বাবা মায়ের পছন্দেই বিয়েটা করে অন্তর।খুব একটা পছন্দ হয়নি তার নতুন বউকে।কেমন যেন একটা গ্রাম্য ভাব তার ভিতরে।বাসর রাত্রে শুধু নামটাই জানা হয়েছিলো রাত্রি।নামের মত অন্তরের জীবনে সব কিছু রাতের আধারের মত করে ফেলে।
বেশ কিছুদিন হলো নতুন ফ্লাটে উঠেছে।ভালো লাগেনা অন্তরের এই বোরিং লাইফ।বিয়ে করবে নিজের পছন্দ অনুযায়ী আর সেখানে বাবা মায়ের পছন্দতে করলো তাও এমন মেয়ে।যে সারাদিন কথা বলে না।যেটা জিজ্ঞেস করা হয় উত্তর শুধু তার ই পায়।
অন্তরের দিনগুলি খুব একটা ভালো যাচ্ছিলো না।এর মাঝেই অফিসের বস একদিন বলে পার্টির দাওয়াত।কিন্তু বউকে নিতে আসতেই হবে সবার।অন্তর গাড়িতে করে ভাবছে রাত্রি কি বুঝবে এইগুলি।আর পার্টিতে কি সে গেছে কখনো বা মানিয়ে নিতে পারবে।কেনো যে এমন মেয়েকে বিয়ে করলো।
রাত্রে গিয়ে অন্তর পার্টির কথা রাত্রিকে জানায়।রাত্রি বলে আপনার ইচ্ছা হলে যাবো নয়ত দরকার নেই।অন্তর বলে হ্যাঁ যাবে আর এমন ভাবে যাবে যাতে আমার মান সম্মান বাচে সবাই যেন তোমাকে আমার বউ মনে করে।দেখতে তো সুন্দরী ই আছো তবুও এমন গ্রাম্য ভাব কেনো।রাত্রি কোন জবাব দেয়না।
পরের দিন রাত্রিবেলা অন্তর অন্য রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো।রাত্রি খুব সুন্দর করে সেজে অন্তরের সামনে আসলো।অন্তরকে ডাক দিতেই অন্তর হা করে আছে এইটা কি সত্যি তার বউ?সে নিজেই তো চিনেনা।এত সুন্দর সে কখনো এইভাবে কল্পনাও করে দেখেনি।
অন্তর নিজেই এখন লজ্জা পাচ্ছে। যাক পার্টিতে ঘুরে আসি তার পর বউকে ভালো করে দেখবো।পার্টিতে সবাই যখন একে অন্যের সাথে পরিচিত হচ্ছে তখন অন্তরের বউয়ের প্রশংসা শুনে অন্তরের মনে খুব ভালো লাগছে।আর এই বউকেই সে এত দিন এবোয়েড করে এসেছে।আসলে কারো সৌন্দর্য দেখতে হলে মনের চোখ দিয়ে দেখতে হয় এখন সে বুঝতে পারে।
হঠাৎ করে অন্তর খেয়াল করে রাত্রিকে দেখছে না,কই গেলো?একটু আড়ালে যেতেই দেখে তার বস আর রাত্রি দাঁড়িয়ে আছে।দৃশ্যটা দেখেই অন্তরের মনের মাঝে একটা ধাক্কা লাগে।আর একটু সামনে এগুতেই দেখে বস তার বউয়ের হাত ধরলো।কিন্তু অন্তরা জোড় করে ছাড়াতে চাচ্ছে।যখন বস হাত ছাড়ছিলো না তখন রাত্রি চড় মারে বসের গালে।অন্তর দূর থেকে শুধু রাত্রি কোন চরিত্রের তা দেখে যাচ্ছিলো।
রাত্রি জোড়ে জোড়ে বলতে শুরু করে,হয়ত আপনি আমার স্বামীর অফিসের বস।কিন্তু আমার কিছুই না।আপনার অনেক টাকা থাকতে পারে তবে আমার স্বামীর ভালোবাসা অনেক আছে যা অন্য কারো থেকে গ্রহণ করার প্রয়োজন নেই।এই বলেই রাত্রি চলে আসে।আসার পথে যখন অন্তর কে দেখে,বলে তুমি এখানে দাঁড়িয়ে নিজের বউয়ের অসম্মান হচ্ছে তাই দেখছো,তুমি কি মানুষ
রাত্রি চলে আসে বাড়িতে,অন্তর ও পিছু পিছু আসে।অন্তর বুঝিয়ে বলে সব কিছু তার জন্য ক্ষমা চায়।রাত্রিও আর কথা বাড়ায় না।শুধু বলে আমাকে একটু মন থেকে ভালোবেসো তাতেই চলবে।দিনগুলি তার পরে স্বপ্নের মত চলে যাচ্ছে।অন্তর রাত্রি ছাড়া কিছুই বুঝতে চায়না রাত্রি ও অন্তরকে…..
একদিন বিকাল বেলা দুইজন রিক্সা করে ঘুরতে বের হলো।খুব ভালো লাগছে রাত্রির আজকে খোলা আকাশের নিচে দুজনে এক সাথে রিক্সায় ঘুরছে।অন্তরের কাঁধে মাথা রাখতে পারছে।কিন্তু সব সুখ যে বেশি সময় স্থায়ী হয়না।অন্তরের কাঁধে যখন রাত্রি মাথা এলিয়ে দিয়ে বসে আছে একটা ছুটে আসা গাড়ির ধাক্কা অনুভব করতে পারে।এর পরে আর কিছুই মনে নেই অন্তরের।
জ্ঞান ফিরে দেখে পায়ের কাছে রাত্রি কাঁদছে, আর মাথার কাছে বাবা,মা,শ্বশুর শাশুড়ি সবাই আছে।অন্তরের আস্তে আস্তে মনে পড়ে।গাড়িটাকে ছুটে আসতে দেখে রাত্রিকে ধাক্কা মেরে রিক্সা থেকে ফেলে দেয়।আর গাড়িটা তাদের রিক্সায় আঘাত করে।পরে জানতে পারে রিক্সা চালক মারা গিয়েছিলো।অন্তরের ৩দিন পর জ্ঞান ফিরে।আর সুস্থ হতে প্রায় ৩মাস লাগে।
রাত্রি কতটা ভালোবাসতে পারে তা অন্তর ওই তিন মাসে দেখেছে।অন্তরের এখন গর্ব হয় এই যুগেও সে এমন একজন নারীকে পেয়েছে যে কিনা মন প্রাণ উজাড় করে তার স্বামীকে ভালোবাসতে জানে।সব নারী যে খারাপ না,সবাই যে এক সুতয় গাথা না তার উদাহরণ রাত্রির মত মেয়েরা।অন্তর ডাক দেয় রাত্রিকে,রান্না ঘর থেকে রুটি বানানোর বেলন হাতেই চলে আসে।এসেই দেখে অন্তর দাঁড়িয়ে আছে টাই হাতে।রাত্রির বুঝতে বাকি থাকেনা এখন তার কি করতে হবে?
শাড়ির আচলে হাতটা মুছে টাইটা বেধে দেয়,আর বলে এবার নিজে বাধতে শিখ।অন্তর বলে তোমার হাতের ছোঁয়া প্রতিদিন সকালে না পেলে যে ভালো লাগেনা।রাত্রি যখন লজ্জা পেয়ে চলে যেতে চায় অন্তর তাকে জড়িয়ে ধরে আরো একটা ভালোবাসার চুমু তার বউয়ের কপালে একে দিয়ে অফিসের দিকে পা বাড়ায়।
সমাপ্ত