উনিশ শতকের মধ্যভাগ। কমল, তাহার কোমল হৃদয় লইয়া খুঁজিয়া ফিরিতেছিলভালবাসার সংগা ।
নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করিতেছিল,”সখী ভালবাসা কারে কয়?” কমল, কনকচাঁপাকে জিগ্গাসা করিল, নীল আকাশের দিকে তাকাইয়া উত্তর খুঁজিল,এমনকি কামিনীর সুগন্ধকেও জিগ্গাসা করিল। মনমত উত্তর না পাইয়া অবশেষে কুলুংগীতে রাখা আরশীকেও জিগ্গাসা করিল। আরশী নীরব রহিল। কমল কি করিবে বুঝিতে না পারিয়া, নিজের দূর্ভাগ্যের কথা ভাবিতে বসিল।
কমলের দরিদ্র পিতা ধর্মচ্যুত হইবার ভয়ে তড়িঘড়ি করিয়া নরকের জীব তুল্য গগণের সহিত কমলের বিবাহ দিয়াছিল।যাক পিতা তো বাঁচিল! আর সেই নরকের ঘৃন্য জীবটি বিবাহের ঠিক ৬ মাসের মাথায় কমলকে বেচিয়া দিল জনৈক নকূল বাবুর কাছে। মধ্যবয়সী ধনী নকূল বাবু ,আভিজাত্য বজায় রাখিতে, অর্ধস্ফুট কমলকে রক্ষিতা করিয়া, কলিকাতার বাগবাজারের একটি বাড়িতে রাখিয়া দিল। কিন্তু নকূল বাবুর হৃদয়ে কী কমলের স্থান ছিল? কিংবা কমল কি তাহাকে ভালবাসিতে পারিয়াছিল? না, শুধু মাত্র বাসনা চরিতার্থের জন্য, আর আভিজাত্য বজায় রাখিতে কমলের কাছে আসিত নকূল। আর কমল প্রতিনিয়্ত অসহনীয় মনবেদনা লইয়া তাহাকে গ্রহণ করিত। আর ভাবিত, ” কি দূর্ভাগ্য আমার!পর পর ২টি নরকের জীব আমার কপালে! সমাজে আমার স্থান নাই, একাকিত্ত যে আমাকে প্রায় খাইয়া ফেলিল “
অবশেষে এক্দিন কমল , তাহার সমস্যার সমাধান খুঁজিয়া পাইল। ভাবিল, “কল্পনার সাগরে ডুবিয়া দেখি,ভালবাসা খুঁজিয়া পাই কিনা।”
পাঠক, চলুন একবার ঘুরিয়া আসি কমলের কল্পনায়।
কমল ভাবিতেছিল একটি নদী তটের কথা।তটের কাছেই তাহার কুটির।কুটিরে তাহার একাকি বাস।শ্বেতকমলের মত কমল, সুবসনা হইয়া প্রায়ই নদীতটে অবসর কাটায়। একদিন ঘন কুয়াশায় ঢাকা শীতের সকালে, তীর ধরিয়া সে হাঁটিতেছে। কুয়াশার চাদর ঠেলিয়া আগানো কষ্টকর হইলেও সে বেশ সুখবোধ করিতেছে । ভাবিল একেই বোধহয় ভালবাসা বলে। হঠাৎ তাহার দেখা এক সৌম্য দর্শন যুবা পুরুষের সাথে। কমল ভাবিল _হায়! ইহার কথাইত আমি স্বপ্নে ভাবি!মৌন ও শান্ত সম্ভাষণ জানাইয়া যুবাটি চলিয়া গেল। কমল শিহরণ বোধ করিল,ভাবিল ইহাই কি ভালবাসা? তাহার পর প্রায় প্রতিনিয়ত যুবকের সাথে দেখা হইতে লাগিল। হৃদ্দতা বাড়িল। কমল কল্পনায় ভালবাসিতে শিখিল।