বিয়ে

বিয়ে

–আসতে এত দেরী হল যে? (খাদিজা)
– …
– কথা বলছ না কেন?
বিয়ে হতে না হতে তুমি বলা শুরু করে দিয়েছে।
– তোমার সাথে কিছু কথা ছিল তার আগে এই খামটি ধর। আর শোন, আমি যখন বলব খামটি তখনই খুলবা। খামটি দেওয়ার পর তার চোখে আনন্দের আভা ছিল, যেন আমি তাকে বাসর রাত্রে প্রেম পত্র দিয়েছি।
– আমি একজন কে ভালবাসি।
– কে সে? (খাদিজা)
-আদিবা… আমার কলিগ।
তার সারা মুখে কিছুক্ষণ আগেও যে রকম আনন্দর আভা ছিল তা চুপসে যেতে দেরি হল না। মুখে সেই আভাটা পরিবর্তণ হয়ে কেমন যেন একটা কষ্টের আভা দেখা দিল।
– কত দিন ধরে?
– ৬ মাস।

এখন তিনি ভেজা চোখ নিয়ে বসে আছেন। সরি ভেজা না কান্না মাখা মুখ নিয়ে বসে আছেন, কেন বা বসে থাকবেন না? সব মেয়েই যদি শোনে তার স্বামি অন্য কাউকে ভালবাসে, তাহলে সবারি একই অবস্থা হবে আর আমার অবস্থা… থাক পরেই জানতে পারবেন।

– ভাইয়া তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে। ( রিধি)
অফিস থেকে ফিরতে না ফিরতে বোন এটা বলল, প্রতিদিনই অফিস থেকে আসার পর প্রথম দেখাতে বোন টা আমার একটা না একটা ফাউল কথা বলবেই তাই এ কথাও বিশ্বাস করা যুক্তি সঙ্গত মনে হল না।
– ভাল… এখন ভাগ।
-আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না?
– ফাজিলের কথা কে বিশ্বাস করে?
– এই খবরদার বলে দিলাম আমাকে ফাজিল বলবি না।
– কেন আপনি কে বোনটি?
– আমি হলাম মায়ের আদরের ছোট মেয়ে আর আব্বুর রাজকন্যা আর ভাবির নন্দিনী।
– এই তোর লেকচার বন্ধ কর … তুই যেন কি বললি ভাবি.. কে ভাবি?
– তোর বৌ।
– আমি বিয়া করলাম কবে… তোর মাথা গেল নাকি? একবার বলিস আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে আরেকবার আমাকে বিবাহিত বানাই দিচ্ছিস!
সত্যি তোর কি মাথা খারাপ হল নাকি রে?
– তা ত একটু পরে বুঝতে পারবি।
বলেই বোনটা আমার মুখ একটা পেচ মেরে চলে গেল। মানে মুখ ভেংসি মারল আমার মতে এ্টা মেয়েদের জেনিটিক্যাল প্রবলেম।

পরে আমার ফাজিল বোনটার কথা সত্যি হইয়া গেল। বিয়ের কথা প্রথমে শুনতেই আমার আক্কেল গুডুম … খালি মনটা বলছে বিয়ে আমি করুম না, বাঁচাও। কিন্তু পরে যখন মেয়ের পরিচয় জানলাম তখন মনটা বলছে – বিয়েটা করেই ফেলি। দেরী করে আর লাভ নাই। পরে যখন জানতে পারলাম মেয়ে রাজি আর তারিখও ঠিক করা হয়ে গেছে মনটা খালি কয় কখন আইব সেই দিনটা?

তবে মনটা আরেকটা কথা কইল … মেয়েটাকে একটু শিক্ষা দিতে হবে আমাকে কষ্ট দেওয়া, না? হাড়ে হাড়ে বোঝাব অন্যকে কষ্ট দেওয়া কেমন লাগে।

– তোরে একটা কথা বলার ছিল।
– কি কথা … বাড়িতেও বলা যেত না?
– না মানে…
– কি মানে?
– আমি তোরে ভালবাসি।
মেয়েটা খানিক চুপ করে থাকল। মনে হল প্রপোজটা একসেপ্ট করে নেবে, তাই আমি হাসি মুখ নিয়ে তার দিকে চেয়েছিলাম।

– প্রপোজ কেমনে করতে হয় তা শিখলি না আর আমাকে প্রপোজ করতে আসিস… আর শোন তুই যে আমাকে প্রপোজ করতে আসছিস তা যদি খালু রে বলি তাহলে তোর কি হবে তুই নিশ্চয় জানিস? আর যদি আমার সামনে যদি এসব কথা বলিস তবে আমার পায়ের সেন্ডেল দ্বারা তোর গালকে আদর করতে আমার সময় লাগবে না। এমকি খালুর কাছে এটা পৌছাতে দেরি হবে না, মনে রাখিস কথাগুলা।

আমার হাসি মুখটাতে বিষাদের ছায়া পড়তে দেরী লাগনি আর মনটার কথা কি বলব আপনাদের। এসব কথা বলে মেয়েটা চলে গেল।

এরপর কত চেষ্টা করেছি তার সাথে কথা বলার জন্য কিন্তু কাজ হয়নি। মেয়েটা সব সময়ি আমাকে এভয়েড করেছে। আর আজ যখন তার আমার বিয়ের কথা বলল তখন মেয়েটাকে একটু শিক্ষা না দিলে হয় নাকি?

এতক্ষণ সে ভেজা চোখ নিয়ে বসে ছিল আর আমার… কষ্ট দেবার জন্য প্রতিশোধ নিতে পারার জন্য সেই হেভি আনন্দ হচ্ছিল অবশ্য দুঃখ হচ্ছিল যতই হোক আমি তো তাকে ভালবাসি। তাই আমি তাকে আর কাঁদাতে চাইলাম না।
– তুমি এবার তোমার হাতের খামটা খুলে দেখতে পার
আর কথা শোনমাত্র খাদিজা তার হাতের খামটি খুলার পরে একটা চিঠি পেয়ে আমাকে বলল-
– এটা কার চিঠি?
– পরে দেখ।

চিঠিটা পড়ার পর সে আমার দিকে অবিশ্বাসের চোখে তাকাল কিছুক্ষণ পর তা রাগে রূপান্তর হতে সময় লাগল না। চিঠিটা পড়ার পর রাগ হওয়া সাভাবিক কারণ চিঠিটাতে লেখা ছিল-

“প্রিয় বউ,
তোমাকে কষ্ট দেবার জন্য সরৎ। তুমি ছাড়া আমার জীবনে অন্য ২য় কোন মেয়ে নেই। তোমার মনে থাকার কথা তোমাকে যেদিন আমার মনের কথা জানালাম, তার পরে তোমার কথাগুলা আর এতগুলা দিন আমাকে কষ্ট দেবার কথা, তাই আমি এর প্রতিশোধ তুললাম। তুমি আমার প্রথম তুমিই শেষ। আর আদিবা নামে আমার কোন কলিগ নেই, বুঝলা?

ইতি,
তোমার অবহেলিত স্বামি।”

এই চিঠি পড়ে আমার দিকে মেয়টা লাল চোখ করে তাকিয়ে আছে মনে হয় আমাকে কি করবে তা নিয়ে ভাবছে।

মেয়েটা আমার বুকে কিছুক্ষণ তার নরম হাতের গরম গুলা দিচ্ছিল, আই মিন কিল ঘুষি মারছিল। হাত নরম হলে কি হবে মার গুলা সেই গরম ছিল আমার বুকটা এখন ব্যাথা করছে। আমাকে মেরে সে এখন ক্ষান্ত হয়েছে, এবার আমার পালা … এবার ভালবাসা নেওয়ার পালা।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত