তোমায় ফিরে পাওয়া

তোমায় ফিরে পাওয়া

রিদম মা বাবার একমাত্র ছেলে, ঢাবিতে চান্স পেয়েছে তাই খালার বাসায় উঠেছে । খালার ছেলে নেই মেয়ে আছে একটা আসার সময় শুনে এসেছে, মেয়েটা যে কলেজে উঠেছে সেটা জানেনা সে । সব সময় পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকত রিদম তাই প্রেম নামক শব্দটা তার আশেপাশে আসেনি কিন্তু রিমুকে দেখে তার চোখে যেন দুনিয়ার সব চাইতে গুরুত্ব পূর্ণ জিনিসটা যে প্রেম সেটা মনে পরে গেল মানে লাভ এট ফার্স্ট সাইট যাকে বলে।

ভার্সিটি তে প্রথম পড়া শোনা তাই একটু কমিয়ে দিল রিদম। সারাদিন খালার বাসায় বসে থাকে রিমুকে দেখার আশায়। এদিকে রিমুর কোন বিকার নেই কলেজে আসছে যাচ্ছে দেখা হলে কথাবার্তা বললে বলবে এই টাইপ এভাবে প্রায় তিন মাস কেটে গেল রিমু কথাবার্তা সামান্য বাড়ালেও রিদম সাহস পাচ্ছেনা তাকে কিছু বলার পাছে যদি খালাকে বলে দেই তাহলে সব শেষ ।

একদিন ভাগ্য সু প্রসন্য হল তার, রিমুর সাথে কি একটা কাজে থাকে বাইরে যেতে বলেছেন খালা। এক রিকশাতে পাশাপাশি সে আর রিমু, ভাবতেই মনটা খুশিতে ভরে উঠল রিদমের আসলে সে অপেক্ষা করতে করতে এতই অস্থির হয়ে উঠেছিল যে ছোট এই জিনিসটা ও থাকে আনন্দ দিচ্ছে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সে রিকশাতে মূর্তি হয়ে বসে শব্দটি মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না। অবশেষে রিমুই মুখ খুলল।

-রিদম ভাই, কি ব্যাপার আপনি এমন জবুথবু হয়ে আছেন কেন?
-না, এমনি!!
-শরীর খারাপ?? বাসায় চলে যাবেন??
-না না শরীর খারাপ হতে যাবে কেন?(এবার ঠিক হয়ে বসল সে পাছে না আবার রিমু সত্যি সত্যি তার শরীর খারাপ মনে করে)
-তাহলে নিশ্চয় মন খারাপ আপনার!!!
-হুমম, তা বলা যায়।
-মানে, আপনার সত্যিই মন খারাপ!!! আমি জানি!!!!
-আসলে রিমু আমার একটা কথা বলার ছিল!!
-কাকে???
-না, মানে!! কাউকে না!!
-আচ্ছা আপনি যে একটা ভীতুর ডিম সেটা আপনি জানেন??
-না, মানে তোমাকে আমার একটা কথা বলার ছিল!!!!
-বলতে হবে না আমি জানি!!!!!!!!

রিমুর ফর্সা মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে উঠছিল, রিদম আর কোন কথা বাড়ায় নি আস্তে করে রিমুর হাত ধরল সে। সামান্য কেঁপে উঠল রিমু, চোখ দিয়ে পানি পরছিল তার রিমুর বাবার অফিসে বসে আছে রিদম। কি কারনে জানি তিনি ডেকে পাঠিয়েছেন রিদমকে। রিদমের চোখে এখন খালি আগামীর চিন্তা, রিমুকে নিয়ে। রিমু ভার্সিটি ভর্তি হবে এবার সে পাশ করে ভাল জব করবে রিমুকে নিয়ে সুন্দর আগামি গড়বে।।

-রিদম, বাবা তোমার জন্য একটা চাকরির খবর এনেছি আমি। বেতন ভাল , থাকার জন্য বাসা দেবে তোমাকে তোমার পড়া শোনার ও কোন অসুবিধা হবে না, বাবা তোমাকে একটা কথা বলব???
-জি, বলেন খালু!!
-ক্যারিয়ার সবার আগে, বাকিটা পরে জীবন এখনো অনেক বাকি।
-জি, খালু আমি চাকরিটা করব।
-কালকে থেকে জয়েন ডেট।
-আচ্ছা, আমি কালকে থেকে যাব।

খালুর কথার ইঙ্গিতটা ধরে ফেলেছে রিদম তাই চাকরিটা করবে বলে দিয়েছে সে । উনি যা করছেন হয়তবা ভালর জন্য করেছেন এটা ভেবে সে বেরিয়ে পরল। আজকেই কাপড় চোপর গুছিয়ে খালার বাসা থেকে বেরিয়ে যাবে সে নীরা কাঁদছে তার রুমে একা একা, রিদম এসেছিল কাপড় চোপড় ,বই পত্র নিয়ে যেতে ওর রুমে ঢুকেই অবাক হয়ে গিয়েছিল সে তারপর সব শুনে পাথর, যতক্ষন রিদম ছিল সে রিদমের দিকে তাকিয়ে ছিল সে যেন আর দেখবেনা তাকে। রিদম চলে যেতেই মার কাছে গেল সে

– মা রিদম ভাই চলে গেল কেন?
-সে একটা চাকরি পেয়েছে, তোর বাবা চাকরিটা ধরিয়ে দিয়েছেন।
-চাকরিটা কি উনার খুব দরকার ছিল???
-সেটা তোর বাবা ভাল জানেন!! আমার কাছে এসব বলতে আসবি না, তোর বাবার থেকে জিজ্ঞেস করে নিস। মেয়ের সাথে এই প্রথম রাগ দেখালেন তিনি।

রিমুর মনটা একেবারে ভেঙ্গে গেল। রুমে কাঁদতে কাঁদতে পুরনো দিন গুলোর কথা মনে পরে গেল তার । রিদম ভার্সিটি থেকে কখন আসবে সে অপেক্ষায় থাকত সে কখনো বের হত একসাথে এইখানে ওইখানে বেড়াতে যাওয়া খুনসুটি গুলো বড্ড মনে পরছে তার । রিদমের সাথে যেদিন প্রথম রিকশায় করে গিয়ে ছিল সেদিন রাতে ছাদে একসাথে বসে ছিল দুজনে । রিমু আর রিদম ছাদে বসে ছিল একটু দূর করে পাছে খালা এসে পরেন এই ভেবে, রিমুর কাছে চাঁদের আলোয় রিদমকে যেন কোন মায়াময়  যুবকের মত লাগছিল যাকে সে হাজার বছর ধরে খুজেছিল। কেন জানি লাগছিল তার জন্যই রিদমের ঢাকা আসা তাদের পরিচয় যেন কোন অমোঘ নিয়মে বাঁধা ছিল।

রিদমকে তার অবশ্য প্রথম দেখাতেই ভাল লাগেনি কেমন যেন বোকা বোকা টাইপ কিন্তু দেখতে দেখতে সে কেমন করে যেন সপ্নের রাজপুত্র হয়ে যাই তার কাছে। যাকে সে আপন করে পাবেই রিদমটার হাবভাবে বেশ বুঝা যেত তাকে সে পাগলের মত ভালবাসে কিন্তু রিমু পাত্তা না দেওয়ার ভাণ করত আসলে ওকে খুঁচিয়ে বের করতে চেয়েছিল সে কিন্তু বেচারা ভীতুর ডিমটা সেটা কখনই পারবেনা বলে একদিন মাকে বলে সে রিদম ভাইকে নিয়ে বের হয় মা খুশি মনেই রিদমকে ডেকে দিয়েছিল। আবার ডুকরে কাদতেঁ লাগল সে।। রিদমের বাবা কয়েকদিন ধরে ফোন করছেন বারবার বলছেন একটা ভাল দেখে স্যট বানাতে অফিসের ব্যস্ততায় একদম সময় করতে পারছে না। আজকে ফোন করার পর সে বাবাকে বলতেই বাবা বললেন সময় নেই চারদিন পর রিমুর এঙ্গেজমেন্ট তুই থাকবি। বলেই বাবা কেটে দিলেন! রিদমের মাথায় যেন বজ্রপাত হল । চার বছর ধরে যার জন্য এত পরিশ্রম করছে চারদিন পর তার এঙ্গেজমেন্ট!!!!!!! এখন আর কিছুই করার নেই!!!!!

নিয়তি তাকে নিয়ে এত বড় একটা খেলা খেলবে সে তা বুঝতেই পারেনি। সব হারানোর শোক থাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরল , কিন্তু মনকে শক্ত করল সে ভাবল আমার কিছুই করার নেই আর আজ আমি এক পরাজিত রিমুদের বাসায় তার আগের রুমটাতে বসে আছে সে,তার মা বাবা আসবেন এটা তারা আগে জানাননি। যাইহোক মেহমান নেই তেমন একটা , আর মনে হয় বর আসেনি এখনো মাথা ধরেছে বলতেই খালা তার আগের রুমে গিয়ে শুতে বলল। এসে শুইনি সে বসে আছে আর বিষাদের সমুদ্রে সাতার কাটছে কতক্ষন ছিল বলতে পারবেনা শুধু দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে মাথা তুলল যা দেখল তার মাথায় আরেকবার বজ্রপাত হল, রিমু সামনে দাঁড়ানো। রিমুর চোখে বিস্ময় সে টের পাওয়ার আগেই দেখে রিমু তার বুকে । এই মেয়ে করে কি? তার মান ইজ্জত আজ ধুলোয় মিটবে। বিহিত করতে হবে থাকে একটা

-রিমু!!!! কি ব্যাপার?? তুমি এখানে কেন???
-কেন?? আমার  আসতে মানা আছে নাকি(কান্না আর আনন্দ  মিশ্রিত কন্ঠ রিমুর) খটকা লাগল রিদমের
-খালা,খালু আছেন আমার বাবা মা ও দেখলে কেলেংকারি হয়ে যাবে !!!!!!!!!
-মা পাঠিয়েছেন আমাকে এখানে!!!!!
-কেন?????
-বললেন, যা তোর বর আগে রিদম যে রুমে থাকত সে রুমে আছে। রিদম এবার বুক থেকে তুলে নিয়ে চোখের  সামনে দাড়া করাল রিমুকে , যেন আকাশ  থেকে পরি নেমে এসেছে। বিয়ের সাজে অসম্ভব  সুন্দর লাগছে তাকে

-এগুলো আমার জন্য সাজোনি তুমি???? ( দুস্টুমি হাসি রিদমের মুখে)
-না, আমার বরের জন্য সেজেছিলাম। কোন ভীতুর  ডিমের জন্য না।(রিমুর চোখে কপট রাগ)
-তাহলে আমি দেখব না তোমাকে!! (অন্যদিকে ফিরে গেল রিদম)
-না দেখলে আমার বয়েই গেছে( হাসিটা কোন  মতে চাপাল রিমু

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত