— তুমি আজ থেকে আর আমার অনুমতি ছাড়া বাইরে যাবেনা!
— কেন?
— আমি যা বলছি তা করবে নয়ত অনেক খারাপ হবে৷
— কিন্তু কেন?
— তোমার এত কথার উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই ৷ এরপর কখনো আমার অনুমতি ছাড়া বাইরে গেলে তোমাকে ডিভোর্স দিবো, কথাটা বলার পরই নিলার চোখ দিয়ে পানি বের হওয়া শুরু হয়ে গেল ৷ কাঁদলে কাঁদুক কিন্তু ওরে আর বাইরে যেতে দেওয়া যাবেনা ৷
নিলাকে ইদানীং ধরে দেখছি ও দুপুর টাইমে বাইরে যায় ৷ কিন্তু কেন যায় তা আমাকে বলেনা ৷ আর আমার নাম তন্নয় ৷ বাবা মায়ের কথা মতই পারিবারিক ভাবেই আমাদের বিয়েটা হইছে ৷
নিলা খুব শান্ত মেয়ে, খুব ভদ্র ৷ আমার বাবা মায়ের সাথে মিলেমিশে থাকে আর ওর বাবা মা কেউ নেই একটা দূর্ঘটনায় মারা গেছে ৷ তাই নিলাকে কখনোই কষ্ট দেই না ৷ কিন্তু ইদানীং ওর অনেক পরিবর্তন ৷ কিন্তু ও এমন করছে কেন ? প্রতিদিন বাইরে কোথায় যায়?
জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দেয় না ৷ আমার ওর প্রতি সন্দেহ শুরু হয়ে গেল ৷ তাই নিলাকে আবারো জিজ্ঞাসা করলাম,
— নিলা আমি ভাল করে বলছি তুমি প্রতিদিন কোথায় যাও?
— আমি বলতে পারব না
— বলতে পারব না মানে কি ৷ কোথায় যাও সেটা বলো ?আর যাওয়ার সময় তুমি টাকা নিয়ে যাও কেন?
— আচ্ছা আমি তোমায় পরে বলব ৷ আমার সময় হয়ে যাচ্ছে….
— সময় হয়ে যাচ্ছে মানে কি ? বলো কোথায় যাবে?
— এখন বলতে পারব না
— তুমি বলবে ? নাকি বলবে না ?
— না বলব না
বলার পরই ঠাস ঠাস ২টা চড় মারলাম ….আর বলতে শুরু করলাম,
— আমাকে কেন বলবি ? লুকিয়ে লুকিয়ে আগের প্রেমিকের সাথে দেখা করতে যাস ৷ তো কেন বলবি আমায়? যা যা, তুই যা ৷ তোর বিএফ আবার পরে রেগে যাবে এমনিতেই দেড়ি হয়ে গেছে ৷ আর আমার চোখের সামনে থেকে দূর হো দুশ্চরিত্রা কোথাকার?
— তন্নয় (চিৎকার দিয়ে) অনেক বলছো ৷ এইবার চুপ করো ৷ আর তোমার যা মনে হয় তুমি ভাবো ৷
আমি চলে যাচ্ছি বলেই নিলা কান্না করতে করতে চলে গেল ৷ যাক চলে তাতে আমার কি ? একটু পরই আবার বেহায়ার মত চলে আসবে ৷ তখন আবার তাড়িয়ে দিব ৷ এসব ভাবছিলাম, হঠাৎ কেন জানি মনে হলো নিলাকে ফলো করা দরকার ৷ কোথায় যায় ? আমাকে দেখতেই হবে ৷ পরে কোনো খারাপ কাজ করলে আমার বদনাম হবে ৷ তাই ওর পিছু নিলাম ৷
হঠাৎ দেখলাম ও একটা রিক্সায় ওঠছে ৷ তাই আমি একটা রিক্সায় ওঠে ওর রিক্সাকে ফলো করতে বললাম ৷ যেই ভাবা সেই কাজ ৷ ফলো করতে করতে দেখলাম একটা শপিংমলে ঢুকছে ৷ যা ভাবছি তাই হয়ত বিএফ এর সাথে শপিং করবে ৷ আজকে যা যা করবে ৷ সব দেখব ৷ তাই আমিও লুকিয়ে শপিংমলে ঢুকলাম ৷ কই কাউকেই দেখলাম না ৷ নিলা একা একাই শপিং করছে ৷ অনেক্ষন পর নিলা প্রায় বিশ হাজার টাকার মতো শপিং করলো কিন্তু এত টাকা পাইলো কোথায় ?
আমার আবার ওর প্রতি সন্দেহ শুরু হয়ে গেল ৷ দেখলাম নিলা একটা কনফেকশনারি দোকানে গিয়ে অনেকগুলো চকলেট কিনলো ৷ আমার আবারও সন্দেহ হলো ৷ ওর কোনো সন্তান আছে কিনা তাই ৷ যদি থাকে ? তাই আবারও ওর পিছু নিলাম ৷
নিলা এবার গলির ভিতর দিয়ে হাটছে আমিও এমনভাবে পিছু নিলাম যেন নিলা না দেখে ৷ গলির পর গলি পেরিয়ে যাচ্ছে নিলা একাই শুধু হাটছেই৷ওর বিএফ কি তাহলে নেই নাকি ? হঠাৎ নিলাকে একটা গলির ভিতর হারিয়ে ফেললাম ৷ ধুৎ আজকে ওর সবকিছু পেয়ে যেতাম কিন্তু পারলাম না ৷ ওর ভালোগিরির মুখোশটা আজ খুলে দিতাম ৷ কিন্তু এটাও পারলাম না ৷ আমি এখন একা একাই নিলাকে ওলিতে গলিতে খুজতে লাগলাম কিন্তু কোথাও পেলাম না ৷ গেল কোথায় ৷
হঠাৎ প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল ৷ দিলাম ভো দৌড় ৷ থামলাম এক বড় গাছের নিছে ৷ ধুৎ বৃষ্টি নামার আর সময় পেল না ? ছাতাও তো আনলাম না ৷ চারিদিকে চোখ বুলাচ্ছি কিন্তু হঠাৎ এমন এক দৃশ্য দেখলাম নিজেকে আর মানাতে পারলাম না ৷ চোখ দিয়ে এমনভাবে পানি বের হচ্ছে যেন চোখের পানি আজ এই বৃষ্টিকেও হার মানাবে ৷ আসলে নিলাকে দেখলাম একটা এতিম খানায় অনেক বাচ্ছাদের সাথে বৃষ্টিতে হৈ হোল্লোর করে ভিজতেছে ৷ তার মানে নিলা প্রতিদিন এই এতিমদের সাথে সময় কাটায় ? আর ওদের প্রতি এত ভালোবাসা ?
আর আমি নিলাকে এগুলো কি বললাম ? আর নিলার সম্পর্কে কি বাজে ধারনা করলাম?
ছিঃ ছিঃ ছিঃ আমি এটা কি করলাম ? ফুলের মত এমন পবিত্র মেয়ের সমন্ধে এত বাজে ধারনা আসল কিভাবে? না আর দেড়ি করা ঠিক হবে না ৷ এক্ষনি নিলার পা ধরে আমার মাফ চাইতে হবে নয়ত আল্লাহ আমাকে এই রমজান মাসেও আমাকে মাফ করবেনা ৷ তাই আর দেড়ি না করেই দৌড় দিলাম ৷ আর নিলার পায়ে পড়ে গেলাম ৷
নিলা প্রথমে ভয় পেয়ে গেল ৷ পরে যখন আমাকে দেখল তখন পা ছাড়িয়ে বলা শুরু করল,
— এই তুমি এটা কি করছো?
— নিলা আমাকে মাফ করে দাও ৷ আমি বুঝতে পারিনি৷প্লীজ নিলা আমাকে মাফ করে দাও বলেই কান্না শুরু করে দিলাম
— আরে তুমি এসব কি বলছো?
— আমি ঠিকই বলছি ৷ আমি কত্ত খারাপ ? আমি না জেনেই তোমাকে ছিঃ ছিঃ কত খারাপ কথা বলেছি ৷ তুমি আমাকে মাফ করে দাও..
— প্লীজ তুমি আমাকে এভাবে বলনা ৷ তুমি আমার স্বামি ৷ তোমার এগুলো বলার অধিকার আছে
— না নেই ৷ এগুলো কোনো স্বামিই করতে পারেনা ৷ আর আমাকে তুমি মাফ করে দাও ৷
বলতে দেড়ি হইছে নিলা আমাকে জড়িয়ে ধরল ৷ আর আমিও ৷ অনেক কান্না করছি ৷ কিছুতেই কান্না আটকাতে পারছিনা ৷ আমার মত অধমকে আল্লাহ এমন একজন বউ উপহার দিবে তা বুঝতেই পারিনি ৷ নিলাকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
— তুমি তো আমাকে বলতে পারতে
— বলিনি কারন যদি তুমি কিছু বলো
— কি বলবো ৷ আর তুমি এত টাকা পেলে কোথায়
— আসলে বিয়ের পর থেকে তোমার কাছে আজ পর্যন্ত শপিংয়ের জন্য যত টাকা নিয়েছি ৷ আর ঈদ শপিংয়ের টাকাও মিলিয়ে ওদের জন্য জামা কিনছি ৷ আমি বলিনি কারন আমার শপিংয়ের টাকা দিয়ে ওদের কিনে দিচ্ছি তাই তুমি জানলে রাগ করবে ৷ তাই বলিনি
— ধুর বোকা৷আমার বউ এত মহৎ একটা কাজ করছে আর আমি কি তাকে একটুও হেল্প করব না নাকি ? আমিও এই বাচ্ছাদের পাশে থাকতে চাই,
— সত্যি?
— হুম ৷
— জানো ? ওদের না বাবা মা কেউ নেই
— কে বলছে ওদের বাবা মা নেই?
— সত্যি কথা৷
— না ৷ মিথ্যা কথা
— মিথ্যা কথা?
— হুম ৷ ওদের বাবা মা আছে
— তাহলে কোথায় তারা
— এখানেই আছে
— এখানে তাহলে কোথায়?
— কেন ? তুমি মা, আর আমি ওদের বাবা ৷ কি বাবার অধিকারটা পাবো তো ?
— হুম পাবে ৷ বলেই কান্না করতে করতে আমাকে জড়িয়ে ধরল ৷
— এই কান্না করো কেন ?
— জানো আমি না খুব ভাগ্যবান ৷ তোমার মত একজন স্বামি পেয়ে ৷
— আর আমি বুঝি কম ভাগ্যবান ? তোমার মত বউ পাওয়া সত্যিই অনেক বড় পাওয়া ৷ অতঃপর সবাইকে জামা দিয়ে ৷ এতিমখানার শিক্ষককে বললাম যে, কাল ঈদের দিনটা যেন আমাদের সাথে বাচ্ছা গুলো থাকতে পারে ৷ তাদের সাথে আমরা আমাদের ঈদ কাটাতে পারি ৷ ওস্তাদ সাহেব অনুমতি দিলে সবাইকে নিয়ে গাড়িতে উঠলাম ৷ নিলার মুখে দেখতে পারলাম একটা অন্যরকম হাসি ৷ যেটা সমস্ত সৌন্দর্যকেও হার মানায়৷ খুব ভাগ্যবান আমি ৷ এমন একটা বউ পেয়ে ৷
বিঃদ্রঃ আমরা অনেকেই আমাদের বউ বা আপনজনদের ভালো করে না বুঝেই অনেক সন্দেহ করি ৷এতে আমাদের অনেক মধুর সম্পর্কগুলোও নষ্ট হয়ে যায় ৷ তাই আসুন সন্দেহ নয় , বুঝতে চেষ্টা করি ৷ আর ভালো হলে তাদের সাহায্য করি৷
——————সমাপ্ত———————