প্রজাপতি ও বনফুলের প্রেম

প্রজাপতি ও বনফুলের প্রেম

প্রজাপতি ও বনফুলের প্রেম।

নির্জন বনে একটি বনফুল ছিল। নিসঙ্গ একাকী ছিল সে। সারাদিন একা একাই কাটতো তার। নিসঙ্গতার যন্ত্রনা বড়ই নির্মম, সহ্য করা দুঃসাধ্য। নিসঙ্গতার এমন নিঠুর নির্মমতায় জীবনের প্রতি ঘৃনা হতো বনফুলের।

অতঃপর, হঠাৎ একদিন এক পড়ন্ত বিকেলের স্নিগ্ধতায় দেখা হলো বনফুলের একটা প্রজাপতির সাথে। প্রজাপতির ডানার রঙটা ছিল নীল, আর সেই নীল ডানায় ছিলো নানা রঙ্গের ছড়াছড়ি। বনফুল মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলো প্রজাপতির দিকে, দৃষ্টি ফেরাতে পারেনি। প্রথম দেখাতেই ভালোবাসার বীজ অঙ্কুরিত হয় বনফুলের মনে। বনফুলকে এমন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রজাপতি
বললো, “এমন নিলরজ্জের মতো তাকিয়ে আছো কেন?” প্রজাপতির সুমুধর কন্ঠ শোনে বনফুল কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলে, বোকার মতো তাকিয়ে থাকে প্রজাপতির দিকে। প্রজাপতি কোনো উত্তর না পেয়ে চলে গেলো।

এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে শেষে নামলো রাত, মুচকি হেসে দেখা দিলো চাঁদ। বনফুল কিছুতেই ভুলতে পারছেনা প্রজাপতির কথা। তার দৃষ্টির সামনে বার বার ভেসে ওঠে প্রজাপতির প্রতিচ্ছবি, তার সুমধুর কন্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হয়ে কর্ন দিয়ে প্রবেশ করে মনে নানান ভাবনার সৃষ্টি করছে। প্রজাপতির ও বার বার মনে পড়ছে বনফুলের কথা। বনফুলের বোকা বোকা চেহারা মনে করে একা একাই হাসছে সে। সে রাতে বনফুল-প্রজাপতি কারোই ঘুম হয়নি।

খুব সকালেই প্রজাপতি ছোটে আসে বনফুলের কাছে। প্রজাপতিকে দেখেই অভিমানের সুরে বনফুল বলে, “আসতে এতো দেরি হলো কেনো? আমি কখন থেকে অপেক্ষা করছি।” অনর্গল বলেই যাচ্ছে বনফুল, প্রশ্নের পর প্রশ্ন করছে। প্রজাপতি কিছুই বলছে না, মিটিমিটি হাসছে আর বনফুলের চঞ্চলতা দেখছে। বনফুলের কথার ঝুড়ি যখন কিছুটা হালকা হলো, তখন প্রজাপতি বললো, “এতো কথা বলতে পারো তুমি! এতো প্রশ্ন করতে পারো! আমি তোমার এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না, কি বলি শোনো- আমি খুব তোমাকে ভালোবাসি, জানো, কাল সারারাত তোমার কথা ভেবে একটু ঘুমাতে পারিনি বনফুল। সত্যী আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।” বনফুল কিছু না বলে জড়িয়ে ধরলো প্রজাপতিকে। সেই থেকে দুজন আবদ্ধ হলো প্রেমবন্ধনে।

প্রতিদিন বনফুলের কাছে আসতো প্রজাপতি। সারাদিন গল্প করতো দুজন। মান-অভিমান, হাসি-টাট্টায় দিন কাটছিল তাদের।

একদিন কথায় কথায় রাত হয়ে যায়, প্রজাপতি থেকে যায় বনফুলের কাছে। বনফুলের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে প্রজাপতি। হঠাৎ শুরু হলো প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি ঘুম ভেঙ্গে গেলো তাদের। প্রজাপতি খুব ভয় পেয়েছিলো, তাই বনফুল তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে রাখলো। তুমুল ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে, বনফুল ভিজে একাকার হলেও, প্রজাপতি তেমন একটা ভিজেনি। হঠাৎ একটা গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়লো বনফুলের মাথার উপর। বনফুল ধাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে দিলো প্রজাপতিকে। বনফুল কিছু বলার সুযোগ পেলোনা না আর, চলে যেতে হলো প্রিয়তমাকে ছেড়ে না ফেরার দেশে।
কিছুক্ষন পর ঝড় থামে, প্রজাপতি খুব কষ্টে গাছের ডালের নিচ থেকে বের করলো বনফুলের প্রানহীন দেহ। খুব কেঁদেছিলো প্রজাপতি সেদিন বনফুলের প্রানহীন দেহ জড়িয়ে ধরে। আজো কাঁদে প্রজাপতি বনফুলকে মনে করে, আজো খুজে বেড়ায় সে বনফুলের স্মৃতি সবুজ পাতার ভীড়ে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত