জামাই শ্বশুর

জামাই শ্বশুর

ইরা তার বাবার বাড়ি যাওয়ার বায়না ধরেছে। ইরা যখনই ওর বাবার বাড়ি যাওয়ার জন্যে বলে তখনই আমার ভয় হয়। ভয় এর কারণটা হচ্ছে ওর বাবা! ইরার বাবা আমাকে মোটেও পছন্দ করেনা, তার উপর যতোবারই ওর বাবার সাথে দেখা হয় তখনই আমি কোন না কোন গন্ডগোল করে ফেলি।

ইরা যখন ওর বাবাকে আমার সাথে বিয়ের কথা বলে ওর বাবা আমার সাথে দেখা করার জন্যে আমাকে আসতে বলে। আমিও ভালো ছেলে হয়ে শ্বশুর আব্বার সাথে দেখা করতে যাই! ইরার বাবার সাথে আমার কথোপকথন;-

– নাম কি তোমার?
– জ্বী, রাইহান!
– কি করো তুমি?
– একটি কোম্পানিতে চাকরি করি।
– বেতন কতো?
– মহাজ্ঞানী ব্যাক্তিরা বলে ছেলেদের বেতন জিজ্ঞেস করতে নেই।
– মহাজ্ঞানী কারা?
– যাদের বেশি জ্ঞান থাকে তারা মহাজ্ঞানী!
– তো কারা এই মহাজ্ঞানী?

– এই ধরুন আমাদের এলাকার চায়ের দোকানের মফিজকে, সেইদিন ও ১০০টাকার গাড়ি ভাড়ার পথ ৬ঘন্টায় হেটে গিয়েছে। তাতে করে মফিজের ৮০টাকা বেচে গেছে। তো হলোনা ও মহাজ্ঞানী? মফিজই বলেছে ছেলেদের বেতন নাকি জিজ্ঞেস করতে নেই।

– ১০০টাকার গাড়ি ভাড়ার পথ কিন্তু ৮০টাকা বেচেছে কেন?
– ২০টাকার ব্যাথার ঔষধ খেয়েছে। ৬ঘন্টা হেটেছেতো তাই।
আমাদের কথোপকথনের মাঝখানেই ইরার বাবার গালে একটি মশা বসেছে। মশা দেখলে আমার আর মাথা ঠিক থাকেনা! আমি তখন শুধু মশাকেই দেখি, মানুষের গালকে না। আমি সাথে,সাথে মশাটিকে টাশ করে মারি কিন্তু অল্পের জন্যেই টার্গেট মিস হয়। ইরার বাবার দিকে তাকাতেই দেখি উনার গালের একপাশ লাল হয়ে আছে। আমি উনার গালে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই উনি আমাকে সাইকো ডাকা শুরু করে। ইরার বাবা বলে এই সাইকোর সাথে কিছুতেই বিয়ে হতে পারেনা। কিন্তু আমার ইরা ছিলো জেদি মেয়ে, ও ঠিক করেযে আমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবেনা। তাই বাধ্য হয়েই আমার সাথে ইরার বিয়ে দেয় ওর বাবা!

বিয়ের পরেরবার যখন ইরার বাড়ি যাই তখন ইরার বাবা আমার সাথে কথায় বলেছিল না! আমাকে দেখলেই উনি মুখ ভারী করে আমার দিকে তাকান। সেইদিন রাতে ভাত খেয়ে যখন বারান্দায় হাটছিলাম তখন আমার বন্ধু মতিনের ফোন আসে। মতিনের কাছ থেকে আমি ২০হাজার টাকা পাবো, মতিন ফোন দিয়ে বলেযে ও আমার টাকা আর ২মাস পরই দিতে পারবে! ওর কথা শুনে মাথা তখন গরম হয়ে গিয়েছিলো। আমি মতিনকে বলি;-‘ ” এই জানোয়ার মতিন! তুই মতিন্না একটা চিটিং,বাটপার,ছোটলোক। তুই মতিনরে আমি সামনে পাইলে মেরে হাসপাতাল পাঠাবো! তখনই হাসপাতের বিল দিবি ৫০হাজার টাকা।”

পিছনে ফিরতেই দেখি আমার শ্বশুর আব্বা চোখ লাল,লাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি উনার চোখে আগুন দেখতে পাচ্ছিলাম! দেখতে পাচ্ছি উনার চোখের চারপাশে ধোঁয়া। উনার চোখের সামনে যদি এখন একটা ডিম রাখা হয় তাহলে ওই ডিম মিনিটের মধ্যেই সিদ্ধ হয়ে যাবে।

লজ্জার কথা আর কি বলবো? সেইদিন মধ্যরাতেই আমাকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো! ওহ, বলতেই ভুলে গেছিযে আমার শ্বশুর আব্বার নামও ছিলো মতিন।

এইবার আর কোন গন্ডগোল না করার আশা নিয়েই গেলাম শ্বশুর বাড়ি! সকাল থেকে দুপুর আর দুপুর থেকে রাত হয়ে গেলো। পুরোদিনেই কোন গন্ডগোল হয়নি। আমার শ্বশুর আব্বার মাথাও খুব ঠান্ডা!
রাতে ঘুমানোর আগে আমার একটা লেবুর রস খাওয়ার অভ্যাস ছিলো। কিন্তু ইরাদের ঘরে লেবু ছিলোনা! আর রাতে লেবুর রস না খেলেই আমার ঘুম হয়না, আর আমার ঘুম না হলে গলা দিয়ে জোরে,জোরে গান বের হয়। ঘুমাতে না পেরে আমি জোরে,জোরে গান গাওয়া শুরু করলাম “আমারও পরানো যাহা চায়, তুমি তাই, তুমি তাইগো! আমারও পরানো যাহা চায়।”

ইরাদের ঘরের সবাই ঘুমাতে না পেরে বারান্দায় এসে জিজ্ঞেস করলো আমার কি হলো! ইরা আমার অভ্যাসের কথা সবাইকে বলে। ইরার মা ইরার বাবাকে সামনে জঙ্গলের লেবু গাছ থেকে গিয়ে লেবু নিয়ে আসতে বলে। ইরার বাবা বাধ্য হয়েই লেবু আনতে সামনের জঙ্গলে যায়! আমি জোরে,জোরে গান গাচ্ছি আর ইরার বাবার জন্য অপেক্ষা করছি।

কিছুক্ষণ পর দেখি চারজন মানুষ একজন আহত মানুষকে হাত,পা ধরে ইরাদের ঘরে নিয়ে আসে। আমি তাদের জিজ্ঞেস করি এই আধমরা মানুষটি কে? আর এইখানে কেন নিয়ে এসেছে? একলোক তখন বলে ” উনি আপনের শ্বশুর আব্বা। কেন চিনতে পারছেন না?” আমি অবাক হয়ে আমার শ্বশুর আব্বার পুরো শরীর ঘুরে,ঘুরে দেখি আর লোকগুলোকে জিজ্ঞেস করি এতো মাইর কে দিয়েছে? আর কি হয়েছে ঘটনা?

লোক একটা বলে;-‘ ” আর বইলেননা! গ্রামে এক গরু চোর এসেছিলো। আর গরু চুরি করার সময় কিছু লোক এই চোরকে দেখে চিল্লায়,চিল্লায় মানুষ এক জায়গায় করে। ওই চোরটি মানুষ দেখে জঙ্গলের দিকে দৌড় দেয়, চোরের পিছন,পিছন সব মানুষও জঙ্গলের দিকে যায়। জঙ্গলে গিয়ে অন্ধকারের মধ্যে একজনকে দেখতে পেয়ে সবাই ওকে মারধর শুরু করে। সবাই মেরে ক্লান্ত হওয়ার পর মোবাইলের ফ্ল্যাশ দিয়ে দেখি এইটা মতিন চাচা। কে জানতো এই মধ্যরাতে কোন মানুষ বা মতিন চাচা জঙ্গলে থাকবে!”

আমি শ্বশুর আব্বার দিকে তাকিয়ে বলি ” লেবু এনেছেন আব্বা?”
যাক! এইবার আমার দ্বারা আর কোন গন্ডগোল হয়নি।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত