বলো তো এখনে কয়টা আঙুল? মেয়েটা দেখতে বেশ।তবে চশমাতে কিউট লাগলেও ফ্রেমটা আমার পছন্দ হলো না।আরে তুমি হচ্ছে এই যুগের মেয়ে। এইরকম বুড়োদের ফ্রেমে কি তোমায় মানায়!
-কি পছন্দ হয়েছে?
আম্মার কথায় আমি ওনার দিকে তাকালাম। আম্মার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে মেয়ে তার দারুন পছন্দ হয়েছে।এখন শুধু আমি হ্যা বললেই বিয়ে। মেয়ে অপছন্দ হওয়ার কোন কারন নেই।তবে চশমার ফ্রেমটা আমার কাছে সুবিধার লাগছে না।আমি আম্মাকে পছন্দের কথা বলতেই উনি একদম বিয়ে পর্যন্ত চলে গেলেন। কিছুদিন পর বিয়ে।বাড়িটা প্রায় লোকজনে ভরে গেছে।বাড়ির একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা। এসব ভাবতে ভাবতেই সুপ্তির ফোন এসে হাজির। মেয়েটাকে যতটা চালাক ভেবেছিলাম ততটা চালাক না। একদম সাদাসিধে। আমার মনের মতই। আমি ফোন ধরতেই বরাবরের মতই সালাম দিল। বলতে গেলে মেয়েটার এটা একটা ভাল গুন।আমি সালামের উত্তর দিয়ে বললাম,
-কেমন আছো?
-আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।তুমি?
-আলহামদুলিল্লাহ্।
-একটু দেখা করতে পারবে?
-কোথায় আসতে হবে?
মেয়েটা খুব সহজেই সবাইকে আপন করে নেয়। তাই আমাদের ও আপনি থেকে তুমিতে নামতে সময় লাগেনি। তেমন কাজ নেই তাই দেখা করলে মন্দ হয় না। দেখো তো এই শাড়িটা কেমন? সুপ্তির কথায় আমি ওর দিকে তাকালাম।হাতে একটা লাল শাড়ী নিয়ে বসে আছে।
সুপ্তির কাছে আসতেই ও বললো, চলো বিয়ের শাড়ী তোমার পছন্দেই কিনবো। আমি সুপ্তির কথায় একটু অবাকই হলাম।বলে কি মেয়েটা।বিয়ের শাড়ী কিনবে বাসার লোকদের সাথে তা না করে ইনি আমার কাছে চলে এসেছে। এখন যদি আমি না করি তাহলে মেয়েটা অনেক কষ্ট পাবে।খুব আশা করে এসেছে আমার কাছে। লাল শাড়ীটা আমার তেমন পছন্দ না।আমার পছন্দ ওই কালো শাড়ীটা।কিন্তু সুপ্তিকে দেখে মনে হচ্ছে ওর লাল শাড়ীটা বেশ পছন্দ হয়েছে।তাই আমিও না করলাম না। বিয়ের শাড়ী লালই ভাল।বিয়েতে কি কেও কালো শাড়ী পড়ে। তবে শাড়ীটা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।সুপ্তিকে দারুন মানাবে।
আমি লাল শাড়ীটার সাথে কালো শাড়ীটাও প্যাক করে দিতে বললাম।সুপ্তির দিকে তাকিয়ে দেখি কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে যেন আমি ভুল কিছু করে ফেলেছি।আমি মুচকি হেসে বললাম,কালো শাড়ীটা বিয়ের পরেই পরবে।তোমাকে ভালই মানাবে।সুপ্তি আমার কথায় শুধু মাথা ঝাকালো। আচ্ছা, তুমি একটি বসো আমি আসছি।কথাটি বলেই সুপ্তি আমাকে বসিয়ে রেখে চলে গেল। মেয়েটা এখন আবার কোথায় গেল।আর এমন কি বা কাজ যা আমাকে বলা যাবে না।দেখি কি করে মেয়েটা। এটা তোমার জন্যে। আমি মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি সুপ্তি দাঁড়িয়ে। হাতে একটা ব্যাগ আমার দিকে এগিয়ে দেওয়া।আমি বললাম,
-এটা কি?
-বিয়ের পাঞ্জাবী।তোমার পছনের কালো পাঞ্জাবী।
এ মেয়েটা আমার পছন্দের কথা কিভাবে জানলো। আর আমার বিয়ের পাঞ্জাবী ও কেনা হয়েয়ে গেছে।এখন যদি পাঞ্জাবী টা না নেই তাহলে মেয়েটা হয়তো কষ্ট পাবে।আমি আর কিছু না বলে ব্যাগটা নিলাম। এটা তুই কি পড়েছিস! আম্মার কথায় আমি ওনার দিকে তাকালাম। ওনার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে আমি বড় কোন ভুল করে ফেলেছি।আমি এবার পাঞ্জাবীটার দিকে তাকালাম।নাহ,ঠিকই তো আছে। আম্মা আবারও বললো,
-তোর জন্যে তো বিয়ের পাঞ্জাবী কেনা হইছে।তুই ওইটা না পড়ে এইটা কেন পড়লি? আম্মাকে এখন কিভাবে বলি যে এটা তোমার বৌমার পছন্দের।এটা অবশ্যই বলা যাবে না।
আমি আম্মাকে অন্য কিছু বলে বুঝিয়ে বাইরে চলে আসলাম।তা না হলে উনি আমাকে এই কালো পাঞ্জাবী পড়তে দিতেন না।ওনার মতে কাল পাঞ্জাবী বিয়েতে পড়া উচিত না। সুপ্তিদের বাসা খুব একটা দৃরে না।হেটে যেতে দশ মিনিট সময় লাগবে।তাই বলে তো আর হেটে যাওয়া যায় না।বিয়ে বলে কথা।তার উপর আবার বাড়ির একমাত্র ছেলের বিয়ে। সুপ্তিকে আমার দেওয়া কালো শাড়ীতে দেখে বেশ ভালই অবাক হলাম।আমি ভেবেছিলাম সুপ্তি লাল শাড়ীটাই পড়বে।কিন্তু ও তো দেখি কালো শাড়িটাই পড়ে আছে। সুপ্তির চোখে চোখ পড়তেই ওর মুখের মুচকি হাসি আমার চোখ এড়ালো না। আহ।বিয়েটা তাহলে হয়েই গেল।জীবনের ইচ্ছেটাও পৃরন হয়ে গেল।জীবনে আমার একটা ই ইচ্ছে ছিল বিয়ে।সেটাও করে ফেললাম।
এই ওঠো।তোমার চা। সুপ্তির ডাকে ঘুমটা ভেঙে গেল।বাহ,বিয়ের পরের দিনই বউয়ের হাতে চা।আমি উঠতেই সুপ্তি হাতে তোয়ালে দিয়ে বললো,চা খেয়ে যাও গোসল করে আসো।আমি খাবার টেবিলে গেলাম। কি মেয়েরে বাবা।সকাল সকাল একটু রোম্যান্স করবো তা না। বিয়ের একমাস প্রায় হয়ে গেল।এই কয়েকদিনে মেয়েটাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি।মনে হচ্ছে কত দিনের চেনা।তবে সুপ্তি আসার পর থেকে আমার রুটিনটাই পুরো পাল্টে দিয়েছে। তবে অফিসে যাওয়ার সময় টাই বেধে দেওয়াটা তার প্রথম কাজের মধ্যেই পড়ে।
-আহাদ। অফিস থেকে ফিরতেই আম্মার ডাক ।আমি ফ্রেশ হয়ে আম্মার রুমে গিয়ে বললাম,
-কিছু বলবে?
-হুম,বসো। আমি পাশের চেয়ার টেনে বসে পড়লাম।
-আমি চাই তুমি সুপ্তিকে ডিভোর্স দাও। আম্মার কথা শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। বলে কি!বিয়ের মাত্র একমাস। এর মধ্যে আবার কি হলো!আমি আম্মাকে বললাম,
-কেন কি করেছে ও?
-তোমার বউয়ের চোখে সমস্যা।চশমা ছাড়া কিছুই দেখতে পায় না।
আমি এইরকম অন্ধ বউ রাখতে পারবো না। এবার আমি একটু না বেশ ভালই অবাক হলাম। সুপ্তি তাহলে চশমা ছাড়া দেখতে পায় না।এটা আমার কাছে লুকালো কেন। তার মানে আমার বউ আমাকে চশমা ছাড়া দেখতে পারবে না।এইটা কেমন হলো!আম্মাকে কিছু না বলে আমি উঠতেই দেখি সুপ্তি দড়জার পাশে দাঁড়িয়ে।চোখের পানি মোছার বৃথা চেষ্টা করছে। তাই তো বলি মেয়েটা সবসময় কেন চশমা পড়ে থাকে।আমি রুমে এসে সুপ্তির পাশে বসলাম।ওর চশমাটা খুলে বললাম,
-বলো তো এখানে কয়টা আঙুল? আমার কথায় সুপ্তি আমার দিকে কেমন করে যেন তাকালো।আরে এভাবে তাকানোর কি আছে। আমি তো শুধু জানতে চাইছি।
-তুমি চাইলে আমাকে ডিভোর্স দিতে পারো।
কথাটি বলে সুপ্তি বেলকুনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। তবে ওর চোখের পানি আমার চোখ এড়ালো না। সকালের নাস্তা করে বিছানায় একটু গা এলিয়ে দিলাম। কিন্তু মেয়েটা কোই গেল।আমি সুপ্তিকে ডাক দিতেই চলে এলো।চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে অনেক কেঁদেছে। আমি বললাম,
-রেডি হয়ে নাও।
-কেন?
-ডিভোর্স এর জন্যে উকিলের কাছে তো যেতে হবে তাই।
আমার কথায় সুপ্তির মুখটা মলিন হয়ে গেল।মনে হচ্ছে এখনি কেঁদে দেবে। আমি আর সুপ্তি রিক্সায় বসে আছি।তবে ও কিছুটা আমার থেকে সরেই বসে আছে। রিক্সা থামতেই আমি সুপ্তিকে নিয়ে একটা চশমার দোকানে ঢুকলাম।সুপ্তি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-এখানে কেন?
-তোমার এই বুড়ো ফ্রেমটাকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্যে।আমার কথা বুঝতে সুপ্তির হয়তো একটু বেশী সময় লাগলো।এতক্ষনে আমি আমার পছন্দের ফ্রেমটা দিয়ে নতুন একটা চশমা বানানোর অর্ডার দিয়ে দিলাম।
বাহ।নতুন চশমাতে মেয়েটাকে অনেক কিউট লাগছে।তবে এবার আর সুপ্তি আমার থেকে দৃরে বসে নেই।একদম আমার হাত জড়িয়ে কাধে মাথা রেখে কান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে।তবে আমি আর ওকে কাঁদতে দেব বা।এমনিতেই মেয়েটাকে অনেক কাদিয়েছি আর না। আমি সুপ্তির কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম, আমি আবার আর একটি বার তোমার প্রেমে পড়তে চাই।আমি আবার আর একটি বার এই চশমাওয়ালির প্রেমে পড়তে চাই।