আমি তোমাকে কখনো মেনে নিতে পারবনা,,,দিতে পারবনা স্ত্রীর অধিকার।আমার কাছে সব মেয়েই এক।” আমি হাসান।ছোটখাট একটা চাকরি করছি।রাজশাহীতে থাকা হয়।উচ্চবিত্ত ঘরের সন্তান না হলেও যথেষ্ট টাকা পয়সা আমাদের।সারাদিন অফিস আর অফিস শেষে আড্ডা দিয়ে চাকরী জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়ে দিয়েছি।বিয়েটা করা হয়ে উঠেনি।করা হয়ে উঠেনি বললে ভুল হবে অবশ্য আমি করিনি।কোন একজনকে এর জন্য দায়ী বলা চলে। আফরিনের সাথে আমার রিলেশন দেড় বছরের।এইচ.এস.সি পরীক্ষার আগে যখন বিদায় অনুষ্ঠানে আফরিন নামক অপ্সরীকে আসতে দেখলাম তখন সত্যি আর চোখ ফেরানোর ক্ষমতা ছিলনা।নীল শাড়িতে অপরূপ লাগছিল মেয়েটিকে। অবশ্য ভাল লাগা আর ভালবাসা ছিল অনেক আগে থেকেই তাই ভাবলাম আজই প্রপোজটা করে ফেলি।বাগানের গোলাপের গাছ থেকে গোলাপ তুলে আনলাম প্রপোজ করার জন্য।হাতে গোলাপের কাটা লেগেছিল তবু ভালবাসার অদম্য শক্তির কাছে এ কিছুই না।
আমার এক বন্ধুর গার্লফ্রেন্ড আফরিনের বান্ধবী।ওকে বললাম যেন আফরিনকে নিয়ে একটু পর বাগানে আসে।ও আমার কথা মোতাবেক আফরিনকে বাগানে নিয়ে এল আর আমার সামনে দাড় করিয়ে দিয়ে নিজে চলে গেল।
আফরিন ব্যাপারটা কিছুটা আঁচ করতে পেরে ফিরে যাবার পথে পা বাড়াচ্ছিল।টেনে ধরলাম ওর হাত আর হাটু গেড়ে ওর সামনে পড়লাম। প্রতিদিন তোমার দিকে তাকিয়ে থাকাতে আমার অন্তর কেন প্রশান্তি পায় আমি জানিনা।কেন আঁখিযুগল তোমায় প্রতি মুহুর্তে খুঁজে ফেরে জানিনা।কেন তোমায় না দেখলে মনটা খারাপ হয়ে যায় তাও জানিনা।শুধু জানি আমি আফরিন নামক অপ্সরীকে ভালবেসে ফেলেছি।খুব বেশি ভালবাসা চাইব না অল্প একটু ভালবাসা পেলেই চলবে।হবে বাবুর আম্মু যে বাবুর আব্বু হব আমি?দিবে একটু ভালবাসার সুযোগ? দেখলাম আফরিন নিচের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে।
:হুম আমি রাজী তোমার বাবুর আম্মু হতে।
এভাবেই শুরু হয়েছিল আফরিনের সাথে আমার সম্পর্ক।ভালবাসায় কোন কমতি রাখিনি আমি কখনো।অবশ্য একটু উচ্ছৃংখল ধরনের ছিল আফরিন সেটা মেনে নিয়েছিলাম।প্রথমে ভালবাসাটা দু তরফা মনে করলেও পরে বুঝেছিলাম ভালবাসাটা এক তরফা। ইদানিং আফরিন আমাকে এভয়েড করে চলছে।ফোন দিলে বেশির ভাগ সময় ওয়েটিং দেখায় বা ও ফোন ধরেনা।ফোন যদি কখনো ধরে তবু ভাল করে কথা বলেনা।বুঝতে পারছিলাম ভালবাসাটা হয়ত হাত ছাড়া হতে আর বেশি দেরী নেই।
:আফরিন কাল আমি তোমার সাথে পার্কে দেখা করতে চাই।আসবে একটু?
:কইটার সময়?আমারও তোমার সাথে কিছু কথা আছে।
:কাল বিকেল চারটাই। আসতে পারবে?
:আচ্ছা ঠিক আছে দেখা হবে।বাই
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা রেখে দিল।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি এস্পার বা ওস্পার কিছু একটা ফয়সালা কাল হবে।
সাড়ে চারটা বাজতে চলল এখনো আফরিনের আসার নাম নেই।হুম আর কিছু বুঝার বাকি নেই।উঠে চলে যাচ্ছিলাম তখনই দেখলাম আফরিন আসছে তাই যাওয়ার ইচ্ছাটা পরিত্যাগ করলাম।আমার বসে থাকা বেঞ্চিটায় বেশ খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে বসল আফরিন।মনে মনে ভাবছিলাম যে আফরিন আমার গা ঘেষে বসে কাঁধে মাথা রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা আমার কাছে থাকত সে আজ আমার থেকে দূরত্ব মেপে বসছে।
:কেমন আছ?
:হুম বেশ ভাল যদিও তা অভিনয়।তুমি?(আফরিনের কথায় চিন্তার জগতে করা বিচরণ বন্ধ করে উত্তর দিলাম।)
:হুম আমিও ভাল।আর ভাল থাকার পরিমাণটাও অনেক বেশি।আমার ভাল থাকাটা অবশ্য অভিনয় না।আচ্ছা যাই হোক কিছু বলার জন্য আসলাম।
:হুম বল।
:আমার পক্ষে আর এই রিলেশনটা কন্টিনিউ করা সম্ভব না।
:(খুব একটা অবাক হলাম না ওর কথায়) আমার অপরাধটা কি জানতে পারি?
:কি আছে তোমার যে তোমার সাথে রিলেশন করব।যেটা ছিল সেটা জাস্ট টাইম পাস।আমার নিউ বি এফ বিশাল ধনী পরিবারের ছেলে।আমি তাকে নিয়েই থাকতে চাই।ওর মত বড়লোক একটা বি এফ থাকলে আমার কোন কিছুর অভাব হবেনা কোনদিন।আশা করি নিজের মানটা বুঝে নিয়েছ। কিছু বলতে যাচ্ছিলাম সে মুহুর্তে আফরিনের ফোনটা বেজে উঠল।আফরিন ফোনটা রিসিভ করল,,
:হ্যালো জানু আমি ওই ক্ষ্যাতটারে বাই দিতে আসছি।একটু পর তোমার সাথে দেখা করছি।লাভ ইউ জানু।বাই
:শুনলেই তো আমাদের কথা।এবার উঠছি বাই।
:শুন একটা কথা বলব।
:হুম বল।
:আজ টাকা পয়সার প্রতিপত্তিতে তুমি অন্য কারো পিছনে ছুটছ তবে কাউকে ধোঁকা দেয়ার ফল হয়ত তোমায় ভুগতে হবে।ভাল থেকো।প্রস্তুত থেকো। এই বলে সোজা হেটে চলে আসলাম ওর কাছ থেকে।এটা হবার ছিল সে কথা আমি আগে থেকে জানলেও কষ্ট হচ্ছেনা তা বললে মিথ্যে হবে।আমার ভালবাসাটা তো টাইম পাস ছিল না,,মিথ্যা ছিল না।
ওর চলে যাওয়াতে ভেঙে পড়লে বন্ধুরা আমার খুব কেয়ার করে বুঝিয়ে দিল একজনের জন্য আমি পৃথিবী ছাড়তে পারিনা।তারাও আমাকে খুব ভালবাসে।তাই বুকে পাথর চাপা দিয়ে চলা শুরু করলাম বাকিটা পথ একলা একা।
শিক্ষা জীবন শেষ হতে আর বেশী একটা সময় বাকি ছিলনা।ভাগ্যক্রমে একটা ভাল চাকরিও পেয়ে গেলাম।আজও এমন কিছু কোম্পানী আছে যারা মামা খালুর ক্ষমতা ছাড়া চাকরিতে লোক নিয়োগ দেয় তাদের বদৌলতেই চাকরিটা পাওয়া। আমার অফিসের বস শান্ত শিষ্ট পঞ্চাশোর্ধ এক ভদ্র লোক।খুব স্নেহ করেন আমায় তিনি।ভদ্রলোকের কোন ছেলে নেই একমাত্র মেয়ে আছে।ভদ্রলোকের স্ত্রী গত হয়েছেন বেশ অনেক বছর আগেই।
:স্যার একটা ফাইলে সাইন করানোর ছিল।আসতে পারি?
:আরে হাসান যে।আসো বাবা।তুমি আমার ছেলের মত যখন ইচ্ছা হবে রুমে চলে আসবে অনুমতির প্রয়োজন নেই।আর আমি তোমাকে কতবার বলেছি স্যার বলবেনা আংকেল বলবে তাও তুমি সবসময় স্যারই বলে চলেছ।আর যেন না শুনি।এখনো দাড়িয়ে আছ!বসো। এতক্ষনে বসের দিকে তাকিয়ে থাকাতে দেখতে পাইনি আমার সামনে রাখা চেয়ার গুলোর একটাতে এক সুন্দরী রমনী বসে আছে।ব্যাপারটা গায়ে না মেখে একটু পাশে অন্য চেয়ারে বসে গেলাম।
:হাসান পরিচয় করিয়ে দিই।এ হল আমার মেয়ে নীলা।এবার অনার্স চতুর্থ বর্ষে পড়ছে। (এটা লিখার সময় আম্মুকে প্রশ্ন করলাম আম্মু অনার্স কত বছরে।পিচ্চি রাইটার এটা এতদিন জানতনা।ব্যাপারটা বেশ মজার তাই লিখে দিলাম।) আর নীলা এই হল হাসান যার কথা তোকে সবসময় বলি।
:হাই হাসান!
:আসসালামু আলাইকুম।
হাই এর উত্তরে সালাম পেয়ে কিছুটা লজ্জা পেল নীলা।(আফসোস আমরা বেশির ভাগ মুসলিম পরিবারের সন্তান অথচ আমাদের কথা সালাম নয় বরং হাই দিয়ে শুরু হয়)
:জি ওয়ালাইকুমসালাম।
:আপনার দেয়া উত্তরটা সম্পূর্ণ ভুল।এটা আমার জন্য বদদোয়া হল।উত্তরটা হবে ওয়া আলাইকুমুসসালাম।আশা করি সামনে থেকে সতর্ক হবেন।দেখলাম নীলা লজ্জাবনত মস্তকে বসে রইল।
:স্যার যে কাজের জন্য এসেছিলাম।
:গেট আউট ফ্রম হেয়ার।
:কেন স্যার আমি কি করলাম?
:তুমি আবার স্যার বলছ কেন?
:ওহ হো সো সরি আংকেল।এই ফাইলে সাইন লাগবে।
:হুম দাও।
ফাইলটা আংকেলের দিকে বাড়িয়ে দিলে আংকেল সেটা নিয়ে দেখতে লাগল।হঠাৎ পাশে বসা রমনীর দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম উনি আমার দিকে তাকিয়ে হা করে বসে ছিলেন।আমাকে তাকাতে দেখে হতচকিত হয়ে চোখটা ফিরিয়ে নিল।আমি এই তাকিয়ে থাকার কোন মানে খুঁজতে রাজী নই।কারণ আমার কাছে সব মেয়েই আফরিনের মত স্বার্থপর।তাই আর কোন সম্পর্কে জড়াতে চাইনা।বিয়ে না করার সিদ্ধান্তটাও নিয়ে ফেলেছি।আজীবন একলা একাই রয়ে যাওয়ার পণ। অফিস ডেস্কে বসে কাজ করছি এমন সময় নীলার আগমন।দেখেও না ভান করে কাজ করতে থাকলাম।
:আপনার সাথে কি একটু কথা বলতে পারি?
:জ্বী বলুন।
:আপনার ফোন নম্বর আর ফেসবুক আইডিটা পেতে পারি?আপনার নম্বর আব্বুর থেকেই নিতে পারতাম তবু এটা ঠিক হত না তাই সরাসরি আপনার কাছেই বললাম।
:এগুলোর প্রয়োজনটা কি জানতে পারি?
:আশা করি দিলে আপনার কোন প্রব্লেম হবেনা।
:আচ্ছা নিন।01732999022 আর ফেসবুক আইডি Md Hasan. ফোনে নম্বরটা তুলে নিল নীলা।আমি আবার আমার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
:এই যে দেখুন এটা কি আপনার আইডি?
এ মেয়ে দেখি আমার লিস্টে আগে থেকেই আছে!!গল্প লিখার সূত্রে পরিচয় হয়েছিল এই আইডির সাথে।আমার গল্পের বিশাল বড় ফ্যান বলা চলে।ওর আইডি ছদ্মনামে খোলা আর আমি ওকে চিনতামও না তাই বুঝতে পারিনি ‘ আশায় বসতি’ আইডিটা নীলার।অবশ্য ওর আইডিতে ওর কোন পিকও আপলোড দেয়া নেই যতদূর আমি জানি।
:জি এটাই আমার আইডি।
:বাহ আমি তো আপনার বিশাল ফ্যান জানেন নিশ্চয়।আগে বলেছিলাম।জানতাম না আমার প্রিয় রাইটারের দেখা আমার আব্বুর অফিসে পাব।খুব ভাল লাগছে আমার প্রিয় রাইটারকে সামনে দেখে।
:জ্বী ধন্যবাদ।
:আচ্ছা কাজ করুন তাহলে আমি যাই।
এই বলে নীলা যাবার পথ ধরল।একটা মেয়ে আমার নম্বর,,ফেবু আইডি নিল এতে আমার কোন মাথা ব্যাথায় নেই।স্পেশাল কোন ফিলিংস কাজ করছেনা ঠিক। রাতে বাসায় বসে নেটে ঘাটাঘাটি করছি ল্যাপটপে।ফোনটা বেজে উঠায় স্ক্রীনের দিকে তাকাতে অপরিচিত নম্বর দেখলাম।রিসিভ করতেই ওপার থেকে ভেসে এল মেয়েলি কণ্ঠ
:কেমন আছেন?(মেয়েটির প্রশ্ন)
:আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কে ঠিক চিনলাম না।
:আমি নীলা।আশা করি চিনেছেন।
:জ্বী এবার চিনেছি।কি প্রয়োজনে ফোন করলেন বলুন।
:প্রয়োজন ছাড়া কি কাউকে ফোন করা যায়না?
:দুনিয়াটা স্বার্থপর না তবে দুনিয়ার মানুষগুলো খুব বেশি স্বার্থপর তাই প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ফোন দেয়াটা একটু বেমানানই বটে।
:হুম বুঝলাম।আমি অবশ্য কোন প্রয়োজনে ফোন করিনি।
:বাহ খুব ভাল তো।
:কি করেন?
:ল্যাপটপে একটু ঘাটাঘাটি করছিলাম।আপনি?
:আমি বারান্দায় দাড়িয়ে চাঁদ দেখছি।
:পরিবেশটা খুব রোমান্টিক নিশ্চয়।তা আপনার প্রিয় মানুষকে কল করা উচিত ছিল আমাকে নয়।
:প্রিয় মানুষটির সাথেই তো কথা বলছি।(বিড়বিড় করে)
:কি বললেন?
:কই কিছুনা তো।
:আচ্ছা এখন রাখি আম্মু খেতে ডাকছে।
:আচ্ছা আল্লাহ হাফিজ।শুভ রাত্রী।আসসালামু আলাইকুম। (রমণীকে দেয়া ঠেসটা বেশ কাজ করেছে বুঝলাম)
:ওয়া আলাইকুমুসসালাম।
ইদানিং লক্ষ্য করছি নীলা খুব বেশি কেয়ার করছে।সময় মত খাচ্ছি কি না,, ঘুমুচ্ছি কি না,,রাতে ফেসবুকে থাকলে ঘুমাতে যেতে বলছে ইত্যাদি।মেঘ না চাওয়া সত্বেও বৃষ্টি যে আকাশ কালো করে আসছে তা বেশ বুঝতে পারছিলাম।
:আমি আপনাকে ভালবাসি। মেসেজটা দেখে আমার পাওয়া ভয়টা সত্যতে পরিণত হল।কিন্তু আমি যে কখনো কাউকে বিশ্বাস করতে পারব না আর।অবিশ্বাসের যে বীজ আফরিন আমার মনে ফেলে গিয়েছিল তা আজ বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। কাল আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবেন?অফিসের পাশে যে রেস্টুরেন্ট আছে ওখানে বিকাল চারটাই।
:জি আচ্ছা আসব।
:দেখ নীলা তুমি যা চাচ্ছ তা সম্ভব না।
:কেন সম্ভব না বলুন আমায়।
:তুমি আমার বসের মেয়ে আর আমি তোমার আব্বুর বেতন ভুক্ত কর্মচারী।আমি যদি তোমার সাথে রিলেশনে জড়িয়েও পড়ি তবে এর কোন সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ থাকবেনা।আর আমি কখনো বিয়ে করবনা এই পণ আমি করেছি।আশা করি আর কখনো আমার সাথে যোগাযোগ করবেনা। নীলা কাঁদতে কাঁদতে উঠে চলে গেল।অনেক দিন হল নীলাকে আর দেখিনা।ফোন দেয়না ফেবু আইডিটাও কালো জগতে চলে গেছে।
:আংকেল আমাকে ডেকেছেন?(বসের জরুরি তলবে রুমে ঢুকে বললাম)
:শুন তুমি আজকে সন্ধায় তোমার বাবা-মা সহ আমাদের বাসায় আসবে।ইটস এন অর্ডার।আমি কিছু শুনতে চাই না।
:জ্বী আচ্ছা আংকেল।(যেভাবে বস রেগে আছে কিছু বলতে গেলে ঝামেলা হতে পারে তাই সুবোধ বালকের মত মেনে নিলাম আর আঁচ করতে পারছিলাম বাসায় ডাকার কেসটা)
কলিংবেল টিপে আব্বু আম্মুকে নিয়ে বসের বাসার সামনে দাড়িয়ে আছি।আব্বু আম্মুকে এভাবে নিয়ে আসাতে নিজের মাঝেই একটা অস্বস্তি কাজ করছে তবু বাধ্য হয়েই নিয়ে আসতে হল। ঘরে ঢুকতেই দেখলাম বস দাড়ানো।তিনি আব্বু আম্মুকে হাসি মুখে স্বাগতম করে বসতে বললেন।
:আচ্ছা হাসান তুমি একটু ও পাশের রুমটাতে যাও তো।আমি তোমার আব্বু আম্মুর সাথে একটু কথা বলব।
:জ্বী আংকেল।
এই বলে উঠে চলে গেলাম পাশের রুমে।রুম ঘেষে একটা বারান্দা চোখে পড়ল।ভাবলাম রুমে একা একা বসে থাকার চেয়ে আকাশটা এক মনে দেখাটাই ভাল হবে।যেই ভাবা সেই কাজ।রুমে না বসে সোজা চলে গেলাম বারান্দায়।
পাশে যে এক মানবী দাড়িয়ে আছে তা এতক্ষন বুঝতে পারিনি এমনকি তার অস্তিত্ব টেরও পাইনি।এখন পাশে তাকিয়ে দেখলাম পাশে নীলা দাড়িয়ে।মনের ভিতর দিয়ে এক শীতল প্রবাহ যেন বয়ে গেল।
:কেমন আছ নীলা?
:হুম ভাল।আপনি?
:আমিও ভাল।
নীলা কিছু বলতে যাচ্ছিল এমন সময় আংকেলের ডাক শুনতে পেলাম।চলে গেলাম যে রুমে আম্মু আব্বু বসে ছিল।হালকা নাস্তার ব্যবস্থা করা হলে অল্প খেয়ে বিদায় নিয়ে চলে এলাম বাসায়। রাতে রুমে বসে ছিলাম আম্মুর ডাক পেয়ে বাবা-মায়ের রুমে গেলাম।
:আম্মু ডাকছ আমাকে?
:হুম এখানে বস্।কিছু কথা আছে। বসলাম তারপর আব্বু বলা শুরু করল,
:দেখো বাবা অনেকদিন হল তুমি ছাত্রজীবনের পাট চুকিয়ে চাকরী করছ।আমরা যতবারই তোমাকে বিয়ের কথা বলেছি তুমি বরাবর এড়িয়ে গেছ।এর কারণ আমাদেরকে জানাওনি কখনো।আজ আমি আর তোমার আম্মু এক মেয়েকে আমাদের বউমা হিসেবে নির্দিষ্ট করে এসেছি আর কথা দিয়েছি দুদিনের মধ্যে বিয়ের তারিখ ঠিক করে জানাব।আশা করি তুমি বাবা-মায়ের দেয়া কথার মান রাখবে।আর মেয়েটা যে নীলা তা নিশ্চয় তুমি বুঝতে পারছ।আর কিছু বলার নেই।তুমি ঘরে যাও।কিছুক্ষণ ভেবে তারপর নিজের মতামত বলে যাও।
বাবা-মায়ের অবাধ্য সন্তান আমি কখনই ছিলাম না আর আজ আব্বু যেভাবে বলল না মানার কোন প্রশ্নই আসেনা।যদি না বলি তাহলে আব্বু আম্মু কতটা কষ্ট পাবেন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।একদিকে বাবা মায়ের খুশি আরেকদিকে নিজের পণ।নাহ বাবা মায়ের খুশিটাই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।বিছানা থেকে উঠে এগিয়ে চললাম আব্বু আম্মুর রুমে।
:তোমরা যদি আমার বিয়েতে খুশি হও তাহলে আমার আর কিছু বলার নেই।তবে আমি নীলার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।
:ঠিক আছে তুই নীলাকে ফোন দিয়ে কখন,কোথায় দেখা করবি বলে দিস।(আম্মু)
:আচ্ছা আম্মু এখন উঠছি।
নীলাকে বিকেল চারটাই পার্কে আসতে বললাম।নিজের করণীয় সম্পর্কে চিন্তিত মস্তিষ্কে আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।আজ মনটা বড্ড খারাপ লাগছে দেখলাম আকাশও আমার সাথী।তারও মনটা কোন এক অজানা কারণে খারাপ।
:নীলা তোমাকে কিছু বলার জন্য ডেকেছি।
:জ্বী আপনার কথাতে তা আগেই বুঝে গেছি।
:আমাকে বিয়ে করার কথা ভুলে যাও।
:উহু আমি চাইলেও পারবনা আর আমি এখন বিয়ে না করতে চাইলেও আব্বু জোর করেই বিয়েটা দিবে।কারণ আব্বু জানে আমি আপনাকে ভালবাসি।আর আমিও চাই আপনাকেই বিয়ে করব।
:নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করোনা।আবার বলছি বিয়েটা আটকাও।ভুল করোনা।আমি আসছি।
এই বলে উঠে চলে আসলাম নীলার সামনে থেকে।রাস্তায় আনমনে হাটছি।আমার আর কিছুই করার নেই যদি নীলা নিজে বিয়েটা না আটকায়।মেয়েটা আমাকে কতটা ভালবাসে তা ভালই বুঝা যাচ্ছে তবু তাকে না করাটা কি উচিত হচ্ছে কি না তা নিয়ে বেশ চিন্তিত।নিজের সবচেয়ে পছন্দের জায়গা নদীর তীরে কাশবনের নির্জনতার উদ্দেশ্য হাটতে থাকলাম।
আব্বু কিছুক্ষন আগে বলে গেল নীলার আব্বু আর আমার আব্বু মিলে ১০ তারিখ বিয়ের দিন ধার্য করেছে।মেয়েটাকে এত করে মানা করলাম তবু কিছুই করলনা বিয়েটা আটকানোর।
১০/১২/২০১৬
বিয়েটা সুষ্ঠুভাবেই শেষ হয়ে গেছে।এখন ক্লান্ত শরীরে বাসর ঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।ঘরে ঢুকে দেখলাম নীলা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।
” আমি তোমাকে কখনো মেনে নিতে পারবনা,,,দিতে পারবনা স্ত্রীর অধিকার।আমার কাছে সব মেয়েই এক।সব মেয়েই ছেলেদের নিয়ে খেলে,,তারা শুধু টাকাকে ভালবাসে।”
আফরিনের সাথে আমার প্রেম কাহিনীটা নীলাকে বললাম।মেয়েদের প্রতি আমার ঘৃণার কারণটা সবিস্তরে বলার পর নীলার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও অবনত মস্তকে বসে আছে।আমি আর কিছু না বলে চুপচাপ বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লাম।ক্লান্ত অবসন্ন দেহে ঘুম আসতে খুব একটা দেরী হল না।
রাতে হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে যাওয়াতে সামনে থাকা ঘড়িটার দিকে চোখ পড়ল।রাত সাড়ে তিনটা বাজছে।পাশে কান্নার শব্দে কিছুটা চমকে উঠলাম।নীলা এখনো বসে আছে আর কান্নার আওয়াজটা তার থেকেই আসছে।নিষ্ঠুরের মত আবার ঘুমিয়ে গেলাম মেয়েটাকে কাঁদিয়ে রেখেই।
আজ আমাদের বিয়ের ষষ্ঠ মাসি বিবাহ বার্ষিকী।এই ছটা মাস মেয়েটাকে কখনো বাইরে নিয়ে যাইনি,, কখনো কাছাকাছি আসতে দিইনি তবে মেয়েটা কাছে না এসেই বুঝিয়ে দিয়েছে কতটা ভালবাসে আমায়।আজকের দিনটাতে ওকে নিয়ে একটু ঘুরতে যাওয়া যেতেই পারে।নীলাকে বের হওয়ার কথা বলাতে ও যেন খুশিতে বাকবাকুম।”নীল শাড়ি পরো আর চোখে কাজল দিলে ভাল হয়” এই কথা বলাতে খানিকটা লজ্জা পেয়ে চলে গেল।কিছুক্ষন পর আমার বলা অনুযায়ী সেজে বেরিয়ে এল নীলা।এই প্রথম মেয়েটার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালাম।স্বর্গীয় অপ্সরীটার থেকে চোখ ফেরানো যেন প্রচুর কষ্টকর।প্রিয় জায়গাই নিয়ে এলাম নীলাকে।বেশ অনেকক্ষন বসে থেকে আবার উঠে আসছি নীলাকে নিয়ে।
বেশ দূরত্ব বজায় রেখে চলার সময় কখন যে আমি রাস্তার মাঝে চলে এসেছি তা খেয়াল ছিলনা।হঠাৎই হাতে টান অনুভব করলাম আর ফুটপাতের দিকে ছিটকে পড়লাম।মুহুর্তের জন্য চোখটা বন্ধ হয়ে এলেও দ্রুত চোখ খুলে দেখলাম পাশে নীলার রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে।একটা মিনিট্রাক কখন যে আমার পিছনে চলে এসেছিল খেয়াল করিনি তবে নীলা তা দেখতে পেয়ে নিজের জীবনকে ক্ষতির মুখে ফেলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে।চোখটা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে দ্রুত আমার বউকে কোলে নিয়ে ছুটলাম দু মিনিটের দূরত্বে থাকা হসপিটালে।
নীলার চোট টা বড় ধরনের হলেও ডাক্তার বলল ও এখন আশংকামুক্ত।কিছুক্ষনের মধ্যে জ্ঞান ফিরে এলে দেখা করার কথা বলে চলে গেলেন ডাক্তার সাহেব।যে মেয়েটাকে কখনো ভালবাসার সামান্য আঁচও দিইনি সে এখন আমার কারণে অসুস্থ।ভাবছি……………
এই মাত্র নীলার জ্ঞান ফিরেছে।নার্স বলল হাসান সাহেব নামে কাউকে খুঁজছেন তিনি।ছুটে গেলাম ওর কেবিনে।দৌড়ে যাচ্ছি বউটাকে দেখতে।
:আমি তো তোমাকে কখনো সামান্যতম ভালবাসা,স্ত্রীর মর্যাদা,,সোহাগ কিছুই দিইনি তাহলে কেন আজ নিজের জীবনকে আমার জীবনের জন্য বিপন্ন করে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিচ্ছিলে?
:(চুপচাপ শুয়ে আছে আর চোখের কোণ বেয়ে নীরবে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে)
:এই যে আমি উত্তর চেয়েছি অশ্রুবন্যা চাইনি।
:উত্তরটা কি সত্যি জানা নেই?
:আমি শুনতে চাচ্ছি আবার।কোন প্রব্লেম?
:ভালবাসি তাই নিজের জীবন দিয়ে হলেও প্রিয় মানুষটিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাব।
চোখের পলকে ওকে বাহু ডোরে আবদ্ধ করে নিলাম।ও ভূত দেখার মত খানিকটা চমকে উঠল।কানের পাশে ফিসফিস করে বললাম ভালবেসে ফেলেছি আমিও খুব।যে মেয়ে একজনের জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করে তার বিপদে এগিয়ে যায় সে আর যায় হোক আফরিনের মত লোভী,স্বার্থপর হতে পারে বলে এখন আর বিশ্বাস হচ্ছেনা আমার।আজীবন এই বাহুডোরে রাখব তোমায় আবদ্ধ করে।থাকবে তো? এবার ও আরো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল।এই কান্নাটা যে সুখের তা সম্পর্কে আমি শতভাগ নিশ্চিত।কাঁদুক এখন শেষবার ইচ্ছে মত আর কখনো কাঁদতে দিবনা। সাত দিন পর নীলা অনেকটা সুস্থ হয়ে যাওয়াই ডাক্তার ওকে রিলিজ দিয়ে দিয়েছে।ওকে নিয়ে বাসার পথ ধরেছি।হাসপাতাল থেকে বের হয়ে নিজেই খানিকটা চমকে উঠলাম।পার্কিং লটে আফরিন আর তার সাথে ছোট্ট একটা মেয়েবাবু।দেখেও না দেখার ভান করে করে চলে যাচ্ছিলাম তবু পথ আগলে দাড়াল আফরিন।
:কেমন আছ?
:জ্বী আলহামদুলিল্লাহ।
:চিনতে পেরেছ?
:জ্বী,, না চেনার কি আছে।আর বিশেষ করে আমি জীবনে সবাইকে ভুললেও আফরিনের মত ধোঁকাবাজকে ভোলা আমার পক্ষে অসম্ভব। আফরিনের নামটা শুনে নীলাও চমকে উঠল লক্ষ্য করলাম।
:আমি হসপিটালে একটা জিনিস ফেলে এসেছি আপনি উনার সাথে কথা বলুন আমি আসছি।(এই বলে নীলা চলে গেল।আমি জানি ও কিছু ভুলে ফেলে আসেনি। ও চাচ্ছেনা আমাদের কথার মাঝে থাকতে।কোন মেয়েই তার স্বামীকে অন্য মেয়ের সাথে সহ্য করতে পারেনা এ আমার অনেক আগের জানা।)
:উনি কে?(আফরিন)
:আমার ওয়াইফ।
:তোমার ওয়াইফ খুব সুন্দরী।
:জ্বী ঠিক তাই।ধন্যবাদ।
:জীবনের একটা বড় ভুল ছিল তোমায় ছেড়ে আসা যার জন্য আমি আজও আফসোস করি।
:আপনি তো লাখপতীর বউ তাহলে আফসোসের কি আছে?
:শুনবে সব?
:হাতে বেশি সময় নেই সংক্ষেপে বলুন।
:আচ্ছা।
তোমায় ছেড়ে যে ছেলেটার সাথে রিলেশন করেছিলাম সে ধনী হলেও চরিত্র ভাল ছিলনা।মাত্র এক মাসের রিলেশনে ও বিয়ের কথা বলে।আমি বলি বাসা থেকে মানবেনা বেকার কারো হাতে মেয়ে তুলে দিতে।তখন ও আমাকে বাসা থেকে পালানোর চাপ দিলে আমি বাসা থেকে পালিয়ে চলে যাই ওর কাছে।ও আমাকে বিয়ে করার পর বুঝতে পারি ওর চরিত্র সম্পর্কে।ও আমার মত আরো অনেকের সাথে প্রেম করে আর আমাকে বিয়ের একমাত্র উদ্দেশ্য আমাকে ভোগ করা।ওকে অন্য মেয়ের সাথে কথা বলতে নিষেধ করলে বেধড়ক মারত আমাকে।বিয়ের দশ মাসের মাথায় আমার মেয়ের জন্ম হয়।তিনমাস পর ও আমাকে বিনা নোটিশে ডিভোর্স দেয় আর আমাকে হুমকি দেয় যদি সই না করে দিই তাহলে আমার মেয়েকে মেরে ফেলবে ও।বাবা হয়েও যে এতটা নিষ্ঠুর তার কাছে থাকার কোন অর্থ খুঁজে না পাওয়াতে সই করে আমি বাচ্চাসহ বাড়ি থেকে চলে আসি।নিজের বাবার বাড়িতে গেলে বাবা আমাকে আর গ্রহণ করেননি।নিরূপায় হয়ে চাকুরী খুঁজতে থাকি আর এই হাসপাতালে একটা চাকুরী পাই।চাকুরীটা কি সে না বলাই রেখে দিলাম।হয়ত এটাই আমার ভালবাসার মান না রাখার ফল।
চুপচাপ আফরিনের হিস্ট্রি শুনছিলাম এতক্ষন।খুব হাসতে ইচ্ছে হচ্ছে ওর হিস্ট্রি শুনে।নীলা আবার ফিরে এসেছে।
আচ্ছা ভাল থাকো।দুয়া করো আমাদের জন্য। নীলার হাতটা চেপে ধরে এগিয়ে যাচ্ছি।খুব জোরেই চেপে ধরেছি হাতটা যাতে কখনো ছুটে না যায়।সুখের আশায় অন্যের হাত ধরে পরিপূর্ণ হতে চাওয়া মানুষটি আজ ব্যর্থ আর আমি আজ পরিপূর্ণ নিজের প্রেয়সীর হাত ধরে।সত্যি শত অপরিপূর্ণতার ভিড়ে থাকা কোন অপরিপূর্ণতাই আর আমার মাঝে নেই