— 1, 2, 3 ইয়াহু জিত্তা গেছি, মানে john cena জিত্তা গেছে (আমি)
— কিরে এখোনে রেডি হস নাই? (আম্মা)
— মানে! কিসের রেডি হব? কই যাব?
— হায়রে আমার কপাল! সেই সকাল থেকে বলতাছি আজকে তোর বড় খালাদের বাসায় যাবো।
— তো যাও, নাহ করলো কে?
— আমি তো সবসময় যাই। তুই তো আর অনেক দিন যাস না। তাই আজকে তোকে নিয়ে যাবো।
— আজিব! আমারে নিয়া যাওয়ার কি আছে? তাছাড়া সাপ্তাহে একটা দিন ছুটি পাই তাও কি বিশ্রাম নিতে দিবা নাহ?
— আরেকদিন মন ভরে বিশ্রাম নিস বাবা না লক্ষি আমার এইবার চল তৈরি হয়ে নে। ওইদিকে তোর বাবা বাইরে গাড়ি
নিয়ে চলে আসছে, এতোকরে বললাম সামনে মোড়ের চৌরাস্তা থেকে নেব, নাহ তিনি এখান থেকেই কিনবে, তার নাকি ঝামেলা ভাল লাগে নাহ। এই বলে আম্মা চলে গেল। বুঝলাম নাহ খালামনির বাসায় গেলে এতো মিস্টি লাগে! আমি নীল, বাবা-মায়ের একমাএ সন্তান। পড়াশোনা শেষ করে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে।মোটা বেতনে চাকরি করছি।
আজ হলিডে তাই বাসায় বসে আমার প্রিয় রেসলিং খেলা দেখছিলাম। সকাল থেকেই মা অনেকবার বলেছে বিকালে খালার বাসায় যাওয়ার কথা। কিন্তু আমি কানে নেই নি, সবসময় মা-বাবা বলে তাদের সাথে যাওয়ার জন্য, আমি একবার না বললে আর জোর করে নাহ, কিন্তু আজ তো পুরাই উল্টো, এতবার না করার পর ও! ডাল মে কুছ কালা হে বাসাতে ঢুকতেই মনে হলো আজ কোন উৎসব আছে এই বাড়িতে, তাই হয়তো আমাদের আসা। সবকিছুই নতুন এর মত, শেষ কবে এসেছি মনে করতে পারলাম নাহ, কম করে দুই/তিন বছর তো হবেই। ভেতরে ঢুকতেই আবিস্কার করলাম সবাই আমার দিকে কেমন যেন মায়া মায়া দৃস্টিতে চাইছে, যেন আজকে আমাকে কুরবানি দেওয়া হবে সবাই শেষ বিদায় দিচ্ছে। আমি আম্মাকে ইশারায় জিগ্গেস করলাম ঘটনা কি? আম্মা আমাকে যা বললো তা শুনে মাথায় ইতিমধ্যে বাজ পরেছে। আমার জন্য নাকি মেয়ে দেখতে এসেছে। তাও আবার আমার বড় খালার একমাএ হারামী মেয়ে। হারামী কেন বললাম তা একটু পরেই টের পাবেন।
সবার সাথে ড্রয়িং রুমে বসে আছি সামনে আমার পছন্দের খাবার গুলো দেওয়া আছে। তারপর ও খেতে মন চাইছে না। বিয়ের কথা শুনেতো আমার যায় যায় অবস্থা। এই অসময়ে বিয়ে! নাহ বাবা আমি পারবো নাহ। যে ভাবেই হোক এই বিয়েটা আটকাতেই হবে। একটু পর বজ্জাতটা আসলো একটা নীল শাড়ি পরে। (দেখতে একদম নীলপরীর মতো লাগছিলো, আমার আবার ক্রাশ খাওয়ার অভ্যাস নেই, তবে নীলপরী কে দেখে ক্রাশ না খেয়ে পারলাম নাহ) এসেই সবাইকে সালাম দিলো, আর চা-নাসতা দিতে লাগলো। আব্বু আমার ডান পাশে বসা ছিল, আব্বুকে পানি দিতে গিয়ে মাঝপথে আমার উপর পানি ফেলে দিলো। আমিতো পুরাই অবাক হইয়া গেলাম। চোখের দিকে তাকাতেই চোখ মারলো। আমার কাশি উঠে গেল।
—বাবা নীল, তুমি ঠিক আছ? (খালুজান)
—জী আংকেল, আমি ঠিক আছি
— আংকেল নাহ, বাবা বলার অভ্যাস করো আমি আর কিছু বললাম নাহ।
— সরি সরি সরি, আসলে গ্লাসটা পিচ্ছিল তো তাই হাত ফসকে পারে গেছে (বৃস্টি)
— নাহ, নাহ, ঠিক আছে ইট্স ওকে (আমি) ইচ্ছা কইরা ফালাইয়া দিয়া এখন পিচ্ছিল বলতাছে, মনে করছে কিছু বুঝি নাহ (মনে মনে) আশে পাশে চেয়ে দেখি মা-বাবা খালামনি খালুজান সবাই মিটিমিটি হাসতাছে।
— তা, মা বৃস্টি আমার নীলকে তোমার পছন্দ হয়েছে তে? (আম্মা) ও শুধু মাথা নড়ালো, মানে সম্মতি আছে
— নীল তোমার কিছু বলার আছে? (খালামনি)
যেই নাহ কিছু বলতে যাব তখনই আম্মা আবার বলা শুরু করলেন, নাহ নাহ, কি যে বলেন বড় আপা, আমরা যা বলি আমার লক্ষি শোনা টা তাই শুনে, তাছাড়া ওরা একে অপরকে তো সেই ছেলেবেলা থেকে খুব ভাল ভাবে চিনে, তাইনা নীল?
— হম (আমি) খুব ভাল করে চিনি(মনে মনে)
সন্ধের দিকে বাসায় চলে আসলাম, যদিও রাতে থাকার জন্য অনেক জোর করে ছিলো। দূর কিছুই ভাল লাগছেনা, মাএ একসাপ্তাহ পরে বিয়ে। রাতে ছাদে বসে আনমনে গান শুনছি হঠাৎ আননোন নাম্বার থেকে কল আসলো, প্রথমবার ধরলাম নাহ আবার সেমনাম্বার থেকে কল।
— হ্যালো (আমি)
— কি করো জানু (অপরপাশে) জানু নাম শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম, আবার নাম্বারটি দেখলাম, নাহ পরিচিত তো মনে হচ্ছে নাহ।
— কে আপনি?
— ওমা এত তারাতারি ভূলে গেলে! বিয়ের পর সারাজীবন মনে রাখবা কিভাবে?
— ওই কি উল্টা পাল্টা কথা বলছেন? ফাইজলামি করার জায়গা পান না! ফোন রাখেন। যেই না কলটা কাটতে যাব,
— নীল আমি বৃস্টি
— কোন বৃস্টি
— বাহ, রে আজকে বিকালে দেখে গেলে আর বলছো কোন বৃস্টি?
— ওহ, তুমি! তা কি কারনে ফোন দিয়েছো?
— কেন আমার জামাইয়ের কাছে কি আমি ফোন দিতে পারি নাহ?
— ওই হ্যালো, আমি এখোনো কারও জামাই নাহ, বুজছেন?
— এখন নাহ হয়েছো কদিন পরে তো ঠিকই হবে।
— সেই স্বপ্ন তোমার স্বপ্নই রয়ে যাবে।
— কেন?
— কারন আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো নাহ।
— কিহ! কিন্তু কেন? আমি কি দেখতে খারাপ, নাকি যৌগ্যতা নেই তোমাকে বিয়ে করার।
— এখানে যৌগ্যতা আর সৌন্দর্যের প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন হচ্ছে ভালবাসার।
— মানে?
— মানে, আমি একটা মেয়েকে ভালবাসি, তাকেই বিয়ে করবো, আইএম সরি বৃস্টি।
— তাহলে আজকে বিকেলের টা কি ছিল?
— আসলে আমি যেতে চাইনি, মা-বাবা জোর করে নিয়ে গেছে।
— ওহ আচ্ছা, তো তোমার গার্লফ্রেন্ড কই? একবার ও দেখলাম না তো?
— ও এখন লেখাপড়া করে, ছয়মাস পর ওর ফাইনাল পরিক্ষা তারপর আমরা বিয়ে করছি।
— ওহ, তাহলে এই বিয়ের কি হবে?
— এটা নিয়ে তুমি চিন্তা করো না, এক সাপ্তাহের ভিতর ঠিকই বিয়ে ভেংগে ফেলবো।
— আচ্ছা রাখি, আমার একটু কাজ আছে, ভাল থেকো।
— বায়, গুডনাইট
ফোনের লাইনটা কাটার সাথে সাথে আমি এক মনভাংগার পৌচাশিক শব্দ শুনতে পেলাম।
ইয়াহু দেখ কেমন লাগে আমার সাথে ও ঠিক এমন টাই হইছিলো।