অগোছানো ভালোবাসা

অগোছানো ভালোবাসা

—এই যে দেখে চলতে পারো না?
—দেখে চলতে যাব কেন,আমার দরজার সামনে আমি যেমন খুশি তেমন চলব,তাতে তোমার কি?
—আমার অনেক কিছু।ইচ্ছা করে আমাকে ধাক্কা দিচ্ছে আবার বলে আমার কি?
—এই মেয়ে এই আমি তোমাকে ধাক্কা দিতে যাব কেন?
—আমার সাথে প্রেম করতে চাও তাই।
—আমি তোমার সাথে  প্রেম করতে চাই মানে?তুমিই তো সারাক্ষন আমার পিছে পিছে  লেগে থাক।
—এই আমি লেগে থাকব  নাতো কে লেগে থাকবে?
—যাত সব।আর তোমাকে না কত করে  বলছি আমাকে আপনি করে বলতে,তুমি করে বলছো কেন?
—আসছে আমার মহারাজা,তাহাকে নাকি আবার আপনি করিয়া বলিতে হইবে।
—আল্লাহ্ যে কেন তোমার সাথে আমার এই সময় দেখা করালো।
—আমার সাথে করাবেনা তো কার সাথে করাবে। আর শুনো আল্লাহ্ যা করে ভালোর জন্যই করে, বুঝলা।

—আচ্ছা তুমি এখন  আমার দরজার সামনে কি করছিলে?
—আন্টির কাছে যাচ্ছিলাম। তুমি কোথায় যাচ্ছ ভার্সিটিেত?
—তোমায় কেন বলব। যাও তুমি যেখানে যাচ্ছিলে যাও আর আমাকেও যেতে দাও।
—শুনো ভার্সিটিতে যাচ্ছো ভালো কথা। যদি কোন মেয়ের  দিকে তাকাইছো না, তবে তোমার আমি চোখ তুলে নেব।
—রাস্তা ছারো আমাকে যেতে  দাও।
—আমিকি তোমার রাস্তা আটকে রেখেছি  নাকি?
—তো কি করেছো তুমি। সিরির সামনে থেকে সরো।
—হুম সরছি।তুমি এত সাজুগুজু করে যাচ্ছো কেন?আর চুলে এত ডিজাইন করেছো কেন?
—তুমি সরবে না আমি ধাক্কা দিব।
—আমি কিন্তু আন্টিকে বলে দিব।
—দয়াকরে সরো আমার ক্লাসেরদেরি হয়ে যাচ্ছে।
—ক্লাসের দেরি হচ্ছে না কারো সাথে দেখা করতে যাচ্ছো সত্যি করে বলোতো।
—সত্যি আমি ভার্সিটি যাচ্ছি।
—হুম যাও তবে কোন মেয়ের দিকে যেনো তাকানো না হয়। আর কথা বলার কথা ভুলেও ভাববানা।
—আচ্ছা তোমার স্কুল নেই তুমি এখন  এখানে কেন?
—তোমাদের বাসাটা আজ নাকি আন্টি পরিষ্কার করবে। তাই আজ আমি স্কুলে যাইনি।
—আমাদের বাসা পরিষ্কার করবে তাতে তোমার কি? ও বুঝেছি মনে হয় কাজের লোক পাইনি তাই তোমাাকে দিয়ে কাজ সারছে তাইনা? মানে কাজের লোক যাকে বলে আরকি দিন কত টাকা করে নিচ্ছো?

—তোমাকে আমি
—এই থামো থামো থামো থামো  থামো।
—আন্টিকে গিয়ে জিঙ্গাস করবা আমি কি।
—আচ্ছা বুঝতে পরেছি আমি এখন যায়।

—হুম কথা গুলো যেন মনে থাকে।

বাবারে বাবা, এরকম মেয়ে আমি বাপের জন্মে দেখিনি। আল্লাহ্ কেন যে একে আমার ঘারের উপর চাপাতে চাচ্ছে কে জানে।পড়ে সবে ক্লাস ১০ শ্রেণিতে এরি মাঝে এত। আবার বলে কি না আমার বউ হবে। আর আমার মা টাও তেমনি কেন যে এ মেয়েটাকে এত  ভালোবাসে কে জানে। ঘর পরিষ্কার করবে ভালো কথা অন্য কোন কাজের লোক ডেকে নিলে হতো না। ও আপনাদের তো পরিচয়ই  দেওয়া হয়নি। আমি সিয়াম,বাবা-মার সাথে ঢাকাতে থাকি। আর আমাদের ঠিক পামের ফ্লাটে  থাকি ঔই মেয়েটা। নাম আরশি। বাবা-মার একমাত্রে মেয়ে। কি পরিমানের যে ফাজিল বলে বোঝাতে পারবোনা।

এক বছর হলো ফ্লাট টাতে এসেছি। এই একটা বছরের একটা দিনও মনে হয় আমি শান্তিতে থাকতে পেরেছি। সারাক্ষন মেয়েটা আমার পিছে লেগেই আছে। এখন নতুন করে শুরু করছে  সে নাকি আমাকে ভালোবাসে। এটা তার এবং আমার দুজনের পরিবারই জানে। আমাকে ভালোবাসে সেটা আমাকে জানানোর আগে পরিবারের লোকজনকে জানিয়ে দিয়েছে। তাহলে আপনারাই ভাবুন কি  পরিমানের সাহসি আর ফাজিল এই মেয়ে। পড়ে সবে মাত্র ১০ শ্রেণিতে এরি মাঝে এত কিছু। আর দুই পরিবারের লোকি মনে হয় পাগল দুই পরিবারই মেয়েটাকে সাই দিয়ে যাচ্ছে। মাঝখান থেকে একা একা যুদ্ধ করতে হচ্ছে আমাকে। ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরছি এমন সময় আবার আমার গেটের সামনে সে। আল্লাহ্ কোথা থেকে যে কারেক্ট টাইমে হাজির করে দেই।

—ক্লাস কেমন করলে?
—আমি ক্লাস করে ক্লান্ত এখন তো একটু বাসায় ঢুকতে দিবা?
—হুম সরি সরি,গিয়ে ফ্রেস হয়ে নাও। আমি গিয়ে খাবার দিচ্ছি।
—তুমি কেন মা কোথায়?
—মা আমাদের বাসায়।
—মাকে পাঠিয়ে দাও।
—সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা।

তুমি গিয়ে ফ্রেস হও। কিছু না বলে রুমে চলে আসলাম। রুমে ঢুকে তো আমি পুরোই অবাক। এটা আমার রুম দেখে মনেই হচ্ছেনা। এত সুন্দর করে সাজানো তা বলে বোঝাতে পারবোনা। আমি শুধু মুখদিয়ে ছোট্ট করে একবার ওয়াও বললাম অমনি পিছেন থেকে বলে উঠল

—কি সাজানোটা অনেক ভালো হয়ছে তাইতো?
—হুম(নিজের অজান্তেই মুখ থেকে বের হয়ে গেল)
—দেখতে হবেনা কে সাজিয়েছে।
—হুম
—যাও ফ্রেস হয়ে নাও।
—আচ্ছা।
—কি ব্যাপার তুমি এত ভদ্র হয়ে গেলে কিভাবে। যা বলছি তাই শুনছো।
—আমি ক্লান্ত,এনার্জি নেই ঝগড়া করার।
—হুম সারাক্ষন এ রকমি থাকবা বুঝলা।
—হুম।
—এই তো লক্ষি বাবু।ফ্রেস হয়ে নাস্তার টেবিলে এসে দেখি, অনেক কিছুই রান্না করা হয়েছে।

—বসো।
—এসব তুমি রান্না করেছো?
—না আমি মাকে সাহায্য করছি।
—আচ্ছা আজ সকালেও তো আন্টি বলছিলা। সেটা আজ বিকেলেই চেন্জ করে মা বানিয়ে নিলা? তুমি তো অনেক ফাস্ট

—ফাস্ট না হয়ে কি করব তুমি যে লুজ। আর মা শুধু তোমার সামনেই বলছি এখনো অন্য কারো সামনে বলিনি।
—যাক, খিদে লাগছে খেতে দাও।
—আমি খাইয়ে দিই?
—এইনা থাক (একটু জোরে করে) আমি নিজেই পারব। খাওয়ার টা খুব মজার ছিল অতপর খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হলো। রাতে মা ডাক দিল

—এই সিয়াম শোনতো বাবা একটু
—হ্যা মা বলো কি হয়ছে।
—আরশির মা বলছিল ওর তো আর পরীক্ষার বেশিদিন বাকি নেই তুই যদি একটু ওকে গিয়ে এই কদিন একটু পড়াতি।
—মা ও এখন যেমন আছে তাতে ও পরীক্ষায় পাশ করতে পারবে। আমি পড়াতে গেলে সেটাও করবে না।
—আমিতো এত কথা শুনতে চাইনি। তোকে কাল থেকে যেতে হবে।
—এতো আমার উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে
—হলে তাই।
—আমি মরে যাব।
—মরবি না আরশি তোকে বাচিয়ে দেবে।
—মা
—এখন যা।
—ভাল্লাগে না।

পরের দিন সকালে ভার্সিটি যাচ্ছি এমন সময় আরশি এসে হাজির।

—কোথায় যাওয়া হচ্ছে?
—এই সময় আমি কোথায় যায়?
—কোথায় আর যাও, ওই পেত্নিদের দেখতে যাও।
—ওরা পেত্নি না।
—তার মানে তুমি? আন্টি আন্টি
—আরে থামো থামো। আম্মুকে ডাকছো কেন?
—তার ছেলে ঘরে বউ রেখে কি করে বেড়াচ্ছে তা তাকে বলতে হবেনা।
—বউ,বউ কোথা থেকে আসলো?
—কোথা থেকে আসল তাইনা। দাড়াও তোমাকে সব বোঝাচ্ছি। আন্টি,উউম,উউম
—আর একবার আম্মুকে ডাকলে খবর আছে।
—উউম,উউম
—আওউ,
—এখন তো কামর দিইনি এর থেকেও জোরে কামর দেব।
—(এই মেয়ের তো মুখ ধরাও মারাক্তক, যখন তখন কামর বসিয়ে দেই) আচ্ছা এখন আসি হ্যা।
—যাও তবে তারাতারি বাসায় আসবে।
—কেন? আজ তোমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসছে নাকি?
—জি না, সেটা আমার পরীক্ষার পর আসার কথা। আজ থেকে তুমি আমাকে পড়াতে আসছো।
—ও,না পড়ালে হয়না?
—আন্টিইইই…
—আমি যাচ্ছি(এক দৌড়) যাক বাবা বাঁচলাম এর মানে পরীক্ষার পর অকে বিয়ে দিয়ে দেবে। যাক বাবা আমি বেঁচে গেলাম। বিকেল বেলায় আম্মুর ডাক

—সিয়াম….
—হ্যা আম্মু বলো।
—তোরনা আজ আরশিকে পড়াতে যাওয়ার কথা
—যেতেই হবে?
—কিছু বললি?
—না বললাম যাচ্ছি।(সবার সব নির্যাতন আমার উপর,যদি পুরুষ নির্যাতনের আইন থাকত না তবে সিওর এতদিন ২ টা মামলা করে দিতাম।)

—আন্টি অরশি কোথায়?
—ও তো ওর ঘরেই আছে বাবা তুমি যাও।
—জি আন্টি।
—একি তুমি আমার ঘরে নক না করে প্রবেশ করলে কেন? জামায় সাজে আমার ঘরে ঢোকার এত তাড়া?
—(আল্লাহ্ তুমি বাঁচাও আমায়) তোমাকে পড়াতে এসেছি।
—কি পড়াবে আমিতো সব পড়েই আছি।
—আচ্ছা তবে আমি আসি।
—এমা না না, তুমি বস আমি আসছি।

ওর হাজার জালাতন সয্য করে পড়াতে হলো বেশ কয়েকদিন। পরীক্ষা চলে আসল,তবে আমার প্রতি তার জালাতন কুমলনা। দেখতে দেখতে পরীক্ষা শেষ হলো।রেজাল্ট ও দেওয়া হলো পরীক্ষায় পেয়েছে এ গ্রেড তাতেই সে কি খুশি। অবশ্য ছাত্রী ও খুব একটা ভালোনা।যা পেয়েছে এটাই অনেক। তাই তার রেজাল্টের সম্পূর্ণ ক্রেডিট এলো আমার উপর। আমার পড়ানোর জন্যই নাকি সে এত ভালো রেজাল্ট করেছে। না হলে নাকি ফেল করত। করবেই না বা কেন। সারাক্ষন যে রকম ফাজলামি করে বেড়াই। এবার আসল আমার ফাইনাল পরীক্ষা। মনে হচ্ছে আমার থেকে যেন আরশিই বেশি চিন্তিত। এই রকম চিন্তা যদি তার পরীক্ষার সময় করত তবে মনেহয় এ + টা পেয়েই যেত। যাইহোক বাবা বলেছে পরীক্ষাই পাশ করলে তার কম্পানিতেই একটা জব দিয়ে দেবে। পরীক্ষা দিলাম ভালোভাবে পাস ও করলাম কিন্তু ভাবিনি পাশ করার পর এরকম একটা বাঁশ খাব। হটাৎ রুমে বাবা-মা দুজনেই প্রবেশ করল।

—সিয়াম একটা কথা বলতে আসলাম?
—হ্যা বলো।
—আমরা আরশি কে তোর বউ হিসেবে পছন্দ করছি।
—আরশি?কোথা থেকে কি, বাচ্চা একটা মেয়ে। আমি এ বিয়ে করতে পারব না। আর তাছারা ও আমার সারাক্ষন পিছে লেগে থাকে।
—দেখ আমরা তাদের কথা দিয়েছিলাম,আরশির পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর যদি তুমি পরীক্ষায় পাশ করো তবে তোমাদের বিয়ে দিয়ে দিব এবছরই।
—কিন্তু বাবা।
—কোন কিন্তু নয় আগামি শুক্রুবার তোমাদের বিয়ে।
—আমি তো এখনো জব পাইনি।
—জবে সামনের মাস থেকে

জয়েন করবে। সব কথা হয়ে আছে। আমরা এখন আসি। এখন বুঝছে আরশি সে দিন কেন বলেছিল যে তাকে তার পরীক্ষার পরে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। আর কেন তার এত বেশি চিন্তা ছিল আমার পরীক্ষা নিয়ে। এই কদিনের ভেতরে আরশির সাথে একবার মাত্র দেখা হয়েছে এমন একটা ভাব করল যেন আমাকে চেনেইনা। অবশেষে চলে এল সেই শুক্রুবার বিয়েটাও হয়েগেল। সারাদিন অনেক ধকল গেছে আরশি তো এখন আবার  আমার ঘরেই বসে আছে। নাজানি গিয়ে একটু ঘুমাবো তা না  ঘরে ঢুকতেই তো ভয় করছে। তারপরও একবুক সাহস নিয়ে ঘরে ঢুকলাম। দেখি ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। কি ব্যাপার এত ভদ্র হয়ে গেল কি করে। গিয়ে একটু দেখি। যেই গোমটা টা তুলতে যাব  অমনি

—আপনি আমার গায়ে হাত দেবেননা।
—কেন?(এই প্রথম আমাকে আপনি বলল শুনে ভালোই লাগল,এত দিনের চাওয়া টা আজ পূর্ণ হল)
—আমি আপনাকে স্বামি হিসেবে মেনে নিতে পারব না
—(শুনে যেন আমার পুরো পৃথিবীই ঘুরে গেল) তাহলে এত কিছু?
—আমি অত কিছু বুঝিনা,আপনার সাথে বিয়ে দিয়ে আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে বাবা মা।
—কি বলছো এসব।
—যা বলছি সব ঠিকি বলছি।
—(মনে হয় পাগল হয়ে গেছে,তবে ভালোই হয়ছে আমি শান্তি করে ঘুমাতে পারব এখন।কাল সকালে সব দেখা যাবে) আচ্ছা তুমি একটু সরে বসলে আমি ঘুমাতে পারি।

—জি না আপনি অন্য কোথাও গিয়ে ঘুমান,আমার পাশে ঘুমানো চলবেনা।
—এত রাতে কোথায় যাব?
—আমি কি জানি।
—প্রথম দিনেই আমার খাটটা শেষ করে দিল। (গিয়ে সোফাই শুয়ে পড়লাম)
—কিছু বললেন?
—না।

ঘুমিয়ে গেছি কখন জানি না  হঠাৎ খেয়াল করি,আমি নিশ্বাস নিতে পারছিনা। আর কি যেন একটা আমার বুকের উপরে চেপে আছে। চোখ খুলে দেখি আরশি। আমার বুকের উপরে শুয়ে আছে আর আমার নাকমুখ চেপে ধরে আছে। আমি একটু নরতেই ও আমার নাক  মুখ ছেরে দিল

—কি ব্যাপার তুমি এখানে?
—আমি এখানে থাকবো না তো কোথায় থাকব।
—আমার নাক মুখ ধরে ছিলে কেন?
—তোমাকে মেরে ফেলবো বলে।
—মানে?
—মানে তুমি আমাকে একা রেখে এসে  এখানে ঘুমিয়ে গেছ কেন?
—তুমিই তো বললে।
—আমি তো বলেছিলাম…
—হুম কি বলেছিলে?
—আরে আমি তো বলে ছিলাম যাতে তুমি একটু আমাকে আদর করো কিন্তু তুমি তো এখানে এসে ঘুমিয়ে গেলে।

—ও আদর করতে হবে আগে বলবেনা
—আরে একি লাইটটা বন্ধ করো দর্শক দেকছে তো।
—ও হ্যা।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত