বেশ আয়োজন করে বিয়ে হলেও বিয়েতে পাত্র, পাত্রী কারোরি মত নেই। পাত্রের মত নেই কারনে ব্যাবসায়ে মাত্র নতুন সে। আরো গুছিয়ে উঠে বিয়েটা করতে চেয়েছিলো। আর পাত্রীর ইচ্ছা ছিলো ডাক্তার না হয়ে বিয়েই করবেনা। কিন্তু দুজনেরই কপাল খারাপ বিয়েটা মুরুব্বীদের দ্বারা হয়ে গিয়েছে।
বাসর ঘরে দুজন দুজনের বিয়ের অমতের কথা জানায়। আর সে অনুযায়ী এই সিদ্বান্ত ঠিক করে যে জয়া (পাত্রী) বাপের বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করবে আর জয় (পাত্র) ব্যাবসাটা আরো ভালো করে দ্বার করাবে।
যেহেতু বিয়েতে কেউই রাজি না সেহেতু তাঁদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক সম্পর্ক হয়নি।
দুজনের এই সিদ্বান্তে দু-পরিবারের প্রথমে অমত করলেও পরে তাঁদের ভালোর জন্যই মেনে নেয়। বিয়ের প্রায় পনেরো দিন পরে জয়া বাপের বাড়ি চলে যায়। দুজনের মধ্যে কথা খুব কম হয়। জয়া ডাক্তারি পড়ছে আর জয় ব্যাবসায়ে প্রচণ্ড ব্যাস্ত। এভাবে কিছুদন যাওয়ার পর হটাৎ একদিন জয়াকে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো জয়ের।
ফোন দিতে কিরকম লজ্জা লাগছিলো তাই মেসেজ করেই বললো।
– আপনাকে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে আজ কেন তা জানিনা।
জয়া খুব সকালে গোসল করে তৈরি হচ্ছিলো মেডিকেলে যাওয়ার জন্য। মেসেজটা দেখে অন্যরকম হয়ে গেলো মুহুর্তে। কি জবাব দেবে বোঝতে পারছিলো না।
– হটাৎ দেখার জন্য এতো উতলা যে?
– বললামই তো কোন কারন নেই।
– তাহলে আর দেখতে হবেনা।
– দেখতে পারলে ভালো হতো। তার আগ পর্যন্ত মনটা চিন চিন করবে।
– শ্বশুর বাড়িতে এসে দেখে গেলেই তো পারেন।
– নাহ থাক। আপনি তো মনে হয় মেডিকেলে যাবেন এখন। সাবধানে যাবেন। আল্লাহ হাফেজ।
– আল্লাহ হাফেজ।
জয়া ভাবছে হটাৎ উনার দেখার এতো ইচ্ছে করছে কেন? আমার প্রেমে পড়েছে নাকি? এসব ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই হেসে ফেলে। আর পড়লেই বা খারাপ কি? নাহ খারাপের তো কিছু নেই। আজকে জয়ার মাথায় সারাক্ষণই এ কথা ঘোরাফেরা করছে। নিজেকে কিরকম অন্য মনস্ক লাগছে। এমনি করে কেটে যায় ছয়টি মাস যেন কত তারাতারি।
ছয়মাস দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করলেও তাঁদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়নি। তবে মনমিলনের সম্পর্ক যে অনেক গভীর, অতলের বাঁকি নেই। হয়তো তার চেয়েও বেশি। একটা কথা আছে দূরে থাকলে ভালবাসা বাড়ে। দূরে থাকলেও মন থেকে খুব কাছে থেকে কাছে। অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে জয়ার সাথে কথা না বললে দিনটা’ই যেন কিরকম অসুম্পূর্ণ অসুম্পূর্ণ মনে হয়। আজও তাই অফিস থেকে ফিরে ফোন দিলো। জয়াও অবশ্য ফোনের অপেক্ষায় থাকে।
– বউ।
– জ্বী।
– তোমার ডাক্তারি কবে শেষ হবে?
– আর কয়েকমাস মাত্র। কেন?
– তুমিহীন আর ভালো লাগেনা। কবে যে ডাক্তার হবে।
– ডাক্তার হওয়া মুখের কথা না বোঝলেন?
– হু বোঝলাম ডাক্তারদের কাজ’ই তো রোগিদের সেবা করা আমি তো মস্ত বড় রোগি তোমার রোগে.. আগে নাহয় আমার সেবা করলে।
– ইশশ.. অতো সেবা করা লাগেনা।
– অতো কই? তুমি তো একটুও করোনাই।
– সময় শেষ হয়ে যায়নি শাহেব।
– হুম আমি বুড়ো হলো আপনার সময় হবে।
– সমস্যা কি আমিও বুড়ী হবো। বুড়ী বুড়াকে সেবা করতেই পারে।
– তোমার কথা শুনে ঘুম পাচ্ছে।
– হুম ওটাই ভালো ঘুমান। সারাদিন কাজ করে আসছেন। রাতে না খেয়ে ঘুমিয়েন না আবার।
– বউ।
– আবার কি?
– তুমি রান্না করতে পারোনা?
– বাহ আপনি ভুলে গেলেন বিয়ের পরের দিনেই আমি রান্না করেছিলাম। তাছাড়া এর পরেও তো রান্না করেছি।
– কে জানে। আমি তো শুধু খেয়েছিলাম জানতাম নাকি কে রান্না করেছে।
– আচ্ছা আমাদের বাড়িতেও তো কয়েকবার রান্না করে খাইয়েছি মনে নাই।
– কিহ? তোমার আদুরে জানে জিগার বোন না রান্না করছিলো?
– ও আমাকে রান্নায় সাহায্য করছিলো আরকি ক্রেডিট নিতে বোঝেন না?
– কবে যে আমার তোমার হাতের রান্না খাবো।
– এতো দীর্ঘশ্বাস নিয়েন না শাহেব আর কটা দিন মাত্র।
অতঃপর আরো ছয়মাস লাগলো জয়ার ডাক্তার হতে। এখন জয়া শ্বশুর বাড়িতেই থাকে। কিন্তু ঝামেলাটে বাঁধে জয়ার ডাক্তারি নিয়ে। জয় চায়না জয়া ডাক্তারি করুক। তাঁদের তো টাকা পয়সার খুব দরকার না। তাছারা জয় আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো জায়গায় আছে তাহলে কেন জয়া ডাক্তারি করবে? একদিন জয় জানতে চাইলে জয়া বলে ” তাঁর মা ছিলো ডাক্তার। সেই থেকেই ডাক্তার হওয়ার খুব শখ। ইচ্ছেটা আরো তীব্র হয় মা মারা যাবার পরে। জয়ার একমাত্র স্বপ্ন জীবনে ” তারপর জয় আর কিছু বলেনি। শ্বশুর বাড়ির সবার মানা। আবার মেয়েটা এতো কষ্ট করে ডাক্তার হলো। কিন্তু জয়া সবার কথা ভেবে আর ডাক্তারি করেনি। কি দরকার সবার মন কালো করে ডাক্তারি করার। তাছারা সবাই তো বাড়ির একমাত্র পুত্রবধূকে সবসময় কাছে চাইবে স্বাভাবিক। তাঁরা তো আর জয়াকে অপছন্দও করেনা। সবাই জয়াকে ডাক্তারণী বলেই ডাকে। জয়ার ভীষন ভালো লাগে শুনতে। খুব সকাল জয় ঘুমুচ্ছে। তবে জয়ার হাতে ঠিকিই হাত ধরা আছে। জয়ের বাম হাত আর জয়ার ডান হাত। এমনিতে প্রতিদিন জয়া আগেই উঠে পরে এসে জয়কে তুলে তৈরে করে অফিসে পাঠায়। অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করে যখন জয় দুষ্টুমী করে। তাই আজ ইচ্ছে করেই ডাকলো।
– এই। প্রথম ডাকে কোন সাড়া নেই সেই ঘুমে আছে। তাই আবার ডাক দিলো।
– এই।
– উমম অস্পষ্ট কণ্ঠে।
– শুনুন।
– কি? তুমি তো এতো সকালে ডাকোনা।
– ডাকিনা আজ ডাকলাম।
– ও কেন?
– আমি কি ডাক্তার হয়ে ভুল করলাম? অভিমানী সূর।
– কেন? আবার ভুল আসলো কোথ থেকে?
– আমার তো মনে হয় ভুলই করেছি। এখন আর “বউ” বলে মিষ্টি করে ডাক দেননা।
– আচ্ছা.. ডাক্তারণী তো ডাকি।
– কিন্তু বউ’ই শুনতে ভালো লাগে।
– বউউউ.. হইছে?
– রেগে গিয়ে ডাকলে হবে না।
– আদোর করেই ডাকলাম বউউউ.. সত্যি।
– হিহি এবার উঠেন। সকাল হইছে।
– নাহ আরেকবার তোমাকে বাহুডোরে বাঁধতে ইচ্ছে করছে। অতঃপর বাহুডোরে বন্ধি আরেকবারের জন্য আজকের দিনে