প্রিয়তমেষু

প্রিয়তমেষু

-ভাল আছ তিথি?
-হুম, খুব ভাল আছি। তুমি?
-এইতো আছি বেশ। এখনো নাচ শিখতে যাও বুঝি?
-“না, অভ্র দা। এখন আমি নাচ শেখাতে যাই।” বলে অভ্রর চোখের দিকে তাকালো তিথি।

অভ্রর চোখের তারায় চোখ রাখতেই যেন থেমে গেল চারপাশ। পৃথিবীতে যেন কেউ নেই, কিছু নেই। শুধু যেন আছে অভ্র আর আছে তিথির হৃদয়ে অভ্রর জন্য এক সমুদ্র ভালবাসা।

প্রথম ভালবাসা বুঝি কখনোই ম্লান হয় না। আর সেটা যদি একতরফা ভালবাসা হয়? তাহলে তো কথাই নেই। নেই কোন প্রত্যাখানের গ্লানি, নেই কোন তিক্ততা। শুধু থাকে একটু খানি আফসোস। মনের ভয়ের দেয়াল ভেঙে ভালবাসা প্রকাশ করতে না পারার আফসোস।

অভ্রর মতো ছেলেদের বুঝি জন্মই হয় মেয়েদের প্রথম ভালবাসার মানুষ হওয়ার জন্য। দুর্দান্ত ছাত্র, ক্রিকেটের মাঠে ঝড় তোলা ব্যাটসম্যান, ভরাট গম্ভীর কণ্ঠস্বর আর সকলের চোখের মণি। পড়শী হবার সুবাদে আজন্ম অভ্রকে দেখে আসছে তিথি। প্রেমে কবে পড়েছিল সেই দিনক্ষণ জানা নেই তিথির কিন্তু বুঝতে পেরেছিল সেদিন যেদিন অভ্র মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে চলে গিয়েছিল অভ্র। তিথি ভাবতেই পারে নি যে এত তীব্রভাবে ভালবাসে অভ্রকে। অভ্র চলে যাওয়ার পর বুঝতে পেরেছিল যে কেন তিথি পারা অংক আবার বুঝতে যেত অভ্রর কাছে। অভ্রদা যখন কাঁধে ব্যাট নিয়ে মাঠ থেকে ফিরতো, কেন তা দেখতে এত ভাল লাগতো। যখন অভ্রদা গীটার বাজিয়ে রাত্তিরবেলা গান গাইতো, কেন ইচ্ছে করতো জগত সংসার ভুলে শুধু নেচে যাই। সবই অর্থহীন ছিল এতদিন, অভ্রদা চলে যাওয়ার পর তিথি বুঝলো, এরই নাম ভালবাসা।

অভ্র যখন বাড়ি ফিরতো তখন তিথি ভয়ে অভ্রর সামনে যেত না। ভাবতো, তার দিকে তাকালেই অভ্র সব বুঝে যাবে। কিন্তু অভ্র বুঝেনি। এতখানি ভালবাসা নিয়ে তার জন্য যে মেয়েটি অপেক্ষা করছে তাকে চিনতে পারেনি। তারপরেও তিথি তাকে ভালবেসে গেছে। অভ্র কবে আসবে, কতদিন থাকবে বা কতদিন পর এসেছে সে নাড়িনক্ষত্র তিথির মুখস্থ। অভ্রর অনুপস্থিতিতে নাচই ছিল তার সব। তিথি এখন তরুণী কিন্তু অভ্র সামনে এলে সে যেন সেই ছোট্টবেলার তিথি যে এখনো অভ্রর জন্য ভালবাসার সমুদ্র বয়ে বেড়াচ্ছে।

-“যাই তিথি। ভাল থেকো।” অভ্র বললো।
-“ঠিক আছে। বাড়িতে এসো কিন্তু।” কল্পনার রাজ্য থেকে ফিরলো তিথি।
– “আসবো।” বলে চলে গেল অভ্র।

যেতে যতে অভ্রর কথা ভাবছিল তিথি। অভ্রর বিয়ের কথাবার্তা চলছে। “তোকে কিন্তু বিয়েতে নাচতেই হবে।” বলছিল অভ্রর মা। সবাই বেশ খুশি। পাত্রী ডাক্তার। বর-বৌ কে একসাথে খুব মানাবে বলছিল অভ্রর কাকীমা। বৌ যে অভ্র নিজেই পছন্দ করেছে। খারাপ হবেই বা কেন! তাছাড়া অভ্রকে পেতে হলে শিক্ষিতা হতে হয়, সুন্দরী হতে হয়, ধনী বাবার মেয়ে হতে হয়। অভ্রর মত ছেলেরা যা চায় তাই পায়। তাদের জন্মই তো হয়েছে সুখে থাকার জন্য। কষ্ট তো পায় তিথিরা। মনের মাঝে ভালবাসার মন্দির বানিয়ে সেই মন্দিরের ভগবান কে আরেকজনের হাতে তুলে দেয়। বুকের মাঝে ব্যাথা আর চোখের কোণে জল নিয়ে কাটিয়ে দিতে হয় জীবনের অনেকটা সময়, অনেকটা কাল।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত