‘মা’ কে বিয়ের আগেই বলেছিলাম,বাবাকে বলতে আমার রুমের খাট টা চেন্জ করে দিতে।খাট টা অনেক পুরনো হয়ে গেছে,আর এই খাট টা ছোট হওয়ায় এটাতে দুজন থাকা কষ্টকর হয়ে যায়।
মা’ বাবাকে কথাটা ঠিকি বলেছিল।কিন্তু ঝামেলাটা বাঝায় আমার শশুর মশাই।ওনি নাকি আমাদের কে নতুন ফার্নিচার দিবে।ফার্নিচার এর কাজ এখনো কমপ্লিট হয়নাই তাই তিনি বলেছেন তোমরা কয়েক দিন একটু কষ্ট করে থাকো।ফার্নিচার বানানোর কাজ কমপ্লিট হলেই আমি তোমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিব।
ওনি যদি ফার্নিচার গুলি বিয়ের আগে দিতেন তাহলে আজ আমাকে এই দিন দেখতে হতো না।
গতরাতে ছিল আমার আর কুমুর বাসর রাত,
কুমু হচ্ছে আমার বাবার বন্ধুর মেয়ে।বাবাই বিয়েটা ঠিক করেছিল।আমার কোন পছেন্দর মানুষ না থাকায় এই বিয়েটাতে আমি রাজি হয়ে যায়।
গতরাতে রুমে ঢুকতেই সদ্য বিবাহ করা বউটা
আমার পা ধরে সালাম করলো,এরপর চুপচাপ নিজের মত করে বিছানায় বসে আছে,আমিও কিছু বলার জন্য খুজে পাচ্ছিনা অপরিচিত একটা মানুষকে কিইবা বলার আছে। সময় শুধু বেড়েই যাচ্ছে দুজনই চুপচাপ,কিছুক্ষন পর তাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
–কুমু নাম টা খুব সুন্দর।
–ধন্যবাদ। আপনার নামটাও সুন্দর।
–মিথ্যা প্রশংসা করার জন্য ধন্যবাদ।
ছেলেদের দূর্বলতা কিসে আপনি
জানেন ?
–হ্যা জানি।
–কিসে ?
–মেয়েদের শরীরে।
–আমার ক্ষেত্রে হয়তো তা একটু ভিন্ন।
–যেমন ?
–আমার দূর্বলতা আপনার এ মেহেদী দেওয়া দুটা হাতে,আপনি যখন হাসেন আপনার গালে টোল পরে আমার দূর্বলতা আপনার এই গালে টোল পরা হাসিতে। আমার সবচেয়ে বেশি
দূর্বলতা কিসে জানেন ? আমার সবচেয়ে বেশি দূর্বলতা আপনার এ কাজল দেওয়া দুটা অপরূপ সুন্দর চোখে।
কুমু হয়তো এমন কিছু শুনার জন্য প্রস্তুত ছিলো নাহ,সে লজ্জা পেলো,লজ্জায় মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো।
হটাৎ বারান্দাটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ভেতরে প্রবেশ করা জ্যোৎস্নার মিষ্টি আলোটাও আমাদের এ বিশেষ রাতটার স্বাক্ষী হয়ে
থাকতে চাইছে।
কুমুকে বললাম,
–চাঁদ এর আলো আপনার পছন্দ ?
–অনেক বেশি।
–চাঁদ এর সাথে কখনও একা একা কথা
বলেছেন ?
–নাহ তা বলি নি কখনও।
চলুন বারান্দায় যাই,জ্যোৎস্নার আলোরসাথে কিছু সময় কাটিয়ে আসি।
আমি বারান্দায় চলে আসলাম,কুমু একটু পরই
ভয়ে ভয়ে আমার পিছে এসে দাড়ালো। বারন্দায় দুটা চেয়ার রাখা,একটাতে কুমুকে বসতে বললাম এরপর আমিও বসলাম।
মেয়েটা খুবই চুপচাপ স্বভাবের কথা কম বলে,হয়তো লজ্জায় কিংবা ভয়ে তা জানা নেই আমার।
অনেকটা সময় দুজনে একসঙ্গে চাঁদ দেখার পর রুমে চলে আসলাম।
রুমে এসেই কুমু বলল,
–আমি একটু ওয়াশ রুমে যাব,
–আমার রুমে এটাচ বাথরুম,আমি কুমুকে বাথরুমটা দেখিয়ে দিয়ে খাটে এসে শুইলাম।
ঠিক তখনেই কুমু চিৎকার দিয়ে এসে এক লাফে খাটের উপরে পরল। খুব জোরে ঠাস এরে একটা শব্দ হল।
তারপর চেয়ে দেখি আমি আর কুমু দুজনেই খাটের বিছানা ভেঙে নিচে পরে আছি, কুমুর চিৎকার আর খাট ভাঙার শব্দে বিয়ে বাড়ির সবাই এসে আমাদের দরজায় খট খট আওয়াজ করছে আর জিজ্ঞাস করতেছে কি হয়েছে,
কুমু পরে গিয়ে কোমরে খুব ব্যথা পেয়েছে তাই ইশশশ, ও বাবা, কি ব্যথা, মরে গেলাম,
এসব বলে চিৎকার করতেছে
আমিও কোমরে ব্যথা পেয়েছি, তাও উঠে গিয়ে দরজা খুললাম।দরজা খুলতেই একে একে সবাই এসে রুমে ডুকে পড়ল।
কিভাবে এমন হল তা জিজ্ঞাস না করে সবাই মিট মিট করে হাঁসছে।এটা দেখে আমি অবাক হলাম।
এসবের ভিতর দিয়ে হটাৎ চোখ চলে গল বাবার দিকে।চেয়ে দেখি বাবা আমার দিকে রাগী একটা লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।আমার চোখ বাবার চোখে পড়তেই।
বাবা বলল,
“রাম ছাগল একটা”
এটা বলেই বাবা এখান থেকে চলে গেল।বাবার সাথে সাথে ‘মা’ও এখান থেকে চলে গেল।কিন্তু মা কিছু বলেনি।
ঠিক তখনেই আমার বড় দুলাভাই ‘মানে আমার বড় আপুর জামাই আমার কানে কানে এসে বলল সবকিছুই রয়ে সয়ে করতে হয় তারাহুরা করলে এমনই হয়।
যাহ্ বাবা আমি আবার কি করলাম।
বড় দুলাভাই বলে শেষ না করতেই ছোট দুলাভাই বলল,
এটা কি করলা, প্রথম দিনেই খাট ভেঙে দিলা।এটা কি ক্রিকেট খেলা নাকি,যে যত ইচ্ছা তত গতিতে বল করবা।
এখানে ক্রিকেট খেলার কথা আসলো কোথায় থেকে।ওনার কথা আমি কিছুই বুঝলাম না।
সবাই চলে যেতেই বিছানাটা ফ্লোরে করলাম।আজকে রাতে নিচেই থাকবো, ছোট বোন বলেছিল তার রুমে চলে যেতে।সে মায়ের সাথে থাকবে।কিন্তু আমিই যাই নি।
বিছানাটা করে,বিছানায় শুতেই কুমু আবার বলল,
–আমি ওয়াশ রুমে যাবো।
–না ওয়াশ রুমে যাওয়ার দরকার নেই।
–কেন ?
–একবার ওয়াশ রুমে যাওয়াতেই এই অবস্থা হয়েছে।আবার গেলে যে কি হবে ওটা আমি এখন কল্পনাও করতে চাই না।
–তাই বলে আমি এখন ওয়াশ রুমে যাব না।
–তা তো ঠিকই ওয়াশ রুমে যাওয়া ছাড়া কি থাকা যায় নাকি, ওকে যাও তাহলে
কুমু ওয়াশ রুমে যতেই আমি কানে হেড ফোন লাগিয়ে আমার পছেন্দর গান টা শুনতে শুরু করলাম।
গানটা এক এক করে চারবার শুনলাম।কিন্তু কুমু তো এখনো বের হচ্ছে না।এতক্ষণ তো লাগার কথা না,
বাথরুমের দরজায় গিয়ে নক করতেই,
ভেতর থেকে কুমু বলল,
–দুই মিনিট, আসতেছি।
কুমু আসার পর কুমুকে জিজ্ঞাস করলাম আগের বার এমন করলেন কেন।
–কেমন করেছি
–বাথরুমে গিয়েই দৌড়ে এসে এক লাফে খাটে উঠলেন কেন।
–তখন তো আমি ভয় পেয়েছিলাম।
–এখানে তো কেউ ছিল না তাহলে কাকে দেখে ভয় পেলেন,,
–ছিল তো।
–কে ?
–আরশোলা,,,
–কিহ্
–আমি আরশোলা কে খুব ভয় পাই।
–আরশোলা কে ভয় পান ভালো কথা,তাই বলে লাফ দিয়ে খাট ভেঙে ফেলবেন।
–আমি কি ইচ্ছা করে লাফ দিছি নাকি।
–লাফ দেওয়ার আগে একবার চিন্তা করে তারপর লাফ দিতেন।
–কি চিন্তা করব ?
–আমি যে লাফ দিয়ে খাটে উঠব আমার ভার কি এই খাট টা সমলাতে পারবে।
–এত ভাবাভাবির সময় পাইনি তখন।আর আপনার এই খাটের তো আত্বা নেই।আজ না ভাঙলেও দুদিন পর এমনেই ভেঙে যেত।
–হইছে এখন ঘুমান।
–নিচে ঘুমাবো।
–কিছু করার নেই আজকে নিচেই ঘুমাতে হবে।
খাটের জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।কত বছর যে এই খাটে ঘুমিয়েছি তার কোন হিসাব নেই।খাট টার প্রতি এক ধরনের মায়া জন্মে গেছে।
খাটের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যানি ঘুমিয়ে গেছি,,,
সকালে ঘুম থেকে উঠার পরে যার সাথে দেখা হচ্ছে সেই আমাকে দেখে কেমন যানি মুচকি মুচকি হাঁসছে।
এই হাঁসির কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।
যাই হোক বাড়িতে আর বেশিক্ষণ থাকেনি।চলে গেলাম বন্ধুদের কাছে।সেখানে যেতেই সবাই আমাকে অভিনন্দন জানাল।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার এক পযায়ে রিপন বলে উঠল ভাই তো লিজেন্ড।
:- খাট নিয়ে বিরম্বনা।
লেখা
–কেন কি করেছি আমি।
–কাল রাতে তুই নাকি ক্রিকেট খেলে খাট ভেঙে ফেলছিস।
রিপন এই কথা বলতেই সবাই হো হো করে হেঁসে উঠল,
এখন সবাই আমাকে নিয়ে হাঁসাহাঁসি করছে।
দূর, এদের কথাবার্তা শুনে মেজাজটাই গরম হয়ে গেল। এরা আমার বন্ধু না শক্রু এটা নিয়ে আমার ডাউট আছে।
রাতে বাড়ি ফিরে রুমে ডুকতেই চোখে পরল একটা নতুন খাট।কুমুর দিকে তাকিয়ে দেখি ওকে কেমন খুশি খুশি লাগছে,
তাই কুমুকে জিগ্যেস করলাম কি ব্যাপার আপনাকে এত খুশি খুশি লাগছে কেন।
–আমাদের নতুন খাট দেখে।
–খাট দেখে এত খুশি হওয়ার কি আছে।
–আজ থেকে আর নিচে শুতে হবে না।
–ওহ্ এই ব্যাপার,,
কিন্তু আমাদের রুমে নতুন খাট আসলো কোথা থেকে ?
–বাবা আমাদের কাল রাতের খাট ভাঙার কথা শুনেই আজকে নতুন খাট পাঠিয়ে দিছে,,,
–আপনি কাল রাতের কথা আপনার বাবাকে বলে দিছেন ?
–আমি বাবাকে এই ব্যাপারে কিছু বলেনি।বাবা কার থেকে যেন শুনল,,,
অবশেষে এই খবর আমার শুশুর বাড়ি পযন্ত চলে গেল,,,আমার আর মান সম্মান বলে কিছু রইল না,,,
–কোথায় যাচ্ছেন কুমু ?
–ওয়াশ রুমে।
–দাড়ান,,,দাড়ান,,,
–কেন ?
–আমি আগে ভেতর থেকে দেখে আসি।
–কি দেখবেন ?
–ভেতরে কোন আরশোলা আছে কিনা
–আজকে আরশোলা থাকলেও কোন সমস্যা নেই।আজকে নতুন খাট লাফ দিলেও ভাঙবে না।
–আমি আর কোন ধরনের রিস্ক নিতে চাইনা,,,
একবার খাট ভেঙে যে বিরম্বনায় আমি পরেছি।সে রকম বিরম্বনায় আর পরতে চাইনা।