অদেখা সেই তুমি

অদেখা সেই তুমি

ছোট্ট একটা ঘর আমার ছোট্ট একটা মন।
সেই ঘরেতে বাস করে আমার প্রিয় জন..
ছোট্ট দুটি আখি তার ছোট ছোট পা
তাই দেখে উরে গেল আমার পরান টা…
– অবসর সময়ে দু একটা কবিতা লেখে পথ..চাকরি করার পর সময় মেলেই না..একটা প্রাইভেট কম্পানীতে ছোট খাট একটা জব করে..

সকাল ৭.৩০ সময় বাসা থেকে বের হয় পথ..বাস স্ট্যান্ডে দাড়িয়ে থাকে বাসের জন্য..এই সময়টা অনেক ব্যস্ত থাকে নগরী..

সবাই যার যার কাজের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত..অনেক কষ্ট করে বাসে উঠতে হয়..তাও আবার দাড়িয়ে থাকতে হয় অনেক সময়.
– প্রায় প্রতিদিন এমনই হয়..স্ট্যান্ডে অনেকেই দাড়িয়ে থাকে..কিন্তু পথের নজর কারে একটা মেয়ে..প্রতিদিন বাসের জন্য অপেক্ষা করে..

মনে হয় স্টুডেন্ট হবে..হাতে বই থাকে সব সময়..
– পথ প্রতিদিন লক্ষ করে মেয়েটাকে..কিন্তু সময়ের অভাবে কথা বলা হয় না..
– মেয়েটা লক্ষ করে কিনা কে জানে.?
– প্রতিদিনের মত অফিস থেকে ফিরে রেস্ট নিচ্ছে পথ..আর মনে মনে ভাবছে মেয়েটার কথা..
– রেহানা বেগম পথের রুমে আসলেন..পথের মা ইনি..বাবা পথ অনেক ত বয়স হল এবার একটা বউ নিয়ে আয় ঘরে..

দেখ আমার অবস্থাও ভাল না..কত দিন আর বাঁচব..যাওয়ার আগে তোর সুখের সংসারটা দেখে যেতে চাই..
– মা তুমি এভাবে বলছ কেন..তুমি যদি এভাবে বল তাহলে আমি কি সইতে পারি.?
– তাহলে এবার বিয়ের জন্য মত দে..আমি একটা মেয়ে দেখেছি তোর জন্য..তুই হ্যাঁ বললেই পাকা কথা বলব..
– মা আমাকে আর ১০ দিন সময় দেও..আমি একটু ভেবে দেখি..
– আচ্ছা ভেবে দেখ..তবে ১০ দিনের বেশি সময় দিতে পারব না..
– তাতেই হবে..
– ফ্রেস হয়ে টেবিলে আয়..আমি খাবার দিচ্ছি..
– রাতের খাবার খেয়ে পথ বিছানায় শুয়ে ভাবছে মেয়েটার কথা..কালত শুক্রুবার, ছুটির দিন.

মেয়েটার সাথে দেখা হবে না..মনটা খারাপ হয়ে গেল পথের..
– পরের দিন সকাল ১০টায় ঘুম ভাঙল পথের..বিছানা থেকে উঠে নাস্তা করল..তারপর বসল টিভি দেখতে..সপ্তাহে দুই দিন একটু টিভি দেখার সময় হয়..
– পথ জুম্মার নামাজ পরে বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া সেরে রেস্ট নিচ্ছে..চিন্তা করছে বিকেলের সময়টা কি করবে..?

হটাত মনে পরল অনেক দিন পার্কে গিয়ে সূর্য ডোবা দেখা হয় না..
– পথ পার্কে বসে আছে এক কর্নারে..আশে পাশে অনেক মানুষ ঘুরতে এসেছে..সবাই অনেক হাসি খুশি..পথ দেখল একটা মেয়ে তার দিকে আসছে..

অনেকটা পরিচিত লাগছে..খানিকটা কাছে আসতেই পথ চিনে ফেলল মেয়েটাকে..এ যে সেই বাস স্ট্যান্ডের মেয়েটা..
– পথ অনেক খুশি..যাক আজকেও দেখা হয়ে গেল..আজ কি বলে দেবে মেয়েটাকে যে, তাকে অনেক পছন্দ আমার..
– মেয়েটা পথের সামনে এসে দাড়াল..আচ্ছা আপনি কি আমাকে ফলো করছেন.?
– পথ কেমন জানি ফিল করছে..বুকের ভিতর ধুক ধুক করছে..
– কি হল উত্তর দিচ্ছেন না যে..
– কই না ত..আমি ত আপনার ফেবু আইডি জানি না আর ফলো কিভাবে করব..
– আমি ফেবুর কথা বলছি না..আমি যেখানেই যাই সেখানেই আপনি থাকেন..ব্যাপার কি..?
– পথ
কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না..তা দাড়িয়েই কথা বলবেন না কি বসবেন..?
বসে কথা বলতে সমস্যা নাই ত আপনার..?
– মেয়েটা বসল..তারপর জিজ্ঞেস করল, আপনি কি করেন.?
– পথ উত্তর না দিয়ে বলল, আপনার নামটা কি জানতে পারি..?
– নাম দিয়ে কি করবেন.? আগে আমার প্রশ্নের জবাব দিন..

আসলে আমি আপনাকে ফলো করি না..কাকতালিয় ভাবে আমাদের দেখা হয়ে যায়..হয়ত উপর থেকেই সব করা হচ্ছে..

আর আমি একটা প্রাইভেট কম্পানিতে জব করি..আর আমার নাম পথ.
– হুম..সবই বুঝলাম..তবে আপনার নামটা যেন কেমন অদ্ভুত..পথ, শুনলেই কেমন যানি একটা ফিল হয়..

যাই হোক না বলতেই সব বলে দিয়েছেন..আমার নাম পরী..পরাশুনা করি ৩য় বর্ষ এবার..
– দু’জনের
কথা বলতে বলতে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে..সূর্য অস্ত যাচ্ছে..পথ সূর্য অস্ত যাওয়া দেখছে..

সূর্যের লাল রঙ পরীর মুখে এসে পরেছে..দেখতে এখন পরীর মতই লাগছে..
– আচ্ছা আজ তাহলে উঠি..সন্ধ্যা হয়ে এসেছে..
– আচ্ছা নাম্বারটা কি পেতে পারি..?
– পরী মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলল।০১৯২৭.. বাকি ডিজিট গুলো অন্য এক দিন দেব, যে দিন আবার কাকতালিয় ভাবে দেখা হবে আমাদের..
– পথ একটু অবাক হয়ে চেয়ে রইল…পরী চলে গেল..
– ৭ দিন হয়ে গেল,পরীকে আর দেখা যাচ্ছে না বাস স্ট্যান্ডে..পথ পাগলের মত হয়ে খুজে যাচ্ছে এখানে সেখানে..

সারা শহরের সব কয়টা রেস্টুরেন্ট, পার্ক ,শপিং মল..কোথাও দেখা মেলে না পরীর..অফিসের কাজেও মন বসে না..অফিস থেকে ৩ দিনের ছুটি নেয় পথ..
– – বাসায়
ফিরে ভাবছে কি করবে এবার..কোথায় পাব পরীকে..পরীর দেওয়া অর্ধেক নাম্বারটার কথা মনে পরল…

বাকি ডিজিটগুলা বসিয়ে অনেক ট্রাই করল কিন্তু কোন নাম্বারই পরীর না..
– আজ ৮ম দিন…মার জানি কি হয়েছে..অনেক অসুস্থ হয়ে পরেছে..হাসপাতালে ভর্তি করেছে পথ..চিন্তায় কুল কিনারা পাচ্ছে না..
– পথের একটা বন্ধু আছে..খুব কাছের বন্ধু..এই শহরেই থাকে..একটা প্রাইভেট কম্পানিতে জব করে..ছোট বেলা থেকেই এক সাথে বড় হয়েছে দুই জন..পার্থ নাম..
– পথ ফোন করে সব কিছু জানায় পার্থকে..
– পার্থ সব শুনে চলে আসে হাসপাতালে..দুই জনে মিলে অনেক চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেয় মা সুস্থ হলেই মাকে বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলে দেবে পথ..

কিন্তু পথ একা বিয়ে করবে না সাথে পার্থও..দুই বন্ধু একসাথে বিয়ে করবে..
– পথ ডাক্তারের কাছে গেল..কত দিন লাগবে সুস্থ হতে..?
– ডাক্তার বললেন প্রায় ১০-১৫ দিন ত লাগবেই..তবে কাল বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন এবং পূর্ন রেস্টে রাখবেন..
– পথ সস্থির নিশ্বাস ফেলল.
– মাকে বাসায় নিয়ে গেল পথ..
– পথ আর পার্থ বসে আছে পার্কে..কি করবে এখন..পরীর কোন দেখা নাই..মনের কথা ত বলতে পারলই না অন্য দিকে মাকে কথা দিতে হবে..চিন্তা করছে পথ..
– অন্য দিকে পার্থ চিন্তায় আছে তার বিয়ের প্রস্তাব কি মেনে নেবে নিলুর পরিবার..?
– নিলু হল পার্থের অর্ধাংশ..৫ বছরের প্রেম তাদের..অনেক মধুর সম্পর্ক দু জনের..নিলুর পরাশুনা শেষ হতে এখনো ২ বছর বাকি..

সেই কলেজ লাইফ থেকে পরিচয় দু জনের..প্রথম দিনেই ঝগরা..তারপর আস্তে আস্তে প্রেম.
– নিলুর আজ আসার কথা পার্কে..সমস্যার একটা সমাধান করার জন্য..
– পার্থ বসে বসে ঘাস চাবাচ্ছে আর ভাবছে আর পথ আকাশ দেখছে..হটাত সামনে এসে দাড়াল নিলু..
– এই ছাগল ঘাস চাবাচ্ছ কেন.?
– তুমি এসেছ এতক্ষনে..ঘাস চাবাব না ত কি করব..আমি ত তাও কিছু করছি আর ঐ দেখ আরেক জন চিন্তায় আকাশের সীমানা মাপছে..
– নিলু পথকে সালাম দিয়ে বলল ভাল আছেন ভাইয়া.?
– নাহ..ভাল আর কি করে থাকি..চিন্তায় জীবন শেষ..
– নিলু দুই জনের সব কথা শুনল..তারপর পার্থকে বলল আজই বাসায় প্রস্তাব পাঠাতে..বাকি কাজ নিলু সামলে নিবে..

আর পথকে বলল ভাইয়া কি আর করবেন যাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না তাকে ভুলে যান..মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করেন..
– হুম নিলু..আমিও তাই ভাবছি..পরী বসন্ত বাতাসের মত এসে কাল বৈশাখি ঝরের মত চলে গেল..

যাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে যাবে না তাকে মনে রেখে লাভ কি..আজই মাকে হ্যাঁ বলে দেব..আর পার্থ তুই আজই কিন্তু প্রস্তাব পাঠাবি.
– পথ বাসায় এসে বসে বসে ভাবছে..তারপর এক পর্যায়ে মার কাছে যায়.
– কি রে বাবু কিছু বলবি..?
– হ্যাঁ..মা আমি তোমার পছন্দের মেয়েকে বিয়েতে রাজি..
– যাক অবশেষে সুবুদ্ধি হল..তা মেয়ে দেখবি না.?
– নাহ..তুমি দেখেছ তাতেই হবে..তুমি মেয়ে পক্ষের সাথে কথা বল..বিয়ের দিন ঠিক করে জানাও..পার্থকে জানাতে হবে..
– পথ মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে সোজা পার্থের বাসায় চলে এল..
– কিরে পথ বলে দিলি তাহলে..আমিও প্রস্তাব পাঠিয়েছি..ওরা রাজি হয়েছে..নিলু সব মেনেজ করে নিয়েছে..এখন তোর বিয়ের দিন ঠিক হলেই হল..
– পার্থ আমার না পরীর জন্য কেমন করছে মনটা..মনে হচ্ছে কি যেন হারিয়ে ফেলছি..
– আরে মন খারাপ করিস না পথ.যা হবার ছিল তাই হচ্ছে..চল শপিং এ যাই মন ভাল হয়ে যাবে..
– চল তাই করি..মনটা ভাল করা দরকার..তা ছারা বিয়ে ত ঠিক হয়েই গেছে..মাকে একটা ফোন করে চল বেরিয়ে পরি..
– দুই বন্ধু মিলে গেল শপিং করতে..খুব আনন্দ করছে দুই জন..অনেক শপিং করল বিয়ের..হটাৎ পিছন থেকে পরীর গলার আওয়াজ.
– আরে পথ ভাই না..কেমন আছেন..?ওয়াও এত্ত শপিং করছেন..ব্যাপার কি..?
– ভাল আছি না মন্দ আছি তা জেনে তুমি কি করবে..কত খুজেছি তোমাকে..কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে..? অবশ্য এখন এ সব বলে আর কি লাভ..
– কেন.? লাভ নেই কেন.? আর আমি অসুস্থ ছিলাম অনেক..
– ও..থাক ভালই আছ মনে হয়..ক’দিন পরে আমার বিয়ে..তাই আর পুরান কথা তুললাম না..ভাল থেক..
– ওয়াও..congratulation অগ্রিম..আমাকে ইনভাইট করবেন না..?
– কি করে করব..তোমার ত শুধু অর্ধেক নাম্বার জানি আর বাসার ঠিকানাও জানি না..
– তাও ঠিক..তাহলে আপনার নাম্বার দিন আমি বিয়ের দিন চলে আসব ফোন করে..

আর বাকি ৩টা ডিজিত নিন ৬৩৪..বাকি তিনটা বিয়ের দিন গিফটে লিখে দেব..
– পথ অবাক..মেয়ে বলে কি..যাই হোক মনের মানুষত..পথ নিজের নাম্বারটা দিয়ে দিল..
———–
– আজ পার্থ আর পথের বিয়ে..দুই বন্ধু এক সাথে বরের সাজে সেজেছে..পার্থ অনেক খুশি কিন্তু পথের মনটা আজও খারাপ..

কেন যে সে দিন পরীর সাথে দেখা হয়েছিল..
– সবাই এসে গেছে বিয়েও শেষ..পথের বিয়ে হল মেঘ নামের এক অজানা অদেখা মেয়ের সাথে..আর পার্থর হল নিলুর সাথে..
– সবাই চলে যাচ্ছে..অনুষ্ঠান শেষ..পথ এখনো অপেক্ষা করছে পরীর জন্য..শেষ দেখাটা অন্তত দেখার জন্য..কিন্তু পরী যে আসে না..
– বাসর রাত আজ পথের..অদেখা আর অচেনা এক মেয়ের সাথে যাকে সে এখনো দেখেনি..
– রুমে ঢুকতেই মেঘ একটা গিফট এগিয়ে দিল পথকে..বড় ঘোমটা থাকার কারনে চেহারাটা দেখতে পেল না পথ..
– গিফটা নিয়ে খুলতেই..
– সেখানে লেখা বাকি তিনটা ডিজিট দিলাম মন চাইলে কল কর নইলে বিছানায় আস..
– পথ অবাক হয়ে চেয়ে আছে লেখাটার দিকে..তাহলে এই কি আমার পরী..?
– দেরি না করে ঘোমটা তুলতেই সেই চির চেনা মুখটা দেখতে পেল পথ..এই ত আমার পরী..
– কি অবাক হলেন.? খুজে পেলেন আপনার পরীকে..
– তুমি কেন..? আমারত মেঘের সাথে বিয়ে হয়েছে..মেঘ কোথায়..?
– আমিই মেঘ..মেঘ জান্নাত পরী..এখন বলেন পরীকে ভালবাসেন না মেঘকে.? কার সাথে সংসার করবেন..?
– উত্তরে একটাই নাম আসে পরী..আমি তোমাকে ভালবাসি পরী..অনেক ভালবাসি..
– আর কিছু দিন পর বললে হয়ত আমাদের বাচ্চারাও শুনতে পারত..তা কেমন লাগল সারপ্রাইজ..

সবই ছিল প্লান করা..আমার শাশুরি আম্মা আর আমি দুজনে মিলেই এই প্লান করেছি…
– ওও…আর আমি কষ্টে মরে যাচ্ছিলাম তার দিকে খেয়াল নাই..
– খেয়াল আছে বলেই ত রোজ খোজ নিতাম আপনার..
– তা আপনি করেই বলবে না তুমি করে..
– আমার না লজ্জা লাগছে এখন..
– ওরে আমার লজ্জাবতিরে..
এভাবেই খুনসুটি আর গল্পে কেটে যাচ্ছিল দুই ভালবাসার পাখির দিনগুলো…
…..ছোট সে ঘরে জায়গা দিলাম
……মনের দুয়ার খুলে,
……বাসবে কি ভাল এমন করে
……সারা জীবন ধরে
=একবার যখন ধরেছি হাত
=ছারব না কভু
=তুমিও আমায় তেমনই বেস
=যেমনটা বেসেছিল এই হৃদয়..

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত