দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের প্রায় ৭ মাস চলে গেলো।এই ৭ মাসের মধ্যে কোনোদিন ও এমন কিছুই হয়নি যাতে না আমাদের সম্পর্কটার মাঝে ফাটল ধরবে।কেননা আমাদের সম্পর্কটার মাঝে শুধুই ভালোবাসায় আচ্ছন্ন।যদিওবা পারিবারিক ভাবেই বিয়েটা হয়েছে।তবুও দুজন দুজনার প্রতি ভালোবাসার কোনো কমতি ছিলো না।আমি তো ভাবতেই পারিনি জীবনে কাউকে এতটা ভালোবাসতে পারব..! পড়ন্ত বিকেলে আনমনে বসেই কথাগুলো ভাবছি আর মনের মধ্যে একটা আনন্দ বিরাজ করছে।কিন্তু মুখ খানা ভার করেই রেখেছিলাম।কেননা আমি নিজের হাসি কান্না একটু আড়াল করে রাখতেই পছন্দ করতাম।হঠাৎ করেই কারো ডাক শুনতে পেলাম।পেছনে তাকিয়ে দেখি পাশের বাড়ির ছাদ থেকে একজন বলছে..
>>কি ব্যাপার.? মন খারাপ.?
>>আজ্ঞে না ভাবি।মন ভালই আছে।
>>তবে এভাবে কেনো এখানে বসে আছেন.?
>>ঘুম থেকে উঠেছি,,তাছাড়া অসুস্থ আমি তাই হয়তো এমন লাগছে আপনার কাছে।
কথাটা বলে আর একটিবারের জন্যেও পিছনে ফিরে তাকাই নি।কিছুক্ষণ পর ভাবি!ভাবি! বলে কেউ যেন ডাকছে,,,উঠে দাঁড়ালাম। সামনে এগিয়ে দেখি দেবর বলছে নিচে যেতে।আমি কিছু বলার আগেই সে চলে গেলো।আমি ছাদ থেকে নেমে নিজের রুমের পথে পা বাড়ালাম।বারান্দায় আসতেই দেখি আমার উনি রেগে আগুন।আমাকে দেখে একটিবারের জন্যেও ডাকেনি সে।কিছুই বুঝতেছি না।কি হলো তার!কেনোই বা এমন করছে.? একটু পরেই সে বাহিরে চলে যায়। যদিওবা তার বাহিরে যাবার কথা নয়।কেননা আজ ছিলো শুক্রবার।ভেবেই পাচ্ছি না কোথায় গেলো!আমাকে কিছু বলেও যায় নি।ভাবতে ভাবতেই শাশুড়ি মায়ের রুমে গেলাম।মাকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই তিনি বলে উঠেন..
>>বউমা কোথায় ছিলে এতক্ষণ.?
>>মা আমি তো ছাদে ছিলাম।কেন কি হয়েছে.? আর আপনার ছেলের কি হয়েছে জানেন কিছু.?
>>কি আর হবে।ওই তো,অনন্যার কথায় সে রাগ করেছে তোমার উপর।
>>ওমা!সে কি! অনন্যা কি বলেছে.?
>>অনন্যা নাকি বলেছে,,,তোমার সাথে আমার ছেলে ঝগড়া করেছে নাকি!রাগ করেই নাকি তুমি ছাদে বসে ছিলে।
কথাটা শুনেই মাথা গরম হয়ে যায়। এটা কেমন কথা!নিজের বাড়ির ছাদেও কি উঠা যাবে না!আর আমি মন খারাপ করে বসে থাকব কি না থাকব এটা তো অনন্যার দেখার বিষয় না।আর কিছু না ভেবে আমি রিহানকে ফোন দেই।কিন্তু রিহান ফোন ধরছেই না।মনে মনে খুব অভিমান হচ্ছে রিহানের উপর।সেও কেমন.? আমাকে কিছু না বলেই চলে গেলো! এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত নেমে এলো।রিহান কে শেষবারের মতই ফোন দেই আবার ও।এইবার সে ফোন রিসিভ করেছে!!ফোন রিসিভ করতেই বলে উঠি,,,
>>হ্যালো!রিহান!কই তুমি..?
>>আছি এক জায়গায়!
>>রাত হয়ে গেছে বাড়ি আসো না কেন..?তোমার জন্যে তো তোমার পছন্দের খাবার রান্না করেছি!
>>আমি খাবো না!
কথাটা বলেই ফোন কেটে দিলো রিহান।মনটা ভীষণ খারাপ হতে লাগল।কেন জানি নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে।আসলেই দোষ আমার! না ছাদে যেতাম, আর না রিহানকে অনন্যা এমন কিছু বলতো! খুব কান্না পাচ্ছে আজ। এত মাসের সম্পর্কে এমনটি হয়নি কখন ও,,,রিহান কখনই আমার উপর এতটা রাগ হয়নি।আমি ই বা কি করেছি! রিহান তো আমার কথা ভালো করে না শুনেই ফোন রেখে দিলো!আমাকে তো সে ভালো করেই বুঝে,,,তবে কেন এমন করল সে! মনে মনে অনেক অশুভ চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। আচ্ছা! রিহান কি আমাকে কখনই মন থেকে ভালোবাসেনি..? আচ্ছা!রিহান কি আমাকে পছন্দ করেনি মন থেকে.? যদি না করতো তবে বিয়েই বা কেন করলো আমাকে.? আমি তো তাকে খুব ভালোবাসি,,সেটা সে জেনেও কেন আজ আমাকে এতটা কষ্ট দিচ্ছে!সে কি বুঝতে পারছে না!তার এসব আচরনে আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি!
রাত ১২ বেজে ২৫ মিনিট!রিহান রুমে ঢুকল।তাকে দেখতে পেরে মনে খুব শান্তি বিরাজ করছে,,যাই হোক,,,ঘরে তো এসেছে।কিন্তু সে একটিবারের জন্যেও আমার দিকে তাকায়নি।ফ্রেশ হয়ে ভাবিকে বলতে লাগল খাবার দিতে।আমাকে বলেনি।আবার ও কান্না করতে লাগলাম।মনে মনে ভাবছি আজ খাবো না।খাবো না মানে খাবোই না।এদিকে শ্বশুরবাবা বার বার ডাকছে খাবারের জন্যে।কিন্তু আমি তার কোনো উত্তর দেইনি।মনে মনে ভাবতে লাগলাম,,রিহান তো শুনেছে আমি খাইনি,,আর সে তো জানেও আমি তাকে ছাড়া খাই না!তবে কেন আমাকে খেতে ডাকেনি!বুঝছি,,হয়তো আমার প্রতি আর ভালোবাসা নেই তার! শুয়ে পড়লাম।একটু পরেই রিহান এলো।আমাকে ডাকতে লাগল।এইবার কোন কথা বলিনি রাগে। আমি এতবার ফোন দিলাম!রিসিভ করেনি,একা একা খেয়ে আসছে আমাকে ডাকেনি।কথা বলবনা আজ তার সাথে! কিন্তু তা ভেবেও পারিনি কথা না বলে থাকতে।অশ্রুভেজা চোখ নিয়ে তাকে বলছি..
>>ডাকো কেন এখন.?
>>যাও খেয়ে আসো।
>>আমি খাবো না!
>>যাও বলছি!
>>আমি খাবো না মানে খাবো না,,তুমি যাও! ভাগো!(রাগে)
কিছু না বলেই সে চলে যায়। আমিও শুয়ে পড়ি।একটু পরেই সে খাবারের প্লেট নিয়ে রুমে হাজির।আমি না দেখার ভান করেই শুয়ে আছি।সে এসেই বলছে…
>>খেয়ে নাও এখন…!
>>বললাম তো খাবো না!
এইবার সে মশারির ভেতরেই খাবার নিয়ে ঢুকল।জোর করেই আমাকে বিছানা থেকে তুলে বসিয়ে বলতে লাগল…
>>নাও খাও।
>>খাবো না!
>>দেখো! ছোট মানুষ এর মত জিদ করো না।
>>জিদের কি দেখলে হ্যা.? আমাকে তো ভালোবাসো না।
কথাটি বলেই কাঁদতে লাগলাম।তারপর সে নিজ হাতেই খাবার মুখের সামনে তুলে বলে উঠে..
>>এইবার ও খাবে না.??
কিছুক্ষণ চুপ থেকেই তারপর আমি বললাম..
>>হুম খাবো।
>>এই তো লক্ষী বউ আমার।
>>আমি লক্ষী না। আমি খারাপ বউ।
>>কে বলেছে আমার বউ খারাপ..?
>>আমি বলছি।
>>কেন..?
>>খারাপ বলেই তো আজ এতবার ফোন দিয়েছি ফোন ধরো নাই।আমাকে আগের মত ভালো ও বাসো না।
>>আরে!এমনি ধরিনি।মেজাজ ভালো ছিলো না।
খাবার খাওয়া শেষ।রিহান আমাকে বলছে…
>>আচ্ছা!এখন ঘুমিয়ে পড়ো।(রিহান)
>>আমি ঘুমাবো কেন.?(আমি)
>>ওমা!ঘুমাবে না কেন.?
>>নাহ,,আজ ঘুমাবো না!নিজেকে শাস্তি দিবো।(কান্নারস্বরে)
>>শাস্তি কেন.?
>>এমনি,,আর একটা কথাও বলবানা আমার সাথে!(রাগে)
>>আচ্ছা! বলি,,,রাত হলে কি তোমাকে ভূতে পায়.?
>>ভূতে পাবে কেন.?
>>তোমার এসব অদ্ভুত আচরণ দেখে তাই ই মনে হয়।
রিহানের কথা শুনে রাগে কান্না পাচ্ছে।আমার কান্না দেখে সে বলতে লাগল
>>আচ্ছা!আবার কান্না কেন.?
>>কাঁদবই তো!কান্না ছাড়া তো আমার জীবনে কিছুই নাই।
>>তা কান্না করছো কিসের জন্য..?
>>বলবো না।
>>বলতে হবেই।
>>বলে কি হবে!আমাকে তো ভালোবাসো না।কেউ আমাকে ভালোবাসে না!
>>কে বলেছে.? বাবা ভালোবাসে,মা ভালোবাসে, তোমার দেবর ভালোবাসে,,আমি বাসি,,সবাই বাসে!
>>তুমি কম ভালোবাসো তাইনা.?(রাগে)
>>নাহ,,তা হবে কেন.?
>>তাহলে তুমি সবার পরে তোমার ভালোবাসার কথা বললে কেন.? সবার আগে বললে না কেন.?
>>উফফ!তোমাকে নিয়ে আর পারি না।এত প্রশ্ন করো কেন.?চুপ করে ঘুমাও তো।
কথাটি বলেই সে লাইট অফ করে ঘুমিয়ে পড়লো।মনে মনে ভাবছি,,,থাক আজ ছাড় দেই তাকে।কাল সকালে ঝগড়া করবো আবার,,,সাহস কত!!! আমাকে বলে প্রশ্ন করি কেন!