-ঠাশ একটা প্রচন্ড শব্দে ক্যাম্পাসের সবাই নাসিম এবং সাঞ্জিদার দিকে তাকালো। সাঞ্জিদার হাতের তালু এখনো চুলকাচ্ছে তার মানে চড়টা অনেক জোড়েই সে মারছে। ক্যাম্পাসের সবাই অবাক হয়ে এখনো তাদের দিকে তাকিয়ে আছে,তারা যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। যে ছেলেকে দেখে পুরা ক্যাম্পাসের সবাই ভয় করে আর তাকেই সবার সামনে চড়,যা হজম করতে সকলের একটু কষ্টই হচ্ছে। নাসিমের গালে হাতের পাঁচটা আংগুলের দাঁগ স্পট বুঝা যাচ্ছে। নাসিমের দিকে তাকাতেই সাঞ্জিদা দেখতে পেলো নাসিম অনেকটা হিংস্র বাঘের মতো তাকিয়ে আছে।
নাসিম এবং সাঞ্জিদা দুজনই একই ভার্সিটির স্টুডেন্ট। নাসিম সাঞ্জিদার চেয়ে দুই ব্যাচ সিনিয়র। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পরে নাসিম। কর্মনিষ্ঠা,সৎ, দায়িত্ববান সকলের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় খুব সহজেই পুরা ক্যাম্পাসে জনপ্রিয় হয়ে উঠে নাসিম। রাগ একটু বেশী হওয়ায় সবাই একটু তাকে সমীহ করেই চলে। অন্যদিকে খুবই চঞ্চল টাইপের মেয়ে সাঞ্জিদা,,সারাদিন তার দুস্টামি,ফাজলামি করতেই চলে যায়। কাজে-কর্মে যেমন ফাজিল রূপে গুণেও ঠিক তেমন সৌন্দর্যময়ী। মোটা ফ্রেমের চশমার আড়ালে কিউট চেহারার ইনোসেন্ট টাইপের মেয়ের মধ্যে যে এতোটা ফাজলামি আর শয়াতানি থাকে তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।
দেখতে অপরুপ সুন্দরী হওয়ায় ভার্সিটির অনেকেই সাঞ্জিদাকে প্রপোজ এবং ডির্স্টাব করা শুরু করে। বারবার মানা করা সত্ত্বেও যখন কাজ হলো না তখন বিকল্প পথ খুঁজলো সাঞ্জিদা। ফ্রেন্ডসার্কেল থেকে শুনেছে ক্যাম্পাসে নাসিম ভাইয়ের অনেক প্রভাব। তাকে সবাই অনেক ভয় করে, যদি সে সবাইকে নাসিমের হবু বউ হিসেবে পরিচয় দেয় তাহলে আর কেউই তাকে ডির্স্টাব করার সাহস পাবে না কথাটা ভেবেই এক প্রশান্তির হাসি দিলো সাঞ্জিদা।
যেই ভাবনা সেই কাজ,,যেই সাঞ্জিদাকে প্রপোজ করতে আসে, তাকেই সে নাসিমের হবু বউয়ের পরিচয় দেয়। পুরা ক্যাম্পাসে যেহেতু নাসিমের খ্যাতি আছে তাই কথাটা ছড়িয়ে পড়তেও দেরি হলো না। সবাই এসে নাসিমকে বলতে লাগলো ভাই ভাবি এই ভার্সিটিতে পড়ে একবারো বললেন না। আবার যারা সাঞ্জিদাকে ডির্স্টাব করেছিলো তাদের অনেকেই এসে নাসিমের কাছে ক্ষমা চেয়ে যাচ্ছে।নাসিম এইসবের কিছুই বুঝতে পারছে,কিসের ভাবি,কিসের ডির্স্টাব সব কিছুই যেনো তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে কাউকে কিছু জিজ্ঞাস করলেই বলে ভাই আমরা সব জানতে পারছি এখন আর লুকে লাভ নাই। বিয়ের দাওয়াত পাবো কবে ভাই!!!
পরে সাঞ্জিদার কাহিনী শুনে প্রকৃত সত্য বের করার জন্য ছদ্য বেসে নাসিম নিজেই যায় সাঞ্জিদাকে প্রপোজ করতে। সাঞ্জিদাকে দেখেই নাসিম তার প্রেমে পড়ে যায়, যার ফলে নকল প্রপোজ করতে যেয়ে মন থেকেই প্রপোজ করে বসে কিন্তু সাঞ্জিদা নাসিমকে ফিরিয়ে দেয় এবং তার ভুলের জন্য নাসিমের কাছে ক্ষমা চায়। নাসিমের এটিটিউড একটু হাই লেভেলের যার ফলে জীবনের প্রথম প্রপোজ ব্যর্থ হওয়ায় সেই বিষয়ে আর এগোয়নি। এইভাবেই সময় চলতে থাকে মাঝে মাঝে সাঞ্জিদা নাসিমের সামনে পড়লে নাসিম সুন্দর ভাবেই তাকে এড়িয়ে যেতো যদিও কয়েকবার সাঞ্জিদা তাকে কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু নাসিম বলার সেই সুযোগই দেয়নি।
কয়েকদিন ধরেই নাসিমকে একটা মেয়ের সাথে দেখা যাচ্ছে। ক্যান্টিনে এক সাথে খাওয়া আবার গতকাল তাকে এবং নাসিমকে একসাথে রিকশায় হেসে হেসে যেতে দেখেছে।যার ফলেই আজ এই কান্ডটা করে বসলো সাঞ্জিদা। ক্যাম্পাসে বসে ছিলো নাসিম আর সোজা সেখানে গিয়ে কোনো কথা না বলেই নাসিমের গালে ঠাশ করে চড় মেরেছে। নাসিম দাঁড়িয়ে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো প্রব্লেম কি তোমার হ্যা?? তুমি কোন সাহসে আমার গাঁয়ে হাত তুললা??
সাঞ্জিদা উল্টা আরো রাগ দেখিয়ে নাসিমের শার্টের কলার টেনে ধরে বললো সাহসের কি দেখছেন?? ক্যাম্পাসের সবাই আপনাকে ভয় পেতে পারে আমি না,,প্রপোজ করলেই যে প্রথম বারেই এক্সেপ্ট করতে হবে তার কোনো মানে আছে,একটু তো সময়ও দেয়া যায়,,,এতোটা আনরোমান্টিক মানুষ হয় কিভাবে??সব মেয়েরাই চায় তার বফ তাকে আদর দিয়ে রাগ ভাংগাক,সে অভিমান করলে নানা উপায়ে তাকে বুঝানো,তার সকল প্রিয় জিনিস দিয়ে তার অভিমান দূর করে ভালোবাসার পরশ দেয়া আর আপনি কি করলেন আমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিলেন, কেনো আমারো তো চাওয়া থাকতে পারে যে আমার বফ আমকে রাজী করানোর জন্য কতোকিছু করবে আমি মানা করলেও বারবার আমাকে প্রপোজ করবে আর সেই দিন আমি ইচ্ছা করেই রিজেক্ট করেছিলাম,, দেখতে চেয়েছিলাম যে আপনি আমাকে কতোটা ভালোবাসেন, আর আপনি কি করলেন,,দুদিন পড়েই আর একটা মেয়েকে নিয়ে ঘুরাঘুরি করা শুরু করে দিলেন, ছিঃ এই আপনার মনমানষিকতা??
সাঞ্জিদার কথা শুনে নাসিম হাসবে কিনা রাগ হবে কিছুই বুঝতে পারছে না। তখন পাশে থাকা নাসিমের এক ফ্রেন্ড বললো তুমি কি তিশার কথা বলছো নাকি?? তিশা তো নাসিমের ছোট বোন।
কথাটা শুনেই সাঞ্জিদা অনেক লজ্জা পেয়ে গেলো, মেয়েটি নাসিমের ছোট বোন আর সে কি না কি ভেবে এইসব কান্ড করলো।
থাক আর লজ্জা পেতে হবে না, তুমি কেমন ডাইনি তা ক্যাম্পাসের সবাই দেখে ফেলেছে বলেই হাটু গেড়ে নাসিম বলতে লাগলো,,ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি কথাটা মুখে বলতে বলতে হাপিয়ে উঠলেও,আমার ভালোবাসা কখনো হাপিয়ে উঠবে না,,কথা দিচ্ছি যতোদিন এ দেহে আছে প্রাণ, তোমার ভালোবাসা নিয়েই ব্যস্ত থাকবে আমার সর্বজ্ঞান।
নাসিম প্রপোজ করার সাথে সাথেই সাঞ্জিদা নাসিমকে জড়িয়ে ধরে, আর ততোক্ষণে পুরা ক্যাম্পাস হাত তালির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে। জগতে ধরা দিলো নতুন এক কাপল নতুন এক ভালোবাসার উদাহরণ হিসেবে আর পাশে থাকা সকলে যেন তা সাদরে বরণ করে নিলো। ভালোবাসার সৈনিক গুলা যে সকলের কাছে ভালোবাসার পাত্র হয়ে থাকে তা আবারো সকলে জানান দিলো।