-রফি চল।
-কোথায়?
-কাজী অফিসে।
-ক্যান?
-বিয়ে করে ফেলি।
-কিইইই[চোখ বড় বড় করে]
-হুম।
-যদি না করি!
-তুই করবি,তোর বাপ করবে,তোর চোদ্দ গুষ্টি করবে[রাগ দেখিয়ে]
-আমার বাপের বউ আছে।
-তুই উঠবি কি না!
-বিয়ে করে খাওয়াবো কি!
-তুই যা খাস।
-রাখবো কোথায়!
-একটা বাড়ি ভাড়া করে।
-ওওও,তো টাকা গুলা আসবে কই থেকে!
-আব্বুর অফিসে জবের ব্যবস্থা করে দিবো।
-তোর আব্বু না মানলে!
-হাহ্,১বছর কোনো ভাবে একসাথে থাকবো।তারপর একটা বেবি নিয়ে আব্বুর সামনে যাবো।এমনিতেই মেনে নিবে।
-এত্ত প্লান করলি কখন!
-হিহি,কাল রাতে।
-ওওও,আমার কাছে শুধু কাজী অফিসে যাওয়ার ভাড়া আছে।
-জানি,সেটা মাথায় রেখেই আমি বাসা থেকে বেড় হয়েছি।
অতঃপর কাজী অফিসে গিয়ে ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাইকে ইনভাইট করে বিয়েটা করে ফেললাম। বিয়ের মূল কারণটা হয়তো দুজনের মনে না বলা ভালবাসা। মীমের ব্যাগ খালি করে ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাইকে পার্টি দিয়ে দুজন এখন একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি।
-দিলি তো ফাঁদে ফেলে!
-তুমি করে বলো।
-বাসর রাতটা কোথায় কাটাবো এখন!
-তুমি জানো।
-আচ্ছা চলো তবে।
-কোথায়[হা করে তাকিয়ে]
-তোমার শ্বশুর বাড়ি।
-যদি কিছু বলে!
-বললে আমায় বলবে,তুমি দাঁড়িয়ে মজা নিও।
-হিহিহি।
বাড়ি ফিরে আব্বু-আম্মু দেখে পুরোই অবাক। অদ্ভুত ভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আব্বু এক পাশ থেকে বলা শুরু করলো। যেটার জন্য আমি আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলাম। প্রায় ২০মিনিট বক-বক করার পর ঠান্ডা হলো। অতঃপর আম্মুর সাথে তিন মিনিট কথা বলে ডিসাইস করলো যতদিন পর্যন্ত কোনো জব পাবোনা ততোদিন পর্যন্ত মীমের আশেপাশে ভিড়তে পারবোনা। ভাবতেই চিল্লায়ে কান্না আসতেছে,আমিই একমাত্র মহাপুরুষ যার বিয়েতে বাসরঘর হবেনা।
মীম আম্মুর সাথে আর আমি আব্বুর সাথে ঘুমালাম। রাত প্রায় ১টা। তখনো ঘুম নামক শব্দটা আমার চোখে ধরা দেয়নি। অনেক ভেবে বুঝলাম মীমকে ছাদে ডাক দেওয়াটা আমার জন্য মঙ্গলময়। যেই ভাবা সেই কাজ, আস্তে করে উঠে আম্মুর রুমের দিকে পা বাড়ালাম। শত চেষ্টার পর বালিকা নিদ্রাভঙ্গ হলো। অতঃপর রহস্যময় এক ভুবন ডাঙার হাসি দিয়ে ছাদের দিকে পা বাড়ালো। খুবি সাবধানতার সাথে দুজনে ছাদে উপস্থিত হলাম। ছাদের কিনারায় বসে মীমের হাত ধরবো কি ধরবোনা ভাবতেই মীম আমার হাত ধরে ফেললো। কিন্তু এতটাই যথেষ্ট নয়। মীম আমার কাধে মাথা রাখলে হয়তো এর পূর্ণতা পেতো। অদ্ভুত ভাবে কিছুক্ষণ বাদে সেটাও পূর্ণতা পেলো।
-মীম একটা কথা বলবো?
-হুম বলো।
-এভাবে আজ বিয়ে করলা ক্যান?
-তুমি তো জানোই কয়েক মাস আগে আমার আম্মু এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যায়। তারপর আব্বু আর একটা বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই সৎ মা আমায় সব কাজে আদেশ করতে শুরু করে।অনেক খারাপ বিহেভিয়ার করে। যেটা আমার সহ্যের বাহিরে ছিলো। কান্না করে
-অন্য কাওকে বিয়ে করলা না ক্যান!
-দুইটা কারণে।
-যেমন।
-প্রথমত একজন ভালো বন্ধুই পারে বিপদের অন্য বন্ধুর পাশে দাঁড়াতে।
-দ্বিতীয় কারণ!
-অন্য কাউকে বিয়ে করলে কি তুমি সেটা মেনে নিতা!
-হাহাহা,বাদ দাও।বাসরঘর তো আর কপালে নাই,খুশি করতে একটা পাপ্পিই দিয়ে দাও।
-হিহিহি,(…..)
গল্প করতে করতে শেষ রাত্রি হয়ে গেলো। দুজনের মনে থাকা ভালবাসার কথাগুলো বলে যখন ক্লান্ত তখন ঘরে যাওয়ার ডিসিশন নিলাম। রুমে এসে দুজন চুপি-চুপি পায়ে দুই রুমের দিকে হাঁটা দিলাম। আমি দরজা খুলে পুরাই অবাক,”আব্বু নাই”। কিছুক্ষণ বাদে মীম এসে জানালো আব্বু আম্মুর রুমে। শুনে নাচবো নাকি কাঁদব কনফিউজড।
খুশিতে আমার রুমে এসে যাতে বাহিরে কোনো শব্দ না যায় সেই ব্যবস্থা করে দরজাটা আটকে খাটের ওপর উঠে দুজনে বাচ্চাদের মতন সেই লাফালাফি। মনের মাঝে এক অন্যরকম খুশি বিরাজ করছিলো। অতঃপর মীমকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। সকাল প্রায় ১১টা বাজে। কিসের উঠা-উঠি! কেবল মাত্র ঘুম ভাংলো। তবুও চোখ বুজে শুয়ে রইলাম। কিছুক্ষণবাদে আলতো করে মীম ওর কোমর থেকে হাতটা সরিয়ে কপালে একটা চুমু এঁকে দিলো। যখন খাট থেকে নামতে গেলো পেছন থেকে হাতটা টেনে ধরলাম। বালিকা হয়তো অবাক_ই হয়েছে। তারপর বুকে জড়িয়ে নিলাম। লজ্জায় লাল মুখটা বাকিকা আমার বুকের মাঝে গুঁজে নিলো। আফসুস রোমান্সে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো আম্মুর দরজা ধাক্কিয়ে ডাক। পাখিটা ফুড়ুৎ করে উড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
-মামনি তুমি ফ্রেস হয়ে নাও,সাথে এই পাগলটাকেও নিয়ে যাও।বিকেলে সবাই একসাথে শপিং_এ যাবো
-আচ্ছা আম্মু।
দুজনে ফ্রেস হয়ে ব্রেকফাস্ট+লাঞ্চ একবারে সেরে নিলাম। সারা দুপুর ভয়ে আব্বুর ধারের কাছেও গেলাম না। বিকেলে পরলাম মহা ঝামেলায়। আব্বুর সাথে একি রিক্সায় উঠতে বাধ্য হলাম।দুজনেই চুপ তারপর আব্বু শুরু করলো;
-তোর জন্য আমার সুখের জীবন তছনছ হয়ে গেলো।
-আমি আবার কি করলাম!
-কি সুন্দর তোর আম্মুর সাথে আগে ঘুমাতে পারতাম।পাশে বসে রিক্সায় করে শপিং_এ যেতে পারতাম।সবি এখন মরিচিকা।কবে চাকরী পাবি আর কবে আমি আমার সুখের জীবন ফিরে পাবো!
-তুমি চাইলে এখনি ফিরে পেতে পারো।
-কিভাবে।
অতঃপর আব্বুকে সুপ্পার একটা আইডিয়া দিলাম। আব্বু খুশিতে ১০হাজার টাকা দিয়ে বললো,তোর বউ নিয়ে তুই থাক বাবা। অতঃপর দুজন দুজনেত বউ নিয়ে দুই শপিংমলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
সমাপ্ত