পুতুল বউ

পুতুল বউ

রিয়ার সাথে আমার বিয়ে হয়েছিল বাবা-মায়ের পছন্দ অনুসারে।কোত্থেকে এমন মেয়ের খোঁজ পেয়েছিল আব্বু আম্মু তা জানা যায়নি।দেখতে যে আহামরি সুন্দরী ছিল তা নয়।তবে আমার মত কালো ছেলের সাথে বেশ মানায়।আমি ভাবিনি অ্যারেঞ্জ ম্যারিজ এতটা রহস্যময় রোমান্টিক ধরণের হতে পারে।হঠাৎ একদিন আম্মু এসে বলল তোর বাবা মেয়ে ঠিক করেছে সামনের সপ্তাহে বিয়ে।তোর বন্ধুদের দাওয়াত করিস।কালকে বিয়ের কার্ড বাসায় আসবে।কোনোদিন বাবা মায়ের অবাধ্য হইনি কিন্তু ঐদিন হয়েছিলাম।কিন্তু ফলাফল তাদের পক্ষেই গিয়েছিল।বিয়ের সব আয়োজন শেষে বাসর ঘরে ঢুকছি দূরদূর বুক নিয়ে।ভয় লাগছে একটা অচেনা মেয়ের সাথে আজ ঘুমাতে হবে এটা ভেবে।যদি মেয়েটা মানুষরূপী পেত্নী হয়ে থাকে তাইলে আমার ঘার মটকাবে আবার যদি লেসবিয়ান হয় তবে আমি শেষ আবার যদি রক্তখেকো হয় তবে গলায় কামড় দিয়ে রক্ত খেয়ে পালিয়ে যাবে।সিনেমাতে এসব দেখে এখন অচেনা মেয়ের সাথে ঘুমাতে ভয় লাগছে।

আচ্ছা অচেনা মেয়ে বলছি কেন?ও তো আমার বিয়ে করা বউ।আচ্ছা ওর নাম কেন বলছিনা?সর্বনাম ব্যবহার করে ওকে ডোমিনেট করার চেষ্টা কেন করছি আমি?রিয়া!যাকে আজ বিয়ে করেছি সেই মেয়েটার নাম রিয়া।দরজা আটকে পেছন ফিরে দেখি রিয়া আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।ভয় পেয়েছি অনেক।কি চাও তুমি?ঘার মটকাবে?রক্ত খাবে?নাকি পালিয়ে যাবে?কথা শুনে রিয়া আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি কোনো পেত্নী,রক্তখেকো কিংবা বাজে মেয়ে নই যে পালিয়ে যাব।যাকগে বাঁচা গেল আব্বু আম্মু ভালো মেয়েই আনছে।লজ্জায় আমি কোনো কথা বলতে পারছিনা।আমাকে চমকে দিয়ে সে পায়ে সালাম করল আর সোজা বিছানায় গিয়ে মাঝখানে বসে পড়লো।অচেনা মেয়ে কি থেকে কি বলে ফেলব এই ভয়ে কাছে গিয়ে বললাম চলো ঘুমিয়ে পড়ি অনেক রাত হয়ে গেছে।রিয়া শুয়ে পড়ল।

আমি ওর দিকে মুখ ঘুরাতেই অবাক হয়ে গেলাম।আরে এটা তো একটা পুতুল।আব্বু আম্মু আমাকে কি বিয়ে করালো যে ঘুমায় পুতুলের মত?ছোট বেলায় পুতুল বিয়ে দিতাম এখন সেই কথা মনে পড়ছে।তার মানে আমিও একটা পুতুল বউ পেয়েছি। রিয়া আমার পুতুল বউ।আসলেই রিয়া ঠিক পুতুলের মত করে ঘুমায়।আব্বু আম্মুর চয়েস আছে।এমন মেয়েকে আমার গলায় ঝুলালো যে কয়েক মিনিটেই আমি প্রেমে পড়ে গেলাম।কি মেয়েরে বাবা!যাদু জানে নাকি যে আমার সম্মোহন করে প্রেমে ফেলল?হঠাৎ বুকের মাঝে গরম নিঃশ্বাস অনুভব করলাম।চোখ খুলে দেখি রিয়া আমার বুকের মধ্যে।আরে!জোশ তো!এরকম ভালো লাগা অনুভব এর আগে কোনোদিন করিনি তো!মেয়েটা কি সত্যি সত্যি আমাকে সম্মোহন করল?সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখি রিয়া আমার পাশে নেই।আম্মুর সাথে কিচেনে রান্না করছে।এটা কেমন মেয়ে?রাতে পুতুল হয় আর দিনে মানুষ হয়।গোসল করতে যেয়ে দেখি টাওয়াল দেয়া।গোসল শেষে দেখি বিছানা গুছনো আর পোশাক দেয়া আছে।যথাসময়ে খাওয়া শেষে অফিস গেলাম।মাঝখানে অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসল।ধরতেই দেখি সেই পুতুল বউয়ের কণ্ঠ।পৌছাইছো অফিসে?হ্যা,এইতো আর পাঁচ মিনিট।

মেয়েটা এতো কেয়ার নেয় কেন?বিকেলে বাসায় ফিরে দেখি পুতুলের মুখটা শুকানো ওকে এরকম লাগছে কেন?খায়নি নাকি?খাওয়ার সময় বললাম এসো একসাথে খাই।মেয়ে খুশিতে আত্মহারা। সাথে সাথে প্লেট নিয়ে বসে পড়ল।কিন্তু ও খাবার মাখতে পারছেনা।কি ব্যাপার রিয়া?খাচ্ছ না কেন?একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল খাচ্ছি তো।কই খাচ্ছো তুমি?লক্ষ্য করলাম ও খেতে পারছেনা,হাত কেমন যেন করছে।একি!তোমার হাত পুড়লো কেমনে?ও কিছুনা তুমি খাও।কিছুনা মানে?দেখি দেখি?ইশ…খুব কষ্ট হচ্ছে তাইনা?এসো আমি খাইয়ে দেই তোমাকে।ওর মুখে খাবার দিতেই চোখে পানি নিয়ে আসছে।ব্যথায় কাঁদছো কেন?ঠিক হয়ে যাবে।কথাটা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।মনে মনে বলছে গাধা জামাই একটা।অপমানবোধ করলাম একটু।হুর…বউয়ের কাছে আবার কিসের অপমান?খাওয়া শেষে ওর পোড়া হাতে ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে টিভিতে খেলা দেখছি।এসেই রিমোট নিয়ে বলে এসব চলবেনা।

এখন আমাকে সময় দাও।একদিনের পরিচয়ে আমার উপর কেমন ভয়ংকরভাবে অধিকার খাটাচ্ছে!জীবন মনে হয় ত্যানা ত্যানা করে দিবে মেয়েটা।সারাটা সন্ধা তার মুখে যতো স্বপ্ন আর চাওয়া আছে সব কানে তুললাম।উফ…কান ঝালাপালা করে দিছে মেয়েটা।রাতে ওকে খাইয়ে দিয়ে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।হা হা হা…কেমন পুতুলের মত ঘুমায়।ওই ছোঁচা জামাই আয় আমার কাছে।দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে কি দেখিস?মাঝরাতে হঠাৎ কে যেন ডাকছে।ওমা এ যে পুতুল বউ!কি হইছে?এতক্ষণ জ্বালায়াও স্বাদ মেটে নাই?না!উঠো ঘুম থেকে।কেন?আমার হাত-পায়ে নেইলপোলিশ দিয়ে দাও।উফ…মেয়েটা ঘুমাতেও দেবেনা।যাও নিয়ে আসো।খুশিতে আত্মহারা হয়ে নিয়ে আসলো।ওর পায়ে নেইলপোলিশ দিচ্ছিলাম আর ও মিষ্টি মিষ্টি হাসছিলো।দেয়া শেষ করে ঘুমাব এমন সময় বললো এই আমার গরম লাগছে চুলটা বেনি করে বেধে দাও।আমি বেনি করতে পারিনা।শোনো?আমি কিন্তু তোমাকে সারারাত ঘুমাতে দেবনা যদি বেনি করে না দাও।

চুল বিলি কেটে বেনি করে দিয়ে শুয়ে পড়ব এমন সময় বলে এই ওঠো।আবার কি?আমার এখানে ঘুম আসছেনা।চাঁদ দেখলে ঘুম আসবে,আমাকে ছাদে নিয়ে চলো।এত রাতে ছাদে?নিয়ে চলো নইলে কিন্তু ঘুমাতে দেবনা।ছাদে গিয়ে দোলনায় আমার কোলে শুয়ে চাঁদ দেখছে।চারদিক নিরব নিস্তব্ধ। হঠাৎ নিরবতা কাটিয়ে বলে একটা গান গাও।নিরবতা ভালো লাগছেনা।এত রাতে কিসের গান,হুম?গাও বলছি।(রেগে গিয়ে)গান গাইছি হঠাৎ বলে ছিঃ এরকম বেসুরো গলায় কেউ গান গায়?ভাল্লাগছেনা এটা, তার চেয়ে বরং কবিতা শোনাও।কবিতা আবৃতি করছি এমন সময় আযান দিয়ে দিল।এইরে!সকাল হয়ে গেছে!শোনো?খুব ইচ্ছে ছিলো তোমার সাথে ভোর দেখার।বলতে পারছিলাম না মুখে তাই তোমাকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রেখেছিলাম।আমার ভোর দেখা হয়ে গেছে,ইচ্ছাটাও পুরন হইছে।আমি অনেক পাগলামি করেছি তোমার সাথে,অনেক কষ্ট দিয়েছি, আজ রাতে তোমাকে ঘুমাতে দিলাম না।কেন জানো?নিজের স্বার্থে।হ্যা,আমি অনেক স্বার্থপর আমাকে এখন যে শাস্তি দেবে তাই মেনে নিব।

বাব্বাহ!বউ আমার কত আবেগী!এমন আবেগঘন সময়ে কি বলব বুঝতে পারছি না।সোজা গিয়ে রিয়াকে জড়িয়ে ধরলাম।ভালোবাসি তোমায় পুতুল বউ।সেদিন অফিস থেকে ফিরে দেখি রিয়া ওর বাবার বাড়ি চলে গেছে।বাসায় একদম ভালো লাগছেনা।বোরিং লাগছে,মনে হচ্ছে আমার সুখটাই নেই।শুন্যতা বিরাজ করছিলো আমার মাঝে।রিয়াকে ফোন দিলাম,ওপাশে ফোন ধরছেনা ও।বাধ্য হয়ে শশুড়বাড়ি চলে গেলাম।দেখি রিয়া আমার জন্য অনেক রান্না করেছে।শশুড় শাশুড়ি অনেক খুশি আমাকে দেখে।কিচেনে গিয়ে রিয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই বলে উঠলো, কি মশাই?দুইদিনেই বউপাগল হয়ে গেলে?কেমন বউ?সোজা অপমান করে দিল?তুমিও বা কম কিসে?যেমন?এইযে আমার ভালোবাসা আরেকটু বেশি পাওয়ার জন্য নিজের বাড়ি এসে নাটক করছো।রিয়া আমার কথা শুনেই খিল খিল করে হেসে উঠল।কেমন হাসি দেয় মেয়েটা!হাসিতেও আমি সম্মোহিত হয়ে গেলাম।এই মেয়ে আর কত যাদু দেখাবে?সবেমাত্র শুরু…দিন যেতে দাও সব দেখবে বুঝবে আর সহ্য করবে।রিয়ার সাথে দুষ্টুমি শেষে ড্রয়িংরুমে বসে সবার সাথে কথা বলছিলাম।

এমন সময় ছোট শালিকা বলে উঠল ভাইয়া হানিমুনে যাচ্ছেন কবে?আরে সত্যি তো!হানিমুনের কথা তো আমি ভুলেই গেছিলাম।আচ্ছা আনিকা(শালিকা) কোথায় যাওয়া যায় বলো তো?উমম…সাজেক যেতে পারেন তারপর ওখান থেকে কক্সবাজারে যাবেন।আপুর খুব ইচ্ছা সমুদ্রপারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সুর্যাস্ত দেখার।রিয়া খাওয়ার জন্য সবাইকে ডাকছে।আমি ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি সবাই আমার জন্য ওয়েট করছে।তারাতারি বসে পরলাম বউয়ের হাতের রান্না খাওয়ার জন্য।ইশ…রিয়া মায়ের মতই রান্না শিখছে।আনিকা মাংসের বাটিটা দাও তো।না,আনিকা দিবিনা।কেন আপু?তুই জানিস না আমার মোটা মানুষ পছন্দ না?তোর ভাইয়া গরুর মাংস খাইলে মোটা হয়ে যাবে।পেটে মেদ জমবে যেটা আমার একদমই পছন্দ না।এই শোনো?লাউ শাক আর পুটি মাছের ঝোল করেছি এইটা খাও।এতে কোনো সমস্যা হবেনা তোমার।কি হ্রামি বউরে!!খাইতে দেয়না আমায়।নিজে ভালো ভালো মুখরোচক খাবার খাবে আর আমাকে খাওয়াবে সবজি?দাঁড়াও আমি এর ব্যবস্থা করছি।প্রায় রাত ১১টা বাজে।লাউ শাকের তরকারি দিয়ে কোনোমতে কয়েকটা ভাত গিলে ফরমালিটিজ মেইনটেইন করে উঠে আসছি।এখন ক্ষিধেয় পেট জ্বালা করছে।হুর..ক্ষিধের জ্বালার চেয়ে বড় জ্বালা হয়েছে আমার বউটা।

আইডিয়া!!বুদ্ধি থাকলে ঠকায় কে?ড্রয়িংরুমে আনিকা টিভি দেখছিলো।কাছে গিয়ে বসলাম এমন সময় কেএফসির ফাস্টফুডের বিজ্ঞাপন দিলো।আনিকা?জ্বি ভাইয়া?চলো কেএফসির ফ্রাইড চিকেন খেয়ে আসি।সত্যি! চলেন আমি রেডি।বাইকে করে শালিকাকে নিয়ে বের হলাম।পাশেই কেএফসি ছিলো।ঢুকতেই এই গরমে এসির বাতাসের ঠান্ডা হাওয়া মনটা ঠান্ডা করে দিল।ভাইয়া আমি জানি আপনার ক্ষুধায় অবস্থা বেগতিক তাই আমাকে নিয়ে এখানে এসেছেন।বড্ড বেশি বোঝো তুমি আনিকা,খাওতো।হঠাৎ আনিকার কলেজফ্রেন্ডরা এসে বলে কিরে আনিকা এই হ্যান্ডসাম কোত্থেকে জোটালি?আমি লজ্জা পেয়ে গলা কাশি দিয়ে বললাম তোমরা আনিকার ফ্রেন্ড?ফ্রেন্ড মানে?তার চেয়েও বেশি কিছু।বসো চিকেন খাও।না ভাইয়া আপনারা সময় কাটান।দেখলাম আমার প্রতি আনিকার বন্ধুদের ধারণা উল্টাপাল্টা তাই ওদের জোড় করে বসালাম।ওর এক বান্ধবি বলে ভাইয়া আমরা কাবাবে হাড্ডি হতে চাইনা।

ইশ…মেয়েটা একটু বেশিই ইচরেপাকা।ওদের জন্য অর্ডার করে আলাপ করতে করতে বললাম আমি আনিকার বোন জামাই।সবাই জিহ্বায় কামড় দিলো আমার কথা শুনে।সরি বলতে বলতে সবাই মাফ চাইলো আমার কাছে।আসলে বোমটা না ফাটালে আমার নিজেরই ফাটতো।আড্ডা শেষে দেখি ১২:২০ বাজে।আনিকা অনেক রাত হইছে চলো বাসায় ফেরা যাক।রাস্তা ফাঁকা তাই বাইক বেশ জোড়েই চালাচ্ছিলাম।আচ্ছা ভাইয়া আপনি কখনও প্রেম করেছেন?হ্যা করি তো।বিয়ের পরও প্রেম?আপুকে বলে দিব।যার সাথে প্রেম করি তাকেই বলে দিবা?আমার কথা শুনে হেসেই শেষ।একথা ওকথা বলে বাসায় এসে দেখি আমার পুতুল বউ পুতুলের মত জড়সরো হয়ে ঘুমিয়ে আছে।কাছে গিয়ে গায়ে হাত দিতেই হাত সরিয়ে দিলো।এই পুতুল বউ রাগ করেছ?যা তো আমার চোখের সামনে থেকে।ঘ্যান ঘ্যান করবি না।ও বউ(ভালোবাসা দিয়ে ডাকছি)।লাফিয়ে উঠেই বালিশ দিয়ে এলোপাথাড়ি মাইর শুরু করলো।

কয়েকটা মাইর খাওয়ার পর বালিশ কেড়ে নিলাম।আল্লাহ্‌!! বালিশ কেড়ে নিয়ে মনে হয় ভুল করলাম!এবার নরম হাতের মাইর সহ্য করছি।আজিব তো!আদর করার সময় হাত নরম আর মাইর দেয়ার সময় লোহার মত শক্ত!এমন কেন মেয়েটা?বউ হইছে এবার থামো।আরে এটা তো ডাইনি বউ।খামচে আমার ঘারের চামড়া মুখের চামড়া তুলে ফেলছে।সত্যি সত্যি তো মাংসখেকো নয়!আহত যোদ্ধা হয়ে খাটে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে আছি।ওদিকে বউটার চোখ লাল হয়ে আছে মুখে পানি কেন?আচ্ছা রিয়া কি কান্না করছে?কিন্তু আমি তো ওর চোখের পানি সহ্য করতে পারিই না।নাহ্ রিয়ার মন খারাপ করে দিছি বাইরে ঘুরতে গিয়ে।এখন আমাকে ফ্লোরে ঘুমাতে হবে বাধ্য হয়ে।কেটে যাওয়া জায়গায় ঔষধ লাগাতে দিল না।মুখ,গলা,ঘার ভীষনভাবে জ্বালা করছে।রিয়াকে আজ খুব কষ্ট দিলাম।বুঝতেই পারিনি মেয়েটা এমন রিয়েক্ট করবে।একটা বালিশ দিয়ে শশুড়বাড়ি ফ্লোরিং করে প্রথম রাত কাটাচ্ছি।কি ভাগ্য আমার!শুয়ে শুয়ে রিয়ার চাপা কান্না শুনছি।মাইর খাওয়ার ভয়ে কিছু বলতে পারছিনা।কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা।

হঠাৎ অনুভব করলাম আমার গলায় কেউ চুমু দিচ্ছে।টপ করে এক ফোটা পানি ঠোঁটের উপর পড়তেই জেগে উঠলাম।এ কি রিয়া এখানে কেন?আমি উঠতে যেতেই ও আমাকে চেপে ধরল আর জখম হওয়া জায়গায় চুমু দিতে থাকল।এটা আবার কেমন ঔষধ!নিমিষেই জ্বালাপোড়া কমে গেল।আমি জোড় করে উঠতে চাইলাম কিন্তু ওর ডাইনি শক্তির কাছে হার মেনে ওভাবেই শুয়ে থাকতে বাধ্য হলাম।তারপর রিয়া আমার বুকে মুখ গুজে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।আমি আড়ামের জন্য একটু সোজা হয়ে রিয়াকে পুতুলের মত করে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।শেষরাতের দিকে রিয়া জেগে উঠে আমাকে ডাকছে-এই ওঠো।কি?আযান দিচ্ছে যাও ফ্রেশ হয়ে ওযু করে আসো দুজন একসাথে নামায পড়ব।হুহ?রাতে জামাইটাকে রক্তাক্ত করার পর এখন ভালোবাসা দিয়ে ডাকছে!আমি পাশ ফিরে আবার শুয়ে পড়াতে পুতুলটা আবার ডাইনিতে রুপান্তর হলো।বুকের উপর ধুপধাপ ঘুষিয়ে আমাকে জাগিয়ে বলে যা বললাম তারাতারি কর।

আমি তোর সাথে নামায পড়ার জন্য কত স্বপ্ন দেখেছি জানিস?আমার সব স্বপ্ন তোকে পুরন করতে হবে।আমি এখন নামায পড়ব তোর পাশে,এখনই।(রাগের সাথে)।হে খোদা কি এমন অপরাধ করেছিলাম যে এমন বউ আমার ভাগ্যে আইলো!ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি আমার জন্য পানজাবি আর টুপি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমাকে পানজাবি টুপি পড়িয়ে দিয়ে জায়নামাজ বিছিয়ে দুজন নামাযে দাঁড়িয়ে গেলাম।নামায শেষে মুনাজাত করলাম।আরও কিছু দোয়াকালাম শেষে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি ভোরের আলো ফুটে গেছে চারপাশে।রিয়া আমার জন্য ঝটপট গরম চা নিয়ে আসলো।চায়ের কাপে দুজন কিছুক্ষণ গল্প করলাম।ভাবছি আরেকটু ঘুমিয়ে নিব কারন আজ শুক্রবার।ফ্লোরে শুয়ে পড়ব এমন সময় ট্রাওজার,জার্সি আর কেডস নিয়ে রিয়া হাজির।তুমি মর্নিং ওয়াকে যাবা?যাও।আমি যাব না আমার ফিটনেস ঠিক আছে।

তোমার জন্য নিয়ে আসছি,নাও পড়ে নাও।শোনো সকাল সাতটার আগে বাসায় ফিরতে পারবেনা।কাল রাতে চিকেন খাইছো আজ সকালে দৌড়ে তা ঘাম করে করবে।বউয়ের অত্যাচার সহ্য করতে করতে আমি খুব তারাতারি মরে যাব মনে হয়।হায়াত কমে যাচ্ছে আমার সেটা হারে হারে টের পাচ্ছি। দরজা খুলে দিয়ে বলে যাও-পা বাড়িয়েছি এমন সময় ডেকে বলে আরেকটা কথা।কি?পোশাক যেন ঘামে দুর্গন্ধময় হয়।যদি ঘাম না হয় তবে তোমার একদিন কি আমার একদিন-মনে রাইখো কথাটা।এ কেমন বউ?ফাকিবাজি করতেও দেবেনা!এত চালাক কেমনে মেয়েটা।সাতটার সময় বাসায় ফিরলাম ঘর্মাক্ত শরীরে।রিয়া আমাকে দেখে টাওয়াল আর লুঙ্গি দিলো।গোসল শেষে বের হয়ে অনেক ক্লান্ত লাগছে আর খুব ক্ষিধেও পেয়েছে।পেট ভরে ভাত খাওয়ার প্লান করছি এমন সময় রিয়া পাতলা দুইটা রুটি আর একটুখানি সবজি নিয়ে এসে বলে খেয়ে নাও।তুমি খাইছো?আমার খাওয়া দেরি হবে।কেন?ভাত উঠিয়ে দিছি এখনও হয়নি।আমিও ভাত খাব তোমার সাথে।

তোমার ভাত খাওয়া মানা।মানা!কিসের মানা?আমি বলছি তাই মানা।ভালো ছেলের মত এগুলো খেয়ে নাও।ক্ষুধার জ্বালায় পৃথিবী গদ্যময় সকালের সোনালি সুর্য্য যেন অমলেট ডিমের কুসুম।কিন্তু ওই কুসুম খাইতে সৌভাগ্য লাগে।আমার কোনোদিন আর সেই সৌভাগ্য হবে বলে মনে হয়না।সকালের নাস্তা শেষে পেপার পড়ছি সোফায় বসে এমন সময় রিয়া এসে পুতুলের মত করে আমার কোলে বসে বলে আমার চুলে বিলি কেটে দাওতো-মাথা চুলকাচ্ছে।কি হ্রামি বউরে?একটু শান্তিতেও থাকতে দেবেনা।আমি বিলি কাটতে পারিনা।রাগে গজ গজ করে উঠে বলে দিবি কি না বল?রাতের সেই অত্যাচারের ভয়ে আমি নখ দিয়ে বিলি কাটছি।শশুড় আব্বা কান্ডকারখানা দেখে মিষ্টি মিষ্টি হাসে।ইশ…কি লজ্জা কি লজ্জা।মান-সম্মান আর রাখলো না রিয়া।আনিকা ঘুম থেকে উঠে সোফায় বসে টিভি অন করতেই রিয়া বলল আনিকা আমার ঘর থেকে নারিকেল তেলের বোতলটা নিয়ে আয়।তেল দিয়ে কি করবা?কেন তুমি বিলি কেটে দিচ্ছ আর তেল দিয়ে দেবেনা তা কি হয়?রিয়া এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।

কিসের বাড়াবাড়ি! আমার সব স্বপ্ন পুরন করতে হবে তোমার।হায়রে কপাল!বাপ মা কার সাথে বিয়ে দিলো আমায় যে সবসময় প্যারার মধ্যে রাখে!ভালো করে মাথায় তেল দিয়ে ডায়নি বউকে কিছুটা বশে আনলাম।দুপুরবেলা নামায থেকে এসে দেখি টেবিলে খাবার রেডি করা।আহ কি গন্ধ বেড়িয়েছে!জিহ্বায় পানি এসে যাচ্ছে বোয়াল মাছ দেখে।সবাই মিলে খুব মজা করে খাওয়া দাওয়া করলাম।চোখটা লেগে আসছে তাই বিছানায় শুয়ে পড়লাম একটু।কখন যে ঘুমিয়েছি জানিনা।হঠাৎ টের পেলাম কেউ আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমুতে চাচ্ছে।মনে হচ্ছে আমাকে জড়িয়ে ধরাটা খুব প্রয়োজন।চোখ খুলে দেখি রিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমুতে না পেরে বিছানায় বসে আছে মন খারাপ করে।আমি ওকে কাছে ডাকতেই জোড়ে লাফিয়ে বুকের উপর ঝাপিয়ে পড়ল।ইশ…ব্যথা পেলাম তো।আমার কথা বলাটা মনে হয় অন্যায় হইছে তাই হাত দিয়ে মুখটা চেপে ধরল আর বুঝালো যে কথা না বলে ওকে জড়িয়ে ধরে যেন ঘুমাই।আহা!হাতটা কত নরম লাগছে এখন আর যখন মাইর দেয় তখন মনে হয় ডাইনি বুড়ির হাত।বিকেল বেলা আযান দেয়ায় পুতুলটা চোখ মুছতে মুছতে উঠে বলে নামায পড়ব ওযু করে আসো।পাশেই দাঁড়িয়ে নামায শেষে আমার গলা জড়িয়ে ধরে তোষামোদ করছে রিয়া।

কি ব্যাপার এখন এত ভালোবাসা দেখাচ্ছ যে!কাহিনীটা কি?ঘুরতে যাব নিয়ে চলো আমাকে।কোথায় যাবে?ওই যে দেখছো সুর্য্য ওখানে যাব-নিয়ে চলো।পাগল হইছো তুমি?ওই আদর দিয়ে বলছি ভালো লাগছেনা, তাইনা?চল দিয়া বাড়ি যাব।কাশফুলের মাঝে আমি তোর হাত ধরে হাটব।আনিকা যাবে?ও কেন যাবে আমার আর তোর মাাঝে?না ছোট মানুষ ওরও তো শখ করে বাইরে বের হওয়ার।না ওর শখ করেনা।এখানে বসে থাকো আমি তোমার ড্রেস নিয়ে আসছি।আলমিরা থেকে পোলো শার্ট আর জিন্স দিয়ে বলে পড়ে নাও।রিয়া আমি একজন সরকারী চাকুরীজীবী এগুলো পড়া আমার মানায় না।অফিসে যেতে বলিনি তোমাকে, আমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে বলেছি।ড্রেসটা পড়ে আয়নার সামনে যেতেই পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে গেল।বাহ্ বেশ স্মার্ট লাগছে তো আমাকে।রিয়া কেমন লাগছে আমায়?ভেবেছিলাম আমি কালো তাই ফর্সা জামাই পাবো কিন্তু সেই পেলাম তোমার মত এক পিস।ভালোই লাগছে রিয়া শাড়ি পড়তে পড়তে বলছে কথাগুলো।শাড়ির কুচি দিতে পারছিনা একটু হেল্প করো।হা হা…এরকম করে কেউ শাড়ি পড়ে?কোনোদিন পড়োনি?হ্যা এর আগে মনে হয় আমার চল্লিশটা বিয়ে হইছিল যে আমি শাড়ি পড়া জানব।কুচি দিয়ে দাও।

শাড়িতে কুচি দিয়ে ওর নরম পেটে গুজে দিতেই মাথায় একটা থাপ্পর দিলো।কি হলো?থাপ্পর দিলে কেন?শাড়ি কুচি দিতে বলেছি পেটে গুজে দিতে বলিনি আমি।কি হ্রামি বউ আমার?কথায় কথায় মাইর দেয়।এই শোনো চুল ছেড়ে দিব নাকি বাধব?বেধে ফেলো।না ছেড়ে দিয়ে রাখব।তাহলে আমাকে কেন বলছো বাধবে নাকি ছেড়ে দিবে?দেখলাম তোমার রুচিটা কেমন।কেমন আবার?পুরাই ক্ষ্যাত মার্কা।উফ…হেমলক থাকলে এখনই খেয়ে মরতাম আমি।যাও বাইক বের কর আমি নিচে আসছি।বাইক নিয়ে দেখি ট্যাংকি প্রায় খালি।তার মানে তেল তুলতে হবে।এদিকে বার বার হর্ণ দিয়েই যাচ্ছি কিন্তু রিয়া আসছেনা।১০মিনিট পর রিয়া নিচে এসে বলে চলো হয়ে গেছে।এতো দেরী করলে কেন?এমন এমন কাজ কর তুমি যে মেজাজ হারিয়ে ফেলি?এটুকুতেই মেজাজ হারিয়ে ফেলো তাহলে আমি যখন তোমাকে জ্বালাব তখন তুমি আমাকে কেমনে সহ্য করবে?জ্বালাবে মানে?শোনো আমি কেন দেরী করছিলাম জানো?কেন?তোমার ধৈর্য্য দেখছিলাম আমার কাজের প্রতি।কি পেলে?তুমি আসলেই অধৈর্য্যবান একটা ছেলে।

আমার একটা পরীক্ষায়ও তুমি পাশ করনা।এমন ফেল করাই কর যে উল্টো আমিই তোমার কাছে আরো নম্বর পাব।আচ্ছা দেখা যাবে কার ধৈর্য্য কতটুকু।গাড়িতে ওঠো তারাতারি।বাইক স্টার্ট করে সোজা তেল পাম্পে গেলাম।এখানে কেন আসলে?তেল নাই বাইকে তাই তেল নিতে আসলাম।প্রায় পনের মিনিট লাগল তেল নিতে।আমি লক্ষ্য করলাম রিয়া রাগে গজগজ করছে কিন্তু কিছু বলছেনা।বাইকে উঠে রিয়াকে প্রশ্ন করলাম বি প্যাশেন্স মাই ডিয়ার পুতুল বউ।কথাটা বলতে না বলতেই পিঠের উপর ধুমধাম শুরু হইলো কিছুক্ষণ।বাধ্য হয়ে বাইক থামায়া নিচে নামছি।দেখি বউ আমার কান্না করছে।এই তুমি কান্না কেন করছ?তুমি আমাকে কষ্ট দাও কেন?তুমি যে আমাকে কষ্ট দাও তখন আমারও এমন লাগে।আমি ভালোবেসে তোমার সাথে এমন করি।যেদিন মরে যাব সেদিন বুঝবে।আর তুমি আমার সাথে আমার ব্যবহারের প্রতিশোধ নাও।এমন কেন তুমি?ভালোবেসে এরকম করলে আপত্তি নাই কিন্তু কখনও প্রতিশোধ নিবানা।(কেদে অস্থির) আসলেই তো!আমি ওর ব্যবহারের প্রতিশোধ নিই।রিয়া ঠিকি বলেছে আমি পাশ করার যোগ্য তো নই-ই বরং পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতা রাখিনা।দিয়া বাড়ি পৌছাইলাম অবশেষে।অনেক বড় রাস্তা অনেক দুর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে।

এই শোনো?কি?বাইকে যাবনা।কেন?তোমার হাত ধরে এমন অজানা রাস্তার শেষটুকু দেখব।রাস্তাটা এতই লম্বা ছিল যে চোখ শেষ পর্যন্ত পৌছায়না।চারপাশে বড় বড় ঘন সবুজ ঘাস, হালকা ঝিড়ি ঝিড়ি বাতাস,রিয়ার হাতের আঙ্গুল আমার আঙ্গুলে বাধা,ঝিড়ি বাতাসে রিয়ার খোলা চুল আমার মুখে এসে লাগছে,রিয়ার চুলের গন্ধ শরীরের গন্ধ আমার নাকে এসে লাগছে।মাতাল করা এক অনুভূতি।জানিনা এই অনুভূতির নাম কি দিব!যে একবার এই অনুভূতির স্বাদ পেয়েছে সে এমন মানুষের সাথে সারাজীবন এরকম রাস্তায় হাটতেই থাকবে।আর একটু সামনে গেলে কাশফুল পাওয়া যাবে।আমি আর হাটতে পারছিনা আমাকে কোলে নাও।রিয়াকে কোলে নিয়ে আমি হাটছি,চারপাশে নিস্তব্ধতা নীল আকাশ গৌধুলির সুর্য্যের আলোতে রক্তবর্ণ ধারণ করেছে।ঐ দূরে কয়েকটা সাদা বক উড়ে যাচ্ছে।রিয়া আমার কোলে শুয়ে শুধু আমাকে দেখছে।অদ্ভুত চাহনিযুক্ত চোখ আমাকে নেশায় ফেলছে।মনে হচ্ছে ও আমাকে আবারও সম্মোহন করার চেষ্টা করছে।কাশফুলের মধ্যে চলে এসেছি।রিয়াকে নিয়ে আমি দাঁড়িয়ে আছি।দুজনের মুখে কোনো কথা নাই।চুপচাপ নিরবতা এমন সময় একটা প্লেন উরে গেল আকাশে অনেক শব্দ করে।দুজনের ঘোর কেটে গেল তখন রিয়া নামতে চাইলো।ওকে নামিয়ে কাশফুল ছিড়ে ওর গায়ে ঝাকুনি দিয়ে মেখে দিচ্ছি।

পুতুলটা দোড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।হঠাৎ করেই ওকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না।প্রথমে হালকা ভাবে নিলেও পরে সিরিয়াসলি ওকে হারিয়ে ফেললাম আমি।কোন দিক চলে গেছে বুঝতে পারছিলাম না এই বড় বড় ঘাস আর ফুলের মাঝে ও সত্যি হারিয়ে যাচ্ছে।পাগলের মত হয়ে গেছি আমি রিয়াকে না পেয়ে।যখন নিজের উপর কন্ট্রোল হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়লাম তখন কে যেন কাধে হাত রাখল।পেছন ফিরে দেখি রিয়ার চোখে পানি।হ্যা আমি রিয়াকে খুঁজে পেয়েছি।এই পুতুল কই গেছিলা তুমি?আরেকটু হলে আমি এখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলতাম।নইলে এখানেই নিজেকে শেষ করে দিতাম।কথাটা বলতেই রিয়া আমার মুখ চেপে ধরল।কিছু বলছেনা ও শুধু কাঁদছে।হঠাৎ করেই রিয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।ওকে কোলে নিয়ে দৌড়ে বাইকের কাছে আসলাম।পানি মুখে ছিটিয়ে ওর জ্ঞান ফেরালাম।কি হয়েছে রিয়া?খুব কষ্ট হচ্ছে?তুমি আমাকে এতটা ভালোবাসো আমি বুঝতেই পারিনি।তোমার ভালোবাসা ফিল করতে গিয়ে আমার মাথা ঘুরাইছিল।একটু পানি খাও।অন্ধকার হয়ে গেছে প্রায়।বাইকে রিয়াকে উঠিয়ে ওর হাত আমার কোমরে পেচিয়ে নিলাম তারপর সোজা আমার বাসায় চলে আসলাম।

আমি বুঝতে পারছিলাম রিয়ার বিশ্রাম দরকার কারন আজকে সারাদিন ও রান্না করা সহ অনেক পরিশ্রম করছে।মেয়েটাকে কোলে নিয়ে দরজা নক দিতেই মা অস্থির হয়ে বলল কি হইছে?কিছুনা মা, মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেছিলো।এখন রেস্ট নিলেই ও ঠিক হয়ে যাবে।একটু গরম দুধ ওকে খাইয়ে দিলাম।ও খুব ক্লান্ত তাই ওকে বুকে নিয়ে শুয়ে আছি।মা এসে একবার দেখে গেল আমরা ঠিক আছি কিনা।সকাল হয়ে গেছে তবুও ও আমার বুকে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।ওকে বিছানায় একা রেখে উঠতেও পারছিনা।অনেকক্ষণ পর উঠব এমন সময় রিয়া আমার টি-শার্ট টেনে ধরল।যেওনা পিচ্চি বর।আমার কাছে থাকো আরেকটু।এবার আর উঠতে পারলাম না।আমার পুতুল বউ আমাকে কাছে টানছে কিভাবে আমি দুরে যাব? হাত দিয়ে রিয়ার চোখ বন্ধ করে কপালে মিষ্টি করে আদর দিয়ে দিলাম।ও আমাকে আরো জোড়ে চেপে ধরল।একটু পর নিজেই লাফিয়ে উঠে বলে এই তোর কাণ্ডজ্ঞান নেই?অফিসে যাওয়া বাদ দিয়ে বউয়ের সাথে পিড়িত করা হচ্ছে?কি হ্রামি বউ!! নিজেই টেনে ধরে রেখে এখন আমাকে কাণ্ডজ্ঞানহীন বলছে।রিয়া নিজেই বিছানা থেকে নেমে গিয়ে টেবিলে নাস্তা রেডি করল।আমি গোসল শেষে টাওয়াল পড়ে বসে আছি।

আমার এই অবস্থা দেখে ওর চোখে আগুন ধরে গেল।মাথার পিছনে থাপ্পর দিয়ে বলে ছোট বাচ্চাদের মত ড্রেস না পড়ে টাওয়াল পরে বসে আছো কেন?ওমা!তুমি না বললে আমি তোমার পিচ্চি বর!পিচ্চিরা কি কিছু করতে পারে?পড়িয়ে দাও আমাকে ড্রেস।ওরে হ্রামি জামাই!কি খ্রাপ?আমি তোর বান্দি নাকি যে যা ইচ্ছা তাই করাবি?উহু…তুমি আমার পুতুল বউ।একটানে টাওয়াল খুলে দিছে আমার।লজ্জায় আমি শেষ।দৌড়ে খাটের কোনায় লুকাইলাম। কিসের লজ্জা?পিচ্চি বাচ্চারা আবার লজ্জা পায় নাকি?এ…. এ… তোমাকে পড়িয়ে দিতে হবেনা আমিই পড়ে নিব।এখন রুম থেকে যাও।হাসতে হাসতে চলে গেল রিয়া।শার্টের বোতাম লাগাচ্ছি এমন সময় রিয়া এসে বলল এই অধিকার আমি চাই।রিয়া আমার শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিচ্ছে।টাই লাগিয়ে দিয়ে চুল আচড়ে দিল।তারপর আমার মোটা ফ্রেমওয়ালা চশমা চোখে পড়ায়া দিয়ে বলে ভুলভাল দিকে তাকাবেনা।যদি তাকাও খুন করে ফেলব।খুব দেখার ইচ্ছা হলে এই চশমা দিয়ে আমাকে দেখবে। নাস্তা শেষে দরজার সামনে রিয়া আমাকে বিদায় দিতে আসছে।বাই বলে যাব এমন সময় বলে এই পিচ্চি বর শোনো?কানের কাছে মুখ এনে চুপি চুপি বলল “ভালোবাসি তোমায় পিচ্চি বর”।আমিও ওর কানের কাছে গিয়ে বললাম “ভালোবাসি তোমায় পুতুল বউ”।বিকেল বেলা অফিস থেকে ফিরে দেখি রিয়া বিছানায় পুতুলের মত জরসরো হয়ে শুয়ে আছে।কেমন যেন বুকের মধ্যে একটা অসার হয়ে যাওয়া অনুভূতি বিদ্যুৎবেগে খেলে গেল।আমি কেমন যেন হয়ে গেলাম।

গোসল করে ক্যাজুয়াল ড্রেস পড়ে রিয়ার পাশে বসলাম।মা ডাইনিং থেকে ডাকছে আমায়।আমার একদমই যেতে মন চাচ্ছিল না।রিয়ার মুখটা কেমন মায়াবী লাগছে।ওর কালো ভ্রু আমায় ডাকছে।নাহ্ রিয়া আমাকে অদ্ভুত এক উপায়ে কাছে টানছে।বিয়ের কয়েকদিনের মাঝেই ও আমার কত আপন হয়ে গেছে।বাসায় ফিরে রিয়ার কালো মায়াবী মুখটা না দেখলে ছটফটানি হয়।অফিসে বসে ওর কথাই ভাবি যে বাসায় কখন যাব আর আমার পুতুলের মত সাজিয়ে রাখা বউটাকে কখন দেখব।আগে আমি এমন ছিলাম না।সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গার পর নাস্তা করে অফিসে যেতাম।ফিরতাম খুব তারাতারি তারপর একটা লম্বা ঘুম দিয়ে সন্ধায় বন্ধুমহলের আড্ডাখানায় রাত ১০ পর্যন্ত চলতো আড্ডা।বাসায় ফিরে খাওয়াদাওয়া করে নিউজ,ফেসবুক চেক,ক্লাব ফুটবল দেখে ঘুম।রিয়া আমার জীবনে এসে এসব বদলে দিল তার সাথে আমাকেও বদলে দিল।আগে সারাদিন কি সব আজেবাজে চিন্তা করতাম আর এখন চিন্তা করি রিয়াকে নিয়ে।এসব চিন্তা করতে করতে রিয়ার কপালে চুমু এঁকে দিলাম।

ডায়নিং -এ যাব খাইতে এমন সময় রিয়া আমার হাত টেনে ধরল।মনে হয় ওর ঘুম ভেঙে গেছে।আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি।কিছু যেন ও বলতে চাইছে কিন্তু পারছেনা।নিরবতা ভেঙে বললাম তুমি খাইছো?আমি তোমাকে না খাইয়ে কখনও খেতে পারি।এসো চলো খাবে আমার সাথে।মা টেবিলে খাবার দিয়ে গেছে।রিয়া উঠতেই চাচ্ছেনা।অগত্যা ওকে কোলে নিয়ে ডাইনিংরুমে চলে গেলাম।চেয়ারে বসিয়ে আমার পুতুলকে আগে খাইয়ে দিলাম।রিয়ার চোখে পানি টলমল করছে।তুমি কাঁদছো কেন?কই নাতো?ও লুকিয়ে গেল ব্যাপারটা।মেয়েরা যেন কেমন টাইপের হয়।নিজের মনের কথা,চাপা অনুভূতি,ভালোবাসা,কষ্ট,অভিমান,রাগ এসব পুষে রাখে খুব যত্ন করে।সৃষ্টিকর্তা মেয়েদের এই ক্ষমতাটা দিয়েছেন খুব ভালোভাবে।আর পুরুষেরা এই ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত।বেশিরভাগ পুরুষ মেয়েদের ডোমিনেট করতে পছন্দ করে।

মেয়েদের দাসি ভাবে।মনে করে মেয়েরা জন্মেছে পুরুষের সেবা করার জন্য।আসলে কি তাই?একটা পুরুষও মানুষ একটা নারীও মানুষ।এদের সবার সমান অধিকার।প্রত্যেক স্বামী তার স্ত্রীর হক আদায় করবে এটাই নিয়ম।আমিও সেটা করার চেষ্টা করি।রিয়ার কিছু হলে আমি মনে হয় বাঁচবোনা এটা টের পাই।এই কয়েকদিনে ও আমাকে ওর দিকে ডায়ভার্ট করে নিছে।উহু ডোমিনেট করে নয় ভালোবাসা দিয়ে।মেয়েরা ভালোবাসা দিয়ে পৃথিবী জয় করার সামর্থ্য রাখে।রিয়া ওর সামান্য ভালোবাসা দিয়ে আমাকে জয় করেছে।আমি সত্যিই রিয়াকে ভালোবেসে ফেলছি।খাওয়া শেষে পুতুলটাকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আমি রুমেই হাটাচলা করলাম।ও আমায় কাছে ডাকছে।নাহ্ পারিনা রিয়াকে ইগনোর করতে।ওর পাশে যাওয়ার পর আমার টিশার্টের বুকের সামনের গলা ধরে আমার হাতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল।কি অদ্ভুত মেয়েটা।দুইদিন আগে আমাকে চিনতো না এখন কত আপন করে নিছে আমাকে।

ওর কয়েকটা চুল আমার মুখের উপরে বাতাসে ঘোরাফেরা করছে।মেয়েটা কালো হলেও বেশ মায়াবী আর সুন্দরী(আমার কাছে)।সন্ধায় ঘুম থেকে উঠে নামায শেষে রিয়ার আবদার শুনতে হচ্ছে।তখন ঘুম আর ক্ষুধার জন্য আমাকে প্যারা দেয়নি কিন্তু এখন ওসবের ছিটে ফোটাও নাই তাই অত্যাচার শুরু হচ্ছে ধীরে ধীরে।এটা কেমন মধুর অত্যাচার?ও রান্না করছে আর আমি ওকে পাহাড়া দিচ্ছি।কেন দিচ্ছি? ওর গায়ে যদি আগুন লাগে সেজন্য।আমিও কেমন যেন হয়ে গেছি।সবসময় রিয়ার পাশে থাকতে ভালো লাগে।তাহলে কি আমি বউ পাগলা?ধুর তা হতে যাবে কেন?রিয়াকে ভালোবাসি তাই ওর পাশে থাকি আর টেক কেয়ার করি এখানে বউ পাগল হওয়ার কি আছে?আমার মাথায় এসব চিন্তা আসছে কেমনে?আচ্ছা রিয়ারও কি এমন চিন্তা আসে মাথায়?জিজ্ঞেস করে দেখব?নাহ্ থাক।যদি আবার ডায়নি রুপ ধারন করে তবে এবার হাত দিয়ে নয় বটি দিয়ে গলা নামাবে।হায় খোদা?আমি বউকে ভয় পাই?আরে ধুর ছাই!বউয়ের মিষ্টি আদরগুলোকে ভয় পাই আমি।লাউ গাছের ফুলের বরা ভাজতেছে রিয়া।এক কাজ করি লাউ গাছের ফুল দিয়ে ওকে প্রপোজ করি!ওয়াক!বউকে কেউ প্রপোজ করে?গার্লফ্রেন্ডকে প্রপোজ করতে হয় তাইলে রিলেশন টেকে বেশিদিন।বউকে প্রপোজ করলে ডিভোর্স হয়।

রিয়াকে পেছন থেকে কেমন যেন জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।ইচ্ছে করছে ওর কোমড়ে হাত দিই।ছিঃ রিয়ার পারমিশন ছাড়া গায়ে হাত দিলে ও কি ভাববে?ভাববে আমি খারাপ ছেলে।আচ্ছা রিয়া আমার বউ তাই যা ইচ্ছা তাই করব তাতে খারাপ ভাবার কি আছে?নাহ্ আমি ওকে ভোগ্য পণ্য ভাবতে পারিনা।ও আমার পথ চলার সাথী।ওর সাথে এমনটা করা ঠিক হবেনা।পিচ্চি বর?হ্যা বলো?এসব আজে বাজে চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো আর আমাকে পেছন থেকে কোমড় জড়িয়ে ধরো।কি লজ্জা কি লজ্জা!রিয়া জানলো কেমনে আমি এসব ভাবছি?ওর ইন্দ্রিয় এতটা সচল ভাবতেই অবাক লাগছে।মন চাইছে প্লেট দিয়ে ওর মাথায় ঠাস করে একটা মাইর দিই।এত বোঝে কেন আমাকে?আমিতো কিছুই বুঝিনা খালি অাজেবাজে চিন্তা করি।গাধা জামাই একটা।রান্না শেষ হলো প্রায় নয়টায়।রিয়া ফ্রেশ হয়ে এসে বলে এই আমাকে কেমন লাগছে?এই রাতের বেলায় ও শাড়ি কেন পড়ল বুঝলাম না।কালো মেয়ে কালো শাড়ি, ভেজা চুলগুলো ছেড়ে দেয়া এখনও চুল দিয়ে টপটপ পানি পড়ছে।এ কেমন পবিত্রতা? এরকম পবিত্রা কখনও দেখিনি তো!এমনকি চিন্তাও করিনি একটা মেয়েকে গোসলের পর ভেজা শরীরে, ভেজা চুলে এতটা পবিত্রা লাগে।জীবনটা আসলেই অদ্ভুত ধরনের।

রিয়াকে না পেলে আমার এসব কখনও দেখাই হত না,লেখাও হত না আর চিন্তা করাও হত না।মেয়েটা আমার জীবনে এসে সব চিন্তাভাবনার মাঝে পক্ষান্তর ঘটাল আর আমি ভালোভাবেই সবকিছু মনের চোখ দিয়ে দেখতে পারলাম এবং পারছি।এ কেমন মেয়ে!যাদুটোনা করল নাকি আমাকে?ব্লাক ম্যাজিক?ওয়াক জামাইকে কেউ ব্লাক ম্যাজিক করে?রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে শুয়ে পড়েছি।মধ্যরাতে রিয়া ঘুম থেকে উঠে বলে এই পিচ্চি বর ঔঠ।কি হইছে?আমার হাতে মেহেদী দিয়ে দাও।কি হ্রামি বউরে!!মাঝরাতে এসব কথা বলে কেন?ঘুম আসছেনা?এসো ঘুমিয়ে দেই তোমাকে।ওই আমি তোক বলছি মেহেদী দিয়ে দিতে ঘুমিয়ে দিতে নয়।কানে কম শুনিস নাকি?আমি মেহেদী দিতে পারিনা।আম্মু আমাকে বলেছে তুই ভালো মেহেদী দিতে পারিস।হায়রে মা আমার!এটা না বললে কি হত না?অত্যাচারটা সহ্য করতে হত না তাইলে।জীবন শেষ করে দিচ্ছে এই মেয়ে।মাঝরাতে বউয়ের হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছি না ঘুমিয়ে।পৃথিবীতে এর চেয়ে বড় নিপীড়িনের ঘটনা একটাও খুজে পাওয়া যাবেনা।

এই শোনো?আবার কি?বাইরে চলো তিন নাম্বার রোডে ফুসকা বিক্রি হয় সারারাত।হ্যা, তো?ওই! তো আবার কি?ফুসকা খাওয়াইতে নিয়ে চলো।এরকম উতাল-পাতাল বউ আমার কপালে কেন দিছো খোদা?একটা বোবা আর ল্যাংড়া বউ দিলেই শান্তিতে থাকতে পারতাম।না পারতো কিছু বলতে, না চাইতো কিছু খেতে, না চাইতো বাইরে বের হতে।হাতে মেহেদী নিয়ে কেউ ফুসকা খায়?তোমার হাতে খাব।ওরে আল্লাহ্ আমারে তুইলা নাও।গেলাম তিন নাম্বার রোডে ফুসকা খাইতে।গিয়ে ফুসকা অর্ডার করলাম।রিয়াকে খাইয়ে দিচ্ছি।একবার বললও না তুমিও খাও।স্বার্থপর বউ।এই শোনো?আবার কি?আইসক্রিম কিনে দাও খাব।বাম হাত দিয়ে খেতে হবে কিন্তু।কিহ্ আমি বাম হাত দিয়ে খাব তোর ডান হাত ভালো থাকতে?হাত ভেঙে ঝুলিয়ে রাখব জাদুঘরে।আচ্ছা আচ্ছা আমি খাইয়ে দিচ্ছি।বাসায় এসে ঘুমাব এমন সময় কানের কাছে এসে বলে ভালোবাসি।কেমনটা লাগে?এরকম প্যারার নাম কখনও ভালোবাসা হয়?পিচ্চি বর।কি?বিকেলে তোমার হাতে খাবার খেয়ে আমার খুব ভালো লাগছিল।ইচ্ছে করছিল আবারও তোমার হাতে খেতে।

তাই মাঝরাতে উঠে তোমায় ডেকে নিজের হাত বন্ধ করলাম মেহেদী দিয়ে।তারপর তোমায় নিয়ে গেলাম ফুসকা খাইতে যাতে তোমার হাত দিয়ে খেতে পারি।ফুসকা খেয়েও শান্তি হচ্ছিল না।আরও তোমার হাতে খেতে মন চাচ্ছিল।তাই পরে আইসক্রিম কিনতে বলছি।আমি শুুধু অবাক হয়ে রিয়ার কথা শুনছি।এমন বিটলামি বুদ্ধি ও পায় কোত্থেকে? তোমাকে অনেক কষ্ট দেই তাইনা?তুমি অনেক রাগ করো আমি বুঝি।কিন্তু জানো তোমাকে সবসময় চাই, সবসময় ভালোবাসি তাই এমন করি।ঘুমের মাঝেও তুমি আমার চিন্তার কারন হইছো।কেমনে থাকি বলো তোমায় ছেড়ে।আল্লাহ্ কারে দিছো তুমি আমার ভাগ্যে! এ মেয়েকে না পেলে আমার অর্ধেক জীবন না দেখা থাকত।আলহামদুলিল্লাহ্‌। হাজার শুকরিয়া তোমার দরবারে এমন একটা বউ দিছো আমারে।সকালবেলা ঘুম ভাঙলো ঠান্ডা কোনো পানির অনুভূতিতে।চোখে মেলে দেখি আমার টি-শার্ট ভেজা।কি ব্যাপার টি- শার্ট ভেজা কেন?একি রিয়ার নাক দিয়ে পানি পড়ছে কেন?রিয়া? রিয়া?উম…কি হইছে?(ন্যাকা ন্যাকা কণ্ঠে)।তোমার নাক দিয়ে পানি পড়ছে।

হাত দিয়ে নাক মুছতেই ওর হাতে নাকের ঘন পানি লাগল।ছিঃ রিয়া তুমি আমার বুকে,হাতে এগুলা কি লাগাইছো।ও হাসছে কিন্তু বুঝতে পারলাম ঠান্ডা ওকে জাপটে ধরেছে।কিহ্!ঠান্ডার এত বড় সাহস আমার বউকে জাপটে ধরছে?আমি আমার বউয়ের ভাগ কাওকে দিতে পারবনা।উহু..আমার কান্না আসছে।রিয়ার এরকম হতে পারেনা।আচ্ছা!কালকে রাতে ওকে নিজ হাতে আমি আইসক্রিম খাইয়ে দিছিলাম।তাহলে ওই আইসক্রিম ব্যাটাই আমার বউকে ঠান্ডার কাছে নিয়ে গেছে।হ্লার আইসক্রিমওয়ালা তোর বউও যেন আজ ঠান্ডায় মরে।তারাতারি উঠে গরম পানি করে রিয়াকে মধু দিয়ে চা দিলাম।ও খাচ্ছে আর নাক ঝাড়ছে।আজকে ওর রেস্ট দরকার।আমার আজ একাই রেডি হতে হবে।তারাতারি গোসল করে আমি টাই লাগাচ্ছি এমন সময় রিয়া চিৎকার করে উঠল।পিচ্চি বর আমি টাই লাগিয়ে দিব।মাথা ব্যথা নিয়ে পুতুলটা উঠে দাঁড়িয়ে আমার টাই লাগিয়ে দিয়ে আমাকে বিদায় দিল।যাওয়ার সময় শুধু ওর কপালে চুমু দিলাম আর নিজের টেক কেয়ার নিতে বললাম।না পারবনা নিজের টেক কেয়ার করতে।পুতুল আমি অফিসে গেলে কেমন করে যত্ন নিব?আমি প্রতি ঘন্টায় তোমায় ফোন করব।আম্মুকে ডাক দিয়ে বলে গেলাম রিয়ার যত্ন নিতে।অফিসে গিয়ে টেনশন কমছে না।বার বার ফোন দিয়ে ওর খোঁজ নিলাম।দুপুরে নামায পড়ে আল্লাহর কাছে রিয়ার জন্য দোয়া করলাম।

বিকেলে তারাতারি বাসায় ফিরে দেখি প্রায় অনেকটাই সুস্থ্য।আল্লাহ্ আমার দোয়া কবুল করেছে।আসলে সত্যি সত্যি মন থেকে যদি কারও জন্য দোয়া চাওয়া যায় তবে সেটা কবুল হয়।কিন্তু রিয়া গোসল করেনি আজ।গরম পানি করে ওকে গোসলে পাঠালাম।গোসল শেষে ও বেড়িয়ে আসল।মাথার চুল বড় হওয়ার জন্য চুলগুলো ভেজা থাকবে অনেকক্ষণ। আর ভেজা থাকলে ওর ঠান্ডা সারবেনা।তাই ওকে বসিয়ে চুল শুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।ওর শরীর থেকে কেমন যেন গন্ধ বের হচ্ছে।প্রিয়াতমার চুলের আর গায়ের গন্ধ আমায় মোহময় করে রাখছে।সন্ধা পর্যন্ত ওর যত্ন নিলাম আর তিন মগ চা খাওয়ালাম।রিয়া এখন মোটামুটি সুস্থ্য।ওর সাথে মাগরিবের নামায পড়ে টিভিতে একটু ক্রিকেট খেলা দেখছিলাম বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডের।রুমে একা থাকতে ওর ভাল্লাগছেনা তাই আমার কাছে এসে বসল।কিন্তু পুতুলটা বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারলনা।শুয়ে পড়ল আমার পায়ের উপর।ওর কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম আর সাকিব রিয়াদের ব্যাটিং দেখছিলাম।বউটা কোলের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে।টিভির সাউন্ড কমিয়ে ওর ঘুমের সুবিধা করে দিলাম।নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে পুতুলটা।মেয়েটা বড়ই অদ্ভুত ধরনের।কত আপন হয়ে গেছে আমার কাছে।

ও আশ্রয় খোঁজে আমার সারা শরীরে।আমিও কেমন যেন ওকে কাছে রাখতে,আদর করতে,যত্ন নিতে ওর পাগলামি মেনে নিতে ভালোবাসি।এককথায় আমি রিয়াকে ভালোবাসতে ভালোবাসি।মেয়েটা একসময় আমাকে চিনতো না জানতো না।প্রিয় মুখ,মানুষ ছেড়ে একটু সমাজের ধরাবাধা নিয়ম (বিয়ে) মেনে আমার কাছে এসেছে।একজন পিতার কাছে তার কন্যা সন্তান যে কত আদরের তা আমার বড় আপুকে দেখে বুঝেছি।রিয়াকেও ওর বাবা তেমনি ভাবেই ভালোবাসে।কোনো এক অদৃশ্য বিশ্বাস নিয়ে তার রাজকন্যাকে আমার হাতে তুলে দিছে।একজন মানুষের দায়িত্ব দিয়েছে আমার কাধে।আমার হাতে হাত মিলিয়ে দিয়েছে নিজের সবচেয়ে প্রিয় কন্যাকে।কতটা বিশ্বাস থাকলে একজন বাবা এই কাজ করতে পারে তা ভাবার অপেক্ষা রাখেনা।নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখছি আমি।কেমন হাত আমার যে এই হাতে রাজকন্যাকে তুলে দিল?আমি কি এই দায়িত্বের যোগ্য?বাহ্ বাহ্ সাকিবের সেঞ্চুরী হয়ে গেল।চিল্লানি দিতেই রিয়া নরে উঠল।সাবধানে খেলা দেখছি যাতে ওর কোনো কষ্ট না হয়।বিয়ের আগে আমি নিজের দায়িত্বই নিতে পারতাম না এখন নিজেরটাও করি আর পুতুলেরটাও করি।ভাবছি আমি কি একজন সত্যিকারের আদর্শ স্বামী হওয়ার যোগ্যতা রাখি?রিয়া কি আমাকে নিয়ে সুখী?নাকি আমাকে ওর মনের মত করে পায়না তাই পাগলামি করে?একজন মানুষ হিসেবে প্রত্যেকের এই বিষয়টা খেয়াল রাখা উচিত।বারোটা বাজে রিয়া ঘুম থেকে উঠছেনা।

এমনিতেই তিন মগ চা খাওয়াইছি ওকে।রাতে ঘুমাবে না এটা শতভাগ সত্যি।আল্লাহ্ মরছি। তার মানে ও আমাকে রাতে ঘুমুতে দেবেনা।খেলা শেষ হতে না হতেই পাগলী বউ ঘুম থেকে উঠল।এতক্ষন পুতুলের মত ঘুমিয়েছিল আর এখন শুরু করবে আমার উপর অমানুষিক অত্যাচার।বাহ্ ওর ঠান্ডা মাথা ব্যথা আর নেই।রিয়া চলো তোমাকে খাইয়ে দিই।আমি খাব না।কেন?ভাল্লাগছেনা খাইতে।তুমি অসুস্থ ছিলে তার তোমাকে অবশ্যই খেতে হবে।কিছুতেই খেতে চাচ্ছেনা।পুইশাকের মত হাত দিয়ে গলা পেঁচিয়ে দাড়িয়ে আমার কপালে কপাল আর নাকে নাক লাগিয়ে আছে।কিছুই বলছেনা মেয়েটা।আমি কথা বলছি আর ও আমাকে আরে শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরছে।মনে হয় ও কথা বলতে আর শুনতে চাচ্ছেনা।একসময় আমার পিঠ দেয়ালে লেগে গেল।ও আমার কপালে কপাল আর নাকে নাক ঘষেই চলেছে।এমন কেন মেয়েটা?এটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকে কেন?আরেকটু এগোতে পারেনা?ও বোঝে না আমার কষ্ট হয়!অনেক্ষণ যাওয়ার পর রিয়ার মুখে কথা ফুটল।পিচ্চি বর?কি?বাইরে নিয়ে চল।

আচ্ছা বাইরে যাওয়ার জন্য তাহলে কপালে কপাল ঠেকানো আর নাকে নাক ঘষাঘষি?কি হ্রামি বউ?কেমন ভয়ংকর উপায় বের করছে আমাকে নরম করার। কোথায় যাবে?ক্ষুধা লাগছে খাইতে যাব।বাইরে কেন?বাসায় রান্না করা আছে আমি গরম করে দিই তুমি খাও।না আমি বাইরে খাব।আর জোড় করলাম না কারন আমি জানি ওকে জোড় করে লাভ নেই।সুন্দর একটা শাড়ি কুচি দিয়ে পড়ে, হাতে চুরি লাগিয়ে, কপালে ছোট্ট একটা টিপ, ঠোঁটে হালকা লিপ্সটিক নিয়ে,গলায় চিকন একটা সোনার চেইন পরে, চুলগুলো কাঠি দিয়ে বেধে সামনে আসল রিয়া।আমি কাকে দেখছি? এটা তো কোনো ফিল্মের নায়িকা!উহু ফিল্মের নায়িকারা অনেকের সাথে অভিনয় করে।রিয়া সবার সাথে অভিনয় করেনা।ও স্পেশাল।ও শুধু আমার নায়িকা।অন্য কোনো নায়কের যোগ্যতা নেই ওর সাথে অভিনয় করার।কি হলো কি দেখছো?যাবেনা? হ্যা যাব তো(অপ্রস্তুতভাবে)! বাইকে করে একটু দূরে ভালো একটা রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে গেলাম।আলোকিত নগরীতে আলোকিত ঘরে বসে আছি দুজন।

রিয়ার মনে হয় আলো ভাল্লাগছেনা।অন্ধকার চাইছে ও।আচ্ছা আলো সহ্য করতে পারছেনা কেন রিয়া?তাহলে কি ওর প্রেশার বেড়ে গেছে?রিয়া খারাপ লাগছে?পিচ্চি বর চলো স্পেশাল কাপল রুমে যাই।কেন এখানে কি খারাপ?না তবে ওখানে গেলে তোমার ভালো লাগবে।এখানেও ভালো লাগছে।তুই যাবি কিনা বল?(রেগে গিয়ে)ডায়নি ভর করেছে ওর উপর।রক্ষা নেই আর, চলে গেলাম স্পেশাল কাপল রুমে।ওয়েটারকে ডেকে যা যা খাবে তা অর্ডার করল।আর বলল একটা বড় ক্যান্ডেল নিয়ে আসতে।খাবার চলে আসলো আর রিয়া ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে দিয়ে রুমের লাইট অফ করে দিল।পিচ্চি বর তোমায় ভালোবাসি। তোমায় নিয়ে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করার ইচ্ছা ছিল তাই ইচ্ছা করে বেশিক্ষন শুয়েছিলাম।ঘুম ভাঙার পরও শুয়েছিলাম গভীর রাতের অপেক্ষায়।সামনে মোমবাতি জ্বলছে আমি স্পষ্ট রিয়া নামক ডায়নিকে দেখতে পাচ্ছি যে ডায়নিটা পুতুলের মত দেখতে।রিয়া খাচ্ছে আর আমি ওকে দেখছি।অদ্ভুত মেয়েটা।প্রতিদিন আমাকে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা উপহার দিচ্ছে।আজকে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করবে আমাকে বলেইনি।ভাগ্যিস ভিসা কার্ড ছিল নইলে এত টাকা বিল পে করতাম কিভাবে?ওয়েটারকে ডেকে একটা বুকে নিয়ে আসলাম চুপি চুপি।রিয়াকে ওটা দিয়ে সারপ্রাইজ দিলাম।

রিয়া এতটা খুশি হবে ভাবিনি।মনে হয় আজকে রাতে ও আমার কাছে এই উপহারটাই মনে মনে চেয়েছিল।ডিনার শেষে বাইক নিয়ে বের হলাম।প্রায় রাত দুটো।পিচ্চি বর আমার রাতের শহর দেখার খুব ইচ্ছা,ঘুরিয়ে দেখাবে?আমি তোমার পিঠে মাথা রেখে পুরে শহর ঘুরে দেখব।সামনে একটা তেল পাম্প থেকে তেল নিয়ে শহরের রাজপথে বের হলাম।হালকা ঠান্ডা বাতাস, নিয়ন আলোয় রাস্তা চুপ করে ঘুমিয়ে আছে।ঘুমন্ত শহরের বুকে আমি আর রিয়া ছুটছি।রাতের শহরটা দেখতে যে এত সুন্দর তা কল্পনার বাইরে। রিয়ার মাথা আমার কাধে আর হাত আমার কোমড়ে পেঁচিয়ে রাখছে লতার মত।শহরের অলিগলিতে বাইক নিয়ে রিয়াকে ঘুরিয়ে দেখালাম।একটা ফাকা জায়গায় আসার পর দেখলাম অনেক জোনাকিপোকা উড়ছে।জোনাকির আলোয় অন্ধকার রাস্তা আলোকিত হয়ে গেছে।রিয়া আমাকে বাইক থামাতে বলল।বাইক থেকে নেমে পুতুলটা জোনাকি কুড়াতে দৌড়াচ্ছে।আমি বাইকে হেলান দিয়ে ওর জোনাকিপোকা ধরা দেখছি।ও এদিক ওদিক ছুটছে।দেখছি আর ভাবছি।এটা কেমন মেয়ে!অদ্ভুত রকমের স্বপ্ন চাওয়া নিয়ে এসেছে আমার জীবনে!অনেকগুলো জোনাকিপোকা আমার সামনে এসে উড়ছে।মনে হয় ওরা আমার কাছে ধরা দিতে আসছে।মুঠোয় মুঠোয় জোনাকি কুড়িয়ে নিলাম।

রিয়া একটাও জোনাকিপোকা ধরতে না পেরে ক্লান্ত হয়ে আমার কাছে আসলো হেল্প নিতে।চোখ বন্ধ কর পুতুল।রিয়া চোখ বন্ধ করে আছে।হাতের মুঠো খুলে দিতেই কয়েকটা জোনাকি উড়ে যাচ্ছে আর কয়েকটা আমার হাতেই লেগে আছে আর আলো দিচ্ছে।রিয়াকে চোখ খুলতে বলাতেই ও অবাক এই দৃশ্য দেখছে।হ্যা রিয়া এমনটাই চেয়েছিল আমার কাছে।জোনাকিপোকা রিয়ার মুখে মেখে দিলাম।ওর গলায়, পিঠে,চুলে,শাড়িতে জোনাকি লাগিয়ে দিলাম।মনে হচ্ছে স্বর্গ থেকে কোনো অপ্সরী চলে আসছে নিজস্ব কোনো আলো নিয়ে।হ্যা রিয়া আমার কাছে অপ্সরীর মতই।যার রুপের কোনো শেষ নেই।প্রতিদিন নতুন নতুন রুপ নিয়ে আমার সামনে হাজির হয় রিয়া।ফযরের আযান দিচ্ছে দূরের কোনো এক মসজিদে।একটু পরই সকাল হয়ে যাবে।পুতুলটা অনেক ক্লান্ত তাই বাসায় নিয়ে ওকে ঘুমিয়ে দিতে হবে।বাইকে করে বাসায় যাচ্ছি।রুমে ঢুকে দেখি রিয়ার সাথে জোনাকিপোকাগুলো এখনও লেগে আছে।ওকে বিছানা শুইয়ে দিলাম।আমিও শুয়ে পড়লাম।আমার পাশে পৃথিবীর অপ্সরী ঘুমাচ্ছে।কত বড় ভাগ্যবান আমি।ওর ঘুমিয়ে যাওয়া দেখছি আমি সম্মোহিত হয়ে।কখন যে আমিও ঘুমিয়ে পড়েছি টের পাইনি।

অ্যালার্মের শব্দ শুনে ঘুম থেকে উঠে দেখি রিয়া আমার পাশে নাই।ভাবলাম মনে হয় কিচেনে গেছে।আমি বারান্দায় গিয়ে প্রকৃতি দেখলাম কিছুক্ষণ। রিয়া বেডরুমে চলে আসছে।ডায়নিটা চুল দিয়ে মুখ ঢেকে আমার পিছনে চুপি চুপি কখন এসেছে জানিনা।আনমনে পিছন ফিরতেই ওরকম ভয়ংকর দৃশ্য দেখেই আমি চিল্লায়া উঠছি।কিচেন থেকে আম্মু দৌড়ায়া চলে আসছে কি হইছে দেখার জন্য।হ্রামি বউ আমার চিল্লানির সাথে ও নিজেও গলা মিলাইছে।কি খারাপ মেয়েকে বিয়ে করছি আমি!আমার ভয় পাওয়া দেখে ও খিল খিল করে ডায়নি বুড়ির মত করে হাসছে।আম্মু এসব খুনসুটি দেখে মুচকি হেসে চলে গেল।আমার হাতে টাওয়াল ধরিয়ে দিয়ে রিয়া আবার কিচেনে গেল।তারপর সবই ঠিক ছিল কিন্তু তবুও মনে হয় কিছু ঠিক ছিলনা।রিয়া আজ টাই পড়িয়ে দেইনি,শার্টের বোতাম লাগায়নি,চুল আঁচড়ে দেইনি।যাবার সময় ডায়নিং থেকে শুধু মাথা নাড়ল।তার মানে কিচেনে মা ওকে কথা শুনিয়েছে।ভালোই হইছে ওকে কথা শুনাইছে।হ্রামি মার্কা বউ শুধু আমাকে প্যারায় রাখে।নাহ্ ভাল্লাগছে না কিছুই।বাইক ঘুরিয়ে বাসায় ফিরে কলিংবেল দিতেই রিয়া দৌড়ে এসে দরজা খুলল।কিছু বুঝলাম না ওর চোখে পানি কেন।রিয়া মনে হয় আমার ফিরে আসার জন্যই ওয়েট করছিল।

ও মনে হয় খুব করে চাইছিল ওর পিচ্চি বরটা ফিরে আসুক ওর কাছে তারপর নিজ হাতে সাজিয়ে,আদর দিয়ে বিদায় দেবে।আমাকে দরজায় দেখেই বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে মেয়েটা।ভীষন জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছিল ওকে।রুমে নিয়ে এসে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম আম্মু বকছে?মাথা নিচু করে আছে।বুঝলাম ধারনা সত্যি।আজকে হঠাৎ রিয়া আমার কাছে আসতে চাইছে।আমার খুব কাছে আসতে চাইছে।কিন্তু কেন?ওকে বুকে নিয়ে অনেক্ষণ শান্তির প্রশ্বাস নিলাম আর নিঃশ্বাস ছাড়লাম।রিয়া আজকে শরীরের সাথে খুব করে মিলিয়ে যেতে চাচ্ছিল।তারপর চুপি চুপি বের হলাম অফিসে যাওয়ার জন্য।আজকে দিয়া অফিসে বার বার ফোন দিয়েছে।মনে হয় ও আমাকে চাইছিল ওই সময়টাতে,আমাকে মন থেকে ডাকছিল যে ওর কাছে আমি চলে আসি।দুর থেকে রিয়ার ডাক আমি শুনতে পাই।বুঝতে পারি ওর মনটাকে যে ও আমাকে ডাকছে।বিকেলে বাসায় ফিরে দেখি আনিকা আসছে আমাদের বাসায়।ভালোই হইছে আনিকা আসছে।

রিয়া এখন কিছুটা সময় কাটাতে পারবে আনিকার সাথে।কেমন আছেন ভাইয়া।এইতো ভালো।কখন আসছো।মাত্রই আসলাম।রেস্ট নাও।আমি ফ্রেশ হয়ে খেতে আসলাম।রিয়া, আমি,আনিকা তিনজন খাচ্ছিলাম।খাওয়ার মাঝেই আনিকা বলল ভাইয়া তাহলে হানিমুন কোথায় করছেন।আরে ব্যাপারটা তো ভুলেই গেছিলাম আমি!মনে করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।তোমার আপুকে জিজ্ঞেস কর সে কোথায় যেতে চায়।রিয়া মনে হয় লজ্জা পেল।ওর উপর দায়িত্ব দেয়াতে কিছুটা নির্বাক হয়েছে।তুমি বল আনিকা কোথায় যাওয়া যায়।ভাইয়া সাজেক ভ্যালিতে যেতে পারেন।অসম্ভব সুন্দর জায়গা রাঙামাটি জেলার।রিয়াকে বললাম চলবে?ও মাথা নাড়ল।বউ আমার লজ্জা পাচ্ছে কেন?খাওয়া শেষে সবাই গল্প করে সন্ধায় নামায শেষে বাইরে ঘুরতে বের হলাম।এই শহরে রাত দশটা পর্যন্ত মানুষের ভীরে হাটা যায়না।গভীর রাতটাই বেশি ভালো।কোনো ট্রাফিক নেই।কেবল ফাকা রাস্তার পর রাস্তা।আনিকা মিষ্টি টক দিয়ে ফুচকা খাবে।

আমাদের এখানে এই ফুচকা অনেক বিখ্যাত।রিয়ার আবদার দই ফুচকা।আগে আনিকার শখ পুরন করে রিয়াকে দই ফুচকা খাওয়াইলাম।বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত নয়টা বেজে গেছে।কিছুক্ষন টিভির সামনে সময় কাটিয়ে ডিনার করলাম।আনিকা বলল ভাইয়া হানিমুনে যাবেন কেনাকাটা করবেন না?কালকে বিকেলে যাব শপিং করতে।রিয়াকে লিস্ট বানিয়ে রাখতে বললাম।আজকে বেশ তারাতারিই ঘুমিয়ে পড়লাম।আনিকা আসাতে আজ রাত শান্তিতে ঘুমুতে পারব এটা ভেবে খুশিতে লাফাতে ইচ্ছে করছে।আমি যে খুশি সেটা ডায়নি বউকে বুঝতে দেয়া যাবেনা।তাইলে ও আমার ঘুম হারাম করে ছাড়বে।রিয়া গেস্ট রুমে ঘুমুতে চলে গেল।লাইট অফ করে রিয়া আমার পাশে ঘুমাবে কিন্তু আমি উপর হয়ে আগেই ঘুমিয়েছিলাম।কোনোভাবে আমাকে জড়িয়ে ঘুমানোর উপায় না পেয়ে পুতুলটা আমার পিঠের উপর ঘুমিয়ে পড়ল।হঠাৎ রাতে ধুমধাম কিল শুরু হলো আমার পিঠে।জেগে দেখি রিয়া বসে আছে বিছানায়।কি হইছে পুতুল?ঘুম আসছেনা পিচ্চি বর।এসো কাছে এসো।পুতুলটাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছি কিন্তু ওর ঘুম বসছেনা।বুকের মধ্যে থেকে মাথা বের করে আমার নাকের সাথে ও নাক লাগিয়ে শুয়ে থাকল কিছুক্ষণ।

বুঝলাম ও আজকেও আমাকে ঘুমুতে দেবেনা।এই ওঠ।কি?আমার ঘুম পাচ্ছেনা।চোখ বন্ধ করপ থাকো ঘুম চলে আসবে।চেষ্টা করেছি ঘুমানোর কিন্তু পারলাম না।চলো বারান্দায় যাই।ওখানে ভুত আছে।কিসের ভুত?আমি নিজেই একটা ভুত।বাধ্য হয়ে গেলাম বারান্দায়।দুটো কুকুর গেটের সামনে ঘুর ঘুর করছে।ওদের দিকে তাকিয়ে আছে রিয়া।একটু পর ওরাও চলে গেল।ল্যাম্পপোস্ট ছাড়া সামনে দেখার মত আর কিছুই নাই।এবার রিয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল পিচ্চি বর কাছে এসো।ও নিজেই আমার কোমড় টেনে ধরে কাছে নিল।বারান্দার গ্রিলের সাথে রিয়া হেলান দেয়া আর আমি ওকে গ্রিলে চাপ দিয়ে ধরে আছি।কপালে কপাল আর নাকে নাক ঘষছে মেয়েটা।মেয়েটার মুদ্রা কি এই পর্যন্তই নাকি?নিজেও এগোবেনা আমাকেও এগোতে দেবেনা।এরকমভাবে কতক্ষণ ছিলাম মনে নাই।একসময় দেখলাম রিয়া এভাবেই ঘুমিয়ে পড়েছে।মানুষের ঘুমানোর স্টাইল যে এরকম হতে পারে তা আমার জানা ছিলনা।

সকালে অফিসে চললাম প্রতিদিনের মত করেই।রিয়ার যত্ন দিন দিন বেড়েই চলেছে।কেমন যেন হয়ে গেছি আমি।রিয়ার প্রেমে পড়েছি আমি।ওয়াক!বউয়ের প্রেমে কেউ পড়ে?তাহলে ভালোবাসি।হ্যা এবার ঠিক আছে।সবাই বউকে ভালোবাসে।আচ্ছা বউয়ের সাথে প্রেম করা ভালো নাকি ভালোবাসা ভালো?উত্তরটা জানা নেই।বিকেলে ফিরে খাওয়াদাওয়া শেষে রিয়া আমাকে লম্বা লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে বলল এগুলা কিনতে হবে।এ আর এমন কি?আরো বড় লিস্ট করতে পারতে।এটুকুই করে দেখাই।(কটুক্তি করে)।এগুলো কিনতে যে আমার ফাটবে সেটা কি ও জানে?সন্ধায় শপিং করার জন্য আনিকা যেতে চাইলে বললাম ১০টার পরে যাব।ওই সময় ভীর কম থাকে।চলে গেলাম শপিং করতে তিনজন।সবার জন্য সবকিছু কিনতে হলো অথচ হানিমুনে যাব আমি আর রিয়া।আম্মুর জন্য শাড়ি,আব্বুর জন্য পানজাবি,আনিকার ড্রেস,শশুড় শাশুড়ির ড্রেস আর নিজেদেরটা তো আছেই।অনেক রাতে বাসায় ফিরলাম।কিন্তু বাসের টিকিট বুক করা হয় নাই।কালকে করে ফেলব ভাবছি।সকালে টেবিলে নাস্তা করতে করতে রিয়াকে বললাম সামনের বৃহস্পতিবার গেলে কেমন হয়।রিয়া আমার কথা শুনে চুপসে গেল।

ওর মনে হয় এই সপ্তাহে যাওয়ার ইচ্ছে নেই।যথারীতি বিকেলে ফিরে খাওয়াদাওয়া করলাম।রাতে আনিকা,রিয়া আর আমি গল্প শেষে ঘুমালাম।এদিন রিয়া কেমন যেন বিষন্ন।ওকে কেমন যেন লাগছে।কিছু বলতে চেয়েও পারছেনা বলতে।আচ্ছা কি এমন বলতে চায় ও যে বলতে পারছেনা কোনো এক অজানা কারনে!আজকে বুকের মধ্যে নেয়ার পর সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়ল পুতুলটা।আমার আজকে রাতে আর ঘুম হলনা।রিয়াকে ডাকছিনা আমি কিন্তু ওর ঘুমন্ত মায়াবী মুখ দেখছি আমি ডিম লাইটের আলোয়।সকাল হয়ে গেছে তবুও পুতুল বউটার ওঠার নাম নেই।আমি নিজেই উঠে ফ্রেশ হয়ে ওকে ডাকলাম।রিয়া উঠতে পারছেনা।গায়ে হাত দিয়ে দেখলাম জ্বর নেই।তাহলে আমার রিয়ার কি হলো?আনিকাকে বললাম তোমার বোনকে একটু দেখে রেখো।অফিসে গেলাম অসুস্থ রিয়াকে রেখে।বিকেলে আমি আসাতে আনিকা চলে গেল।ভাইয়া আপনি আসছেন ভালো হইছে।আপুর কেয়ার নিয়েন।রিয়ার তলপেট ব্যথা করছে।পেটের উপর একগাদা বই দিয়ে রাখছে।

মেয়েটা ব্যথায় কাতরাচ্ছে।বিছানায় রক্ত দেখলাম আর ফ্লোরে রক্ত ছিটানো।ভয় পেয়েছিলাম পরে বুঝলাম ওর পিরিয়ড হয়েছে।আহারে পিরিয়ড হলে মানুষ এরকম হয়ে যায় নিজের চোখে কোনোদিন দেখিনি।একটু পর পর রিয়া ব্যথায় চিৎকার করে উঠছে।ওর কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।আমার কোনো আদর ওর ব্যথাকে কমাতে পারছেনা।ঔষধ খাওয়াইলাম কিন্তু ব্যথা কমেনা।একটু পর পর ব্লিডিং হচ্ছে।ব্যথায় ও হাটতে পারছেনা।ধরে ধরে ওয়াশরুমে নিয়ে যাচ্ছি।ন্যাকরা দিয়ে ফ্লোর মুছে দিলাম।ব্যথায় কাঁদছে মেয়েটা।হে আল্লাহ্ মেয়েদের তুমি বানিয়েছ ছেলেদের বুকের পাজরের হাড্ডি দিয়ে।কিন্তু এই হাড্ডির তৈরী মানুষের মাঝে তুমি এতটা সহ্য ক্ষমতা দিয়েছ ভাবাই যায়না।কিন্তু আমরা ছেলেরা সামান্য ব্যথায় কাতর হয়ে পরি।রিয়ার তলপেটে আমি চাপ দিয়ে ধরে রাখলাম অনেকক্ষণ।কিন্তু কিছুতেই ওর ব্যথা কমছেনা।ঘণ্টা তিনেক পর কমল কিছুটা।আমি রিয়াকে না দেখলে কোনোদিন এই ব্যথার মর্ম বুঝতে পারতাম না।একটা মেয়ে কতটা ব্যথা সহ্য করে হাসিমুখে সব কাজ করে,অফিস করে,বাইরে বের হয়,বন্ধুদের বুঝতে দেয়না তার ভিতরের ক্ষতবিক্ষত হওয়া ব্যথা।আচ্ছা মেয়েরা কিসের তৈরী যে এতটা ব্যথা সহ্য করে থাকে।রাতের বেলা বাসের টিকিট ক্যান্সেল করে সোমবার নিলাম।

আমার রিয়ার অবস্থা খুবি খারাপ।ওর কাপর চোপর,বেডশিট,ফ্লোর সব পরিষ্কার করলাম রাতে।চেঞ্জ করে নতুন একটা পড়িয়ে দিলাম।কিন্তু শেষ রাতের দিকে রিয়ার চিৎকার আমাকে ভয় পাইয়ে দিছিল।আবারও ব্যথা শুরু হলো।ব্লিডিং হচ্ছে আমি চোখের পানি আটকাতে পারছিনা।এত কষ্ট কিভাবে সহ্য করছে ও।ওকে পরিষ্কার করে গোসল করিয়ে শুইয়ে দিয়ে অফিসে গেলাম।আম্মুকে ডেকে বললাম রিয়া অসুস্থ একটু খেয়াল রেখো।বিকেল এসে দেখি রিয়া ঘুমুচ্ছে।আম্মু এসে আবারও কাপর চেঞ্জ করে দিয়ে গেছিল।আমি এসে রিয়ার মুখে কিছুটা হাসি দেখলাম।দুপুরে আম্মু ওকে খাইয়ে দিছিল।আমি খাওয়াদাওয়া করে ওর কাছে বসে আছি।প্রায় এভাবে তিনদিন পর্যন্ত রিয়া ব্যথায় কষ্ট করল।মাঝে মাঝে কমে আবার মাঝে মাঝে প্রচন্ড বেড়ে যায়।রিয়া এখন সুস্থ্য।কালকে রবিবার।আশা করি ও সোমবার একদম স্বাভাবিক হয়ে যাবে।আমিও অফিস থেকে ছুটি নিলাম।সোমবার রাতে বাস।হানিমুনে যাব,জীবনের প্রথম হানিমুন,রিয়ার সাথে।দেখতে দেখতে সোমবার চলে আসলো।আমি আর পুতুল বউ দুজনই বেশ রোমাঞ্চিত।রিয়ার অসুস্থতা এখন একদম নেই।আমি সোমবার অফিস শেষ করে বিকেলে বাসায় ফিরে দেখলাম রিয়া কিছুই গোছগাছ করেনি।

এমন এলোমেলো মেয়ে কেন রিয়া?ঘরে ঢুকে দেখি রিয়া পুতুলের মত শুয়ে আছে।ড্রেস চেঞ্জ করছি আর রিয়া অসুস্থ কিনা তা দেখলাম।নাহ্ পুতুলটা তো সুস্থ আছে।তাহলে এই অসময়ে শুয়ে আছে কেন?চেঞ্জ করে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা লক করব এমন সময় রিয়া নিজেও ওয়াশরুমে ঢুকল।আমি বের হতে চাইলে ও বলে বের হতে হবেনা।কেন?আমি এখানে আসছি তোমাকে গোসল করিয়ে দিতে।আমাকে গোসল করাতে হবেনা।ও কেমন যেন চুপসে গেল।রাগে গজগজ করতে করতে সাবান আর শ্যাম্পুর বোতল নিয়ে বের হয়ে গেল।রিয়া তুমি ওগুলো নিলে আমি গোসল করব কেমন করে?রিয়া কিছুতেই দিতে চাচ্ছেনা।উল্টো কাঁদছে।মেয়েটাকে নিয়ে আর পারিনা।যখন বললাম ঠিকআছে গোসল করিয়ে দাও তখন মুখে হাসি নিয়ে ওয়াশরুমে এলো।কিন্তু সাবান শ্যাম্পু কই?না ওগুলো দিয়ে তোমাকে গোসল করতে দিবনা।কেন?আমি তোমার গায়ের গন্ধ নিতে চাই তোমার সাথে মিশে গিয়ে।যখন প্রথম বার তোমার খুব কাছে যাব তখন আমি যেন এই কৃত্রিম সাবান আর শ্যাম্পুর গন্ধ না পাই।আমি আমার পিচ্চি বরের আসল গায়ের গন্ধ নিতে চাই।খুব কাছ থেকে তোমাকে দেখব আর সেই গন্ধ নিজের গায়ে মাখব।

তুমি জানোনা সাবানের গন্ধ কিছুক্ষণ পরে আর থাকে না?হ্যা জানি তো।কিন্তু মানুষের গায়ের আসল গন্ধ সারাজীবন থেকে যায়।আমি তোমাকে যখন কাছে ডাকব তখন তোমাকে সেই চিরচেনা গন্ধ নিয়ে অনুভব করব।পিচ্চি বর একটা কথা বলি?হ্যা বল।তুমি যখন বাসায় থাকোনা তখন আমি তোমাকে না পেয়ে তোমার শার্ট,টি শার্ট পড়ি,তোমার পোশাক নাকে লাগিয়ে গন্ধ নিই।এসব পাগলামি কেন কর?কেন করি বলতে পারবনা তবে আমি যদি পাগলও হয়ে যাই তবে যেন তোমার গায়ের গন্ধ আমাকে ঠিক তোমাকে চিনিয়ে দেয়।আমি পুতুল বউয়ের কথা শুনে কি বলব বুঝে উঠতে পারছিলাম না।অবশেষে হেসেই দিলাম।তখন রিয়া আমাকে কয়েকটা কিল আর মাথায় ছোট ছোট থাপ্পর দিল।কি হ্রামি বউ!বরকে মারধর করে!রিয়ার ইচ্ছাই পুরন করলাম।শুধু পানি দিয়ে গোসল করে নিজের গায়ের গন্ধ অটুট রাখলাম।খাওয়া শেষে দুজন মিলে ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছি।আম্মু এসে আমাদের যাবতীয় সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে গেল।রিয়া কি পড়ে যাবে সেটাই ঠিক করতে পারছিলনা।আনিকাকে ফোন করেও শিওর হতে পারছিলনা।সবশেষে আমাকেই জিজ্ঞেস করল।

শোনে রিয়া যেহেতু তুমি আমার পুতুল বউ তাই বউদের শাড়িতেই মানায়।সালোয়ার কিংবা অন্য কোনো পোশাকে মনে হয় তারা অবিবাহিতা।এবার রিয়া আমার কথায় সায় দিয়ে একটা শাড়ি পড়ল।রাত নয়টায় বাস তাই আমরা আটটায় বের হওয়ার প্রস্তুতি নিলাম।আব্বু আম্মুকে সালাম করে আল্লাহর নাম নিয়ে বের হলাম।ট্যাক্সি করে টার্মিনালে পৌছালাম।বাসে উঠে আব্বু আম্মুকে জানিয়ে দিলাম আমরা যাচ্ছি।এদিকে রাঙামাটিতে আগেই হোটেলে বুক করে রেখেছিলাম।রিয়া জানালার পাশে বসে আছে।রিয়া আমাকে এসি বাসের টিকিট নিতে মানা করেছিল।সে নাকি বাইরের বাতাসে নিজেকে মেলে ধরতে চায়।এমন পাগলী বউ কোথাও পাওয়া যাবেনা।বাস চলছে দুরন্ত গতিতে।বাইরে থেকে বাতাস কুড়িয়ে এনে রিয়া আমার মুখে লাগিয়ে দিচ্ছে।ওর চুলগুলো এলোমেলোভাবে বাতাসে উড়ছে।আমার মুখে মাঝে মাঝে এসে আলতো করে ছুয়ে যাচ্ছে।রিয়া আমার পাশে বসে আছে এর চেয়ে আর সুখের অনুভূতি পৃথিবীতে দ্বিতীয় আছে কিনা সন্দেহ।কখনও জানালার সাথে হেলান নিয়ে বাতাস উপভোগ করছে,কখনও আমার কাধে স্বস্তি খুঁজছে,কখনও আমার বুকে আশ্রয় খুঁজছে।এভাবেই সারারাত কেটে গেল।

শেষরাতে জেগে দেখি রিয়া আমার বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে ঘুমিয়ে আছে।কি অপুর্ব লাগছে মেয়েটাকে।বাসের জানালা দিয়ে চাঁদের আলো এসে রিয়ার মুখে লাগছে।এ কেমন সময় আমি জেগে উঠলাম!আমি এসব কি দেখছি।এসব দেখার ভাগ্য কি সবার হয়?আমার সৌভাগ্যটা রিয়া গড়ে দিচ্ছে প্রতিটি মুহূর্তে।এরকম দৃশ্য জীবনে কেউ কোনোদিন দেখেছে কিনা সন্দেহপোষন করছি আমি।সকাল সাতটায় বাস টার্মিনালে পৌছাল।তখনও রিয়া ঘুমিয়ে আছে।রাতে চন্দ্রের আলোতে রিয়াকে দেখতে দেখতে সুর্যের সোনালি আভায় দেখছিলাম সকালবেলা।এরকম দৃশ্য আমার চোখে কোনোদিন পড়বে স্বপ্নেও ভাবিনি।রিয়াকে জাগিয়ে দিতে ইচ্ছা করছেনা।মন চাচ্ছে রাঙামাটি আরে দুরে হলে বেশি ভালো হত।প্রায় চার ঘণ্টা আমি রিয়াকে মুগ্ধ নয়নে শুধু দেখেই গেছি।কিন্তু তবুও মন ভরেনি।বাস থেকে নামতেই রাঙামাটির চোখ রাঙানো সৌন্দর্য চোখে এসে লাগছে।কিন্তু চন্দ্রের আলোয় আর সুর্যের সোনালি আভায় রিয়ার মুখটা আমার কাছে বেশি বেশি ভেসে উঠছে।এরকম কেন হচ্ছে আমার?এই সৌন্দর্য রিয়ার সৌন্দর্যের কাছে কিছুই না।

আমার আবারও ওই চার ঘণ্টায় ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে।এসব ভাবছি এমন সময় রিয়া জেগে উঠে বলে পিচ্চি বর তোমায় ভালোবাসি।তারপর রিয়াকে নিয়ে বাস থেকে নামলাম।একটা গাড়িতে করে হোটেলে পৌছালাম।রুমটা অনেক সুন্দর।শহরের মাঝখানে হওয়ায় শহরের অনেকটুকু এই বিল্ডিং থেকে দেখা যায়।সকালে নাস্তা করা হয়নি।ক্লার্ক এসে নাস্তা দিয়ে গেল।রিয়া চায়ের কাপটা নিয়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওই দুর আকাশের প্রান্তে মেঘে ঢাকা পাহাড় দেখছে।সাতরঙা রংধনু দেখছে কারন সকালেই এক পশলা বৃষ্টিতে রাঙামাটি পবিত্রতা অর্জন করেছে।চায়ের কাপে রিয়া প্রকৃতি দেখছে আর আমি প্রকৃতিতে বিমোহিত না হয়ে রিয়াকে বিমোহিত হয়ে দেখছি।রিয়া জানালার পাশ থেকে বলে উঠল পিচ্চি বর দূরে কেন দাঁড়িয়ে আছো?এসো কাছে এসো চা খাই আর প্রকৃতি দেখি।হা হা..রিয়া তো জানেনা আমি আজ শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত কি দেখেছি!ও কাছে গিয়ে দাড়িয়ে আমি প্রকৃতি দেখছিলাম।বেশ ঠান্ডা লাগছে আমার।আচ্ছা তুমি আমাকে ওইভাবে দেখছিলে কেন?আমি!দেখছিলাম!কি?বাব্বাহ্ পিচ্চি বর মনে হয় কিছুই বোঝে নাই।শোনো আমি জানি তুমি বাসের মধ্যে আমাকে না ঘুমিয়ে হ্যাবলার মত দেখছিলে।

জাদুকর নাকি?কেমনে জানল?কে কে বলছে আমি তোমাকে দেখছিলাম?আমি জানি,আমি অনুভব করেছিলাম তুমি আমায় দেখছিলে।কিভাবে?কারন তোমার হৃৎপিন্ডের সাথে আমার হৃৎপিন্ডের যোগাযোগ সবসময় হয় কিন্তু তুমি তা জানোনা।এহ্ কে বলছে তোমাকে?আগে বলো আমি মিথ্যে কথা বলছি?এ কেমন মেয়ে?ওর তো এসব জানার কথা না।হ্যা তা ঠিকি বলছো।নাস্তা করে দূজন একটু রিল্যাক্স করছিলাম।রিয়া চুপচাপ বসে আছে আমি ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করলাম আর বাসায় ফোন করে কথা বললাম।রিয়া আমার ফোন হাতে দেখে বেশ বিরক্ত।এক ঝটকায় ফোন হাতে থেকে নিয়ে নিল।এই শোনে হানিমুন করতে এসে ফোন ব্যবহার করা চলবেনা।এখানে যতক্ষণ থাকব ততক্ষণ আমাকে সময় দিতে হবে।কারন আমার জন্যই এখানে আসছ।বাসায় তোমাকে সারাদিন না পেয়ে কত ছটফট করি তা তো জানোনা।প্লিজ এখানে আমি তোমাকে শতভাগ চাই।এক অংশ কম পেলে আমি কেঁদেই মরব।বউয়ের একগাদা চাওয়া পুরন করতে আসলাম নাকি হানিমুনে আসলাম বুঝতেছিনা।এই ডায়নি বউ আমাকে শতভাগ চাও?হ্যা…।খেয়ে ফেল তাইলে সম্পূর্ণটা।ওমা!!বলতে না বলতেই আমাকে কামড় দেয়া শুরু করল!সুযোগ বেশি দিয়ে ফেললাম না তো?

রাঙামাটি আসতে আসতেই সকাল বেলাই রিয়া ওর একশভাগের কিছু ভাগ নিয়ে নিল।মেয়েটা আমাকে ফকির করে দিবে আমার সবকিছু নিয়ে।কামড়েই প্রায় বিশভাগ নিয়ে নিল।এরপর যে আরো কত অত্যাচার করবে আল্লাহ্‌ জানে।কখন যে বুকের উপর রিয়া ঘুমিয়ে পড়েছে আর আমিও যে ঘুমাইছি বুঝতেই পারিনি।সারারাত বাসে ঘুমাইনি আমি।ক্লান্ত শরীরে রিয়ার সাথে থাকার পরেও ঘুমানোর সময় পাওয়া মানে আমার কাছে বিশাল কিছু।নিশ্চিন্তভাবে ঘুমিয়ে পড়লাম আমি।হঠাৎ শরীরে কাতুকুতু অনুভব করলাম।রিয়া আমার হাতে পায়ে পেটে নাক আর কান লাগিয়ে দেখছে আমার শরীরের প্রতিটি কোষে ও অবস্থান করছে কিনা।কিছুক্ষণ পর আর কিছু করলনা।মনে হয় পুতুল বউটা ফিল করতে পারছে হাউ মাচ আই লাভ হার।আমার শরীরের প্রতিটি কোষে রিয়ার নাম লেখা।আসলেই কি মেয়েটাকে ভালোবাসি?আচ্ছা এই ভালোবাসা কোনোদিন শেষ হয়ে যাবেনা তো?হুর!!এটা আত্মার ভালোবাসা।এই ভালোবাসা শেষ হওয়ার নয়।আচ্ছা রিয়া আমার কাছে কি চায়?ও কখনও বলেনা আমাকে কিন্তু আমার অজান্তেই আমাকে অত্যাচার করে তা আদায় করে নেয়?

পৃথিবীতে কি এমন বউ আছে যে অত্যাচার করে ভালোবাসা আদায় করে?স্বপ্ন পুরন করে?আচ্ছা আমাকে বললেই তো আমি ওর স্বপ্ন পুরন করতাম,তাহলে কেন বলেনা?নাকি আমাকে জ্বালাতে,অত্যাচার করতে ও পৈশাচিক আনন্দ পায়?এসব ভাবছি কেন? আমি ভালো করেই জানি রিয়া পাক্কা একটা হ্রামি।কি তুই আমাকে হ্রামি বললি?তোর এত বড় সাহস?রিয়া জেগে উঠেই আমাকে মাইর দেয়া শুরু করল।আরে আমি তো মনে মনে বলছিলাম।ও কেমনে বুঝল আমি ওকে হ্রামি বলছি?এটা বউ নাকি সাইকোলজিস্ট?মনের সব কথা ধরতে পারে!বউ বউ থামো থামো।নাহ্ থামছেনা।অগত্যা জোড় করে জড়িয়ে ধরলাম রিয়াকে।বুকের সাথে যখন ওর মাথা লাগলো তখন রিয়া নরম হয়ে গেল।আরো ক্লোজ হয়ে বুকে মুখ গুজে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলছে তোকে ভালোবাসি তাই এমন করি।যেদিন আমি চলে যাব সেদিন বুঝবি আমি তোর জীবনে কি ছিলাম!পিচ্চি বর নাম দিয়েছি তোর।কেন জানিস?যেন তোর উপর আমি অধিকার দেখাতে পারি।বড় বর বললে তোকে আমার ভয় পেতে হতো।একজন স্ত্রী যদি তার স্বামীকে ভয় পায় সেখানে আর যাই হোক ভালোবাসা জন্ম নিতে পারেনা।সেখানে শুধু ভালোবাসার মৃত্যুর পচা গন্ধ পাওয়া যায়,কলিজা পোড়া গন্ধ পাওয়া যায়।রিয়ার কথাগুলো মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম।

একটা মেয়ে একটা ছেলেকে এতটা ভালোবাসতে পারে আমার তা জানা ছিলনা।রিয়া ওর ভালোবাসা দিয়ে আমার চোখ খুলে দিল।আযান দিছে রিয়া গোসল করে নামায পড়ি চলো।আজকেও রিয়া সাবান শ্যাম্পু ব্যবহার করতে দিলনা আমাকে।শুধু কাচা পানি দিয়ে গোসল করিয়ে ছাড়ল আমাকে।দুজনে নামায শেষে লাঞ্চ করলাম।দুপুর টাইম তাই রিয়া শরীরের উপর শুয়ে আছে।মেয়েটা একমিনিট আমাকে।ছেড়ে থাকতে চায়না।সবসময় গিলে ফেলতে চায় আমাকে।পিচ্চি বর?হুম?তুমি তো সারাদিন অফিসে থাকো আর আমি বাসায় একা একা থাকি।আমার একা একা ভাল্লাগেনা।তুমি চাকরী ছেড়ে দাও।পুতুল আমি চাকরী ছাড়লে খাবে কি?তোমায় পেলে আমি না খেয়ে থাকতে পারব।শুধু ভালোবাসা দিও তাতেই আমার পেট ভরে যাবে।হা হা করে হাসছি।রিয়া বিরক্ত হয়ে আর কিছুই বলল না।আমি নিজেই একটু পর বললাম বেবি চাও?বলতে না বলতেই বুকের উপর থেকে লাফিয়ে পেটের উপর বসে পড়ল।হ্যা চাই, দাওনা একটা বেবি।মেয়ে চাই আমার যদি রাজি থাকো তবে দিব।না পিচ্চি বর আমার ছেলে চাই।না মেয়ে চাই।শোনো তাহলে, মেয়ে জন্ম নেয়া মানেই কষ্ট।

তিনদিন আগেই দেখলা আমি তলপেটের ব্যথায় কত কষ্ট করলাম।তুমি কি তোমার প্রিয় মেয়ের এই কষ্ট সহ্য করতে পারবে?তারপর বাচ্চা হওয়ার সময় মেয়েরা অনেক কষ্ট পায়।তুমি কি তোমার মেয়ের ওই কষ্ট সহ্য করতে পারবে?রিয়ার কথায় যুক্তি আছে।একটা মেয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যথায় কষ্ট করে।যা সহ্য করা একজন সুস্থ ছেলের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।মেয়েরা পারেও বটে।কত কিছু সহ্য করে ওরা বেঁচে থাকে।জীবনের প্রতিটি ঝড় সামলে বেঁচে থাকে ওরা।কিন্তু আমার যে মেয়ের শখ।মেয়ে হলে ওর কষ্টগুলো সহ্য করতে পারবে?না পারবোনা।তাহলে ছেলের জন্য প্রার্থনা কর।রিয়া চলো বের হই।শাড়িতে রিয়াকে বউ বউ লাগছে।হ্যা পিচ্চি বরের পুতুল বউ।যে পিচ্চিটার সারাজীবনের খেলার সঙ্গী।গাড়িতে করে পাহাড়ে উঠছি।অপরুপ দৃশ্য।চারদিকে পাহাড় কুয়াশায় ঢাকা।সবকিছু মানুষের কল্পনার মত করে আঁকা।রিয়া মুগ্ধ চোখে দেখছে।একদম পাহাড়ের চুড়ায় পৌছে গেলাম।গাড়ি থেকে নেমে আমি আর রিয়া হাত ধরে হাটছি।রিয়ার কনুই আঙুলের সাথে আমার কনুই আঙুল লেগে আছে।পাহাড়ের উপরে বেশ সাজানো গোছানো।অনেকেই বেড়াতে এসেছে।ছবি উঠছে সবাই।এখানেও খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা আছে।রিয়া আমার হাত ছেড়ে দিয়ে সোজা পাহাড়ের শেষ কিনারায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পরল।কি যেন দেখছে ও।কিছুক্ষণ পরে দুই হাত পাখির মত মেলে ধরল।

ভাবলাম বউটা উড়তে শিখল নাকি!নাহ রিয়া কি যেন অনুভব করছে।মনে হচ্ছে পাহাড়ের সাথে ওর অনেকদিনের পরিচয়,ওর পুরনো কোনো বন্ধু।কিছুক্ষণ পরে ঝুম বৃষ্টি চলে আসল।মনে হচ্ছে রিয়া উপর দিকে তাকিয়ে হাত তুলে বৃষ্টিকে আহ্বান জানাচ্ছিল।রিয়া পাখির মত হাত উঠিয়ে বৃষ্টিতে ভিজছিল।আমি পেছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রিয়াকে বৃষ্টিতে ভেজা দেখছিলাম।অপরুপ লাগছে মেয়েটাকে।এদিকে যে আমি ভিজে যাচ্ছি সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই।লোকজন দৌড়ে বিভিন্ন ছাউনিতে আশ্রয় নিচ্ছে।কিন্তু আমি আর রিয়া বৃষ্টিতে আবালের মত ভিজছি।আমার ভেজার কোনো ইচ্ছা ছিলনা।কিন্তু রিয়ার জন্য আমি ভিজতেছি।রিয়াকে মুগ্ধ নয়নে দেখছি।অনেকক্ষণ হলো বৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু থামার কোনো নাম নেই।রিয়া ওভাবেই দাড়িয়ে আছে।আর আমি শীতে কাঁপছি।সন্ধা হয়ে গেছে অনেকটাই অন্ধকার নেমে আসছে পাহাড়ে।রিয়ার পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে টাইটানিক সিনেমার মত করে ওর হাত ধরে আমিও উড়তে চাইলাম।রিয়া মনে হয় বেশ মজা পেল।মেয়েরা বৃষ্টিতে ভিজলে ওদের শরীর দিয়ে একটা সুন্দর মোহময় ঘ্রান পাওয়া যায়।যারা বৃষ্টিতে ভিজেছে একমাত্র তারাই জানে এই ব্যাপারটা।আমি রিয়ার গায়ে গন্ধ টের পাচ্ছি।

অসম্ভব মায়াবি সেই গন্ধ।মায়ায় জড়িয়ে গেলাম দুজন।রিয়া আমাকে বৃষ্টির পানিতে ভেজা শরীরের গন্ধে আমাকে পাগল করে রেখেছে।আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে রিয়ার শরীর আমার মত ঠান্ডা হয়নি।ওর শরীর এখনো উষ্ণতায় ভরপুর।বৃষ্টির বেগ কমে এলো।আমরা দুজনে পিচ্ছিল পথে জুতো খুলে খালি পায়ে পাহাড়ের উপরে হাটছি।কেমন যেন একটা অনুভূতি। আমি শীতে কাপছি অথচ রিয়ার এরকম কোনো লক্ষণই নেই।আশেপাশের লোকজন আমার আর রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।মনে মনে ভাবছে এরকম পাগলা আর পাগলী কাপল এর আগে দেখিনি।হঠাৎ একটা মেয়ে আমার নাম ধরে ডাক দিল।রিয়া আমাকে কেউ মনে হয় ডাকল!পাহাড়ে ওরকম ডাক এমনিতেই শোনা যায়।কান না দিয়ে দুজনে হাটছি।আবারও ডাক পড়ল।ছাউনির দিকে তাকিয়ে দেখি উপমা ডাকছে।আমার ইউনিভার্সিটি লাইফের বান্ধবী।ও দৌড়ে আমার কাছে এসে হাতে হাত মেলাল।পাশ থেকে বুঝতে পারলাম রিয়ার এটা পছন্দ হয়নি।কিরে বিয়ে করেছিস জানালি না যে?কেমনে জানাব বল?রাতে ঘুমিয়ে আছি এমন সময় আম্মু এসে হাতে বিয়ের কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বলে গেল তোর বিয়ে।কোনোরকম প্লানিং ছাড়াই বিয়েটা হইছে।

রিয়ার সাথে উপমার পরিচয় করিয়ে দিলাম।উপমার হাজব্যান্ডও আসছে এখানে ঘুরতে আমরা দুজনে কাকভেজা হয়ে আছি।উপমা এরকম দেখেই আমাকে বলল তোর মনে আছে ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার পর বৃষ্টি নেমেছিল।তুই বৃষ্টিতে ভেজা পছন্দ করতি না অথচ তোকে আমরা জোড় করে বৃষ্টিতে ভিজিয়ে সাতদিন জ্বরে ভুগিয়েছিলাম।কি হ্রামি বান্ধবী রে!সব মনে রাখছে।মনে থাকবেনা কেন?হইছে হইছে এখন বল ভাইয়া কোথায়?ওইতো ছাউনিতে দাঁড়িয়ে আছে।জানিস তোক আর রিয়াকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে আমারও ভিজতে ইচ্ছে করছিল।কিন্তু ও নিয়ে গেলনা।তোদের দেখে সবাই বলল সাহস আছে এই কাপলটার।আয় ডিনার করব সবাই একসাথে।নারে বৃষ্টিতে ভিজে আছি।আর কিছুক্ষণ থাকলে অসুখ করবে।তারাতারি হোটেলে ফিরে গোসল করে কম্বলের মাঝে ঢুকে গেলাম আমি।শীত করছে আমার।রিয়া ওর চুল আচড়াচ্ছে।ভেজা চুলে,কুচি দিয়ে শাড়ি পড়া কোনো মেয়ের শরীর দিয়ে বৃষ্টিতে ভেজা একটা গন্ধ বের হচ্ছে।পুরো ঘরটা সেই মোহময় গন্ধে ভরপুর।হঠাৎ দরজায় নক করল কেউ।খুলে দেখি ডিনার চলে আসছে।

রিয়া আর আমি ডিনার করে নিলাম।ক্রিকেট দেখছি আমি টিভিতে আরর রিয়া চুল শুকাচ্ছে।রিয়া এখনও হয়নি শুকানো?কিছু বলছেনা পুতুলটা।কাছে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে নিলাম ওকে।আমি আবারও সেই তীব্র গন্ধ পাচ্ছি রিয়ার শরীর থেকে।মাতাল হয়ে গেলাম আমি।রিয়ার ঘারের চুলগুলো সরিয়ে সেখানে একটা নিঃশ্বাস ফেলতেই চিরুনি দিয়ে আমাকে মাইর শুরু করল।তুই বৃষ্টিতে আগেই ভিজেছিস না?জানিস তোর জন্য আমি কোনোদিন বৃষ্টিতে ভিজিনি!স্বপ্ন ছিল তোর সাথে প্রথম বৃষ্টিতে ভিজব।ভিজলাম কিন্তু তুই কি করেছিস?তোর এই এক্সপেরিয়েন্স আগেই নেয়া।রিয়ার শরীরের গন্ধে আমি মাতাল হয়ে আছি।ওকে কোলে নিয়ে শুইয়ে ঘুমিয়ে দিব কিন্তু ঘুমুচ্ছেনা পুতুলটা।আমার কাছে ও কিছু চায়।কি চাও?আমাকে বেবি দাও।আচ্ছা ঠিকআছে তোমাকে বেবি দিব।সকালবেলা রিয়া আগে আগেই উঠে ফ্রেশ হয়ে আমাকে ডাকছে।এই পিচ্চি বর ওঠো।কি?সকাল হইছে ফ্রেশ হয়ে আসো।দুজনে একসাথে ব্রেকফাস্ট করব।আজকে রিয়াকে বেশ চনমনে মেজাজে দেখা যাচ্ছে।ও মনে হয় অনেক খুশি আজকে।পিচ্চি বর আমি অনেক অনেক খুশি আজকে।তুমি আমার স্বপ্ন পুরন করেছ।

রিয়ার মুখে এরকম হাসি দেখে আমি কেমন যেন হয়ে গেলাম।এটুকু ভালোবাসা পেয়েই একটা মেয়ে এতটা খুশি হতে পারে ভাবা যায়না।পুতুল?কি?বেবি পেয়ে আমাকে ভুলে যাবেনা তো?যেতেই পারি।কারন আমি আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন পেয়ে গেছি।কি হ্রামি বউ?আচ্ছা আমি ভুল করলাম তো?হ্যা আহমেদ সাহেব তুমি ভুল করেছ।ভুল করেছ তুমি আমাকে বেবি দিয়ে।একটা বেবির জন্যই তোমাকে এতটা ভালোবেসেছিলাম।পেয়ে গেছি এখন তোমাকে ভুলে আমার ছেলেকে নিয়ে থাকব।এহ্ কি খারাপ!তোমার মেয়ে হবে।একথা বলতেই ধুমধাম কিল শুরু করল পুতুলটা।কি আজব!পুতুলের পেটে বেবি হবে।আরকেটা পুতুল জন্ম নিবে।ভাবাই যায়না কতটা আনন্দ এর মাঝে লুকায়িত আছে।আচ্ছা রিয়া কি নাম রাখবে?বলবনা।তুমি সেটা নিয়েও মজা করবে।আমার মোটেও ভালো লাগবেনা এই মজা।মাইর খেতে না চাইলে চুপ থাকো।যাও ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসে।আমি ওয়েট করছি।এই শোনো?কি সবান আর শ্যাম্পু নিয়ে যাও।কেন তোমার গায়ের গন্ধ লাগবেনা?নাহ লাগবেনা।যা পাওয়ার পেয়ে গেছি।এই গন্ধের আর কোনোদিন দরকার পরবে বলে মনে হয়না।কি স্বার্থপর বউ আমার কপালে জুটছে!সকাল থেকে রিয়া আমার কাছে ঘেষছেনা।

প্রতিদিন বিড়ালের মত শুধু গা ঘেষতো কিন্তু আজ সকালে ঠিক উল্টো হচ্ছে।রিয়া আমাকে পাত্তাই দিচ্ছেনা।মনে মনে আমাকে কোনো অসহ্য কিছু ভাবছে।ছিঃ আমি এমন কি করেছি যে রিয়া আমার সাথে এমনটা করছে?আচ্ছা আমি কি বাজে কিছু করেছি?রিয়া আমার সাথে অহংকার করছেনা না তো?অন্যসময় আমাকে টেলিভিশনের সামনে দেখলে চেচিয়ে উঠত এখন কিচ্ছু বলছেনা।গুন গুন করে গান গেয়ে সারা ঘর হেটে বেড়াচ্ছে আর চুল আঁচড়াচ্ছে।রিয়া এখানে একটু বস।ভাল্লাগছেনা তুমি টিভি দেখ।বস না একটু।বললাম তো ভালো লাগছেনা।আর সময় তো কোলের মাঝে এসে বসতে আর এখন ডাকছি আসতেছো না।আর সময় যেতাম স্বার্থের জন্য এখন স্বার্থ ফুরিয়ে গেছে।কিসের স্বার্থ? বেবি।কি হ্রামি বউ! ও বেবির জন্য আমার কাছে আসত।এখন দিয়ে দিয়েছি আর চার আনার মূল্যও আমাকে দিচ্ছেনা।বেবি হলেই চলবে?আমাকে লাগবে না?নাহ্ কে তুমি?যা পাওয়ার পেয়ে গেছি।তুমি না থাকলেও আমার কিছু যায় আসেনা।আল্লাহ্! কি এমন পাপ করলাম যে তুমি আমাকে এই রহস্যময়ী কন্যার জালে ফেলে দিলে?ও এখন আমাকে ভীষণভাবে ডোমিনেট করছে।বেবি পেয়ে ওর পিচ্চি বরটাকে ভুলে যাচ্ছে।

এই শোনো?কি?আমার মনে হয় টুইন বেবি হবে?কেমনে বুঝলা?আমার মন তাই বলছে।রিয়াকে বেবি দিয়ে আমি বউ হারা হলাম।আমার জীবনের সকল কিছু বিনষ্ট করে ফেললাম।এই পিচ্চি বর চলো ঘুরতে যাব।কোথায়? আজকে শহরে ঘুরে বেড়াব।আবারও রিয়া শাড়ি পড়ল।এখন ওকে কেমন যেন বউ বউ লাগছে।আগের সেই কিউটনেস ভাবটা চলে গিয়ে কিছুটা ম্যাচিউর্ড লাগছে।হা হা..রিয়া মা হবে?হুর ও তো আমার বউ।আচ্ছা বেবি হলে রিয়া আমাকে ভুলে গিয়ে ওদের নিয়েই থাকবে!আমাকে আর কেয়ার করবেনা?আমার বুকটা খালি করে ঘুমাবে?টি-শার্টের কলারে হাত চেপে কে ঘুমাবে?আমি বাবা হব! এই রিয়া আমি বাবা হব?রাস্তার মাঝে একটা লোক আমার কথা শুনে তাকিয়ে আছে।রিয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে।কি লজ্জা কি লজ্জা!!ছিঃ আমি এতটা নির্লজ্জ হলাম কবে থেকে?সব রিয়ার দোষ।হঠাৎ রিয়া বলল সব আমার দোষ তাইনা?আচ্ছা রিয়া কেমনে জানল আমি ওকে এখন দোষ দিচ্ছি?মেয়েটা জাদুটোনা জানে নাকি?এই পিচ্চি বর দেখো এটা কেমন?এটা কি?এটা পাটের তৈরী ব্যাগ।পঁচে যাবে তো।ওই আমি কি এটা বৃষ্টিতে নিয়ে ঘুরব নাকি?

দোকানদার আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।ভাই আপনার নাম পিচ্চি বর রাখছে আমার আম্মা না আব্বা?ওহো এই লোকটা এত মাথা মোটা কেন?কেউ রাখে নাই ভাই।আমার বউ রাখছে।জন্ম নেয়ার আগে বউ পাইলেন কই?আপনি বুঝবেন না ভাই।আপনি আমার সাথে কথা না বলে বিক্রি করেন।একটা টুপি দেখা যাচ্ছে ওই দোকানে।রিয়া ওই দোকানে চলো।গিয়েই পুতুলটাকে টুপি পড়িয়ে দিলাম।ওয়াও!!হেব্বি লাগছে তোমাকে।আমার ভালো লাগেনি।কি হ্রামি বউ! আমি দিচ্ছি নাও এটা।বললাম তো ভালো লাগেনি।ওহ… রিয়া, হোয়াই আর ইউ ডোমিনেটিং মি?কই তুমি কি হইছে যে তোমাকে ডোমিনেট করব?এদিকে এসো।দেখ তো ওই ড্রেসটা কেমন। ওয়াক একদমই বাজে।ওইটাই নিব। আমি বিল পে করবনা।হাহা..তুমি করবে তোমার ঘারে করবে।আমার সাথে সোজা দোকানে গিয়ে ড্রেসটা প্যাকিং করতে বলল।তারপর নিয়ে বের হয়ে আসল।আমি বের হব এমন সময় দোকানদার বলে ভাই বিলটা!কি খ্রাপ বউ!ফাসায় দিয়া চইলা গেল।দোকানের বাইরে এসে ওর পাশে দাঁড়ালাম।কি মশাই আপনি নাকি পে করবেন না?এটা বউ নাকি হাঙ্গর মাছ!শুধু শক্তির বড়াই দেখায় আর আমাকে বার বার খেয়ে ফেলে।আবার বমি করেও দেয়। আমি কেন ওকে বেবি দিলাম।

এখন ও আমাকে পাত্তাই দিচ্ছেনা।সারাটা দুপুর শপিং শেষে বিকেলে ক্লান্তি নিয়ে রিয়া ঘুমিয়ে পড়ল।আর আমি ঘুমাতে পারছিনা।ছটফট করছিলাম একা একা।হঠাৎ রিয়া ঘুম থেকে উঠে আমার এই অবস্থা ডাইনির মতো খিল খিল করে হাসতে শুরু করল।ভয়ে ঘরের এক কোনায় গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার এই দুরাবস্থা দেখে রিয়া অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।আমি পারছিলাম না নিতে।শেষে ঘরের কোনায় বসে পড়লাম।চোখ বন্ধ করে আছি কিন্তু চোখের পানি ঠিকি বেড়োচ্ছে।হঠাৎ শরীরে একটা কোমল স্পর্শ পেলাম।মুহূর্তের মধ্যে শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল।রিয়া আমার দিকে তাকিয়ে কাঁদছে।আমিও কাঁদছি।রিয়াকে কখনও এরকমটা মনে হয়নি যতটা এখন ওকে ফেস করছি।এখন ওকে আমার বউ বউ লাগছে।তাহলে কি এতক্ষণ ডাইনি ভর করেছিল?পিচ্চি বর ভালোবাসি।আমাকে দুই হাত দিয়ে রিয়া উঠালো।চোখের পানি মুছে দিয়ে দেয়ালের সাথে আমাকে আটকে ফেলল।আমার চোখে রিয়া চোখ রেখে তাকিয়ে আছে।কি যেন চায় মেয়েটা।কিছু একটা বলতে চায় আমাকে।হঠাৎ পায়ের উপর পা উঠিয়ে ও আমার কপালে চুমু একে দিল।আমার কান্না,ক্ষোভ,অভিমান সব নিমিষেই পানি হয়ে গেল। কিছু বলব এমন সময় রিয়া আমার মুখ বন্ধ করে দিল।কিছুই বলতে পারছিনা।আমার হাতটা নিয়ে রিয়া ওর কোমড়ে লাগিয়ে দিল।আমি কেমন যেন হয়ে গেলাম।নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল।

আমি কিছুই করতে পারলাম না।কিছুক্ষণ পরে রিয়া আমার বুকে মুখ লুকাল।আমাকে দেয়ালের সাথে আটকে দিয়ে ও আমার শরীরের মাঝে মিশে যেতে চাচ্ছিল।ভীষণ চাপ অনুভব করছিলাম।ওর হাতের নখগুলো আমার পিঠে দাগ কেটে দিয়ে গেল।জীবনের প্রথম এরকম একটা অনুভূতি পেলাম।মানুষ এরকম সুখের সাগরে হারিয়ে যেতে পারে তা আমি জীবনেও কল্পনা করিনি।রিয়া আমার সেই কল্পনা বাস্তবোচিত করল।আমার পুতুল বউটাকে পুতুল বললে ভূল হবে।পুতুলের মাঝেও যে অনুভূতি পাওয়া যায় তা রিয়া আমাকে না শেখালে কখনও জানতামই না।আমি কি গাধা ছিলাম।রিয়া আমার জীবনে এসে পক্ষান্তর ঘটিয়ে ফেলল।তারপর আমাকে একের পর এক নতুন নতুন অনুভূতির সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।জীবনের শুরু থেকে যদি রিয়া আমার জীবনে থাকত তবে কতই না ভালো হতো।আমি সবকিছু অনেক বেশি বেশি করে উপভোগ করতে পারতাম।পুতুলটা বুকের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছে।চুপ করে নিয়ে ওকে শুইয়ে দিয়ে আমি শুধু দেখছি রিয়াকে।ভাবছি এই মেয়েটা আমার জীবনকে রাঙিয়ে দিল।কি আছে এই মেয়ের মাঝে?একা একটা মেয়ে,ছোট্ট একটা দেহ কিন্তু তার মাঝে এতটা ভালোবাসা,রোমান্টিকতা,প্রেম।মেয়েটাকে যদি আগেই পেতাম তাহলে আরো কতকিছু শিখতে পারতাম,কত অভিজ্ঞতা হতো।

সন্ধা হয়ে যাওয়ার পর রিয়া ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখে আমি ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।কি হলো কি দেখছো?আমার ছোট্ট আদুরে পুতুলটাকে দেখছিলাম।তুমি ঘুমাওনি?না।কেন?তোমাকে এত সুন্দর লাগছে যে বারবার তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছিল।তাই না ঘুমিয়ে তোমাকে দেখছিলাম।আমার কথা শুনে রিয়া কেমন যেন হয়ে গেল।বুঝতে পারছেনা ও কি বলবে।আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলল।হুট করে আমাকে জড়িয়ে ধরল।পিচ্চি বর তোমাকে ভালোবাসি।কতক্ষণ এরকম ছিলাম জানিনা।রিয়া আমাক জড়িয়ে ধরলে আমার মেডিটেশন হয়ে যায়।ও আমার বুকে থাকলে ঘুম পালিয়ে যায়।হঠাৎ আযানের শব্দে দুজনের ঘোর কাটল।আমি রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।নামায পড়বেনা?হ্যা,যাও ওযু করে আসো।নামায শেষ করলাম দুজন তারপর ডিনার করতে বের হলাম বাইরে।একটা ভালো রেস্টুরেন্টের খোঁজ নিলাম হোটেল বয়ের কাছ থেকে।সেখানে গিয়ে দেখলাম লোকজন খুব কম।একদম পাহাড়ের চুড়ায় রেস্টুরেন্ট।চারদিক অনেক সুন্দর করে সাজানো গোছানো।দুইদিকে জানালা খুলে দেয়া।আসলে খাবার খুব একটা মুখরোচক না হলেও জায়গাটা দেখেই মন ভরে যায়।রিয়া তো ওখান থেকে আসতেই চাইছিল না।

রাতে হোটেলে ফিরলাম দুজনে।নিরব নিস্তব্ধ রাঙামাটির রাস্তাগুলো।ওই দুর পাহাড় থেকে কিছু অজানা শব্দ কানে ভেসে আসে মাঝে মাঝে।তাছাড়া সবকিছু কেমন যেন স্বপ্নের মত সুন্দর।রিয়া রাতে চুলে তেল দিয়ে দিতে বলল।ওর মাথা নাকি অনেক চুলকাচ্ছে।চুলে তেল মেখে দিচ্ছি পুতুলটাকে।মেঘকালো চুলে রিয়াকে আমার বেশ ভালোই লাগে।জানালার পাশে বসে ঝিরি ঝিরি বাতাসে বউয়ের চুলে তেল দেয়াটা কেমন যেন বেমানান লাগছে।কিন্তু রিয়াকে যদি আমি শুধুই বউ ভাবতাম তাহলেই শুধু এমনটা মনে হত।কিন্তু রিয়া আমার অক্সিজেন যাকে ছাড়া একমুহূর্ত বেঁচে থাকা অসম্ভব।ও সকালবেলা আমার সাথে এমন করাতে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম।বুঝতে পারছিলাম রিয়াকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকাটা অসম্ভব।মেয়েটা কয়েকদিনেই আমার সবকিছু কেড়ে নিল।শান্তিমত শ্বাস-প্রশ্বাস নিব সেটাও অনেক কঠিন হয়ে গেছে।আমি রিয়াকে আমার করে নিতে পারলাম না।উল্টো রিয়া আমাকে ওর করে নিলো।মাথায় তেল দিয়ে চিরুনি করে দিলাম।অনেক রাত হয়ে গেছে।দু একটা পাহাড়ি শেয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছে।রাতটা কেমন যেন বেশিই রোমান্টিক।উহু.. সেটা আবার রিয়ার জন্যই।কালকে সকালে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হব।সমুদ্রের বিশাল জলরাশিতে আমি আর রিয়া হারিয়ে যাব।সুর্যাস্ত দেখব রিয়ার কাধে মাথা রেখে।

ঘুম ভেঙ্গে দেখি পুতুলটা বুকের সাথে আঠার মত লেগে আছে।মেয়েটা আমার সাথে মাঝে মাঝে পাগলামি করে আবার মাঝে মাঝে ভালোবাসি বলে। নির্ঘাত এই মেয়ের কোনো সমস্যা আছে।আল্লাহ্‌  আমি কি বোকা?নিজের সমস্যা আগে না দেখে অন্যের সমস্যা ধরছি!আমিও বা সাধু কিসে?আমারও সমস্যা আছে।রিয়াকে প্রচন্ড ভালোবাসি।আচ্ছা পৃথিবীতে ভালোবাসা ছাড়া কি মানুষ বেঁচে থাকে?ছোটবেলা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বাবা-মায়ের ভালোবাসা অটুট থাকে।তার মানে ভালোবাসা কখনও শেষ হয়না।এছাড়া বিয়ের পর বর/বউয়ের ভালোবাসা আরও যোগ হয়।তার মানে ভালোবাসা কখনও শেষ হওয়ার নয় বরং দিন গেলে আরও বাড়ে।হি হি রিয়ার প্রতি আমার ভালোবাসাও বাড়ছে।কিন্তু ডাইনি বউটা কি আমাকে ভালোবাসা দিচ্ছে?ও আমাকে প্যারা দেয় আবার ভালোওবাসে।।বুঝিনা ওর ভালোবাসা। কখন কোনটা চায় সেটাও বুঝিনা।জানালা দিয়ে সূর্য্যের সোনালি রোদ ঘরে ঢুকছে।আমি মাথাটা সরালেই রিয়ার মুখে রোদ লাগবে।সরিয়ে দিব?নাহ্ থাক তাইলে ওর ঘুম ভেঙ্গে যাবে।

বউ বউ বউ….রিয়া লাফিয়ে উঠে বলে কি হইছে?কক্সবাজার যাইবা না?ছোঁচা জামাই কোথাকার! এই কথা কেউ এভাবে চিল্লায়া বলে?মিষ্টি করে কপালে চুমু দিয়ে জাাগিয়ে বলতে পারলিনা?সকাল সকাল মেজাজ গরম করলি।এখন যাবনা,আগে ঘুমাব তারপর।কাল রাতে তোক অত্যাচার করতে যেয়ে ঘুমাতে পারিনি।এখন ঘুমিয়ে সেটা উসুল করব।কাছে আয় ঘুমাব।মাথাটা সরিয়ে নেয়াতে রিয়ার রোদ লাগছে।মুখে রোদ লাগাতে ও কেমন যেন অনুভব করছে।বার বার মাথাটা সরিয়ে ছায়ায় আসতে চাইলেও আমি ওকে ছায়া দিচ্ছিনা।আমি উঠে ওয়াশরুমে যাব তখন দেখি বউটা আমার টি-শার্ট হাত মুচরে ধরে আছে।যেতে দাও আবার আসব তো।না।কাছে থাকো।কষ্ট করে চেপে গেলাম। রিয়া ঘুমুচ্ছে আর আমি দেখছি।অদ্ভুত মেয়েটাকে শুধু ভালোবাসতে ইচ্ছে করে।আমার চোখটা যে কখন লেগে গেছে বুঝতেই পারিনি।হঠাৎ খেয়াল করলাম রিয়া আমার বুকের মধ্যে নেই।গেল কই তাহলে।চোখ মেলে দেখি ভেজা চুল শুকাচ্ছে একটা মেয়ে।পবিত্রতায় ভরপুর তার শরীর।চারপাশ মেয়েটার পবিত্রতায় পবিত্র হয়ে আছে।কেমন যেন একটা ঘ্রান নাকে চলে আসল।বুঝতে পারলাম এই ঘ্রান কোনো পবিত্র কিছু থেকেই পাওয়া যায়। একটা সাদা শাড়ি হালকা কোমড় বের করে পড়া,শাড়িতে মাঝে মাঝে ছোপ ছোপ লাল দাগ।

শরীরে পবিত্র পানি এখনও শুকিয়ে যায়নি।চুল দিয়ে টপটপ পানি বেয়ে পড়ছে আর পিঠ ভিজে যাচ্ছে।সুর্য্যের আলো মেয়েটার শরীরে এসে পড়ছে আর পানিগুলো শুষে নিচ্ছে।চুলে সাদা টাওয়াল লাগিয়ে একপাশে সবগুলো চুল এনে দুহাতে পানি মুছে দিচ্ছে।তার মেঘ কালো চুলের মাঝে সাদা টাওয়ালকে মনে হচ্ছে কোনো বরফের টুকরা জড়িয়ে আছে চুলে।কি সব ভুলভাল জিনিস দেখছি ঘুম ঘুম চোখে।দুহাতে চোখ মুছতেই সত্যটা বেড়িয়ে এলো।যাকে একটা মেয়ে ভাবছিলাম সেটা আমারই পুতুল বউ রিয়া।এই মেয়েটার অদ্ভুত সব সৌন্দর্য।আচ্ছা রিয়া কি আসলেই সুন্দরী?নাকি আমি ওর সৌন্দর্যের উপমা খুজে পাই বলে ও সুন্দরী?কি জানি কোনটা সঠিক বলতে পারবনা।তবে রিয়া আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে যার ভালোবাসার গভীরতায় চিরকালের জন্য হারিয়ে যাওয়া যায়,যাকে অন্ধের মত বিশ্বাস করা যায়।রিয়ার মত মেয়েকে ভালো না বেসে পারাই যায়না।এই পিচ্চি বর ওঠো।যাও ফ্রেশ হয়ে নাও বের হব আমরা।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি রিয়া রেডি হয়ে বসে আছে।আমাকে পোশাক পড়িয়ে, শার্টের বোতাম লাগিয়ে, চুল আঁচড়ে রেডি করে দিল।আসলেই তো আমি রিয়ার পিচ্চি বর।

ও আমার সবকিছু করে দেয় যেমনটা পিচ্চি থাকতে আম্মু করে দিত।আমি এখনও পিচ্চিই রয়ে গেলাম।কবে বড় হব আমি? আচ্ছা আমি এরকম বেবি টকিং করি কেন?ওমা! আমি যে একটা মেয়ের পিচ্চি বর।ইশ.. রিয়া যদি সেই ছোট্টবেলার পুতুল খেলার সাথি হত তবে তখনই ওকে বউ করে নিতাম।তাহলে এই ২০ বছর রিয়াকে ছাড়া থাকতে হতনা।আমি রিয়াকে আরো বেশি ভালোবাসতে পারতাম বেশি ভালোবাসা পেতাম।ভাগ্যে সবকিছু মনের মত হয়না।কিছু জিনিস চেপে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।আচ্ছা আমি যে রিয়ার প্রতি সব ভালোবাসা লিখে সবাইকে জানাচ্ছি এতে কি ভালোবাসা কমে যাবে?হুর..তা কেন কমবে?রিয়া জানে আমি ওকে কতটা ভালোবাসি।হোটেলের দেনা পাওনা মিটিয়ে কক্সবাজারের বাসে উঠে পড়লাম।রিয়ার সাথে সমুদ্র দেখব, মজাই আলাদা।একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম।বিয়ের আগে বন্ধুদের সাথে থাকতেও আমি ফোন ইউজ করতাম না হয় কবিতার বই হাতে থাকত।কিন্তু রিয়া আমার জীবনে আসার পর ওসবের কোনো প্রয়োজনই হচ্ছেনা।রিয়া পাশে থাকলে আমি সব ভুলে গিয়ে ওর মাঝে মগ্ন থাকি।পাহাড়ের গিরিখাত বেয়ে বাস চলছে প্রচণ্ড গতি নিয়ে।

একটু ভুল হলেই জীবন শেষ।হুর কিসব ভাবছি আমি!রিয়া পাশে থাকলে এসব কখনও হবেনা।কক্সবাজার পৌছে গেলাম খুব তারাতারি।রিয়াকে নিয়ে আগে থেকেই চেনাপরিচিত একটা ভালো হোটেলে উঠলাম।রিয়ার মনটা আজ অনেক ভালো।পথে কোনো দুষ্টুমি করে নাই।সবার সাথে ফোনে কথা বলে নিল।এই পিচ্চি বর শোনো বিকেলে সমুদ্র দেখাতে নিয়ে যাবা কিন্তু।ওর কথায় সায় দিয়ে খোজ নিলাম জোয়ার-ভাটার হিসাব।নাহ্ বিকেলে জোয়ার-ভাটা কোনোটাই নেই।তার মানে সৈকতে আজ বেশ মজা করা যাবে।বিকেলে সমুদ্র দেখতে বের হতে গিয়ে সমস্যা হলো পোশাক নিয়ে।আমি ছেলে মানুষ তাই পোশাকে কোনো সমস্যা থাকলোনা।কিন্তু পুতুলটাকে নিয়ে ঝামেলায় পড়লাম।শেষে শাড়ি বাদ দিয়ে সালোয়ার কামিজ পড়ে সৈকতে যাওয়ার জন্য বের হলাম।দুর থেকেই সমুদ্রের উত্তাল জলরাশির ঢেউয়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে।রিয়া বেশ খানিকটা উৎফুল্ল।সৈকতে পা রাখতেই রিয়া অতি দুর সমুদ্রের পরে পার খোঁজার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো।পিচ্চি বর এখানে না আসলে ভাবতেই পারতামনা পৃথিবীটা এত বড়।আর আমার ভালোবাসা এর চেয়েও বড়।এহ্ আইছে লেকচার মারতে।

বুঝলাম রিয়া ঝগড়ায় মেতে উঠতে চাচ্ছে তাই চুপ করে রইলাম।আমি আর রিয়া খালি পায়ে সৈকতের বালুতে পা মিলিয়ে মিলিয়ে হাটছি।রিয়া সাগরের দিকে থাকায় ওর চুলগুলো আমার মুখের উপর উড়ে এসে পড়ছে।রিয়ার ওড়না মাঝে মাঝে উড়ছে সাগরের উত্তাল বাতাসে।সুন্দর,সুবর্ণ,অপূর্ব,লাবণ্য,রুপসী,রুপেতে অনন্য আমার রিয়া।যার সবকিছুর মাঝেই আমি নিজেকে খুঁজে পাই।ও পিচ্চি বর।কি?চলো ভিজি।ঠান্ডা লাগবে যে আর গায়ে বালু লাগবে।তো কি হইছে।গোসল করে নিব পরে।চলো যাই।রিয়া নামতে ভয় পাচ্ছে কারন ও সাতার জানেনা।আমি ছেটবেলায় গ্রামের বাড়িতে একমাস থেকেছিলাম।ওই সময় ছোট চাচ্চু আমাকে সাতার শিখিয়েছিল পুকুরে।রিয়ার ভয় কমিয়ে ওকে নিয়ে গেলাম পানিতে।ঠান্ডা বালুময় পানিতে সারা শরীর মুহূর্তেই ভিজে গেল।প্রথম ঢেউয়ের কবলে পরে রিয়া প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে।বুঝলাম রিয়ার হাত ছেড়ে দেয়া যাবেনা।ওর হাত চেপে ধরে রেখে পানিতে ভিজলাম।রিয়া ভয় পাচ্ছে খুব।প্রচণ্ড ঠান্ডায় থাকতে না পেরে রিয়া বলেই দিল বাসায় যাব।ওকে নিয়ে হোটেলে ফিরে গোসল করে চেঞ্জ করলাম।সন্ধা হয়নি এখনও।পশ্চিম আকাশে সুর্য্য রক্ত বর্ণ ধারন করছে।এমন সময় রিয়া সৈকতে আবারও যাবে তবে এবার ভিজতে নয়।সাগরের সাথে নাকি ওর অনেক কথা জমে আছে।

রিয়া আর আমি পাশাপাশি হাটছি।কালো শাড়িতে রিয়াকে বেশ মানিয়েছে।বাতাসে শাড়ির আচল উড়ছে,চুল উড়ছে আর উড়ছে আমার মন।কিন্তু রিয়া চুপ করে আছে কোনো কথাই বলছেনা।নিরবতা ভেঙ্গে প্রশ্ন করলাম কিন্তু কোনো উত্তর নেই রিয়ার।মনে হয় ও কথা বলতে চাচ্ছেনা।পশ্চিমাকাশ রক্ত বর্ণে রঞ্জিত।সোনালি সূর্য্যটাও লালা বর্ণের হয়ে গেছে।রিয়া একটা পাথরের উপরে বসে ওই দুরে তাকিয়ে আছে।জীবন থেকে একটা দিন মুছে যাচ্ছে।বেরসিক সূর্য্যটা পানির মধ্যে ডুবে গেল।রিয়া পাথরের উপরে বসে তাকিয়েই আছে।এই ফাকে আমি ফোনের ক্যামেরায় রিয়াকে বন্দি করে ফেললাম।ক্যামেরার আলোতেও ওর মনযোগ ভাঙ্গতে পারলাম না।এরকম গোমড়া মুখো হয়ে কি দেখছে রিয়া?অথচ আমরা নাকি স্বামী-স্ত্রী।চুপচাপ আমিও বসে গান শুরু করলাম।চলো না ঘুরে আসি অজানাতে যেখানে নদী এসে থেমে গেছে।আবার এলো যে সন্ধা শুধু দুজনে।পিচ্চি বর একটু চুপ করবে?আমাকে সমুদ্রের বিশালতা আর গভীরতাকে উপভোগ করতে দাও।চুপ করে থাকা ছাড়া উপায় নেই।ডাইনি বউ সমুদ্র দেখছে তাই আমিও তার সাথে সমুদ্র দেখছি।

তবে আমার ফিলিংসের অভাব থাকার কারনে সমুদ্রের বিশালতা,গভীরতা কোনোটাই উপভোগ করতে পারছিনা।সন্ধা নেমে গেছে।রিয়াকে বললাম ফিরতে হবে।ও আর কিছুক্ষণ বসে থেকে চলে আসলো রুমে।ডিনার করে দুজনে রুমে এসে বসলাম।হঠাৎ রিয়ার মুখে কথা ফুটল।পিচ্চি বর একটা জিনিস আজকে অনুভব করলাম।কি?তোমাকে আমি ওই সমুদ্রের বিশালতার চেয়েও বেশি ভালোবাসি।আর ভালোবাসার গভীরতার কাছে সমুদ্রের গভীরতা মামুলি ব্যাপার।এসব তো সিনেমার ডায়ালগ পিচ্চি বউ।এগুলো আমাকে কেন শোনাচ্ছ?ওই তুই কি আমার বয়ফ্রেন্ড যে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে আমাকে এসব সিনেমার ডায়লগ মারতে হবে?সেটাও মন্দ বলনি।তাহলে সিনেমার ডায়ালগ কেন বলছিস?আমার তো আর তোমার মত ফিলিংস নাই, তাইনা?ছোঁচা জামাই বলেই বালিশ দিয়ে ঢিল শুরু করল।এই মেয়েকে এখন থামানো বড়ই কষ্টকর ব্যাপার।বুঝছি এখন তার আমাকে দরকার।যাই কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে একটু ভালোবাসা দেখাই।পারলে ওই সমুদ্র থেকে কিছু ভালোবাসা নিয়ে আমার ভালোবাসার পুকুরে রেখে দিব।দেরী না করে এখন এটা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।আচ্ছা পিচ্চি বর তোমার বাবা হতে ইচ্ছে হয়না?

রিয়ার কথাটা শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম।বিয়ের আগে বাবা হওয়ার প্রতি কোনো ফিলিংস ছিলনা।কিন্তু বিয়ের পর রিয়ার মুখে এমন কথা শুনে বুকের মধ্যে একটা হাহাকার সৃষ্টি হল।আসলেই মানুষ বিয়ে করে কেন?জৈবিক চাহিদা আর সন্তান নিয়ে ভবিষ্যতে বেঁচে থাকার জন্যই তো!অদ্ভুত প্রাণি মানুষ।নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনে।সে যে ছেলেকে জন্ম দিবে সেই ছেলে এরশাদ শিকদার কিংবা মীর জাফরের মত মানুষ হতেও পারে।আবার নিউটন,আইনস্টাইন কিংবা ম্যান্ডেলার মত নেতা হতেও পারে।তবুও বাবা হতে সবাই ভালোবাসে।প্রত্যেক বাবাই চেষ্টা করে তার সন্তানকে ভালো মানুষ ও ভালো শিক্ষা দিতে।কিন্তু সঙ্গ দোষে এরকমটা হয়ে যায়।এই পিচ্চি বর কি চিন্তা কর?একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।সকালবেলা উঠে রিয়া কক্সবাজারে শপিং করতে বের হলো।শামুকের নুপুর,নাকের নোলক,কানের গয়না,কপালের টিকলি,গলার মালা,হাতের চুরি থেকে শুরু করে অনেক কিছু।বিকেলের দিকে সৈকতে খালি পায়ে হেটে বেড়াচ্ছি দুজন।শুনলাম জোয়ার হবে।রিয়া নাকি জোয়ার দেখবে।ওকে নিয়ে অনেক দুরে নিরাপদ স্থানে দাঁড়িয়ে গেলাম জোয়ার দেখার জন্য।আস্তে আস্তে সাগর ফুলে গিয়ে পানি আমাদের কাছে চলে আসল।

বিশ্বাস করা একদমই কঠিন তবে সত্যি সত্যি এমনটা হয়ে গেল।সেই পানিতে রিয়া ওর পা ভিজিয়ে নিল।সন্ধায় ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হলাম।পুতুল বউ আর পিচ্চি বরের মধুচন্দ্রিমা শেষ হয়ে যাচ্ছে।সারারাত ধরে বাস চলছিল।জানালার পাশে রিয়ার ছোট্ট ছোট্ট দুষ্টুমি সহ্য করছি।বাসায় পৌছাতে পৌছাতে প্রায় সকাল এগারটা বেঁজে যায়।আমি তো ক্লান্ত শরীরে এসেই ঘুম।বিকেলে ঘুম থেকে উঠে দেখি আনিকা আসছে।এছাড়া আসেপাশের বাসা থেকে আন্টিরা এসেছে।সবাই রিয়ার সাথে কথা বলছে,মজা করছে।রিয়া মনে হয় ওনাদের কথায় কিছুটা লজ্জিত।আমি ড্রয়িং রুমে যাওয়ার পর আন্টিদের সালাম দিলাম।সবাই আমার সাথে কেমন রহস্যময় কথা বলছে।আমার দিকে তাদের দৃষ্টিও অন্যরকম।একজন তো বলেই দিল কি তিনদিনেই শুকিয়ে গেলে?সারাজীবন তো পরেই রয়েছে।আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম।কি হ্রামি আন্টি!আন্টি আঙ্কেল ও কি আমার মত শুকিয়ে গেছিল?কথাটা বলাতে উনি চমকে গেলেন।আরেকজন বলছেন ওর স্বামী কে তো খুঁজেই পাওয়া যায়নি।কথাটা বলার সাথে সাথে হাসির রোল পরে গেল।সবাই মজা করছে।

আর আমি ফ্রেশ হওয়ার বাহানা করে কেটে পড়লাম।অফিসের কিছু কাজে লেগে পড়লাম।ল্যাপটপে বসে কাজ করছিলাম এমন সময় রিয়া এসে চা দিয়ে গেল।ওর হাত টেনে ধরে বসতে বললাম কিন্তু ও বলল বাসায় লোকজন আছে এখন দুষ্টুমি চলবেনা।লজ্জা পাচ্ছ না ওনাদের এরকম খামখেয়ালি কথায়!তোমাকে তো কিছুই বলেনি।আমাকে কি থেকে কি জিজ্ঞেস করেছে সেটা আমার তোমাকে বলতে লজ্জা লাগছে।আচ্ছা মানুষ মুরুব্বি হলে কি লজ্জার মাথা খায়?এরা কি জানেনা ছেলেরা কেন এমন হয়?তারা নিজেরাও তো এসব করেছে তাইলে এমন করে কেন?রাগ উঠে আমার।সন্ধায় রিয়া নাস্তা দিয়ে গেল।ওকে মিস করছিলাম।ঘরে আসাতেই চেপে ধরলাম রিয়াকে।দেয়ালের সাথে পিঠ লাগিয়ে ওর কানে কানে বলছি মিস করছি তোমার স্পর্শের অনুভূতিগুলো। রিয়ার চোখে তাকিয়ে দেখি ও চোখ বন্ধ করে কাঁপছে।ওর মুখে একটা ফুঁ দিলাম।হালকাভাবে কেঁপে উঠল।ওদিক থেকে আম্মু রিয়াকে ডাকাতে তারাতারি চলে গেল।হুর…রিয়াকে কাছেই পাচ্ছিনা।কেমন যেন লাগছে।শুন্যতা বিরাজ করছে প্রতিটা সেকেন্ডে রিয়ার জন্য।

এমন কেন হচ্ছে?রাতের খাবার শেষে রিয়াকে কাছে পেলাম।এই মেয়ে আর কত দুরে দুরে থাকবে?কাজ করতে দাও তো।ঘরটা গুছিয়ে নিই।রিয়া শাড়ির কোমর বেধে কাজ করছে আর আমি ওকে দেখছি।মেয়েটাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি।কি ভেবে ওর কোমড়ে গিয়ে হাত দিলাম।কি মশাই এইটুকু অপেক্ষা সহ্য হচ্ছেনা?আমি মরে গেলে কি করবে, হুম?রিয়া কথাটা বলার পরই কেমন যেন বুকের মাঝে খারাপ অনুভূতির সৃষ্টি হলো।এমন কেন লাগছে আমার?রিয়াকে ছাড়া আমি অর্থহীন।ওকে ছাড়া আমার পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।নাহ্ অপেক্ষা সহ্য করতে পারলাম না।রিয়াকে কাছে টেনে নিয়েই ফেললাম।এই পিচ্চি বর ভালো হচ্ছেনা কিন্তু।আগে তো এমনটা ছিলেনা আজ হঠাৎ এমন দুষ্টু হয়ে গেলে কেন?ছাড়ো তো আমার ভাল্লাগছেনা।রিয়া এমন করাতে কেমন যেন লাগল।ওকে ছেড়ে উঠে বারান্দায় চলে গেলাম।ল্যাম্পপোস্ট জ্বলছে মৃদু মৃদু করে।কিন্তু আমার ভিতরটা জ্বলছে দাও দাও করে।রিয়া কাজ করছে ঘরে।কখন যে পিছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে বুঝতেই পারিনি।আমার পিঠে মাথা রেখে রিয়া শুয়ে আছে।মেয়েটা কেমন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমায়।

আমি নড়াচড়া করতেই রিয়া আরো জোড়ে চেপে ধরল আমাকে।দুজনেই তিনদিনের ধকলে ক্লান্ত।দুজনে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।পরদিন সকালে আমার রিয়া সেই চিরচেনা বাঙালি মেয়ের সাজে।গোসল করে এসে শাড়ি পড়েছে।ভেজা চুলের পানি দিয়ে আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিল।ছটফট করে উঠে দেখি রিয়াকে পবিত্র লাগছে।সদ্যজাত ভূমিষ্ঠ শিশুর মত লাগছে।মেয়েটাকে এমন চোখে আমি কেন দেখি?আচ্ছা আমি ভালো মানুষ তো?নইলে এসব বাজে ভাবনা আসে কোত্থেকে? নাকি আমার শিক্ষা ভূল।বাবা-মা কি তাহলে আমাকে ভূল শিক্ষা দিয়েছেন?কিসব ভাবছি!রিয়ার চুল আঁচড়ে দিচ্ছিলাম।নাস্তা বানাতে গেল রিয়া আর আমাকে গোসলে যেতে বলল।গোসল শেষে দেখি একটা নতুন পোশাক।এটা তো আমি কোনোদিন কিনিনি?রিয়া তুমি এটা পেলে কোত্থেকে? আমি বিয়ের আগে কিনেছিলাম।কেন?তোমার জন্য।লক্ষ্মী বউ আমার।রিয়া কেমন যেন বেশি কেয়ারিং আমার প্রতি।

মেয়েটা আমাকে নতুন জীবন দান করেছে।যে জীবনে সুখের অভাব নেই।আছে শুধু ভালোবাসা।আচ্ছা শুনেছি এমন সুখের জীবন নাকি বেশিদিন থাকেনা?তবে কি আমার আর রিয়ার মাঝে এমন কিছু হবে যা সুখ কেড়ে নিবে!কিসব ভাবছি আমি অফিসে বসে।রিয়াকে নিয়ে বড্ড বেশিই চিন্তা হয় আমার।পাগলের মত ভালোবাসি ওকে।ওর কোনো কষ্ট আমি নিজ চোখে দেখতে পারবনা।একটা মানুষ কখনও আরেকটা মানুষকে এতটা ভালোবাসতে পারে চিন্তাই করা যায়না।শুনেছি সবাই নিজের জীবনকে বেশি ভালোবাসে কিন্তু আমি নিজের জীবনের চেয়ে রিয়াকে বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।রিয়ার সুখের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে আমি এক সেকেন্ড ভাববো না।মেয়েটা আমাকে সম্পূর্ণ ওর করে নিছে।আমি চলি রিয়ার দেয়া অক্সিজেনে।ও বন্ধ করে দিলেই আমি মরে যাব।রিয়াকে জানাতে হবে ওকে কতটা ভালোবাসি।ফোনটা বের করে রিয়াকে টেক্সট করে বলেই দিলাম ভালোবাসি পুতুল বউ। অফিসে লাঞ্চের সময় কলিগদের কাছেও কিছু পরাজিত প্রশ্ন শুনলাম।কেয়ার করলাম না ওসব।আমার কাছে রিয়াই সবকিছু।ভালোবাসলে লজ্জাশরম যে থাকেনা তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ আমি।রিয়াকে দেখার জন্য মনটা কেমন কেমন যেন করছে।অফিস ছুটি হতে না হতেই আমি তারাতারি বাসায় চলে আসলাম।এসে দেখি রিয়া ঘুমিয়ে আছে।ওর ঘুমন্ত মুখটা দেখতে ভীষন ভাল্লাগছিল।সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায় শুধু রিয়া কাছে থাকলে।

ওর কপালে চুমু একে দিলাম।আজ আমি নিজেই সব কাজ করছি।রিয়া ঘুমুচ্ছে আর ওকে ছাড়া আমি খাইতে বসছি।একবার জিজ্ঞেস করা উচিৎ ও খাইছে কিনা?ওকে ডেকে তুলে জিজ্ঞেস করাতে বলল খেয়েছে।রাতের দিকে বসে বসে ফুটবল দেখছিলাম।রিয়া হঠাৎ বাইরে ঘুরতে যেতে চাইলো।ক্যাজুয়াল পোশাকেই বের হয়ে দুজন ফাঁকা রাস্তায় হাটছি।কত স্বপ্ন বুনছি বুনছি দুজন তার শেষ নেই।রিয়া আমাদের বেবি নিয়ে অনেক এক্সাইটেড।হঠাৎ লক্ষ্য করলাম আমরা হাটতে হাটতে অনেক দুর চলে এসেছি।কলোনি ছেড়ে অনেকটাই দুরে।কেমনে আসলাম এতদুর!ভাবতেই পারছিনা।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ২টা বেজে ৮ মিনিট।পাশেই একটা ইটের ভাটা।কয়েকজন লোক সেখানে আড্ডা দিচ্ছে।ভালো করে লক্ষ্য করলাম ওরা চারজন নেশা করছে।রিয়া আমার হাত জড়িয়ে হাটছে।লোকগুলো আমাদের দুজনকে দেখে ফেলার আগেই আমাদের সরে পরতে হবে।নইলে কিঞ্চিত বিপদের সম্ভাবনা আছে।এর আগে এখানে কয়েকটা দুর্ঘটনা ঘটেছিল।আমরা দুজন তারাতারি ফিরে আসছি এমন সময় ওদের একজন আমাদের দেখে ফেলছিল।ছিনতাই করার জন্য ওরা এখানে ওৎপেতে থাকে।

সুযোগ পেয়ে আমাদেরও রক্ষা হলোনা।দৌড়ে আমাদের সামনে চলে আসে ওদের একজন।আমার কাছে সবকিছু চেয়ে বসল।ভেবে দেখলাম ওদের চারজনের সাথে আমি পারবনা।একা হলে দৌড়াতাম কারন আমি জানি এই মাতালের দল আমার সাথে কখনও দৌড়ে পারবেনা।রিয়ার কথা ভেবে সবকিছু দিয়ে দিলাম।একজন ছোট্ট ছুরি বের করে আমাকে ভয় দেখাতে চাইল।ওদের মাঝে ইয়াং বয়সের একজন রিয়ার গলার চেইন নেয়ার চেষ্টা করায় আমি একটা চর বসিয়ে দিলাম।রিয়া প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছে।ও আমার পিছনে টি-শার্টের আড়ালে দাঁড়িয়ে।চর দেয়াতে ছেলেটা আমার গায়ে হাত তুলে ফেলল।দেখো ভাই আমি তোমাদের কেউনা।যা পাওয়ার পেয়ে গেছো এবার আমাদের যেতে দাও।কিন্তু ওই ছোট ছেলেটা রিয়ার পিছু ছাড়ছেনা।ছেলেটা আমাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করতে আসলে আমি প্রতিহত করতে যাই।আমার হাতে ছুরির আঘাত লেগে কেটে রক্ত বের হয়।রিয়া চিৎকার করে ছেলেটার উপর ভুল করে আক্রমণ করে বসে।তখনই বিপত্তি ঘটে যায়।রিয়াকে বার বার বলেছিলাম তুমি চুপ থাকবে।ওদের কিছু না করলে ওরা জিনিসপত্র নিয়ে চলে যাবে।ওই বাকি একজন রিয়ার গায়ে আঘাত করে বসলে আমি ওদের একাই মারতে শুরু করলাম।

পরে উল্টো ওরা আমাকে মারতে শুরু করে।ছুরি আর লাথির আঘাতে আমি মাটিতে পরে যাই।আমার মুখের দাত ভেঙ্গে যায়।রক্তাক্ত হয়ে আমার দেহ মাটিতে পরে যায়।ওরা রিয়াকে ইটের ভাটার দিকে টেনে হিচরে নিয়ে যাচ্ছিল।আমি কিছুই করতে পারছিলাম না।শুধু সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিলাম।রিয়া আমার কাছে ফিরে আসার চেষ্টা করতে চেয়েও সফল হচ্ছেনা।ওরা রিয়াকে ওদের ছোট্ট ছাউনিতে নিয়ে যায়।আমি রিয়াকে বাঁচাতে পারছিনা।চিৎকার করে আল্লাহকে ডাকছি।আমার চিৎকার কেউ শোনেনি সেদিন।আমার ছোট্ট পবিত্র পুতুলটাকে ওরা ছিড়ে খাচ্ছে।আমার চোখে কোনোদিন আমার পুতুলের এই দৃশ্য দেখতে হবে স্বপ্নেও ভাবিনি।রিয়ার আর্তনাদ আমাকে প্রতিটা সেকেন্ডে মেরে ফেলছিল।আমি নিজের চোখে রিয়ার অসহায় আর্তনাদ শুনছি,ওর বাঁচার আকুলতা শুনছি,পশুগুলোর অট্টহাসি শুনছি।ইচ্ছে করছিল কানের পর্দা ছিড়ে ফেলতে।আমি এই দৃশ্য দেখার জন্য এমন আর্তনাদ শোনার জন্য জন্মেছিলাম!কেউ আসেনি আমাদের বাঁচাতে।রাস্তার পাশে ইটের টুকরা দিয়ে নিজেকে শেষ করতে চাচ্ছিলাম।

আমার অসহায়ত্ব আমার পুতুল বউকে ছিড়ে খাচ্ছে।এমন দৃশ্য চোখের সামনে কোনো মানুষ কল্পনা করতে পারেনা।রাস্তার উপর আমি আমার মাথা আর কপালে আঘাত করি।তাজা লাল রক্তে আমার শরীর ছেয়ে যাচ্ছে।ওদিকে রিয়া একটু সাহায্যের আশায় আমার দিকে তাকিয়েছিল।ওর তিলে তিলে শেষ হয়ে যাওয়া দেখছি আমি।আমার কান্না কেউ শুনল না।বুঝতে পারলাম ওরা রিয়াকে রক্তাক্ত অবচেতন অবস্থায় আমার কাছে ফেলে পালিয়ে গেল।কখন জ্ঞান হারিয়েছি জানিনা।দুজন মানুষের একটাই পৃথিবী ছিল।একটু আগে সেই পৃথিবী কিছু নরপশুর দ্বারা চুরমার হয়ে গেছে।পবিত্র একটা নারীদেহকে ওরা অপবিত্র করেছে।আমি একটা মানুষ হয়েও সেই পশুগুলোর হাত থেকে আমার প্রাণপ্রিয় পুতুলকে রক্ষা করতে পারিনি।কেমন নিষ্ঠুর এই পৃথিবীটা।সুখ কখনও পৃথিবীতে বেশিদিন টিকে থাকেনা।সাময়িক সময় মানুষ অতি সুখের সাগরে ভাসলেও তাকে একদিন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়।জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে আবিষ্কার করলাম অন্ধকার কোনো এক জগতে।চোখে হাত দিয়ে দেখি ব্যান্ডেজ করা।

রিয়ার জন্য আইসিইউ থেকেই আমি চিৎকার করা শুরু করলাম।নার্স আশ্বস্ত করল রিয়া চিকিৎসাধীন আছে।নার্সকে রিয়ার কাছে নিয়ে যেতে অনুরোধ করলে আমাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দেয়া হয়।তারপর আর কিছু মনে নেই।এভাবে কয়েকদিন আমাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রাখা হলো।রিয়ার কথা জানতে চাইলেই ওরা আমাকে বলে ভালো আছে।চোখের ব্যান্ডেজ টেনে খোলার পর আমি কিছু দেখতে পাচ্ছিনা।ডাক্তার এসে আমাকে ভীষন বকা দিলেন।আমি কাঁদতে কাঁদতে রিয়ার কথা জিজ্ঞেস করলাম।আপনার চোখ থাকলে তো রিয়াকে দেখবেন?রিয়া ভালো আছে।ওনাকে নিয়ে কোনো চিন্তা নেই।আমার মাথায় আঘাত লাগার কারনে নাকি আমার চোখের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হইছে।আমি রিয়াকে দেখব।আপনার পা এখনও ঠিক হয়নি।আপনার হাটা সম্পুর্ন নিষেধ।আমার রিয়াকে একবার সামনে এনে দিন।আমি ওর সাথে কথা বলব।উনি ভালো আছেন।খুব তারাতারি সুস্থ্য হয়ে উঠবেন।আম্মু আসছে আমার কাছে।

এসেই কান্নকাটি করছে।আম্মু রিয়া কেমন আছে?ও ভালো আছে।আম্মু রিয়াকে আমি দেখব।আমাকে ওর কাছে নিয়ে চল।কেউ আমার কথা শুনছেনা।রিয়া নাকি বেঁচে থাকতে চায়নি।ওকে নিবির পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।কয়েকদিন পর রিয়াকে আমার কাছে নিয়ে আসা হল।রিয়ার স্পর্শ আমার হাতে অনুভব করলাম আমি।কিন্তু আমি রিয়াকে দেখতে পাচ্ছিনা।রিয়া কই তুমি?জানো ডাক্তার বলছে আমি নাকি আর কোনোদিন চোখে দেখতে পারবনা।কথা বলছো না কেন তুমি?একমাস পর সুস্থ্য হয়ে আমি বাসায় ফিরলাম।আমি অন্ধ হয়ে গেছি।রিয়ার স্পর্শ পাওয়ার আশায় আমি তৃষ্ণার্ত। পিচ্চি বর আমি আর তোমার যোগ্য নই বলেই রিয়া হাওমাও করে কাঁদতে শুরু করল।আরে কে বলছে?আমি তোমাকে ভালোবাসি।তুমি ভালোবাসো অন্য রিয়াকে যে মরে গেছে সেদিন রাতেই।এখন তোমার সামনে দাঁড়িয়ে অপবিত্র একটা মেয়ে।আমি কোনো অপবিত্রাকে দেখতে পাচ্ছিনা।আমি আমার চোখে সেই রিয়াকেই দেখতে পাচ্ছি।যে পুতুলটা পবিত্রতায় ভরপুর।পিচ্চি বর তুমি আমার আশা ছেড়ে দাও।

আমি অনেকদূর চলে যাব।কেউ আমাকে চিনবেনা।আত্মহত্যা মহাপাপ না হলে আমি তোমাকে রেখে চলে যেতাম।কিন্তু তোমায় বড্ড বেশি ভালোবাসি।তাই পারিনি তোমায় ধোকা দিয়ে কোথাও যেতে।অনেকবার নিজেকে শেষ করতে যেয়ে ফিরে এসেছি।পিচ্চি বর আমার শরীর এখন পঁচা দুর্গন্ধময়। তুমি আমার শরীরে যে পবিত্র ঘ্রান পেতে এখন তার জায়গায় পশু পঁচা গন্ধ।তুমি যে পুতুলকে আদর করতে এখন সেই পুতুল নোংরা। আদরের অযোগ্য।রিয়া তুমি কখনও আমাকে ছেড়ে যেওনা।তুমি চলে গেলে আমি কি নিয়ে থাকব?আমার সাথে কে দুষ্টুমি করবে,কে আমাকে ভালোবাসবে?তোমার ভালোবাসার জন্যই আমি বেঁচে আছি।ঠিক আছে তাহলে শোনো।তুমি আর কোনোদিন তোমার পুতুল বউকে আদর করবেনা,ভুলেও না।তুমি পবিত্র তাই আমাকে আদর করতে যেয়ে অপবিত্র হও তুমি, তা চাইনা।তোমায় নিয়েই বেঁচে থাকব আমি।তুমি অন্ততপক্ষে ভালো থাকবে কারন তোমার ওই চোখে আর অপবিত্র কিছু চোখে পরবেনা।যখন তোমাকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করবে তখন তোমার শার্ট আমি জড়িয়ে থাকব।

তোমার গায়ের গন্ধ নিব।আর আমি কি করব?তোমার কিছুই করতে হবেনা।শুধু আমায় ভালোবেসো একটু।তুমি কোনোদিন আমাকে দেখবেনা আর আমিও কোনোদিন তোমাকে কাছে টানব না।দুজনের কাছে আসার আকুলতাকে বিসর্জন দিব আমরা।আমাদের ভালোবাসায় কোনো স্পর্শ থাকবেনা,থাকবে শুধু অনুভূতি।আমরা দুজন দুজনের ভালোবাসা অনুভব করে সারাজীবন বেঁচে থাকব।পিচ্চি বর তোমাকে এতটাই ভালোবাসি যে তোমাকে ছেড়ে এই পৃথিবী থেকে যেতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল।ভালোবাসি তোমায় ভালোবেসে যাব চিরদিন।প্রায় দশ মাস পর জন্ম হয় একটি ছেলের।পুতুল বউ ওর নাম রেখেছে প্রিন্স।প্রিন্স দেখতে একদম পিচ্চি বরের মত।অবিকল বাবাকে নকল করা একটা ছেলে।ছেলেটা এখন অনেক বড় হয়ে গেছে।অন্ধ বাবা আর মাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।রিয়া ওর পিচ্চি বরকে সবসময় বলে তোমার ছেলে তোমার মতই দেখতে।পিচ্চি বর আমি আমার গর্ভে তোমাকেই পুনর্জন্ম দিয়েছি।প্রিন্স এখন ওর বাবা মাকে ছাড়া কিচ্ছু বোঝেনা।পিচ্চি বর এখন বুড়ো হয়ে গেলেও পুতুল বউয়ের কাছে পিচ্চিই রয়ে গেছে।

ওদের ভালোবাসা একটুও কমেনি।দিন গেছে আর একটু একটু করে পিচ্চি বর আর পুতুল বউয়ের ভালোবাসা বেড়েই চলেছে।প্রিন্সের নতুন ঘরে আজ নতুন প্রিন্সেস এসেছে।ভালোবাসা এমনই..কখনই শেষ হয়না।যদি সেই ভালোবাসা স্পর্শের বাইরে হয় তবে তা চোখ বন্ধ করেও অনুভব করা যায়।সত্যিকারের ভালোবাসা এমনই,যতই বাধা আসুক তা কখনও ফুরিয়ে যায়না।ভালোবাসার মানুষকে কখনও দুঃখ দিয়ে ভালো থাকা যায়না।একে অপরের দুঃখ সমান ভাগে ভাগ করে বেঁচে থাকা যায় সহস্র বছর।হাজার হাজার বছর ধরে ভালোবাসা এমন করেই বেঁচে থাকবে প্রতিটি পিচ্চি বর আর পুতুল বউয়ের অন্তরে অন্তরে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত