সকালবেলা ফোনের শব্দে কাচা ঘুমটা ভেঙ্গে গেল।এত্ত সকালে কাচা ঘুম ভাঙ্গানোরকষ্ট মনে হয় মাঘ মাসের শীতেখালের পানিতে চুবানোর চাইতেও বেশি। ফোনটা ছিল পাশেই। হাতে নিয়ে দেখি শোভার ফোন। রিসিভ করলাম।
— হ্যালো!!(আমি)
— কইরে তুই??(শোভা)
— একি।আমাকে তুই করে বলতেছ কেন??
— হারামজাদা তুই করে বলবো নাতোকি আপনি বলবো??
— আরে কি হইছে বলবাতো!!???
— মেয়েটা কে??
— কোন মেয়েটা??
— যার সাথে মনের সুখে হাত ধরে,হাসতে হাসতে কথা বলতে বলতে হাটতেছিলি!!
— আজব আমি কবে কোন মেয়ের হাত ধরে হাটলাম!!
— আজকে রাতে।
— রাতে তো আমি ঘুমাইয়া ছিলাম!! মেয়েদের সাথে হাটবো কিভাবে??
— ওইযে স্বপ্নে!!
— মানে??
— মানে স্বপ্নে দেখেছি তুই অন্য একটা মেয়ের হাত ধরে হাটতেছোস।
— আরে স্বপ্নে দেখছো,তাই বলে কি আমি অন্য মেয়ের সাথে হাটছি??।
— আমি স্বপ্নে দেখছি ক্যান??
— আমি কি জানি?? তুমি জানো।
— জানো না ক্যান হ্যা?? আমার স্বপ্নে তুই অন্য মেয়ের হাত ধরে হাটবি ক্যান??আমাকে কি চোখে বাজে না??নাকি আমি এতোই ক্ষুদ্র হয়ে গেছি যে অনুবিক্ষন যন্ত্র ছাড়া চোখে বাজে না??
— আরে কি আজব?? স্বপ্ন তুমি দেখছো, এতে আমার কি করার থাকতে পারে??
— কি পারে কি পারেনা তা জানা লাগবে না।
নেক্সট টাইম যেন অন্য কোন মেয়ের সাথে না দেখি। দেখলে খবর আছে!!বাই…! আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিল। আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি। আর ভাবতাছিভাবতাছি এইটা কে রে?? আমার গার্লফ্রেন্ড নাকি প্রেসার কুকার?? সকাল সকাল আমারে চুলায় বসাইয়া দুইটা ছিটিমাইরা দিলো।আর আমি টেনশনেসিদ্ধ হয়ে গেলাম।ধুর ক্যান যে প্রেম করতে গেছিলাম।মনে হয় মুখে থাকতে ভূতে কিলাইছিল। এজন্য একটা প্রেসারকুকারের সাথে প্রেম করতে গেছিলাম।সারাদিন শুধু আমার প্রেসার হাই কইরা রাখে। হঠাৎ চোখ পরলো আমার পাশে কিশোরের উপর।হারামজাদায় আর বদলাইলো না। আমি ফোনে একটু কথা বলতে নিছি,এই সুযোগে আমার কোলবালিশটা কোলে নিয়া ঘুমাইয়া আছে। আরো খেয়াল করলাম লোল দিয়া কোলবালিশটারে ভিজাইয়া ফেলছে। মেজাজ তখন পুরাই গরম।সোজা কিশোরের পাছা বরাবর এক লাথি।এক লাথিতে খাট থেকে মেঝেতে। মেঝেতেবসে ব্যাথার জায়গা ডলতে ডলতে বললো
— দোস্তো, আমি মনে হয় গরাতে গরাতে পরে গেছি।তুই আমারে একটু ধরতে পারলি না??(কিশোর)যাক বাবা হারামিটায় আসল ঘটনাটা বুঝতে পারেনি। তারপর ফ্রেশ হয়ে খাবারের বক্সের দিকে হাত বাড়ালাম। কিন্তু বক্স খালি।তারমানে কিশোর সব খাবার ফতুর করে ফেলছে। হারামীটায় পারেও।সারাদিন শুধু খাই খাই।তবুও কেন যে টেলিসামাদদের মত হ্যাংলা,মাথায়ই ঢুকে না। কি আর করা তারপর খাটের নিচ থেকে মুড়ি বের করে খাওয়া শুরু করলাম। তখনি শোভার ফোন।
— হ্যালো..!!(আমি)
— কি করো??(শোভা)
— মুড়ি খাই।
— কি বললা তুমি??(রেগে গিয়ে)
— মুড়ি খাই।
— ও বিরক্ত করলাম তাইনা??এজন্য এমন করতেছ!
— আরে আজব আমি যদি মুড়ি খাইতাহলে কি বলবো ভাত খাই??!!
— না তা কেন বলবা এখন তো আমি বিরক্তিকর হয়ে গেছি।সোজা ভাবে বললেই তো হয়।
— আরে সত্যি আমি মুড়ি খা……..
টুট টুট টুট কথাটা শেষ করতে পারলাম না। লাইন কেটে দিল। মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি।কি বুঝাইলাম আর কি বুঝলো?? দিনটা শুক্রবার ছিল।এজন্য বাসায়ই ছিলাম। কিশোর আমি মিলে লুঙ্গিড্যান্স দিতেছি। চরম উপভোগ করতেছি। ঠিক তখন শোভার ফোন!!
— হ্যালো! (আমি)
— কি করো??(শোভা)
— নাচতেছি..!
— ও আমাকে আসলে সহ্য হয়না তাইনা??
— কি আজব কি করছি আমি??
— নাহ কিছুই কর নাই।সবই আমার কপাল।
— বিশ্বাস করো সত্যিই আমি আরকিশোর নাচতেছি।
— থাক আর আমাকে বোকা বানাতে হবে না।আমি সব বুঝি।ভুল হয়ে গেছে।আর কল দিবো না!!সরি।
— এই সত্যি আ……
টুট টুট টুট লাইন কেটে দিলো। আমি মাথায় হাত দিয়া বসে আছি। এইটা কি রে।এইটার মাথায় কি সব কিছুই উল্টা ঢুকে নাকি আমি বুঝাই উল্টা। দুপুরে খাওয়াটা মন্দ হয়নি।তরকারি ছিল কচু তরকারি।আমার প্রিয় তরকারি। খেয়ে দেয়ে বিছানায় চিৎ হয়ে পেট কোলে নিয়া শুয়ে আছি। হঠাৎ ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। ফোন হাতে নিয়ে হার্টবিট ফাস্ট হয়ে গেল।শোভা ফোন করেছে। আল্লাহ জানে কি বলতে আবার কি বুঝে।
— হ্যালো(আমি)
— কি করো তুমি??(শোভা)
— শুয়ে আছি।তুমি??
— আমি বসে আছি।
— খেয়েছো??
— হুম।
— কি দিয়ে খেলে??
— কচু দিয়া!
— ও সরি!!
— কেন??
— বিরক্ত করে ফেললাম।বলেছিলাম যে কল করবো না।কিন্তু বেহায়ামনটার জন্য পারলাম না। আমার বোঝা উচিত ছিল,আমার ফোনে কেউ বিরক্ত হয়। সো সরি। ভাল থেক
— আরে কি হলো।কচু দিয়ে খেলে কি বলবো মাংস দিয়ে খেয়েছি?? কি সমস্যা তোমার?? যাই বলি এমন রিয়েক্ট করো কেন?? সব কিছুই কি উল্টা বুঝো?? উল্টা বুঝা ছাড়া অন্য কোন কাজ নাই নাকি??
— আচ্ছা আর কখনো কথা বলবো না। বিরক্ত করবো না।
— হ্যা পারো তো ওই একটা জিনিসই। এক কথা টেপ রেকর্ডারের মত বক বক করতে।আর আমারে প্রেসার কুকারের মধ্যে রেখে প্রেসার দিয়া মেরে ফেলো।
— ওহহহ আমি খুব বাজে। তাইনা??
— দেখো রাগ উঠাবা না।আমার আরভালো লাগতেছে না।
— আচ্ছা ভাল না লাগলে ব্রেকআপ করে ফেলো।
— আচ্ছা ব্রেকআপ।বাই।
কথাটা অনেক সহজভাবে বলে ফেললাম।বাট মনের মধ্যে খুব তোলপাড় শুরু করে দিলো।করুক গে। ব্রেকআপের কথাটা তো আর আমি বলিনি।যাইহোক একদিক দিয়ে ভালই হলো।প্রেসার কুকারের হাত থেকে বেচে গেলাম। নাহলে রেগুলার প্রেসারে ফালাইয়া দুইটা কইরা ছিটি মাইরা আমারে শেষ করে দিত।
প্রথম দিনগুলা একটু বিষন্নতায় কাটলেও ধীরে ধীরে মন ঠিক হয়ে গেল। প্রায় একমাস পর। বাবা ফোন করে বাড়ি যেতে বললো। খুব জোর দিয়ে বললো। এজন্য সেদিন রাতেই টিকিট কেটে বাড়ি চলে আসলাম। বাড়ি এসে দেখি।বাড়িটা অনেক সাজানো। বাবাকে জিজ্ঞেস করতে বললো বিয়ে উপলক্ষ্যে সাজাইছে।খুশিতে তখনি রুমে গিয়া লুঙ্গি পইড়া একটা লুঙ্গিড্যান্স দিলাম। হাহা আমার বড় ভাইয়ের বিয়ে। ভাবতেই খুশিতে মনটা ভরে গেল। ভাইয়ার মুখ খানাও খুশিতে গদোগদো। আমারো যেন খুশি ধরে না।ভাইয়ার বিয়েতে যদি দুএকটা বিয়াইন জুটে তাইলে আর আমারে পায় কে।লাইন মারা শুরু করমু। বিয়ের আগের রাতে হবু বিয়াইনের চিন্তায় চোখে ঘুম নাই।রাতটাও যেন বড় হয়ে গেছে।কাটতেই চায়না। অবশেষে অনেক প্রতিক্ষার পর সকাল হলো। সকালে উঠে বিয়ের উপলক্ষ্যে কেনা পান্জাবি পড়লাম। ভাইয়ার রুমে গিয়ে দেখি ভাইয়া লাল রংয়ের একটা পান্জাবী পরছে। একি ভাইয়ার বিয়ে।আর এইটা কি পান্জাবী পরছে!??
— ভাইয়া??(আমি)
— কি??(ভাইয়া)
— তোর পান্জাবীর চেয়ে কিন্তু আমার পান্জাবীটা অনেক সুন্দর হইছে। হেহে তোর বিয়া আর তঁর পান্জাবী ভাল হয়নাই। ভাইয়া কিছু বললো না।শুধু মুচকি হাসলো। তারপর আলমারি থেকে বরের টোপর বের করতেই বললাম
— দে তুই পরে পরিস।
এখন আমি মাথায় দিমু।বিয়া বাড়িতে গিয়া তোরে দিমু। বইলাই উত্তরের অপেক্ষা না করে ভাইয়ার হাত থেকে ছো মেরে টোপর টা নিয়ে সোজা দৌড়। গাড়িতে করে যখন বিয়ে বাড়ি যাচ্ছি।তখন ভাইয়ার পাশে বসে বলতেছি।
— ভাইয়া যখন বিয়ে পরাইবে আমাকে তোর পাশে বসতে দিস প্লিজ।(আমি) ভাইয়া শুধু হাসলো।কিছুই বললো না। বিয়ে বাড়ি পৌছে গাড়ি থেকে পুরা ভাব নিয়া নামলাম। এদিক ওদিক তাকাইতেছি।ড়খি কোনখানে সুন্দরি মাইয়া আছে। আরে ইউ হ্যাভ টু বুঝতে হবে হেতের লগে ভাব জমাবো। সবাই আমার দিকে তাকাইয়া আছে। আর জানালা দিয়া অনেকগুলা কিউট মেয়ে দেখি ভাইয়ারে রাইখা আমার দিকেই তাকাইয়া আছে। আমি একটু ভাব নিয়ে চুলটা হাত দিয়ে একটু ঠেলে দিলাম। হাহা বুঝতে হবে।ওদেরও চিন্তাধারা বরের সাথে কোন ছেলে আসছে।তার সাথে একটু লাইন মারবে। যাক আমার লাইন তাহলে ক্লিয়ার। বিয়ের পিরিতে বসলাম।আমার ভাইয়াটা অনেক ভাল। আমাকে তারপাশে বসাইছে।বলতে গেলে আমিই সবার মাঝে বসছি। কাজী আসলো বিয়ে পরানো শুরু করলো কিন্তু একি বরের জায়গায় আমার নাম বলে ক্যান?? ভাইয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম…..
–কাজী সাহেবের কি মাথা খারাপ হয়ে গেলনি??(আমি)
— ক্যান??(ভাইয়া)
— বরের জায়গায় তোর নাম রাইখখা আমার নাম বলে ক্যা??
— ঠিকই তো আছে।বিয়ে তো তোরই হইতেছে#!!
— মানে??(মনে হয় মাথায় বিনা মেঘে ঠাডা পরলো)
— মানে বিয়েটা তোরই হচ্ছে।
আমি ইতিউতি না তাকিয়ে “চাচা আপন প্রান বাচা” বইলা উইঠা দৌড় দিতে নিছি। বাট পাশ থেকে চাচা আমার হাত ধরে ফেললো। অতঃপর কোন কথা না বইলা কানের নিচে বড় করে একটা থাপ্পর বসাইয়া দিল। কানে মনে পুপুপু কইরা সাইরেন বাজতেছে। লজ্জায় মাথা কাটার মত অবস্থা। তারপর চুপ করে বসে আছি।আর পাশের কিউট কিউট মেয়ে গুলার দিককে অসহায় ভাবে তাকাচ্ছি। আহারে কতই না আশা ছিল।লাইন মারমু।কিন্তু এতো আমার লাইন ক্রাশ করছে। বেচারা কপালে বুঝি এটাই ছিল। পরক্ষনে জানতে পারলাম। কনের নাম শোভা। তখন মাথায় দ্বিতীয় ঠাডা ডা পরলো। বুঝলাম এটা বিয়ে না।এটা কুরবানি। আমাকে হাটের বলদ বানাইয়া সবাই মিল্লা কুরবানি দিল। তাও ওই প্রেসার কুকারের সাথে। জীবনটা মনে হয় তেজপাতা হয়ে গেল। ভাইয়ারে দেখলাম এক মেয়ের লগে ভাব জমাইয়া দিছে।কিন্তু এইটা তো আমার করার কথা ছিলমকে জানতো যে বিয়া খাইতে আইসা বিয়া করা লাগবে।
আমার বাপে যে তার অনার্স থার্ড ইয়ারের পোলারে মানে আমারে বিয়া করাইবো মাথায়ই ঢুকে নাই। অতঃপর ভাইয়ার কাছ থেকে সব ক্লিয়ার হলো। শোভার সাথে ব্রেকআরের পর শোভা নাকি অনেক পাগলামি শুরু করছিল। হাত কেটে, খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়ে দিশেহারা অবস্থা করে ফেলছিল। ওকে বাচাতেই শোভার বাবা আর আমার বাবা মিলে এই বিয়ের আয়োজন করলো। বাবাই সবাইকে নিষেধ করছিল। যাতে এসব কিছু আমাকে না জানানো হয়। তাহলে হয়তো আমি পলায়ন করমু। আসলেও পলাইতাম। নইলে কে চায় এমন প্রেসার কুকাররে বিয়া করতে। কিন্তু কপাল।ফাইসা গেলাম। একটা গানের কথা খুব মনে পরতেছে। “আমি ফাইসা গেছি,ও আমি ফাইসা গেছি মাইনকা চিপায়” বউ নিয়া বাড়ি আসতেছি। গাড়িতে মুখখানা গোমড়া করে বসে আছি।
— কি মুখ কালা করে বসে আছো ক্যান??(শোভা)
— কারন আমার কপালটা আজকে পুড়ছে তো।এজন্য মুখটা পুইড়া কালা হয়ে গেছে।(আমি)
— হাহাহা। ভালোই তঁ মজা করতে পারো।
আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি। এই মাইয়ারে সোজা উত্তর দিলে উল্টা বুঝে।আর উল্টা উত্তর দিলে সোজা ভাবে নেয়। বুঝলাম সামনের দিকে প্রেসারে থাকা লাগবে। কারন আব্বায় গলার সাথে একটা প্রেসার কুকার বাইন্ধা দিছে। শাওন….সোনার চাঁদ,পিতলের ঘুঘু। রেডি হও প্রেসার কুকারে সিদ্ধ হওয়ার জন্য। অতঃপর গাড়ি ধীরে ধীরে বাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর আমার প্রেসারও ততোই বেড়ে চলতেছে।
সমাপ্ত