বাইরের বৃষ্টির ঘনঘটাটা একটু বেশি।মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে ।জানলার পাশে চেয়ারে বসে আছি আর বাকাভাবে পরা বৃষ্টির ফোটাগুলু গ্লাসের বাহিরে পরাটাকে দেখছি।আকাশটা নিকোষ কালো।থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে ।অফিস থেকে বের হতে পারছিনা।অফিস তেমন কাজ নেই।সবাই যে যার মত বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।চলে যাব? ব্যাগে হাত দিয়ে দেখলাম ছাতাটা নেই।আম্মু যে কি করেনা ।প্রতিদিন ছাতা দেয় আজ দেয়নি।খুব রাগ হচ্ছে এখন।বাসায় যাব কি করে ?কিন্তু যেতে তো হবেই।অফিসের পিয়ন রহমত সাহেবকে বলে তালা মেরে চলে আসলাম অফিসের বাইরে।ছাতা নেই।বৃষ্টিতে ভিজে রউনা দিয়েছি।আকাশমনির যে এত কান্না কুত্থেকে আসে আমি তা ভেবে পাইনা।হয়ত আকাশমনির সাথে তার মনের প্রিয় মানুষটির সাথে বা তার থেকে কোন কষ্ট পেয়েছে ।তাইতো তার কষ্টটা এভাবে কান্পার অশ্রুজলে ব্যক্ত করছে।আর এই কষ্টের এক প্রত্যক্ষ সাক্ষী হচ্ছি আমি নিজে।
খালিদ।আরে আমার নামটা খালিদ। একটা মাল্টিন্যাশনাল অফিসে চাকরি করি।সকালে রাস্তাটা আমাদের মত কর্মব্যস্ততা মানুষদের জন্য হলেও এখন মনেহচ্ছে রাস্তার কোথায় যেন হারিয়ে গেছা।এখন হাটছি আর ভাবছি বাসায় গিয়ে মাকে কিছু বলতে হবে।রাস্তাটা শুন্য।যানবাহনের কোন চিন্হ দেখা যাচ্ছেনা।নাহ আছে ।খানিক দুরে কাওকে দেখা যাচ্ছে ।সাদা ছাতা আর নীল একটা কিছু পরে আছে।।আচ্ছা সামনে গিয়ে দেখা যাবে।উল্টো দিক দিয়ে হাটছে।আচ্ছা এই একা রাস্তায় উনি একা কি করছে।হাঁটার গতি বারিয়ে দিলাম।হাটছি আমি এক অজানার উদ্দেশ্য ।এটাতে একটা মেয়ে ।পিছন ফিরে রয়েছে।চেহারাখানি দেখা যাচ্ছেনা ।হলুদ একটা শাড়ী পরে রয়েছে।খোলা চুল ।চুলের শেষভাগ এসে পরেছে তার কোমরে।দেখলাম তার দীর্ঘকেশী চুল তার হাঁটার ছন্দের সাথে সাথে আর শীতল বাতাসে এদিক উদিক ভাসছে আরো দেখলাম তার ডান হাতে ছাতা আর বাম হাতে তার জুতা।চেহারাটা দেখতে ভীষন ইচ্ছে হচ্ছে আমার মাথায় কি ভুত চেপে বসল জানিনা,এক দৌড়ে পৌছে গেলাম মেয়েটার সামনে।মিস অপরাচিতা ভীষন ভয় পেয়ে গেছে।,কিন্তু আমি ভয় পাইনি।আমি পেয়েছি প্রচন্ড রকমের শক্ ।কি দেখলাম আমি ?
যা দেখছি তা কি সত্যি?কী সুন্দর দেখতে মিস অপরাচিতা।একটু শ্যামলা কিন্তু আমার কাছে এই মুহুর্ত সবচেয়ে সুন্দর নাড়ীটি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ঠোটগুলি যিন এক রাজ্যের শুভ্রতার প্রতীক।চোখগুলি তে বোধহয় কাজল দেওয়া ছিল কিন্তু বৃষ্টির ঠান্ডা ছোঁয়ায় তা লেপ্টে গেছে।কিন্তু আমার কাছে ভীষন সুন্দর লাগছে।হলুদ শাড়ি পরা।আমার পছন্দের একটা রং।আর আমার একটা ইচ্ছে হল বাসর রাতে বৌকে হলুদ শাড়ী পরিয়ে আর আমি হলুদ পান্জাবী পরে দুজনে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে সারারাত দুজনে হাতের উপর হাত রেখে সাড়া সহর ঘুরব।এরকম ইচ্ছে পুরন করা ভাগ্যের ব্যাপার।এরকম মেয়ে আদৌ কি আছে ??আমার জানা নেই।আল্লাহ আম্র ইচ্ছেটা পুরন কইর ।আমি অপরিচিতি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি।কিন্তু আমার ভাবনার এক দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটালো অপরিচিতা তিনি।
-এইজে এইভাবে ভয় দেখানোর কোন মানে হয়? (অপরাচিতা)
-নাহ আসলে আমি মানে আসলে(তোতলিয়ে)
-হিহিহিহিহি
অপরাচিতার হাসিটি দেখতে এত মিষ্টি হবে ভাবতে পারিনি।বাঁকা ঠোঁটের হাসিটার এক কোনায় এক চিলতে পানির বিন্দু হাসিটাকে এত মিষ্টি করেছে যা আমার হার্ট এর বাম অলিন্দের মাঝে গিয়ে আঁকড়ে ধরেছে।
-বাহ আপনি ভীষন ভাল তোতলাতে পারেনতো।হাহা
-আর আপনি ভীষন সুন্দর হাসতে পারেন (আস্তে আস্তে)
-ঐ ঐ কি বললেন ?আস্তে আস্তে বলেন কেন?আস্তে আস্তে বললে আমার সবচেয়ে বেশি রাগ হয়(চিল্লানি দিয়ে )
-আচ্ছা জোরেই বলব।
-কি জোরে বলবেন ?
-কেন কথা?
-কি কথা ?
-সব কথা
-ও হ্যাঁ আচ্ছা।
-একটা কথা জিগ্যেস করতে পারি ?
-হ্যাঁ করতে পারেন।হিহি
-আপনি এভাবে এই বৃষ্টির মধ্যে খালি রাস্তায় একা একা হাঁটছেন যে।
-আপনিওতো হাঁটছেন
-আমিতো বাসায় যাচ্ছিলাম
-তো আপনার বৃষ্টি ভাললাগেনা ?
-লাগেতো ।এইযে বৃষ্টির মধ্যে খালি রাস্তায় একা হাঁটতে ভাললাগে।আর রাত হলেতো কোন কথাই নেই।আর আমি খালি পায়ে হাঁটত ভীষন পছন্দ করি ।
-ও আচ্ছা তাই?আচ্ছা আপনি কি মন্ত্র যানেন ?
-কেন বলুনতো?
-আপনি আমার সবগুলা পছন্দের কথা বলছেন তাই
-আমিতো আমারগুলোর কথা বলছিলাম।আপনার গুলু আমি জানিনা
-এগুলোই আমার পছন্দ ভীষনননন।
-আচ্ছা এখন হাটছিলেন কেন এইভাবে ?
-এমনি
-নামটা কি জানা যাবে ?
-পাগলি।হিহিহি
তখনো তার হাসিটা বাতাসে ভেসে আমার কানে পৌছাচ্ছিল।
আমি বাসায় চলে আসলাম।হঠাৎ এরকম একটা ঘটনা ঘটে গেল একটু বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ।নামটা যেমন কাজকর্ম ও তেমন পাগলী।হাহা।ভীষন হাসতে ইচ্ছে হচ্ছে। বাসায় এসে হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসলাম।
-কিরে এত হাসছিস কেন (আপু)
-কই নাত ।কিছুনা
-আমাকে বলতো কি করছিস রাস্তায় ।
-বললামতো কিছু না।
খেয়ে উঠে পরলাম।সারাদিন কোন কাজে মন বসছিলনা ।শুধুই পাগলির কথা মনে পরছিল।বৃষ্টির ফোঁটা তখনো পরছিল।কখনো থেমে থেমে কখনো বা অঝোর ধারায় ।আমার রুমের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম।পূর্ব আকাশটা কালো হয়ে যাচ্ছে ।মনে হচ্ছে বিপক্ষ দলের রাজা তার একদল সৈন্য নিয়ে এগিয়ে আসছে এই যুদ্ধ করার জন্য ।হাল্কা ঠান্ডা বাতাশ বইছে ।ইসস ঠান্ডা বাতাসের কথা মনে পরতেই আমার পাগলিটার কথা মনে পরল।কি সুন্দরই না দেখাচ্ছিল যখন সে বাতাসে ভেসে যাওয়া চুলগুলি ঠিক করছিল।আরকি দেখা হবে ?জানিনা।আচ্ছা আমি এত ভাবছি কেন ওনাকে নিয়ে? তাহলে কি ?নাহ।পিছন থেকে মনে হচ্ছে কেও একজন বলে উঠল উহে পাগলি তোমার জন্য নতুন এক পাগলের আভির্ভাব হয়েছে ।
পরের দিন সকালে নাস্তা করে অফিসে গেলাম।অফিস শেষে খুব দ্রুত বেরিয়ে পরলাম পাগলীকে দেখার জন্য ।একটা অজানা উদ্দেশ্য ও জানার আখাঙ্কা কাজ করছিল আমার মনে ।হাটছিলাম বৃষ্টিস্নাত সেই বিকেলবেলায়।জানিনা পাগলিকে পাব কিনা।হাটছি।হঠাৎ দেখলাম পাগলিকে।রাস্তার এক পাশে বসে কাগজের নৌকা ভাসাচ্ছেন উনি।কাছে গেলাম….
-আপনি এত লেট করে আসছেন কেন আজকে ?
-আমিযে আসব আপনি তা জানতেন ?
-হিহিহিহিহি
-হাসছেন যে
-এমনি
আমি এই হাসির কোন কারন খুঁজে পাইনা।আজকেও সে একটা কাজল দিয়েছিল।কিন্তু বৃষ্টি আপুর কান্নার কাছে অতি উন্নত মানের কাজল ও হার মেনে গেল।বৃষ্টির ফোটার সাথে তা লেপ্টে গেছে দু চোখের কোনায় ।আমি হা হয়ে দেখছিলাম।
-নৌকাগুলি কি সুন্দর ভাষছে দেখেছেন ?
-হ্যাঁ দেখছি তো
-কোথায় দেখছেন ?আপনিতো আমার দিকে তাকায় আছেন।
-না না কিছুনা।
-হিহিহিহিহি
-আপনি এখানে কেন আজকে ?আজকেও কি বৃষ্টিতে ভেজার জন্য বাসা থেকে রাগ খরে এসেছেন ?
-ঠিক ধরেছেন।এত ঠিক কিভাবে ধরেন ।বলুননা।।।
-জানিনাতো
-আচ্ছা বৃষ্টিতে ভিজলে যদি জ্বর আসে তখন কিভাবে ভিজবেন ?
-জানেন আমি বৃষ্টির সাথে একটা চুক্তি করেছি
-ওমা তাই কি চুক্তি?
-আমার যতদিন না বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ততদিন আমার যাতে জ্বর না হয়।যখন বিয়ে হয়ে যাবে তখন যাতে জ্বর হয়।তাহলে তখন কষ্ট করে হাঁটতে হবেনাহ।আমার উনি আমাকে কোলে করে নিয়ে বৃষ্টিতে হাটবে।
-বাহ দারুন বুদ্ধি।কিন্তু আপনির সেই মানুষটি যদি বৃষ্টি না পছন্দ করে তাহলে ?
-ইহহ তাহলে বিয়েই করবনা।
-আচ্ছা ভাল।এখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন ?চলুন হাটি।
-আচ্ছা।
-আপনার নামটা জানতে পারি ?
-রাফিয়া সামিহা রিত্তি।
-সুন্দর নাম।
-আপনার ???আমার নাম খালিদ।খালিদ আব্দুল্লাহ ।
আপনি কি করেন?
-পাগলামি।হিহিই।জানেন আমার পাগলামির জন্য সারাদিন বকা শুনতে হয়।কিন্তু আমি পাগলামি করতে ভীষন ভালবাসি।হিহিহি
-ওহ তাই।পড়াশোনা করেন ?
-হ্য কেজিতে পরি।
-হাহাহা।ভাল বলছেন।।
-বিশ্বাস করে ফেলছেন নাকি ?
-কিছুটা
-আমি অনার্সে পরি।
-ওহ।আপনার বাসার সামনে চলে এসেছি।
-হিম দেখছি।
-তো কবে দেখা হচ্ছে আবার ?
-যেদিন বৃষ্টি হবে আবার।
– বৃষ্টি হলে কোথায় দেখা হচ্ছে?
-সামনের সেই পার্কটিতে।
-আচ্ছা।
দেখলাম এক দৌড়ে চলে গেল বাসার ভিতরে।হাঁটছি আর হাসছি।বাসায় চলে আসছি ।
বাসায় এসে একটু ঘুম দিলাম।তারপর ছাদে গিয়ে একটু পরিবেশ টা উপভোগ করার চেষ্টা করলাম।আবার বাসায় চলে আসলাম।ঐ দিন আর ঘুম হয়নি আমার।সারারাত ভেবেছি কি করে পাগলি মানে রিত্তির সাথে কথা বলা যায়।পরেরদিন আমরা ভাগ্য যে কি করে ভাল ছিল জানতামনা ।বৃষ্টি হল।বিকালে সেই পার্কে গেলাম।দেখছি রিত্তি লাফ দিয়ে জবা ফুল পারার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই পারছেনা।এই মুহুর্তে আমার কাছে ওকে ঠিক 4 বছরের একটি বাচ্ছার পাগলামির মত মনে হচ্ছিল।আমি পিছন থেকে গিয়ে ফুলটা পেরে দিলাম।ও ঘুরে গেল আমার সাথে চোখাচোখি হল।দারুন একটা অনুভুতি হচ্ছিল তখন।
-আপনার পারতে কষ্ট হচ্ছিল তাই
-ধন্যবাদ ।।।
-নেন ধরুন এটা।
-নাহ আপনি রেখে দেন।মনে করেন আমি দিয়েছি।
-আচ্ছা।কখন এলেন এখানে ?
-একটু আগে।আমি জানতাম আপনি আসবেন হিহিহি
-আচ্ছা আমরা বসি ?
-হ্যাঁ বসেনন।।
বসে পরলাম।নানান কথা বললাম ।দুজনে এমনভাবে কথা বলছিলাম যেন খুব কাছের।সন্ধ্যায় বাসায় আসলাম।কিন্তু বাসায় এসেই বিপত্তি ঘটল। বাসায় এসেই দেখতে পেলাম যে বাসার সবাই যেন কোথায় যেন গেল।থাক আমি আর কি করব।বাসায় এসেই একটা ঘুম দিলাম।ঘুম থেকে উঠে দেখি সবাই এসে পরছে।সবাইকেই কেমন জানি খুশি খুশি লাগছে। কিন্তু বুঝলাম না কেন।আমার রুম এ আমার বোন আসল।
-কালকে তৈরি থাকিস এক জায়গায় যেতে হবে(আপু)
-কোথায়?
-গেলেই বুঝতে পারবি।।
আপু একটু হাসল।বুঝলাম কিছু একটা গন্ডগোল আছে।কিছু বললামনা আর।চুপচাপ ছিলাম।সেদিন আর এই বিসয়ে জানতে চাইলামনা।পরেরদিন সকালে মার কথার চাপে আমাকে ছুটি নিতে হল।আমি নিতে চাইনি তারপরও মার কথায় নিলাম।তারা আমাকে একটা বাসায় নিয়ে আসল।দেখলাম বাসাটা খুব সুন্দর করে সাজানো এরকম একটি বাড়িতে আমি আগে কোনদিনো আসিনি কিন্তু একটা জিনিস লক্ষ করলাম যে সবাই আমার দিকে কেমনকরে জানি তাকাছে।বুঝলাম কিছু একটা রহস্য আছে।মনে হচ্ছে আমি সেই রহস্যের জালে বদ্ব হয়ে যাচ্ছি।নাহ আমাকে বাচতে হবে ….আমি একটা সোফায় বসে আছি ।আমার পাশে আমার আব্বু আমার আম্মু আর আমার বোন বসে আছে ।আচ্ছা সবাই এভাবে তাকাচ্ছে কেন ?কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা হঠাৎ সবাই আমাকে একে একে প্রশ্ন করা শুরু করল।কেমন আছি।কি জবাব করি।ভবিষ্যতের প্লান্ কি।হঠাৎ আমার বোন বলে উঠল আঙ্কেল আমরা মেয়েকে দেখতে চাই।মেয়ে দেখতে চাই মানে কি??আমি কি এখানে মেয়ে দেখতে এসেছি ?
দেখলাম ট্রে হাতে এক মেয়ের আগমন হালকা করে ঘুমটা দেওয়া বিধায় আমি চেহারাখানি ঠিক দেখতে পারলামনা।কিহহ শেষ পর্যন্ত এই কাজ করল আমার সাথে ??আমাকে মেয়ে দেখাতে নিয়ে এসেছে ??আমি পালাব।হ্যাঁ আমি পালাব।এখন না পালালে আমি গলায় দড়ি দিয়ে মরতে হবে।আমিতো রিত্তি কে ভালবাসি।দেখলাম মেয়েটি তার হাতের রাখা ট্রেটি রেখে দাঁড়িয়ে রইল।আপু গিয়ে ঘুমটা উঠিয়ে দেখাল। নাহ মেয়েটা দেখতে ভাল।বিয়েটা ঠিক হয়ে গেল।বাবার মুখের উপর কথা বলতে পারিনা তাই অসহায়ের মত সব দেখছি বসে বসে।সবাই মিষ্ঠি মুখ করছে কিন্তু আমার মুখে নেই আনন্দ।আমাকে একা কথা বলার জন্য পাঠান হল…আমি কি করব এখন বুঝতে পারছিনা একটা ভয় হতে লাগল।কি জন্য ঠিক ধরতে পারলামনা।হয়ত রিত্তিকে হারানোর ভয় ।মেয়েটা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটু লাজকতা দেখলাম।কিন্তু আমি রিতিমত ঘামছি…
-একি আপনি ঘামছেন কেন ?
-…………
-কি হল কথা বলেন।
-দেখুন আপনি বিয়েতে রাজি হইয়েন না প্লিজ
কথাটা বোধহয় একটু অবাক করল উনাকে
-উ আচ্ছা তার মানে আপনি বিয়েতে রাজি নন তারপরো দেখতে এসেছেন ?
-আমি জানতামিনা আমাকে এখানে আনা হবে
-উ আচ্ছা।কিন্তু এখন তো কিছু করার নেই।
-কিছু করার নেই মানে?প্লিজ কিছু একটা করুন আমি বিয়ে করে পারবনা।
-আচ্ছা কারনটা কি জানতে পারি ?যদি সমস্যা না হয় তাহলে বলতে পারেন।
-আসলে আমি একজনকে ভালবাসি আর তাই
-ওও আচ্ছা দেখি কি করা যায়।
আমরা বের হয়ে আসলাম।সবাই একটা উৎসুক মুখ নিয়ে আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে ।আমি ভীষন ভয় পেয়ে আছি।যদি হ্যাঁ বলে দেয় আমিতো শেষ।উনি বললেন পরে জানাবেন।আমি কিছুটা ভরসা পেলাম।আমরা বিদায় দিয়ে চলে আসলাম।গাড়ি তে পিছনের সিটে বসে আছি আমি আর আপু।
-আপু কিছু বলার ছিল।
-দেখার 1 ঘন্টাও হয়নি এখনি পছন্দ হয়ে গেছে বাব্বাহ
-আপু উরকম কিছুই না।আর একটু দরকারি কথা ছিল।
-আচ্ছা বল।
-আমি এই বিয়েটা করতে পারবনা।
-কেন করতে পারবিনা ?
-কারন আমি একজনকে ভালবাসি
-এই কথা আগে বলিসনি কেন ?আর কিছু করার নেই
-কিছু করনা আপু।আমি এই বিয়ে করতে পারবনা।
-দেখি।
চুপচাপ চলে আসছি বাসায়।বাসায় এসেউ শান্তি পাচ্ছিনা।কি করব কিছুই বুঝতে পাচ্ছিনা।নাহ রাতটা নির্ঘুম কাটবে ?জানিনা।রাত 2 টা বাজে চিন্তায় ঘুম আসছেনা ।রুমের একপাশে বারান্দায় বসে আছি।খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে পাগলিকে।একটু একটু টুপ টুপ করে বৃষ্টির ফোঁটা পরছে।ফোটাগুলু বারান্দার গ্রিলগুল এর উপর ধাক্কা খেয়ে ভিতরে এসে পরছে।নাহ দেখবই আমি পাগলিকে।হাঁটা দিচ্ছি এই বৃষ্টিস্নাত পূর্বান্হ রাতের দমকা হাওআর এক নির্ঘুম দুর্দম্য অভিযাত্রী হয়ে ।খালি পায়ে হাঁটছি।হাঁটতে হাঁটতে পৌছে গেছি পাগলিটার বাসার সামনে।রাস্তা থেকে ওর বারান্দার সামনে দাড়িয়ে আছি।কিন্তু কিছু একটাকে দেখা যাচ্ছে বারান্দায় ।একি এত রিত্তি ।এখানে এত রাতে কি করছে ?আমাকে দেখতে পেল ।হাত ও নাড়াল।আমি শুধু হা হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে উ কি জানত আমি আসব?নাকি আগে থেকেই ও এখানে ছিল ?দেখলাম ও নেই বারান্দায় ।হঠাৎ …….
-হা হয়ে উপরে তাকিয়ে থাকলে বৃষ্টির পানি বুক যাবেতো।
-হ্য ?নাহ মানে মানে….
-হিহিহিহিহি
-তুমি হাসছযে?
-আপনার অবস্থা দেখে।
-ও তাই।কিন্তু তুমি এত রাতে এখানে কি করছিলে ?
-আপনার জন্যইতো আসছি।আপনি একা এত কষ্ট করে আসবেন আর আমি আসবনা তা হয় নাকি ?
-তুমি যানতে আমি আসব?
-হিহিহি
হাসির অর্থ আমি খুঁজে পাইনা।এক ছায়াময়ি বৃষ্টি মানবী মনে হচ্ছে রিত্তিকে ।বৃষ্টির ফোটাগুলো কপাল বেয়ে ফোটাগুলো ঠোটের এক কোনায় এসে জমেছে।এত সুন্দর লাগছিল ইচ্ছে হচ্ছিল জড়িয়ে ধরি রিত্তিকে।
-আচ্ছা জানলে কি করে আমি আসব?কে বলেছে ?
-ঐযে বৃষ্টির ফোটাগুলু।অরাই বলেছে যখন বৃষ্টি আসবে তখন আপনার সাথে আমার দেখা হবে হিহিহি
-ও আচ্ছা
-চলুন
-কোথায়?
-এক জায়গায় নিয়ে যাব আপনাকে….যেখানে নতুন কিছু দেখবেন আপনি
আমরা হাঁটা দিলাম…..
-এক জায়গায় নিয়ে যাব আপনাকে….যেখানে নতুন কিছু দেখবেন আপনি
আমরা হাঁটা দিলাম…..
হাটছি এক অজানার উদ্দেশ্য ।আমার পাশে হাঁটছে রিত্তি।রাত তখন 3টা।চাদটাকে মেঘগুলো ঢেকে রেখেছে বলে ওর আলো হালকা করে নেমে আসছে এই পৃথিবীর বুকে আর ঐ আলোর এক টুকরো আলো এসে পরছিল রিত্তির মুখে ঠান্ডা চুপচাপ এলাকার পিচ্ছিল সেই পিচডালা রাস্তায় ।
আমি হাটছি।সে আমার পাশে ।একটা অন্যরকম অনুভুতি হচ্ছিল।
-এসে পেরেছি
-কিন্তু এটাতো
-হ্য সুন্দর না ?
রিত্তি আমাকে নদীর পারে নিয়ে আসল।রাতে কোন দিনো এই নদির পারে আসিনি।নিঝুম রাতেও নদিপার আলোকিত করে রেখেছে এক ঝাক জোনাকি।মনে হচ্ছিল যেন আকাশের সেই ছোট ছোট তারা বৃষ্টিকে উপভোগ করতে নিচে নেমে এসেছে ।এত্ত সুন্দর জায়গা আমি দেখিনি
-ঐ ভাবে কি দেখছেন সুন্দর না ?
-আমি এত সুন্দর জায়গা আগে কখনো দেখিনি
-হিহিহি।
-তুমি জানলে কি করে এই জায়গার কথা ?
-ঐযে বৃষ্টির ফোটাগুলো বলছে আমাকে
-ও আচ্ছা।
দেখলাম রিত্তি এগিয়ে গেল ঐ জোনাকিদের উদ্দেশ্য ।মিলিয়ে গেল সে জোনাকিদের ভিরে।দুহাতে মেলে ধরেছে আকাশের দিকে আর জোনাকিগুলো এক রাশ হয়ে তাকে ঘিরে ধরেছে।মনে হচ্ছিল যেন রূপকথার সেই রাজ্যের রাজকুমারি তার অসিম মায়ার বাঁধনে প্রকৃতিকে আবদ্ধ করেছে আর জোনাকিগুলো তাকে সৈন্যের বেশে ঘিরে রয়েছে।আমরা ভীষন ইচ্ছে হচ্ছিল তার কাছে গিয়ে নিজেকে প্রক্রিতির মধ্যে মিলিয়ে দিতে।কাছে গেলাম
-হাতটা একটু দিবেন ? (রিত্তি)
-কেন ?
-দিন্না প্লিজ
দেখলাম আমার হাতে একঝাঁক জোনাকি এসে বসেছে।
-হিহিহিহিহি ওরা আপনাকে পছন্দ করেছে
-কি জানি হয়তোবা
-চলুন
-আবার কোথায়?
-ওমা বাসায় যাবেন না
-আচ্ছা তুমি এখানে কিভাবে মানে কিছু বুঝলামনা
-হিহিহি বুঝবেন না
-আচ্ছা।
হাঁটতে হাঁটতে বাসায় চলে আসলাম ।উর বাসার সামনে বিদায় দিতেই বাড়ির ভেতরে চলে গেল।একটা অজানা সুখ আর ভয় যেন কাজ করছিল মনে ।বাসায় এসে একটা সুখবর পেলাম।বিয়েটা ভেঙে গেছে।আমার সবচেয়ে বেশি খুশি মনে হচ্ছে এখন।
-তর বিয়েটা ভেঙে গেছে
-ধন্যবাদ আপু।কিন্তু তোমার মুখটা এত গোমরা কেন ?তুমি এত বর একটা উপকার করলে আমার
-তোকে কে বলছে বিয়েটা আমি ভাঙিয়েছি ?
-তো নিশ্চিত ঐ মেয়েটা?
-নাহ।তোর বিয়েটা ভেঙেছে অন্য একটা মেয়ের জন্য ।
-অন্য মেয়ে মানে ??কোন মেয়ে?
-আমি জানিনা ।কিন্তু ঐ মেয়ে টা নাকি তোকে ভালবাসে আর উনাদের বাড়ি তে গিয়ে এই কথাই বলেছে।আর শেষে বিয়েটা ভেঙে দিয়েছে।
-কিছু বুঝলামনা ।কোন মেয়ে আর এভাবে আমার উপকার করবে?
বাবার ডাক ঘরের ভেতর থেকে…….
-ঐ খালিদ ভিতরে আয়
আমার গলায় পানি সব শুকিয়ে গেছে।বাবা সহজে এইভাবে আমাকে ডাকেন না ।আজকে বোধহয় আমার শেষ নিঃশ্বাস টা হবেই।গেলাম ভেতরে….
-এইসবের মানে কি ?
-কি বাবা ?
-তোর যদি ঐ মেয়ের সাথে ঐ রকম কোন সম্পর্ক থাকত তাহলে আগেই বলতি।আমাদের মানসম্মান নিয়ে খেলা কেন করলি
-বাবা আমার কথাটা শোন আমি ঐ মেয়ের মানে যে মেয়ে র কথা বলছ ঐরকম কোন মেয়েকে চিনিনা।
-হারামজাদা আরেক মিথ্যা কথা বলবিতো তোর গায়ের চামরা তুলে নেব।ঐ মেয়ে কি মিথ্যে বলেছে ??
-জানিনা বাবা।আমি কিছুই জানিনা
-যা হইছে বিয়ের আগে হইছে ।নাইলে পুরো মানসম্মান যাইত।যা ঐ মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে আয় যা ।নাইলে ঘরে ভাত তো দুর জায়গাও পাবিনা
ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম।একটা ভয় আর সন্দেহ কাজ করছিল মনে কে এই মেয়ে? জানিনা কি হয়েছে কিন্তু সেদিনের রাতটা মোটামুটি নির্ঘুম কেটেছে।ঘুমকে ঘুম পারিয়ে আমি বসে আছি বারান্দায় ।পরেরদিন বিকেলে গেলাম রিত্তির বাসার সামনে ।রিত্তি বোধহয় দেখেছিল তাই আমাকে দেখে নিচে চলে এসেছে।এরি মধ্যে আমরা সন্দেহ গভীর হল।ভাবলাম মেয়ে টি আমার পাগলি নয়ত ?নিচে নেমেই
-কাল রাত আমার ঘুম হয়নি…..
-আমারো ।কিন্তু তোমার কেন?
-বারে এত বড় একটা কান্ড করে ফেলছি।আর ভাবছি আপনি আমাকে বকবেন তাইইইই।।।।।
-কিসের কান্ড ?তার মানে তুমি ???
-হ্যা(মাথা নিচু করে)
-কিন্তু কেন জানতে পারি ?
-বারে আমি আমার জিনিসের ভাগ অন্য কাউকে কেন দিব ?দিবনা আমি ।
-তোমার জিনিস ?তাই? ?
আমি হাসবনা নাকি কাদব কিছু বুঝতে পারছিলাম না।একটা অজানা সুখ আমার মধ্যে কাজ করছিল।আমার সামনে সে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।
-আমাকে ক্ষমা করে দেন ।আমি আর করবনা সরিইইই
-নাহ
-সরিইইই
-নাহ।তোমাকে শাস্তি পেতে হবে
-আচ্ছা বলুন কি শাস্তি আমি মাথা পেতে নেব
-আগে বল তুমি আমাকে ভালবাস কিনা
-……….
-বল তারাতারি
-চুপ
-তাহলে আমি কিন্তু চলে যাব ?আর কখনো আসবেনা তোমার কাছে ।
-নাহ যাবেন না।প্লিজ ।আমি ভালবাসি আপনাকে ।আপনি চলে গেলে আমি বাঁচতে পারবনা।যাবেন না আপনি ।(হঠাৎ মাথা উঁচু করে)
এই কথা বলেই মুখটা যেন লজ্জায় লাল হয়ে গেল।আবার মাথা নিচুকরে নিল সে
-আর একটা শাস্তি আছে তোমার জন্য …..
-জি দেন
-আগে চল
আমি উকে নিয়ে একটা রিক্সাতে উঠলাম।কাছের একটা কাজী অফিসে চলে আসলাম।ও কিছু বুঝতে পারছিলনা।আমি আমার 2 টা বন্ধু কে আগেই আসতে বলেছি।বিয়ের জন্য যখন কাজী রিত্তিকে সাইন করতে দিল তখন সে বুঝতে পারল তার শাস্তি টা কি।হঠাৎ কেঁদে উঠল।আর আমাকে জড়িয়ে ধরল।ভীষন কান্না করছে মেয়েটা।সুখের কান্না ।কাছের মানুষকে আরো বেশি করে কাছে পাওআর কান্না ।আমার বুকটা ততক্ষণে ভিজে গিয়েছে ।বললাম
-সাইনটা করবেনা ?
-হ্যা
বিয়েটা হয়ে গেল।এখন বাসার দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।ভাবছি বাবার পছন্দ হবেতো রিত্তিকে ?জানিনা
দরজা নক করলাম…….
-আয় বাবা।বৌমাকে নিয়ে ঘরে ডুক।(মা)
একটু অবাক হলাম।আমি বিয়ে করেছি এটা মা জানার কথানা।আর মা রিত্তিকে দেখে মনে হচ্ছে কতদিনের চেনা।বুঝলামনা।বাবাও একি ব্যবহার করছে ।কিছু বুঝতিছিনা।
রাত বারোটা…….
বাসর রাতের অপেক্ষারত আছি ।আপন ঘরের দোয়ারে দাঁড়িয়ে এক অনাশৃত ব্যাক্তি।ঢুকলাম রুমে লম্বা ঘুমটা দিয়ে বসে আছে সে।হলুদ শাড়ি পরা ।আমার বোন আমার পছন্দ জানতো তাই হলুদ শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে।অমি কাছে গেলাম।ঘুমটা উঠালাম।থাক এই সৌন্দর্যটা একান্তই আমার।তাই শেয়ার করলামনা।সরি।আমাকে সালাম করল নেমে আর হঠাৎ
-হিহিহিহিহি
-হাসছ যে
-পাগলি তার পাগলকে পেয়েছে যে তাই
-আমিও ভীষন খুশি ।কিন্তু
-কিসের কিন্তু?
-এভাবে মা বাবার আচরন কিছু বুজলামনা ।
-ও আমি জানিতো হিহিহিহিহি
-তুমি যান ?কিভাবে বলনা
-প্লান টা কার ?
-মানে যেদিন ও ঐ মেয়ের বাসায় গিয়েছিলাম সেদিন রাতে আপনার বাবা মা খুজ করে আমার বাসায় আসে।যানেন আমার আম্মু আর আমার শাসুরি আম্মা ফুফাতো বোন ?দেখেই আর কিছু বলা লাগেনি তারা আমাকে অনেক আদর করে মনে হচ্ছিল আমি আরেকটা মা বাবা পেয়েছি।
-ওরে আল্লাহ্ রে।এত কিছু???
-হিমম হিহিহি
-আচ্ছা শুননা বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে ।ভিজবে ?
-কিন্তু আমারতো হালকা জর আসছে
-আমি আছিনা
দুজনে বেরিয়ে পরলাম ঘর থেকে।আমি খালি পায়ে।বৃষ্টি ঝরছে তার আপন ইচ্ছে অনুযায়ী ।আমি রিত্তিকে কোলে তুলে নিলাম।এক মুহুর্তে জন্য ভীষন লজ্জা পেল সে।নাহ সে লজ্জার বর্ননাও আমি বলবনা ।থাকনা আমার কাছে।আমি হাটছি আর এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি সেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
সময় টা একান্তই আমাদের।দৃশ্যের দুই নব বিবাহিত নড়নাড়ী হাঁটছে আর দৃশ্যের সেই ক্যামেরাটি নিচে নেমে গেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে এক ফোঁটা বৃষ্টির ফোঁটা গরিয়ে তার রাস্তাটি খুঁজে নিচ্ছে ।