আমার দ্বিতীয় বর

আমার দ্বিতীয় বর

মারিয়াঃ আম্মু আম্মু বাবাই আইছে বাবাই আইছে ।

আমিঃ কোথায় আম্মু ?

মারিয়াঃ দাদুর রুমে ।

আমিঃ ওহ ।

মারিয়াঃ জানো আম্মু বাবাই না কত খারাপ হয়ে গেছে ( মন খারাপ করে )

আমিঃ মানে ?

মারিয়াঃ বাবাই একদম শুকিয়ে গিয়েছে দেখতে কত পচা লাগছে ।

আমিঃ চলো তোমার বাবার কাছে ।

মারিয়াঃ হুম চলো ।

মারিয়াঃ বাবাই তুমি পচা পচা ।

জুনায়েদঃ কেনো আম্মু আমি কি করলাম ?

মারিয়াঃ হু তুমিই তো পচাই দেখতে কত পচা লাগছে ( জুনায়েদে কে জড়িয়ে ধরে)

জুনায়েদঃ ওহ এই দেখো আম্মু আমাকে কত সুন্দর লাগছে । আ

মারিয়াঃ আম্মু আম্মু দেখো বাবাই মিথ্যা কথা বলে ।

আমিঃ হুম তোমার বাবার মার দিবো ।

মারিয়াঃ কি কইলা তুমি আমার বাবাই কে মারবা কেনো হু ?

আমিঃ তোমার বাবাই তো মিথ্যা কথা বলে তাই ।

মারিয়াঃ আমার বাবাই আমাকে মিথ্যা কথা বললে তোমার কি ?

আমিঃ ওহ তাই নাকি ।

মারিয়াঃ হুম …

আমিঃ তোমার বাবাই কে ফ্রেশ হয়ে খেতে আসতে বলো ।

মারিয়াঃ আচ্ছা তুমি যাও একটু পর বাবাই এর সাথে আসছি ।

আমি ফারজানা জুনায়েদ এতোখন যার সাথে কথা বললাম সে হলো আমার পিচ্ছি মেয়ে মারিয়া আর জুনায়েদ হলো আমার ২য় স্বামী , বুঝেন নাই আপনারা তাই না । জুনায়েদ হলো জাহিদের ছোট ভাই । জাহিদের সাথেই আমার বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু বিয়ের ৭মাস পরে জাহিদ মারা যায় । জাহিদের সাথে আমার বিয়েটা হয়েছিলো পারিবারিক ভাবেই । পারিবারিক ভাবে বিয়ে হলেও জাহিদ কে আমি অল্প দিনেই ভালোবেসে ফেলি আর জাহিদও আমাকে পাগলের মত ভালোবাসতো । জাহিদের বুকে ছাড়া আমি একদিনও ঘুমাইতাম না । প্রতিদিন জাহিদ আমাকে খাইয়ে দিতো । জাহিদের পরিবারের সবাই আমাকে খুব ভালোবাসতো আর জুনায়েদ ছিলো জাহিদের প্রায় ১০ বছরের ছোট ছিলো আর আমি আর জাহিদ ছিলাম সেম ইয়ার । আমাদের মধ্যে ছিলো সেই রকম মিল কে কি চাই আমরা সেটা খুব সহজেই বুঝে যেতাম । জুনায়েদ তখন ডিপ্লোমা পরতো কুষ্টিয়া থেকে। যত দিন বাসায় থাকতো ততো দিন ভাবি ভাবি করে মাথাই করে রাখতো বাড়ি টা ।

জুনায়েদ বাড়িতে থাকলে আমার হাতে ছাড়া খাবার খেতোনা । শশুর শাশুড়ি যে এতো মানা করতো যে লোকে দেখলে খারাব ভাববে কিন্তু কে শুনে কার কথা আমার হাতে ছাড়া নাকি খাবেইনা। মাঝে মাঝে বলতাম। কুষ্টিয়া কিভাবে থাকো আর কিভাবে খাবার খাও তখন জুনায়েদ কান্না করে দিতো তাই আর কিছু বলতাম না । আমি যদি বলতাম বিয়ের পরে তো ভাবির হাতে আর খাবার খেতে পারবেনা তখন জুনায়েদ বলতো তোমার মতো একটু লক্ষি বউ নিয়ে আসবো আর তোমার সাথে বন্ধু করে দিবো তখন তোমরা দুই জন আমাকে খাইয়ে দিবে । আমিও খুশি হয়ে ওকে খাইয়ে দিতাম আমার তো ছোট ভাই ছিলোনা তাই ওকে খুভ ভালোবাসতাম ওর আব্দার গুলো পূরণ করার চেষ্টা করতাম । আমাদের দেবর ভাবির ভালোবাসা দেখে জাহিদ বলতো আমি খুভ ভাগ্যবান যে এমন একটা বউ আর ভাই পেয়েছি । জুনায়েদ কে অনেক মেয়ে প্রপোজ করে কিন্তু কাউকে পাত্তা দেইনা । আমি যদি বলি কেনো এমন করো ও বলে তোমার মত মেয়ে পেলে প্রেম করব তার আগে না।

আমি আর জাহিদ প্রতিদিন ছাঁদে উঠে চাঁদ তারা দেখতাম । জাহিদ আমার কোলে মাথা রেখে অনেক কথা বলতো । সেই স্বপ্ন গুলো একদিন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো যেই দিন জাহিদ রোড এক্সিডেন্টে মারা গেলো । আমি সেই দিন পৃথিবি থেকে বড় কিছু হারিয়ে ফেলেছিলাম । ১মাস আমি কথা বলতে পারছিলাম না আমার এমন অবস্থা হয়েছিলো । আমি যে কত বড় জিনিস হারিয়ে ফেলেছিলাম সেই দিন বুঝেছিলাম । সারা দিন আমি শুধু কান্না করতাম জাহিদ কে যে খুব ভালোবাসি । এই দিকে আমার গর্ভে জাহিদের বাচ্ছা । আমার ভেতর দিয়ে যে কি হচ্ছিলো আমি কিছুই বুঝতে পারতাম না । জুনায়েদ আমার পা ধরে সব সময় কান্না করতো আর সব সময় আমার রুমেই থাকতো যেনো আমার কোনো প্রবলেম না হয় । কিছু দিন পর আমার বাসা থেকে বাবা মা আরো অনেক লোক আসছিলো আমাকে নিয়ে যেতে কারন এখানে যার স্বামী নাই সে থেকে কি করবে কে দেখবে ।

জাহিদের বাবা মা আমাকে কখনোই যেতে দিতে চাইছিলো না আর এই দিকে তো জুনায়েদ কান্না শুরু করে দিয়েছে আমার বাবা মা কে বলছে প্লিজ ভাবি কে আপনারা নিয়ে যাইয়েন । ভাবির মধ্যে আমার ভাইয়ের সৃতিটুকো আছে তাকে থাকতে দিন ।আমাকে অনেক বোঝানো হলো যে এখানে থেকে তোর কস্ট ছাড়া কিছুই পাবিনা কিন্তু আমি তো জানি এই বাড়ির মানুষ গুলো কত আপন । জিনি আমার শশুর হনো তিনি প্রতিদিন আমার জন্য আইস্ক্রিম নিয়ে আসতো । তাহলে তাকে বাবা ছাড়া শশুর কিভাবে বলি । তিনি আমাকে তার নিজের মেয়ের মত করে দেখতো ।আমার জাহিদের মা তিনি তো আমার সাথে বান্ধবির মতো ব্যবহার করতো । তাহলে বলুন তাদের ছেড়ে র্সাথপরের মতো কিভাবে ছেড়ে যায় । আমার বাবা মা অনেক দিন এসে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছিলো আমি না করে দিয়েছিলাম তাই আমার বাবা মা বলেছিলো আমার বাসায়ও তোমার আর কোনো জায়গা নেই। দেখি তোমাকে এরা কত দিন রাখতে পারে।

বাবা মা এই কথা বলার ১মাস পরে যা শুনলাম অবাক না হয়ে পারলাম না । কথা টা হলো জুনায়েদের সাথে নাকি আমাকে বিয়ে করতে হবে। আমি খুব ভেঙ্গে পড়লাম আর এই দিকে জুনায়েদও বিয়ে করতে নারাজ । ও বলছে যে আমার ভাইয়া কে কস্ট দেওয়া হবে যদি ভাবি কে আমি বিয়ে করি । আমি আমার শাশুড়িকে বলেছিলাম প্লিজ আপনি এমন করেন না আপনার বাড়িতে আমি দাসি হয়ে থাকবো তাও জুনায়েদের সাথে বিয়ে করতে পারবনা । তিনি কোনো কথা না বলে সোজা আমার দুই পা চেপে ধরে যেটার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না । উনি আমার পা ধরে কান্না করে বলে ,আমি আমার ছেলে কে হারিয়েছি কত বড় ব্যাথা সেটা মা ছাড়া কেউ বুঝতে পারবেনা । তোমার গর্ভে আমার জাহিদের সন্তান আছে তাকে তুমি পৃথিবীতে আসতে দাও । জুনায়েদ খুভ ভালো ছেলে আর তুমি তো জানোই প্লিজ মা তোমার দুই পা ধরি আমাদের কথা টা রাখো ।

আমি এমন অবস্থায় ছিলাম কিছুই বুঝতে পারিনা । আমার পা ধরেছে জিনি আমার মায়ের বয়সি । মানুষ কত টা খারাপ অবস্থায় থাকলে তার ছেলের বউ এর পা ধরে সেটা যদি না দেখতাম তাহলে বুঝতাম না । আমি আমার শাশুড়ি মা জড়িয়ে ধরে শুধু করে গেছি। প্রায় ৫মিনিট উনাকে জরিয়ে ধরে কান্না করেছিলাম । মনের সাথে যুদ্ধ করে বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম আমার চেয়ে ৭-৮ বছরের ছোট জুনায়েদের সাথে । জুনায়েদ ও আমাকে বিয়ে করতে রাজি ছিলোনা যখন দেখলো যে আম্মু আমার পা জড়িয়ে ধরেছে তখনি ও রাজি হয় । আমার গর্ভে একজন বড় হচ্ছে মাঝে মধ্যে সেটা বুঝতে পারি যখন বেবি টা একটু নড়াচড়া করে । ২দিন পরে আজকে আমাকে সাজানো হয়েছে আর আমাকে সাজিয়েছে আমার শাশুড়ি আম্মু ।সাজানো মানে সেই সাজানো না শুধু উনি আমাকে নতুন পোশাক পরিয়ে দিয়েছে একটা বড় ঢিলেঢাল পোশাক । কারন আমার গর্ভে যে জাহিদের সন্তান আছে ।

৫-৬জন মানুষ কে ডেকে নিয়ে আমাদের বিয়ে টা দিয়ে দেওয়া হলো । যখন কাজী সাহেব কবুল বলতে বললো তখন মনে হচ্ছিলো আমাকে কেউ হাতুড়ি দিয়ে পিটাচ্ছে ।প্রায় ১০মিনিট কান্না করে কবুল বলেছিলাম। জুনায়েদ ও মন খারাপ করে ছিলো । আজকে বিয়ে হয়েছে কিন্তু বাসর ঘর তেমন না শুধু ছিলো কিছু ফুলের পাপড়ি আর এই গুলো আমার শাশুড়ি আম্মুই রেখেছে । বিয়ে হওার পর থেকে জুনায়েদ আর আমার সাথে কথা বলেনা । অনেক কথা বলার চেষ্টা করি কিন্তু কথা বলেনা । কিন্তু ঠিকি আমার খোজ খবর রাখে আম্মুর আর আব্বুর মাধ্যেমে । জুনায়েদ থাকত এক রুমে আমি থাকতাম আরেক রুমে । মাঝে মধ্যে শুনতাম শাশুড়ি আম্মু জুনায়েদ কে বলতো ফারজানার সাথে কথা বলতে প্রবলেম কোথায় কিন্তু জুনায়েদ তখন বাসা থেকে বের হয়ে যেতো।

আর আমিও চাইতাম না আমার আর জাহিদের ভালোবাসার ভেতর জুনায়েদ আসুক । চাইতাম না জুনায়েদ আর আমার মধ্যে কোনো শারীরিক সর্ম্পক হোক । আমি ওকে শুধু ছোট ভাই মানতাম । এক দিন আমার শাশুড়ি আম্মু জুনায়েদের কাছে হাত জোর করে বলছে প্লিজ জুনায়েদ তুই ফারজানার সাথে কথা বল। মেয়েটা স্বামী হারিয়ে অনেক কস্টে আছে আর তোর ভাইয়ের সন্তান তার গর্ভে । সেই দিন আম্মু অনেক কান্না করেছিলো । মাঝে মধ্যে দেখাম শশুর আব্বু মন খারাপ করে থাকতো ঠিক মত খাবার খেতোনা । জুনায়েদ আর আগের মত নেই একদম পালটে গেছে । যেই জুনায়েদ আমার হাতে ছাড়া খাবার খেতো না সেই জুনায়েদ ভুলেও আমার সাথে কথা বলেনা এটা দেখে কষ্ট লাগতো কিন্তু কোন দিন ওকে স্বামী হিসাবে মানতে পারবনা। কিছু দিন পরে আমার প্রসব ব্যাথা উঠে । আমাকে হাঁসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

হাঁসপাতালে যাওয়ার অটিতে আমি সেন্স হারিয়ে ফেলি আর যখন সেন্স ফিরে তখন দেখি জুনায়েদ আমার হাত ধরে আমার বেডের পাশে ঘুমিয়ে আছে । চোখের কোনাই দেখি কালো হয়ে আছে । আমি যখন আমার হাত টা একটু টান দেই তখন জুনায়েদ আমার হাত ছেড়ে বাহিরে চলে গেলো কোনো কথা না বলে । তারপর দেখি আব্বু আম্মু একটা ছোট ফুটফুটে বাচ্ছা নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করলো । আমার বুকের ওপর দিয়ে বললো আমাদের জাহিদের মেয়ে হয়েছে মা । আবার জাহিদের কথা মনে পড়ে গেলো কিন্তু কান্না করলাম না কারন জাহিদের কিছু আমার বুকের ওপর শুয়ে আছে । হাঁসপাতাল থেকে চলে আসার পর দেখি জুনায়েদ আমার অনেক খেয়াল রাখে আর আমার পুচকে মেয়েটাকে সব সময় ও কোলে রাখে কাউকে দেইনা। আমার খেয়াল রাখে কিন্তু আমার সাথে কথা বলেনা । দিন দিন জুনায়েদ আমার সাথে মিশে যাচ্ছে এখন একটু একটু কথা বলে কিন্তু আমি বলিনা । কি করে বলি বলেন আমি যে এখনো জাহিদ কে অনেক ভালোবাসি।

আমি এতোটাই অসুস্থ হয়ে গেছি যে অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারিনা। জুনায়েদ প্রথমে আমাকে টাস করতে চাইতো না কিন্তু ইদানিং দেখি আমাকে বিছানায় থেকে উঠেয় খাইয়ে দেই । আমি এখন ওকে অনেক অপমান করি যে বলি তোমার ভাইয়ার ভালোবাসার ভাগে তুমি প্লিজ ভাগ বসিও না কিন্তু ও কিছুই বলতোনা শুধু মিট মিট করে হাসতো । খেতে চাইতাম না তাও জোর করে খাইয়ে দিতো । কিছুদিন পরে দেখি মেয়েটাকে মারিয়া মারিয়া বলে ডাকে । জুনাদের দেখাদেখি এখন সবাই মারিয়া নামে ডাকে । জুনায়েদ কে একটু সয্য করতে পারতাম না ওকে অনেক খারাপ কথা বলতাম কিন্তু ও কিছুই বলতোনা । আমি জানি এই পেছনে আমার আম্মুর আব্বুর হাত আছে । আমার বেবি হওয়ার পরে আমার বাড়ি থেকে বাবা মা এসেছিলো কিন্তু আমি তাদের অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম । তাদের বলেছিলাম তোমাদের মেয়ে মরে গেছে । বাবা মা আর আসেনা । তখন থেকে জাহিদের বাবা মা কেই আব্বু আম্মু ডাকি । তারা যে কত ভালো মানুষ তাদের সাথে না থাকলে বুঝতাম না ।

আর এই দিকে জুনায়েদ মারিয়াকে নিয়ে সব সময় মেতে থাকে আর আমার খেয়াল রাখার বিষয় টা একদম ভুল করে না । জুনায়েদ যে আমার কাছে আসার চেষ্টা করছে সেটা ভালো করেইবুঝতে পারছি কার জন্য আর তিনি হলো আম্মুর জন্য । আম্মুই জুনায়েদ কে বলেছে যে আমাকে যেনো স্ত্রীর মর্যাদা দেই । জুনায়েদ আগের চেয়ে আরো বেশি কাছে আসার চেষ্টা করে কিন্তু আমি ওকে অনেক খারাপ কথা বলি তাও ও কিছু মনে করেনা । আমিও আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে গেলাম । এখন আমার মেয়েকে নিয়ে ভালোই আছি । আমি আর মারিয়া ঘুমিয়ে ছিলাম কিন্তু দেখি কে যেনো আমাকে জরিয়ে ঘুমিয়ে আছে আমার বুঝতে বাকি রইলোনা কে হবে । জুনায়েদ কে কসে একটা থাপ্পড় মেরে দিলাম । আর বললাম অন্যের বউকে টাস করতে তোর লজ্জা করেনা ।

তোকে বলিনাই যে তোকে আমি কোনো দিন স্বামী হিসাবে মানতে পারবনা তাও কেনো আমার কাছে আসার চেষ্টা করিস । জুনায়েদ তখন বলে তোমার সাথে তো আমার বিয়ে হয়েছে তাইনা ।আমি তখন বলি এই বিয়ে আমি মানিনা আর জাহিদ কে ছাড়া আমি কাউকে স্বামী হিসাবে মানিনা । জুনায়েদ আমার হাত ধরে বোঝানোর চেষ্টা করলো তখনি আমি আবার সোজরে কসে ঠাপ্পড় মারলাম । দেখি জুনায়েদের চোখ থেকে জল পড়ছে । মারিয়ার কপালে চুম্মু দিয়ে ও রুমি থেক বেরিয়ে গেলো । ঘুম থেকে উঠে শুনলাম জুনায়েদ নাকি সকালের বাসে ঢাকায় চলে গেছে বি এস সি করতে ।এটা শুনে আমারো একটু খারাপ লাগলো যে আমার জন্য ছেলেটা বাসা ছেড়ে চলে গেলো । ও চলে যাওয়ার পর ওকে খুব মিস করতে লাগলাম যেই মানুষ টা আমার খেয়াল রাখতো মারিয়াকে আম্মু আম্মু বলে পুরা বাড়ি মাতিয়ে রাখতো । আস্তে আস্তে জুনায়েদের কথা ভাবা শুরু করলাম । জুনায়েদ বাসায় ফোন দিতো কিন্তু আমার সাথে কথা বলতো না ।

আব্বু আম্মুও বুঝতে পারতো জুনায়েদ এমন করে কেনো তারাও আমার বিষয় টা বুঝতো তাই কিছু বলতো না । জুনায়েদে নাম্বারে ফোন করলে আমার সাথে কথা বলতোনা । আব্বু আম্মু বাড়িতে আসতে বললে ৭দিন কথা বলা বন্ধ করে দিতো তাই আব্বু আম্মুও আর বাড়িতে আসার কথা বলেনা । মারিয়াও আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে আর কথা বলছে । যখন বাবা বাবা বলে তখন জাহিদের কথা খুব মনে পড়ে । ৫ বছর হয়ে গেছে তাও জুনায়েদ আজ পর্যন্ত বাড়িতে ফিরে আসেনি। মাঝে মধ্যে আব্বু আম্মু দেখা করে আসতো । আমি যেতে চাইলে জুনায়েদ মানা করে দিতো । তাই আব্বু আম্মুও আর জোর করতো না । তবে জুনায়েদ মারিয়ার সাথে প্রতিদিন ভিডিও কলে কথা বলে । মারিয়া বাবাই বাবাই করে পাগল থাকে আর জুনায়েদ আম্মু আম্মু বলে । মারিয়া জুনায়েদ কে বলে আব্বু তুমি বাসায় আসবা কবে কিন্তু জুনায়েদ কোনো কথা বলে না অন্য কথা বলে । মারিয়া প্রতিদিন বলে আব্বু তুমি কবে আসবা ।। মেয়েটাও জুনায়েদে জন্য পাগল হয়ে গেছে ।

জুনায়েদ কে আনার জন্য আম্মু একদিন বুদ্ধি বের করলো বললো যে মারিয়াকে কিছু দিন কথা বলতে দিতে হবেনা আর তখন জুনায়েদ জানতে চাইবে কথা বলেনা কেনো তখন মিথ্যা কথা বলতে হবে যে মারিয়া খুব অসুস্থ তাহলে জুনায়েদ ছুটে চলে আসবে। আমিও যে জুনায়েদ কে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি তবে জাহিদ কে ভুলিনাই। মারিয়ার অসুস্থ হবার কথা শুনে জুনায়েদ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসে। এতোক্ষন কথা গুলো ভাবতে ছিলাম তখনি দেখি আব্বু আম্মু মারিয়া আর জুনায়েদের আগমন। তারপর সবাই খাবার জন্য বসে পড়লো ।

মারিয়াঃ আম্মু তাড়াতাড়ি খাবার দাও বাবাই এর অনেক খিদে লেগেছে।

আমিঃ নাহ তোমার বাবাই পচা তাই খাবার দিবোনা ।

মারিয়াঃ উহ তুমি পচা বাবাই অনেক ভালো ।

আমিঃ তোমার বাবাই অনেক পচা তাই খাবার দিবোনা (বলেই মারিয়ার প্লেটে খাবার দিলাম কিন্তু জুনায়েদ কে দিনাই)

মারিয়াঃ আম্মু তুমি খুব পচা বাবাই কত দূর থেকে এসেছে আর তুমি খাবার দিচ্ছোনা। আমাদের কথা দেখে আব্বু আম্মু হাসছে আর জুনায়েদ মুখ বন্ধ করে বসে আছে।

আমিঃ তাই নাকি ?

মারিয়াঃ হুম। বাবাই তুমি হা করতো

আমি খাইয়ে দিচ্ছি(মারিয়া ওর প্লেট টা নিয়ে টেবিলের ওপর উঠে জুনায়েদের কাছে গেলো) আমার পুচকে মারিয়া ছোট ছোট হাতে ভাত মাখিয়ে জুনায়েদ কে খাইয়ে দিচ্ছে আর জুনায়েদ কান্না করছে আর খাচ্ছে। জুনায়েদের কান্না দেখে আমি আর সেখানে থাকতে পারলাম না ছাঁদে চলে গেলাম।

রাত হয়ে গেছে আমি ছাঁদে আছি কিন্তু জুনায়েদ এক বারো আমার কাছে আসে নাই । তাই মনে ভেতর খুব রাগ উঠলো। ছাঁদে থেকে গিয়ে দেখি রুমের মধ্যে বসে আছে । সোজা গিয়ে চড় মেরে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। কিন্তু ওর কোনো রেন্সপন্স নেই যে আমি জড়িয়ে ধরেছি । তখন আমি কান্না করতে করতে বলি প্লিজ জুনায়েদ আমাকে মাফ করে দাও আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি আমার জন্য তুমি বাড়ি ছেড়ে চলে গেছো । প্লিজ আমায় মাফ করে দাও তোমার পা ধরে বলছি প্লিজ মাফ করে দাও (ওর পা ধরে) তখন আমায় উঠিয়ে কান্না করছে আর বলছে আমি কিছুই মনে করি নাই। আমি সাথে সাথে ওকে বুকে মুখ লুকালাম। মারিয়া কোথায় জিজ্ঞাসা করলাম তখন বললো আম্মুর রুমে ঘুমিয়ে গেছে।

জুনায়েদঃআমার না খুব খিদে লেগেছে ?

আমিঃকেনো তখন তো মেয়ে খাইয়ে দিলো আর তুমি কত ভালো করে খেলে।

জুনায়েদঃ তুমি চলে যাওয়ার পরে মারিয়া বলেছে আব্বু তুমি পচা তোমার জন্য আম্মু চলে গেলো তাই মারিয়াও চলে গেছে ।

আমিঃ আচ্ছা দাড়াও আমি খাবার বিয়ে আসছি ।

জুনায়েদঃ হুম ।

কিছুক্ষন পর

আমিঃ হা করো।

জুনায়েদঃ হুম। তুমি হা করো (দুজন দুজানে খাইয়ে দিচ্ছি) খাওয়াদাওয়া শেষে

আমিঃ চেহারা কি হাল করেছো?

জুনায়েদঃ চেহারা দেখার কেউ নাই যে।

আমিঃ কেনো ওখানে তো অনেক মেয়ে ছিলো প্রেম করো নাই ?

জুনায়েদঃ হুম করেছিলাম তোমার চেয়ে সুন্দর।

আমিঃ কি কইলা?

জুনায়েদঃ ঠিকি ত কইলাম।

আমিঃ দাড়াও দেখাচ্ছি মজা

ওকে বিছানায় ফেলে দিয়ে ওর বুকের ওপর বসে পড়লাম আর বললাম ওই ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করা আজকে খবর করেই ছাড়বো । ও উঠতে চাইছে কিন্তু আমার সাথে পেরে উঠছে না । দেখি ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি বললাম কি দেখো ও বলে ভাবিকে দেখি। তখনি মাথায় রক্ত উঠে গেলো । ভাবিকে দেখো তাই ঐ বউ বলবি বউ । ওকে জড়িয়ে ধরে পাপ্পি দেওয়া শুরু করলাম আর কিছুক্ষনের মধ্যে আমরা এক সুখের সাগরে চলে গেলাম।

সকালে জুনায়েদে বুকে ঘুমিয়ে আছি তখন মারিয়া এসে বলছে বাবাই তুমি খুব পচা আম্মুকে বুকে নিয়েছো আমাকে নাওনি কেনো তুমি পচা পচা। জুনায়েদ মারিয়াকে কাছে টেনে বুকে নিয়ে আমাকে আর মারিয়াকে জড়িয়ে ধরলো । তখন মারিয়া বলছে আম্মু যাও তুমি বাবাই এর জন্য ভালো করে রান্না করো আমি বাবাই এর বুকে ঘুমাবো । মেয়ের কথা শুনে সেই টাস্কি খাইলাম এইটুকো মেয়ে কেমন কথা বলছে এখন জুনায়েদ আমাকে অনেক ভালোবাসে আর আমিও ওকে অনেক ভালোবাসি । মাঝে মধ্যে জাহিদের গল্প করি আর জাহিদের কথা প্রথমে জুনায়েদ আগে বলে । আমি মানা করার পরেও বলে । এখন আমাদের সংসার ভালোই চলছে আর চলবেই না কেনো যার একটা ভালো বর আর সুইট কিউটের ডিব্বা মেয়ে থাকলে। আর এইভাবেই চলছে আমাদের সুখের জীবন।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত