আনিলা এবং সাকিব দুই জনই সমান ক্লাশে পড়ে একই ডিপার্টমেন্টের একই ভার্সিটি। সাকিব অনেকটা ভদ্র আর লাজুক টাইপের চোখে চশমা হাতে ঘুড়ি এই দুটি মিলিয়েই হলো তার ফ্যাশন। সাধারনত চশমা পড়া ছেলেরা ভদ্র হয় সাকিব তার ব্যাতিক্রম নয়। অন্যরকম একটি ছেলে পড়ালেখায় এবং তার লেখালেখি এ দুটি মিলিয়েই তার জীবন। ভার্সিটির প্রথম দিন থেকেই একটি মেয়ের উপর ডুবে ডুবে প্রেমের জ্বল খাচ্ছে মেয়েটির নাম আনিলা। ভার্সিটির একটি অনুষ্ঠানে সাকিব আনিলা যখন একসাথে উপস্থপনা করলো আনিলা শাড়ি পড়ে আর সাকিব পান্জাবিতে তখনি অনেকে তাদের কাপল ভেবেছিল।
সেদিনই তাদের জুটি যেনো বলিউডের শাহরুখ কাজল জুটি কে হার মানাবে। আনিলার মিষ্টি কন্ঠের রোমান্টিক কথা তারসাথে সাকিবের মুখের স্পিড সেই সাথে তার কথা বলার স্টাইল অঙ্গভঙ্গি পুরো কলেজ কে মাতিয়ে রাখে। সাকিব তার চশমার ফাক দিয়ে আনিলার দিকে তাকাই অার ভাবে একটা মেয়ে কতোটা সুন্দরি হতে পারে এই মেয়েই তার প্রমান। দিন যত এগুচ্ছে আনিলার প্রতি তার ভালবাসা তথ বেড়েই চলছে কিন্তু কখনো ভালাবাসার কথাটি সে মুখ খুলে বলতে পারেনি। মাঝে মাঝে তার সাথে এক্টু অাক্টু কথা হলেও কিন্তু মনের কথাটা বলতে পারে না। এইভাবে চলতে থাকে তাদের ভার্সিটি লাইফ। সাকিব ফেইসবুকে একটি আইডি ব্যাবহার করে ছদ্ম নামে নাম উদ্দেশ্যহীন লেখক অপরদিকে দিকে অানিলাও একটি আইডি ব্যাবহার করে ছদ্ম নামে নাম চাঁদের বুড়ি। সাকিব অনেক ভালো লেখে ফেইসবুকে তার লেখার অনেক ভক্ত বাংলাদেশের অন্যতম লাভ পেজ Romantic Love Story পেজে তার লেখা নিয়মিত প্রকাশ হয়।
লক্ষ লক্ষ ফ্যানের মাঝে আনিলাও Romantic Love Story পেজে উদ্দেশ্যহীন লেখককের লেখা পড়ে তার ভাল লাগে যার রুপ ধরেই উদ্দেশ্যহীন লেখক লিখে সার্চ করলো অত:পর একটি অাইডি পেলো অানিলা ভাবছে এটাই উদ্দেশ্যহীন লেখকের অাইডি, একটু নিশ্চিত হওয়ার জন্য অাইডির পোস্ট গুলো দেখছে লেখক সাহেবের অাইডি বলে কথা পুরো টাইমলাইন গল্প দিয়ে সাজানো কিন্তু মনটা খারাপ হয়ে গেলো কেননা লেখক সাহেবের গল্পে অসংখ্য মেয়ে লোকের কমেন্ট অনেক ভেবেই সে তার চাঁদের বুড়ি অাইডি থেকে উদ্দেশ্যহীন লেখক কে এড করে কিন্তুু সে জানতো না এই উদ্দেশ্যহীন লেখকের আইডি হচ্ছে সাকিবের। দিনশেষে রাত্রে যখন সাকিব ল্যাপটপ অন করে ফেইসবুক লগিন করে তখন দেখতে পেলো প্রতিদিনের মতো অাজও অনেক ফেন্ড রিকুয়েস্ট এসেছে। চাঁদের বুড়ি আইডি দেখে তার চোখ অাটকে যায়। রিকুয়েস্ট টি দেখে সে কেমন জানি বোধ করলো। পৌরাফল ঘুরে ৮০% নিশ্চিত হলো ফেইক না। কোন এক অজানা কারনে গ্রহন না করে কয়েকদিন ঝুলিয়ে রাখলো। ওইদিকে আনিলা ভাবছে রিকুয়েস্ট গ্রহন করছে না কেন? তাই উদ্দেশ্যহীন লেখক কে মেসেজ করলো।
>= আপনি নিজেকে কি ভাবেন? কিছুক্ষন পর সাকিব রিপ্লে করলো
>= মানে ?
>=এত মানে বলার কি অাছে ছয় দিন হলো রিকুয়েস্ট পাটাইছি, কিন্তু গ্রহন করছেন না কেনো?
>= Sorry করতেছি…
>= Thanks
প্রথম দিন তাদের এইটুকু কথাই হলো এরপর থেকে তাদের নিয়মিত কথা হতো। এই দিকে সাকিব অনেক চিন্তিথ কি করে, সে তার মনের কথাটি অানিলা কে বলবে। অনেক ভেবে সিন্ধান্ত নিলো আজ ভার্সিটিতে আসলেই আনিলা কে তার ভালবাসার কথা বলবে। বারংবার অায়নার সামনে দাড়াচ্ছে অার একেক রকম অঙ্গভঙ্গি করে প্রোপজ করার স্ট্যাইল দেখাচ্ছে কিভাবে করলে ভালো হবে। তাড়াহুড়া করে তার মাকে বললো অাম্মু একটি শুভ কাজে যাচ্ছি কোন শার্টটি পড়বো। মায়ের পছন্দেই কালো রংয়ের শার্টটি পড়ে বের হলো। দুরে দাড়িয়ে সে দেখছে অানিলা এই রাস্তা দিয়ে আসছে, আনিলা যখন কাছে আসলো সাকিব বললো।
>= এই যে
>= হ্যাঁ বলো।
<= তোমাকে একটি কথা বলার ছিলো।
>= হ্যাঁ বলো, কি কথা ?
>= I LOVE YOU
>= মানে ?
আনিলার মানে কথাটি শুনে সাকিব ঘাবড়ে গেলো, ভয় পেয়ে সে বলে দিলো রাগ করছো কেন ? আমিতো তোমায় বললাম নতুন একটি মুভি এসেছে নাম I Love You অনেক রোমান্টিক মুভি এই বলেই সাকিব চলে আসলো আর ভাবছে ইশ বলেই তো ফেললাম কিন্তু শেষের দিকে মুভির কথা না বললেই তো হতো। অানিলা হাসছে কি ছেলেরে মুভি দেখার কথা বলে। রাতে সাকিব ফেইসবুক লগিন করে দেখে চাঁদের বুড়ির মেসেজ তার মেসেজের রিপ্লে দিয়ে শুরু হয় তাদের কথাকলি। কিন্তু সাকিব চিনতে পারছে না এই চাঁদের বুড়িই যে তার মনের রানী আনিলা। অত:পর আনিলা ও বুঝতে পারছে না এই উদ্দেশ্যহীন লেখকই সাকিব।
কেউ কাউকে চিনতে পারছে না যখন একজন অপর জনের নাম জিঙ্গেস করে দুজনই ফেইক নাম বলে। উদ্দেশ্যহীন লেখকের গল্প পড়তে পড়তে কখন যে সে উদ্দেশ্যহীন লেখকের প্রেমে পড়ে সে নিজেও জানে না। মেয়েটি সারাক্ষন শুধু Romantic Story পেজে ঘুরাঘুরি করে কখন উদ্দেশ্যহীন লেখকের লেখা গল্প আসবে এবং সে পড়বে। আনিলা ভাবছে মেয়েরা কেনো লেখকদের প্রতি দুবর্ল এত্তো সুন্দর লেখা পড়লে কে না প্রেমে পড়বে। কবি জীবন্দদাস, রবি ঠাকুর উনাদের কবিতার উপর কতো মেয়েই না প্রেমে পড়েছে অার অামি পড়লাম এই উদ্দেশ্যহীন লেখকের। দিন যত এগুচ্ছে তথোই সে উদ্দেশ্যহীন লেখকের গল্প পড়ছে প্রতিটা লেখা পড়ার পর লেখকের উপর নতুন করে অাবার তার ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। অনেক ভেবে অানিলা ডিসিশন নিলো অাজ সে তার ভালোবাসার কথা উদ্দেশ্যহীন লেখক কে বলে দিবে। সাকিব যখন ফেবুতে আসে ঠিক তখনি আনিলা মেসেজ করে।
>= তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।
>= হুম, বলো
>= তোমার লেখা পড়তে পড়তে কখন যে তোমায় ভালবাসে ফেলেছি, নিজেও জানি না। অানিলার এমন কথার জবাবে সাকিব সড়াসড়ি না বলে দিলো কেননা এই ভার্চুয়ালে অনেক মেয়েই তার লেখার প্রেমের হাবুডবু খাচ্ছে প্রতিদিনই প্রোপজ পাওয়াটা রুটিনে পরিনত হচ্ছে। উদ্দেশ্যহীন লেখককের কাছ থেকে না শব্দ কথা শুনে আনিলা অনেক কষ্ট এবং লজ্বিত হলো। এরপর থেকে তাদের মধ্যে কথা একেবারেই কম হতো। আনিলা শুধু তার লেখা গল্প গুলো পড়তো এবং কাদতো। কয়েকদিন এভাবে কেটে গেল।
অপরদিকে সাকিব ভাবছে যে করেই হোক আনিলা কে তার ভালবাসার কথা বলবেই। যেমন ভাবা তেমন কাজ তাই তো সে, আনিলার জন্য কয়েকটা লাল গোলাপ কিনলো এবং আজ সে বলবেই তার ভালবাসার কথা। আনিলা যখন কাছে আসলো সাকিব এগিয়ে গিয়ে বললো তার মনে লুকিয়ে থাকা কথা গুলো এবং লাল গোলাপ তার হাতে দিয়ে বললো, ভালবাসি তোমায় আমার ভালবাসার উত্ররের অপেক্ষায় রইলাম। আনিলা কিছু না বলে চলে অাসলো এবং গিয়ে ভাবতেছে সে তো একজন কে ভালবাসে ফেইসবুকে যার প্রেমে পড়েছে উদ্দেশ্যহীন লেখকের। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই রাত কেটে সকাল হয়ে গেলো পরদিন যখন আনিলা ভার্সিটিতে আসলো কিন্তু সাকিকিব আসেনি এবং তার উত্রর দিতে পারেনি। এরপরের দিন সাকিব ভার্সিটিতে এসেছে কিন্তু আনিলা আসে নি তাই সাকিব একটা চিরকুট আনিলার বান্ধবীর কাছে দিয়ে যায় এবং বলে চিরকুট টা যেনো আনিলা কে দিয়ে দিতে, চিরকুটে লেখা ছিলো উত্তর চাই।
সাকিব অনেক চিন্তিথ অানিলা কি তার ভালোবাসা গ্রহন করবে নাকি ফিরিয়ে দিবে। চিরকুট টি পড়ে অানিলা তার উত্রর পাঠিয়ে দিলো Sorry আমি তোমায় গ্রহন করতে পারবো না। অানিলার কাছ থেকে এমন উত্তর পেয়ে সাকিব অনেক বেশি কষ্ট পেলো যার জের ধরেই ল্যাপটপ অন করে টাইপ করতে লাগলো তার এই ব্যার্থ ভালবাসার গল্প। ল্যাপটপের প্রতিটা টাইপিংয়ের তার চোখে জ্বলে গ্লাস ভিজে গেছে। ঘন্টাখানেক সময় নিয়ে লেখা শেষ করলো তার জীবনের সত্যি ব্যার্থ ভালবাসার গল্পটি। প্রতিদিনের মতো অানিলা অাজো অপেক্ষা করছে কখন উদ্দেশ্যহীন লেখকের গল্প অাসবে রাত নয়টায় যখন Romantic Love Story পেজে প্রকাশ হলো সাকিবের ব্যার্থ লাভ স্টোরি, আনিলা গল্পটি পড়ছে অার ভাবছে খুব পরিচিত স্টোরি যেনো তার সাথে ঘঠেছে পুরো গল্পটি পড়ে তার আর বুঝার কিছু বাকি রইলো না। এরপর সাথে সাথে সে চাঁদের বুড়ি অাইডি থেকে উদ্দেশ্যহীন লেখক কে মেসেজ করলো।
>= তুমি কে ?
>= এতদিন যা জানতে আমিতো
তাই
>= মিথ্যুক তুমি সাকিব। এই কথা শুনে সাকিব তো বড় রকমের শক খেলো কে এই চাঁদের বুড়ি এবং তাকেই বা চিনলো কি করে। খুব অাশ্চর্য হয়ে সাকিব রিপ্লে দিলো।
>= হ্যাঁ আমি সাকিব, কিন্তু তুমি কে?
>= আগামিকাল ভার্সিটি অাসলে সব জানতে পারবে।
সাকিবের মাথা কাজ করছে না একদিকে আনিলা কে প্রোপজ করে ব্যার্থ আবার এই দিকে চাঁদের বুড়ির এমন সব অাশ্চর্য কথা। তার সাথে কি হতে যাচ্ছে ভার্সিটি গেলে কি হবে? কি হতে পারে এমন সব বাজে চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অনেক টেনশন নিয়ে কাল যখন সে ভার্সিটিতে অাসলো পুরো ক্যাম্পাস শুন্য কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। তাহলে কি অাজ ভার্সিটি বন্ধ কিন্তু মেয়েটি যে বললো সে অাসবে নাকি মিথ্যা বললো, হয়তো মিথ্যেই বলেছে এসব ভেবে ভেবেই সে বাসার দিকে রওয়ানা হবে ঠিক তখনি পিছন থেকে পরিচিত মেয়েলি কন্ঠে কে জানো ডাক দিলো এই যে মি: সাকিব তখন পিছনে তাকিয়ে দেখে মেয়েটি অানিলা। সাকিব বলছে
>= কিছু বলবে ?
>= না।
>= তাহলে অামি চললাম।
সাকিব চলে যাবে ঠিক তখনি আনিলা পৃর্বের মতো কিছু লাল গোলাপ হাতে নিয়ে সাকিব কে বলে
>= তোমাকে চিনতে ভুল করেছি তুমি যে অামার উদ্দেশ্যহী লেখক। তারপর এক এক করে সবকিছু খুলে বলে এবং একটা উচ্চ হাসির রুল পড়ে যায়। রচিত হলো অারেকটি সফল প্রেম কাহিনি, প্রেমের মাঠে এখনো টগবগিয়ে ছুটছে তাদের ভালবাসার ঘোড়া। ভালবাসার ক্রিজে এখনো নট আউট উদ্দেশ্যহীন লেখক ও চাঁদের বুড়ি সাকিব আনিলার জুটি অবশেষে ভার্চুয়াল লাইফের কল্যানেই যেন এক হয় সাকিব আনিলার হাত দুটি।