দুস্ত আমি পেরেছি। আমি পেরেছি তোর সাথে প্রতারণার প্রতিশোধ নিতে। যার কারণে তোকে মরতে হয়েছে ;তাকেও আমি মৃত্যু মুখী করতে পেরেছি। তুই যেভাবে সুয়ে মাটির নিচে, সেও তেমনি করে সুয়ে মাটির নিচে। প্রতারণার প্রতিশোধ নিয়েছি আমি।দুস্ত আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস। তোর কঠিন সময়ে আমি তোর পাশে ছিলাম না।থাকলে হয়তো তোকে কখনোই জেনে শুনে মৃত্যুর পথে যেতে দিতাম না।ক্ষমা করিস আমাকে।
আজ প্রথমবার অভি তার বন্ধু রাহুলের কবরের কাছে এসেছে। রাহুলের মৃত্যু হয়েছে প্রায় দু’বছর। এই দু’বছরে একবারও রাহুলের কবর দেখতে আসেনি অভি। আজ এসেছে ;কারণ যার জন্যে রাহুলের মৃত্যু হয়েছে।সেও আজ অন্ধকার কবরে।
রাহুল আর অভি ছিলো জানের দুস্ত। সেই পিচ্চি কাল থেকে তাদের গলাগলি করে বেড়ে ওঠা।অভি ছিলো সবদিক দিয়ে স্বয়ং-সম্পূর্ণ আর রাহুল ছিলো তার কিছুটা বিপরীত। অভি ছিলো একটু চালাক চতুর আর রাহুল একটু অন্যরকম। অভি আর রাহুলের মাঝে কখনোই ঝগড়া হয়নি বা ঝগড়ার উদয় হয়নি। সবসময় রাহুলকে আগলে রেখেছে অভি।
পরিবারের জন্য অভিকে পারি জমাতে হয় বিদেশ। আর রাহুল হয়ে পড়ে একা। রাহুল যখন একা ;তখন সে প্রেমে পড়ে অর্পি নামক একটি মেয়ের। অর্পি রাহুলের ভার্সিটিতেই পড়ে। খুব সুন্দর ;তবে বড় লোকের মেয়ে বলে বদরাগী, ভালবাসা কখন যে কার মনে উকি দেয় কেউ জানেনা। রাহুল ভার্সিটিতে কিছু দিন অর্পির দিকে তাকিয়ে থাকে। কারণ অর্পিকে তার পছন্দ ।পছন্দ হলেও কিছু করার নেই;সে কখনোই বলতে পারবেনা। রাহুল ভাবে আজ অভি থাকলে হয়তো অভিকে দিয়েই তার মনের কথা জানাতে পারতো।
এদিক দিয়ে অর্পির ব্যাপারটা বুঝতে বাকি নেই।সেও মজা নেওয়ার জন্য মুখিয়ে পড়লো। তাই নিজ থেকেই রাহুলের সাথে পরিচিত হলো।শুরু হলো রাহুল আর অর্পির পথ চলা।
প্রতিদিন ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দেওয়া, ঘুরাঘুরি আর রাহুলের হালকা কেয়ারিং এসব দিয়েই চলতে থাকে রাহুল অর্পির পথ চলা।রাহুলের মনের কোণে অনেকটা জুড়েই এখন অর্পি। এখন রাহুল অর্পি বলতে বিভোর। হঠাৎ একদিন রাহুল দেখে, অর্পি রিক্সাতে অন্য একটা ছেলের সাথে ঘুরছে।অর্পিকে ফোন দিলে অর্পি কেটে দিচ্ছে। তো রাহুল অর্পির মুখোমুখি হয়।জিঙ্গেস করে,, ছেলেটা কে।
—-দেয় বয়ফ্রেন্ড।
—তাহলে আমি কে
–কেও না।
—আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড না
–ছিলে এখন নেই।
—কি করেছি আমি
–কিছু করোনি। তবে তোমার সাথে আমি টাইমপাস করেছি মাত্র।
—কেনো করলে এমন
—মজা করেছি। তুমি ভাবলে কি করে তোমার মতো হেভা টাইপের ছেলের সাথে প্রেম করবো।যাস্ট মজা করেছি।
–কিন্তু আমি তো সত্যিই ভালবেসেছি।
—হা হা হা,এবার ভুলে যাও।
—ভুলতে পারবো না।
–তাহলে মরে যাও।আর হ্যাঁ আমাকে আর ফোন দিবানা, যোগাযোগও করবে না
এই বলে চলে যাই অর্পি।অর্পির এই ব্যাপারটা মেনে নিতে পারেনি রাহুল।রাহুল ছিল খুবই আবেগ প্রবণ।ভালবাসার মানুষটিকে ভুলা খুব কষ্টকর বিশেষ করে আবেগী মানুষগুলোর কাছে।
অর্পি মরতে বলেছে। তাই নিজেকে ঘর বন্ধী করে ফেলে রাহুল।হঠাৎ একদিন রাহুলের মরদেহ পাওয়া যায় তার রুম থেকে।অর্পির মিথ্যে ভালবাসা বুকে নিয়ে চলে যাই না ফেরার দেশে।
অভি দেশে ফিরে আসে।রাহুলের মৃত্যুটাকে মেনে নিতে পারেনি।অভি রাহুলের ডায়েরী পড়ে জানতে পারে। অর্পি নামক কাউকে সে পছন্দ করতো।আর সে তার সাথে প্রতারণা করেছে।মিথ্যে ভালবাসার অভিনয় করেছে। যার কারণে রাহুল আস্তে আস্তে মৃত্যুকোলে ঢলে পড়ে।
তারপর থেকেই অভি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।রাহুলের মৃত্যুর জন্য দায়ী অর্পিকে চরম শাস্তি দিবে। অভি জানতে পারে ;অর্পি তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকাপ করেছে। তাই অভি অর্পিকে প্রেমে ফেলার জন্য উকি দেয়।অভির স্ট্যাইল ফ্যাশান দেখে অর্পিও অভিকে পছন্দ করতে শুরু করে।
অভি আর অর্পির সম্পর্ক আগাতে থাকে।অর্পিকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, ফাস্টফুড খাওয়ানো, গিফট দেওয়া এসব দিয়েই চলতে থাকে তাদের সম্পর্ক। অর্পি ভাবে তার অন্যসব বয়ফ্রেন্ডের চেয়ে অভি একটু অন্যরকম। না চাইতেই সবকিছু পেয়ে যাই।আর এদিকে অভি যাস্ট একটা সময়ের অপেক্ষায় থাকে।
অবশেষে অভির অপেক্ষার দিন শেষ হয়।একদিন অভি তার মাসির বাড়ির কথা বলে এক জায়গাতে নিয়ে যায়।সেখানেই যা হওয়ার হয়।কিছু শারিরীক সম্পর্কের ভিডিও ফুটেজ এমএমএস করে।আর তা ভাইরাল করে সবর্ত্র ছড়িয়ে দেয়।
তারপর থেকে অর্পি রাস্তাই বের হলে মানুষ অন্যচোখে দেখে। অভি সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।চোখে আঙুল দিয়ে মনে করিয়ে দেয় রাহুলের কথা।মনে করিয়ে দেয় একটা ছেলের নিষ্পাপ ভালবাসার কথা। মনে করিয়ে দেয় রাহুলের পাগলের মতো ভালবাসার কথা।তাই সে প্রতিশোধ নিয়েছে।
অর্পি রুম বন্ধী হয়ে যায়।অর্পির রুমে অর্পির মৃতদেহ পড়ে থাকে। না, অর্পি কিছু লিখে যায়নি। কেমন করে লিখবে কারণ সেও তো অনেক প্রতারণা করেছে। তাই হয়তো নিয়তির এই বিধান তার জন্যে ছিল,,, অর্পি রাহুলের নিস্পাপ ভালোবাসা বুঝল না।যে ছেলে তাকে এত ভালবাসত।তার ভালোবাসা সে বুঝল না,, আপনারা প্লিজ এমন করবেন না।অন্যর ভালোবাসাকে বুঝতে শিখুন,,,