসো।

আমি: কেন…?

পরি: নিচে আসতে বলছি।

আমি: জান, আমি না অসুস্থ।

পরি : হ্যা জানি।। তাই তো আসতে বলছি।

আমি: কিভাবে জানলে…?

পরি: তোমার কন্ঠস্বর শুনেই বুঝতে পারছিলাম তুমি অসুস্থ। তারপর অথৈ এর কাছে ফোন দিয়েছিলাম। অথৈ বলছে। [অথৈ আমার ছোট বোন। পরির সাথে ভালই সম্পর্ক ওর। অথৈ হারামীটা বলে দিল ]

আমি: কি বলছে…?

পরি: তোমার জ্বর, সকালে কিছু খাও নাই। তুমি আমার কাছে না বলে ঠিক করো নাই। তাড়াতাড়িনিচে আসো…!

আমি : বিকালে বের হই…

পরি: তুই কি নিচে আসবি? [রেগে আগুন। আর একটু লেট করলে ফায়ার ব্রিগেড এসেও থামাতে পারবে না। ]

আমি : আসতেছি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে গেলাম। দেখি জান পাখি রিকশা নিয়া অপেক্ষা করছে। রেগে লাল হয়ে গেছে। ]

আমি : জান কেমন আছো…?

পরি: রিকশায় উঠো….

আমি : কোন কথা না বলেই রিকশায় উঠলাম। জানি আমরা কি পার্কে যাচ্ছি।

পরি: মামা চলেন।

আমি : হ্যা মামা পার্কে নিয়া চলেন।

পরি: চুপ করে বসে থাকো।

আমি: আচ্ছা!

পরি: ইশশশ! কি জ্বর আর তুমি আমাকে বললে না। না খেয়ে আছো। এমন কেন করো তুমি। আমাকে কি একটু শান্তিতে থাকতে দিবে না।

আমি: সরি জান।তোমার পরিক্ষা,তাই তোমাকে চিন্তায় রাখতে চাই নাই।

পরি: কি বললি তুই..?আমার পরিক্ষা বলে তোর অসুস্থতার কথা আমাকে বলবিনা। নাম রিক্সা থেকে। মামা থামেন। নেমে যা তুই। বলছি না যেকোনো প্রবলেম হলে আমাকে বলতে। তা বলবি কেন। আমি তোর কে…?

আমি : তুই আমার সব। আই লাভ ইউ। কপালে একটা পাপ্পা দিলাম। [ দেখি রিকশাচালক হা করে তাকিয়ে আছে আর হাসছে। ] ঐ মিয়া হ্যা করে তাকিয়ে আছেন কেন। আগে কখনো দেখ নাই।

পরি: আই লাভ ইউ ঠু। রাগ করে না জান। মামা চলেন। [ হাসপাতালের সামনে নামলাম। আমাকে নিয়েডাক্তার দেখালো, ৩ টা টেষ্ট দিল। সবগুলার ই রিপোর্ট নরমাল। পুরাটা সময়ই পরি অস্থির ছিল। অনেক গুলা ঔষধ দিলো , সবগুলাই পরি কিনে দিল। এবার দয়া করে একটু নিয়ম অনুযায়ী খেয়ে নিয়েন মিস্টার। ]

পরি: আর পারছি না, কেয়ারলেছ একটা।কোন দুঃখে যে প্রেমটা করতে গেলাম।

আমি : ছেড়ে দিলেই তো পারো…!

পরি: একটা থাপ্পড় দিয়া সব গুলা দাঁত ফেলে দিব। মুখে কোন কথা আটকায় না।

আমি : রাগ করো কেন আমি তো একটু দুষ্টামি করেছি

পরি: আমি মনে হয় সিরিয়াসলি বলছি, আমিও তো দুষ্টামি করেছি

আমি: ওরে আমার দুষ্টুরে।

পরি: অনেক খুদা লাগছে চলো এবার কিছুখেয়ে নাও।

আমি : তুমি এখনো খাও নাই…?

পরি: তুমি না খেয়ে থাকলে কিভাবে খাই। চলো না একসাথে খাই।

আমি: চলেন [ জ্বরের মাঝে একদম ই খেতে ইচ্ছা করছিল না। পরি নিজ হাতে খাইয়ে দিল। ]

পরি: চলো বাসায় পৌছে দিয়ে আসি।

আমি : যেতে ইচ্ছা করছে না।

পরি: তাইলে আমারে নিয়া যাও…!

আমি : হ্যা।আমি অনার্স টা শেষ করি তারপর একবারে নিয়া যাবো।

পরি: হুমম। তখন জ্বর হলে পানিতে চুবাবো।

আমি : জান।। তুমি এইটা করতে পারবে। তুমি না আমাকে ভালবাসো।

পরি : না। মোটেও না।। [ আসার সময় পরির চোখের কোনে অশ্রু জমতে শুরু করলো। মুখটা মলিন হয়ে গেল। ]

পরি: খুব কষ্ট হবে তোমার তাই না…?

আমি : না, তেমন কিছু হবে না। ঔষধ খেলেই সেড়ে যাবে।

পরি: আমি এতই হতোভাগী তোমারঠিকমত কেয়ারটাও নিতে পারছি না।[ পরি কেঁদেই দিল। পুরাই ছেলেমানুষী]

আমি: পাগলী আমার। কিছু হবে না। ২ দিনেরমধ্যেই ঠিক হয়ে যাবো। কাঁদে না জান। আই লাভ ইউ। [ চোখের জল মুছে দিলাম ]

পরি: আই লাভ ইউ টু

আমি: BYE

পরি: বাই ভালবাসায় কখনো চাওয়া পাওয়া থাকে না। থাকে একটু কেয়ারিং। নিজে ভাল থেকে, অন্যকে ভাল রাখার নাম ই ভালবাসা।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত