ছেলেটাকে একদম ই পছন্দ না ফারিয়ার, কেমন জানি ভাবে থাকে অলটাইম, হুহ ভাবওয়ালা ওই ছেলের সাথে কখনও কথাও বলা হয়নি, কিন্তু আজকে বলতে হচ্ছে কিছু করার নাই প্র্যাকটিক্যাল এর জন্য স্যার গ্রুপ সেট করে দিয়েছে আর ফারিয়াদের গ্রুপ লিডার সেই মিঃ ভাবওয়ালা প্রিতম ছেলেটা হোল টিমের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবি তাই তাকে লিডারশিপ দেয়া, ফারিয়া আর প্রিতম, পলিটেকনিক এ পড়ে, ব্যাচ মেট তারা, আজকে দু বছর থেকে একসাথে ক্লাস করে আসছে, কিন্তু কেউ কাউকে একদমই পছন্দ করেনা।
প্রিতম শান্ত স্হির স্বভাবের একটা ছেলে, অলটাইম চুপচাপ থাকে, মেয়েদের সাথে তেমন কথা বলেনা, এবং সম্ভান্ত পরিবারের হয়েও তার গেট আপ চলাফেরা কোনোকিছুই খুব বেশি আপডেট না, আর ফারিয়া সম্পূর্ণ তার উল্টো, খুব চঞ্জল একটা মেয়ে,মডার্ন ট্রেন্ডি পোশাক আষাক তার ফ্রেন্ডদের সাথে সারাক্ষণ ই হাসি ঠাট্টা মজা করা তার স্বভাব। তাই প্রিতম এর মতো ছেলে পুরোপুরিই তার কাছে বোরিং, আবার ফারিয়ার মতো মেয়ে প্রিতমের কাছে উছৃঙ্খল বাজে মেয়ে। প্র্যাকটিক্যাল এ সবার সাথেই সব ঠিক আছে শুধুমাত্র ফারিয়ার সাথে প্রিতমের কথা হতে গেলেই বাধে যতো বিপত্তি কারন ফারিয়া নিজের ইচ্ছামতো টাস্ক করে প্রিতমের কোনো ইন্স্ট্রাক্সন কে সে পাত্তাই দেয়না, শেষে যা হবার তাই হয় ঝগড়া বাড়াবাড়ি ব্লা ব্লা ব্লা। ফলাফলসরুপ ওদের গ্রুপের এসাইনমেন্ট টা হয় সবচেয়ে বাজে টিচার কোনোরকমে তাদের টিমকে জাস্ট পাশ মার্কটা দেয়,
— ছি ছি তোমাদের টিম এত বাজে এসাইনমেন্ট কি করে করলে ( স্যার)
— স্যার আমাদের কাজটা ভালোই হতো যতো সমস্যা করেছে এই ফারিয়া
— ওই কি বললা আমি সমস্যা করেছি? নিজে কিছু জানোনা আসছো আমাদেরকে ইন্সট্রাকশন দিতে
— এই মেয়ে মুখ সামলে কথা বলো তোমার মতো গাধা গবেট না আমি
— কি? সালা বোরিং এর বাচ্ছা বোরিং সয়তান হারামি হাউ ডেয়ার ইউ
— তোর মতো বাজে ফালতু মেয়ের কাছে আমার ডেয়ার শিখতে হবেনা
স্যার এর সামনেই এমন বাড়াবাড়ির এক পর্যায়ে প্রচন্ড ধমক দিয়ে স্যার তাদের থামিয়ে দিলেন। সেদিনই দুজনে প্রতিজ্ঞা করে আর কখনও কেউ কারো মুখোমুখি ই হবেনা। আজকে দুদিন থেকে ফারিয়ার খুব অপরাধবোধ হতে থাকে, কারন তাদের প্র্যাকটিক্যাল টা খারাপ হওয়ার জন্য তো আসলে সেই দায়ি। অনেক ভেবে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলো প্রিতমকে সে সরি বলবে, বেচারার কোনো দোষ ছিলোনা, শুধু শুধুই এতটা খারাপ বিহেভ করলো। পরদিন খুব ভয়ে ভয়ে তাকে সরি বলতে যায় ফারিয়া , কারন সে জানে প্রিতম তাকে একদমই পছন্দ করেনা
— প্রিতম আ’ম সরি
— মানে ( ভূত দেখার মতো চমকে গিয়ে)
— আমার জন্যই প্র্যাকটিকাল টা খারাপ হইছে, আর আমার ওইদিনের বিহেভ এর জন্যও সরি।
— আচ্ছা আচ্ছা ইটস ওকে দোস তোমার একারও না আমার দোষ ছিলো আমিও সরি।
মেয়েটাকে যেমনটা ভেবে এসেছি ও তো তেমন নয়।মনটা অনেক ভালো এসব ভেবে হেসে ফেলে প্রিতম ওইদিকে ফারিয়াও ইমপ্রেসড, ছেলেটাতো কোনো খারাপ রিয়েক্ট ই করেনি, উল্টা নিজের উপর দোষ নিলো।
ফারিয়ার গত কয়েকদিনের কান্ড তে চমকে যায় তার পুরো ফ্রেন্ড সার্কেল। একেবারে চুপচাপ হয়ে যায়, চঞ্জলতাও টোটালি করেনা, আগের মতো ঠাট্টা মশকরা মজা কোনো কিছুই করেনা। পোশাক আষাকে ও পরিবর্তন ওয়েস্টার্ন এক্সট্রা অর্ডিন্যান্সটি বাদ দিয়ে একেবারে ষোলোআনা বাঙ্গালি টাইপ, ওর এই অবিশ্বাস্য পরিবর্তনে সবাই অবাক। ওইদিকে আরো বেশি চমকে দিয়েছে প্রিতম,নরমাল ক্যাজুয়াল পোশাক বাদ দিয়ে সে এখন মডার্ন পোশাকে চলাফেরা করে। সবার সাথে অনেক মজা ফান দুষ্টুমি চিল্লাচিল্লি, যেসব তার স্বভাবে একটুও ছিলোনা কিন্তু এখন সে হরহামেসা এমনটাই করছে। কিন্তু কাহিনী কি দুজনের মধ্যে এতো চেন্জ কেনো? আকাশ প্রচন্ড রকম মেঘলা হয়ে আছে, যেকোনো মুহূর্তে বৃষ্টি নামবে মনে হচ্ছে, অনেক্ষন থেকে রিকশার জন্য ওয়েট করে অবশেষে একটা রিকশার দেখা পেলো ফারিয়া
— এই রিকশা দাড়াও দাড়াও
— আপা আপনি অন্য রিকশা দেখেন আমারে আগে ওই ভাইয়া ডাকছে , আমি ওই ভাইয়ারেই নিতে আইছি
— কোন ভাইয়া?
— আমি ( প্রিতম)
— ও প্রিতম তুমি? ঠিক আছে তুমিই যাও আমি অন্য রিকশা দেখবো
— না ফারিয়া আমার সমস্যা হবেনা তুমি চলে যাও
— না না তুমি যাও
— তুমি যাও প্লিজ এখনই বৃষ্টি শুরু হবে,
— ব্যাপার না আমি ম্যানেজ করে নিবো তুমি চলে যাও প্লিজ
— এই মেয়ে বেশি বুঝতে হবেনা যা বলছি তাই করো,
— সেম কথা যদি আমিও বলি রিকশা ওয়ালা লোকটা ভিষন রেগে গিয়ে বলল ওই মিয়া আমি কি এখানে আপনেগো তামশা দেকতে আইছি,? আমার আর কাম নাই আমি গেলাম।
— দেখছো দিলাতো রিকশাটা ভাগিয়ে তুমি চলে গেলে কি হতো ফারিয়া
— ওটা তুমি ডেকেছো তাই তুমি যাবে
— হ্যা যেতাম হয়তো বাট তোমাকে এভাবে রেখে যেতে পারবোনা
— সেটাই আমিও যেতাম বাট….
— বাট??? বাই দ্যা ওয়ে তুমি এতো ..চেইন্জ কি করে?
— মানে?
— কোনো আর্গিউ ছাড়াই আমাকে যেতে বলছো
— তুমিও তো
— এহেম এহেম না সেটা না
— প্রিতম তোমার জায়গায় তুমি ঠিক আছো আমি নিজেকে বদলিয়ে তোমার মতো হব
— না না তুমি ঠিক আছো আমি নিজেকে বদলাবো
— কেনো আমি না বাজে মেয়ে তাই নিজেকে বদলে ভালো মেয়ে হবো
— আমিতো বোরিং বেরসিক তাই নিজেকে বদলে নিয়েছি তোমার জন্য
— আমার জন্য???
— হুম
— কেনো?
— কি হলো কিছু বলো,
— ভালোবেসে ফেলেছি তাই
— …. (খুব লজ্জা পেয়ে)
— কি ম্যাডাম কিছু বলবেননা?
— না বলবোনা, বৃষ্টি শুরু হয়েছে চলো না ভিজি,,
— আজ দুজনে মিলে ভিজবো তোকে নতুন করে আঁকবো শুধু একটু ভালোবাসিস তুই আমায় আমি রঙধনু রঙে রাঙিয়ে দেবো তোকে